পঞ্চম পর্ব: তুষার মানবের দিনলিপি
ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া , মমতা, যার জীবনে অজানা শব্দভান্ডের অংশ । আমি যেন সেই শব্দের সাথে পরিচয় ঘটালাম, দেখলাম, জানলাম, চিনলাম তোমার চোখ দিয়ে। কেমন করে ছোট বোনের সাথে একঘন্টা ফোনালাপ করার পর, যান্ত্রিক কারনে লাইন কেটে যাওয়ায় মন খারাপ করে আবার ফোন করা। একটা সময় এলো আমি কেবল তোমার মতো করে ফোন করার জন্যই আমার বাবাকে ফোন করলাম।
তোমার বলা কথাগুলোর মধ্যদিয়ে আমার মায়ের জন্য তৈরী হলো অজানা টান। সন্তান হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনের জন্য তুমি আমাকে বোঝালে, মায়ের প্রতি ভালোবাসা তৈরীর চেষ্টা করলে। আমার জমানো টাকাগুলো দিয়ে দিতে বাধ্য করলে। একটা দিন দেখলাম সত্যিই আমি একজন আদর্শ সন্তানের জায়গায় বসে আছি- যখন আমার মা ক্রিসমাসের কয়েকটা দিন আমার সাথে কাটাতে চাইলো। অথচ এই মা, আমাকে একদিন তার সুখী জীবনের পথের কাটা অপবাদ দিয়ে- আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ছিল ।
তোমার আশ্চর্য ক্ষমতা। আজ আমি ভুলেই গিয়েছি, আমার অতীত। ভাবতে ভালো লাগে সবার অবদানেই আজকের এই আমি। ভুলে যাই অন্য মানুষের দেয়া কষ্টগুলোকে।
তোমার পৃথিবীটা আমার অজানা। অচেনা। কেন জানি মনে হয় - সেই অজানা পৃথিবীর মানুষগুলোও কি তোমার মতো করে ভাবে? হাসে তোমার মতো করে, ভালোবাসে আপন করে। প্রার্থনা করে এক তুষার মানবের জন্য, যে কিনা তার জন্য এনেছে দুঃশ্চিন্তার পাহাড়। হ্যা, তোমার দেয়া এই নামটা আমার খুব পচ্ছন্দ। আসলে তোমাকে ঘিরে আমার যা কিছু, তার সবই আমার খুব পচ্ছন্দ। তোমাকে বলা হয়ে ওঠেনি কোনদিন। বোধ করি , কোনদিন বলা হবেও না।
কি অদ্ভুত না? আমার ডাইরীর পাতাতেও আমি, তার সাথেই কথা বলি?
মানুষ তার জীবনে বহু পথ অতিক্রম করে, নেয় হাজারো মানুষের দেয়া অভিজ্ঞতা, প্রভাবিতও হয় অন্যের দ্বারা। আমি আমার জীবনের অভিজ্ঞতার উপর দাড়িয়ে হেটে চলছিলাম আমার এই নিঃসজ্ঞ পথ। কোথা থেকে এই মেয়ে এলো- ওলোট পালোট করেদিল আমার সব রীতিনীতি, চলার ধরনধারন, এলো মেলো করে দিল চিন্তার জগৎটাকেও।
": আচ্ছা, তুমি এমন কেন?" প্রায়ই তোমায় এই কথাটা বলতে মন চায়। কিন্তু বলা হয়ে ওঠেনা। যেমন বলা হয়না, অনেক কথা।
সত্যিই তো, তুমি এমন কেন? থাকো খুব কাছে, কিন্তু ধরা যায়না। সব সময় পাশে থাকো, তবু দেখ দাওনা। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় , তুমি যেন এক কল্পনার কাচে ঘেরা পৃথিবীতে বাস করো, তাই তোমায় ছোঁয়াও যায়না।
জানো মাঝে মাঝে মনে হয়, তুমি বুঝি কেবল আমার পৃথিবীতে বাস করো। তোমাকে বুঝি আমি ছাড়া আর কেউ দেখতে পায়না।
সত্যিই যদি এমন হতো। তুমি কেবল আমার সাথে থাকতে, এমনি ভাবেই। চাইনা আরো কাছে। চাইনা আমার পাশে। চাইনা ছুয়ে দেখতে। তবু থাকো আমার পাশে। সারা জীবন, সারা দিন, সারা রাত। আমার পাশে। এই ফ্লেটের , ঐ ঘরটাতে।
আহা, আবারও আমি তোমার সাথে কথা বলা শুরু করে দিলাম, ডাইরী লিখতে বসে। আমি বোধ হয় পাগল হয়ে যাব।
আচ্ছা, তুমি এমন কেন?
আরো পড়তে চাইলে- তুষারের দেশে, আমার এক একটা দিন- ষষ্ঠ পর্ব
ছবি: নেট থেকে সংগ্রকৃত।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১২ সকাল ৭:৫৫