নট রিয়েরি রেলেভ্যান্ট: ফিফথ অ্যাভিনিউতে এই অফিসারকে দেখে সুপার মারিও'র কথা মনে পড়েছিল।

এইচএসসির পরের সময়টাকে অনেকে বলেন জীবনের ডিফাইনিং টাইম। এই সময়ই নাকি বেছে নিতে হয় মানুষ কোন পথে এগোতে চায়, কীভাবে নিচের জীবন গোছাতে চায়। জীবন দূরে থাক, আমি তো কখনো আমার রুমই ঠিকমতো গোছাতে পারিনি।

একসঙ্গে যারা পরীক্ষা দিয়েছে তাদের প্রায় সবাই কোথাও না কোথাও ভর্তি হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া হয়েছিল কিন্তু আশা করিনি চান্স পাবো; পাইওনি। তবে ইচ্ছে ছিল গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ে পড়াশোনার। এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাপ্লাইয়ের সময়সীমা পার হয়ে যাবার পর ঘুম ভাঙলো। বাসায় জানলে শিল্ড ব্যবহার ছাড়া উপায় থাকবে না।



বাকী রইলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এটায়ও চান্স পাবার সম্ভাবনা শূন্যের কাঁটা ছুঁই ছুঁই করছে। তবে এখনও পরীক্ষা হয়ে যায়নি এটাই সান্তনা। আর ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ইচ্ছে করেই পরীক্ষা দেইনি। কারণ ঢাকার বাইরে কোথাও পড়তে সমস্যা না থাকলেও থাকার ইচ্ছে নেই। আর সেটা পেশাগত কারণে।
পেশাগত কারণ শুনে যারা ভ্রু কুঁচকাচ্ছেন তাদের বলা দরকার যে আমি অনেক আগে থেকেই লেখালেখিতে জড়িত। মানে কেবল ব্লগিং না, প্রফেশনাল লেখালেখিতে। দেশের বাইরের পত্র-পত্রিকা-ওয়েবসাইটে দু-একবার লেখার সুযোগ হলেও বেশিরভাগই দেশীয় মিডিয়ায় লেখালেখি করা হয়। বিষয় তথ্য-প্রযুক্তি; যেটা অনেকের কাছেই বোরিং। কিন্তু প্রযুক্তি বিষয়ে সাংবাদিকতা বা লেখালেখি সবসময়ই টানে আমাকে। আর তাই লেখালেখি শুরু করেছি ক্লাস এইটে থাকতে।

এতো আগে লেখালেখি শুরু করার অসুবিধাও আছে অবশ্য। গেল বছর আমেরিকান অ্যাম্বাসির আয়োজিত 'প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন গালা' উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠান লাইভ ব্লগিং-এর জন্য দাওয়াত দেয়া হয়। সেখানে দেখা জানা আপুর সঙ্গে। আমি সবেমাত্র এইচএসসি দিচ্ছি শুনে তিনি অবাক। আমার প্রশ্ন, 'সবেমাত্র' মানে কী?


যাই হোক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষার পাশাপাশি ছোটখাটো একটা লেখালেখির কাজ নিলাম। সেই সঙ্গে ইন্টারনেটে লেখালেখির কাজও চালাচ্ছি। তবে পড়ালেখার কী হবে? ভাবছি TOEFL দেবো। কোথাও কোচিং না করে নিজে থেকেই পরীক্ষা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। দু'টোর (কোচিং + ফি) খরচ দেয়া সম্ভব না। বাসায় বলে রাখা হয়েছে, বাইরে চান্স পেলে তখন খরচ দেয়া হবে। দেশে থাকলে না। অবশ্য তাদের দোষ দেয়া যায় না। দেশে থাকলে আমিই বাসা থেকে পড়াশোনা বা অন্য কোনো কিছুর খরচ নিতে চাই না। এতোদিন নিতে হয়নি, এখন ভার্সিটিতে উঠে টাকা চাইবো?


এ সবের মাঝে প্রায় ডুবেই আছে আমার স্বপ্ন। ক্যারিয়ার হিসেবে আমার ব্যাংকার, চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, অ্যাকাউন্টেন্ট ইত্যাদি এইসব কিছু হওয়ার কথা। কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড যে! কিন্তু ব্যাকগ্রাউন্ডে কি আসে যায়! আমার যেটা পছন্দ আমি সেটা করবো। স্টিভ জবসের কথা ঠিক। যে কাজে মজা পাওয়া যায় সেটা পেশা হিসেবে নিতে পারলে জীবনে আর কোনোদিন কাজ করতে হয় না।


আমার জন্য সেটা লেখালেখি; সাংবাদিকতা। আর আমার সেক্টর হলো তথ্য-প্রযুক্তি। বাংলাদেশে তথ্য-প্রযুক্তি নিয়ে সাংবাদিক থাকলেও পরিধিটা খুব ছোট। প্রযুক্তি বিশ্বের বিপ্লবগুলো ঘটে দেশের বাইরে। সেখানে যেতে পারলে আর টেক জার্নালিস্ট হিসেবে জায়গা করে নিতে পারলে সেটা হবে কেল্লাফতে।


তাই ধরে রাখতে হচ্ছে একসঙ্গে দু'টোই। আর যে কোনো লেখকমাত্রই জানেন কাজটা বেশ কঠিন। একে তো লেখালেখি ব্রেইনের উপর চাপ ফেলে। তার উপর দুইটা ভাষায় কন্টিনিউয়াসলি লেখা... এসবের মাঝেই হাজার দ্বিধা-দ্বন্দ্বে কাটছে আমার দিন।
সম্ভবত একটা বছর অফ নেয়া হবে। হয় এসপার, নয় ওসপার। হয় দেশ, অথবা বিদেশ। বিদেশে যাবার চেষ্টা সফল হবে কি না তা এ বছরই জানা যাবে। মোজিলা ফাউন্ডেশনের কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাওয়া গেছে, কিন্তু স্টুডেন্ট ভিসা তো আলাদা; তাই আবার দাঁড়াতে হবে। এসবের আগে রয়েছে TOEFL পরীক্ষার চিন্তা! বুঝতে পারছি না কোনদিকে গড়াচ্ছে জীবনটা। :-&
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২০