ধর্ষণের শাস্তি আমিও চাই সর্বোচ্চটাই হোক। কিন্তু এখানে একটা টেকনিক্যাল ঝামেলা আছে। বাংলাদেশে প্রতিবছর যত সংখ্যক ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের মামলা হয়, তার অন্তত ৮০ ভাগই (বা কম-বেশি) হয় সাজানো, হয়রানিমূলক। যেহেতু এই মামলার আসামীর জামিন হয়না, তাই অনেক সময়েই প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে যৌন হয়রানির মামলা দেয়া হয়। জমি-জায়গার বিরোধ, ক্ষমতার দন্দ্ব, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণেও এদেশে যৌন হয়রানির মামলা দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত চিত্র হলো, আসলেই যারা নির্যাতিত হচ্ছেন, তারা লোকলজ্জা, সামাজিক লাঞ্ছনা, বিয়ে না হওয়া - এসবের ভয়ে নিজের বা পরিবারে মধ্যেই পুরো ঘটনাকে চেপে রাখেন; আদালত পর্যন্ত যাননা।
এখন যদি ধর্ষনের শাস্তি যদি মৃত্যুদন্ড নির্ধারিত হয়ই, ধর্ষকেরা আদৌ কতটুকু সাবধান হবে জানিনা; তবে ধর্ষিতাদের তাতে আদালতে যাওয়া বাড়বেও না কমবেও না - যতদিন না সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টাচ্ছে। মাঝখান দিয়ে লাভবান হবে শুধু ধান্দাবাজেরা। শত্রুকে ধনে প্রাণে মারতে খুব শক্তিশালী একটা হাতিয়ার হয়ে উঠবে ধর্ষণ মামলা। আর ব্যবসাও হবে বিস্তর। এখন যেমন ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ফায়দা হাসিল করার কথা প্রায়ই গণমাধ্যমে উঠে আসতে দেখি, তখন ধর্ষণ মামলার হুমকি দিয়েও বিস্তর চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং চলবে। আর সবচেয়ে বড় কথা এখন যেমন অনেকেই মিথ্যা ধর্ষণ মামলায় ফেঁসে জেলে পচছেন, তখন তারা ফাঁসিকাঠে ঝুলবেন। ঠিক এমন একটা ঘটনা কোলকাতায় একটা ঘটেছিল ২০০৩/৪ এর দিকে (ধনঞ্জয় কী যেন নামটা)।
কাজেই মৃত্যুদন্ডের বিধান তৈরি হলে আইনের একটা ব্যাকডোর/ লুপহোলও কিন্তু তৈরি হয়ে যাচ্ছে। আর আইন বলে, একজন নিরপরাধীকে বাঁচাতে, প্রয়োজনে একশ' অপরাধীকে ছেড়ে দিতে হবে। যারা আইন বানান, তারা এই বিষয়টা জানেন। সাথে তারা মিথ্যা মামলার পরিসংখ্যানটাও জানেন। কাজেই এটা নিশ্চিত করা তাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, যাতে শুধুমাত্র প্রকৃত ধর্ষকেরাই ফাঁসিতে ঝোলেন; আইনের মারপ্যাঁচে পড়া কোন নিরীহ ব্যক্তি নন!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০২০ বিকাল ৫:৫৬