হাসপাতালের ডিউটি শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে মাত্র শুয়েছে বৃষ্টি। চোখ লেগে এসেছিলো, হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলো। ঘুম ভাঙ্গার কারন খুজছে বৃষ্টি। কারন খুজে পেলো, রাস্তায় তূমুল শব্দে মিছিল হচ্ছে।
বৃষ্টির মনে পড়লো, ও সামনে তো নির্বাচন। ডিউটির চাপে ভূলেই গিয়েছিলো সে। মিছিলের কথা গুলো পরিস্কারভাবে কানে আসায় চমকে উঠলো বৃষ্টি। কান খাড়া করে বোঝার চেষ্টা করতে লাগলো কি স্লোগান দেয়া হচ্ছে।
মিছিলের স্লোগান বুঝতে পারলো বৃষ্টি। স্লোগান দেয়া হচ্ছে, “আকাশ ভাইয়ের সালাম নিন, লাউ মার্কায় ভোট দিন”। আকাশ নামটি শুনেই দৌড়ে বারান্দায় গেলো সে। তার মনে হচ্ছিলো এই আকাশ কি তার পরিচিত? আকাশ তাহলে রাজনীতি করছে?
বারান্দায় গিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে রাস্তায় তাকালো বৃষ্টি। মিছিলে এতো মানুষ যে কারো চেহারাই ঠিকমতো দেখা যাচ্ছে না। ছয় তলার বারান্দা থেকে দান বামে তাকিয়ে অনেক পোস্টার দেখতে পেলো সে। তার মধ্যে আকাশ ভাইয়ের পোস্টার ও ছিল। আকাশ ভাইয়ের পোস্টার দেখে ধপাস করে ফ্লোরে বসে পড়ে হাফ ছাড়লো বৃষ্টি। না, এই আকাশ সেই আকাশ নয়।
ফ্লোরে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে কিছুটা অতীতে ফিরে গেলো সে। এক আকাশের দিকে তাকিয়ে আরেক আকাশের কথা ভাবতে লাগলো।
আকাশ ছিলো বৃষ্টির একই স্কুল ও একই এলাকার ছেলে। বৃষ্টির চার বছরের সিনিয়র। প্রচন্ড দুরন্ত, অশান্ত, একরোখা, ঘাড়ত্যাড়া প্রকৃতির। এক কথায় বলা যায় বাউন্ডুলে ও ভবঘুরে। কিন্তু তার অসাধারন একটি বৈশিষ্ট্য ছিলো। তা হলো সবাইকে যেকোন কাজে সহযোগিতা করা। ভালো ছাত্র হওয়া স্বত্তেও পড়ালেখার থেকে রাজনীতির প্রতি আগ্রহ বেশি ছিলো তার। এলাকায় একটি দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবেই পরিচিত ছিলো তার। নির্বাচনের সময় তার স্লোগানে এলাকা থাকতো সরগরম।
পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরেই এক সময় আকাশ আর বৃষ্টি এক সাথে পথ চলা শুরু করেছিলো। আকাশকে রাজনীতি থেকে ফিরিয়ে এনে, তার বাউন্ডুলে জীবনকে একটা রুপে আনার চেষ্টা করে সফল ও হয়েছিলো। এলেমেলো বাগানের মালি হয়ে বাগানটিকে পরিচর্যা করে পূর্ণতা এনে দিয়েছিলো।
মোবাইলের শব্দে ভাবনায় ছেদ পড়লো বৃষ্টির। তার স্বামীর ফোন এসেছে।
জামার ওড়না দিয়ে চোখের কোন মুছতে মুছতে ঘরে গেলো। আর ভাবতে লাগলো, আকাশ কি আবার রাজনীতি করছে? স্লোগান দিচ্ছে নির্বাচনের মিছিলে?
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৪:৩১