অ্যাম্বুলেন্সের শব্দে আমি আজো ভয় পাই , আমার রোমকূপে এখনো শিহরণ জাগে।
২০০৯ এর গল্পঃ
বাবার হাত ধরে সবে অনির স্কুলে যাওয়া শুরু। আমি আর অনি ছিলাম দুই ভাই,জ্বীনগত কারণে আমরা দুই ভাই হলেও চারিত্রিক ভাবে একে অপরের বিপরিত। অনির কার্টুন পছন্দ ছিল আমার ছিল ক্রিকেট;সে ছিল দুষ্টু আমি শান্তশিষ্ট।
কিন্তু সত্যি বলতে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসার বিন্দুমাত্র কমতি ছিল না।
বৃহস্পতিবার এমনিতেই সরকারী স্কুলগুলোতে হাফ ক্লাস হয়,তবু্ও সেদিন মা এসে ২ ক্লাস শেষে ছুটিতে আমাকে বাসায় নিয়ে আসলেন:ঠিক বাসায় না বাসার পাশে ঢামেকের ইমার্জেন্সি ইউনিটে...
বাবা,মা,স্কুল ড্রেস পড়া ছোট্ট আমি, অনি সবাই ছিল সেখানে!
অনির চেহারায় এক ধরণের বিশেষত্ব আছে।
কোন বিশেষণের সাথে এই বিশেষত্ব মিলানো যাবে না।।
মায়াময় চেহারা বেয়ে লাল রক্ত গড়িয়ে পড়ছে হাসপাতালের ফ্লোরে,অনিকে জড়িয়ে ধরে মায়ের আর্তনাদ;বাবাও নির্বাক দৃষ্টিতে সাদা বেডে তাকিয়ে আছে।
বাবা অনি এইভাবে সাদা বেডে শুয়ে আছে কেন??
ও বাবা .. কিছু বলছো না কেন???
ধরা গলায় বাবা জবাব দিলেন- এ ক্সি ডে ন্ট...
৩ রাত্রি কেউ বাসায় ফিরিনি,জীবনের প্রথম রাত জাগার গল্পগুলো এখান থেকেই শুরু।
চতুর্থ দিন দুপুরে সাদা অ্যাম্বুলেন্সে অনি ঘরে ফিরে এসেছিল!
বাসার গেটে একরাশ জটলা,সবাই অনিকে দেখার অপেক্ষায় অপেক্ষারত!
নাকে কানে তুলো দিয়ে ঘুমিয়ে আছে দুষ্টু ছেলেটা,মাথায় কাছে আগরবাতি পুড়ছে।।
গতকাল অনির ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল।
দেখতে দেখতে অনেকগুলো বছর কেটে গেল,সময়ের সাথে মানুষগুলো বদলে যায়!
বদলায়নি বাবা,বদলায়নি মা।
বদলে গেছি আমি,হয়েছি স্বার্থপর....
বাবা গভীর রাতে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দেয়,মাও দেয়ালে টানানো অনিকে অাদর করে চুমো খায়।
আর আমি.....!!
আমি,অনিকে এখনো ব্লগ নামক ডায়েরিতে বাঁচিয়ে রাখার মিথ্যে চেষ্টা চালিয়ে যাই।
অনি জানি তুই ভালো নেই,
বৃষ্টির পানি চুয়ে তোর গায়ে পড়ে!
এক সাদা কাফনে জড়িয়ে আছিস অনেকদিন। ।
তুই কি জানিস আমাদের ভালো থাকা ঝুলে আছে সীমান্তের কাঁটাতারে শুধু "তুই" নেই বলে।
আজো বৈশাখ মাস।।
এখনো ঠিক মধ্যদুপুর।
একটি অ্যাম্বুলেন্স হুইসেল বাঁজিয়ে কবর কিংবা হাসপাতালের পাণে ছুটে চলছে।।
সেখানে শুয়ে আছে অনি কিংবা অন্যকেউ।
ঝুলে আছে একটি পরিবারের সুখ অথবা শোক। । ।
সাবধানতাঃ রাস্তা পারাপারে সতর্ক হোন।