রুপা,
অনেক রাত হয়েছে। ঠিক বুঝতে পারছিনা কয়টা বাজে। অবশ্য সময় দেখার কোন যন্ত্র আমার কাছে নেই। থাকলে হয়ত বলতে পারতাম। পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা নিয়ে লিখছি। সবকিছু কেমন ধোঁয়াশে ধোঁয়াশে লাগছে। মনে হচ্ছে নেশার ঘোরের মধ্যে আছি। এখন নিশ্চয়ই রাগ করেছ এই ভেবে যে, রাতে কেন খাইনি? আসলে পকেটে একদম টাকা নেই। যা আছে তা এই চিঠিটা পোস্ট করতে
লাগবে বলে রেখে দিয়েছি।
আজ সন্ধা থেকে অনেকক্ষণ বাইরে তাকিয়ে ছিলাম। খুব ইচ্ছে হচ্ছিল একটা জোনাকি দেখার, জোনাকির সাথে গল্প করার। কিন্তু কপাল আমার! এত বড় শহরে কোথাও একটা জোনাকি নেই। অথচ গ্রামে কি সুন্দর করে জোনাকিরা উড়ে বেড়ায়। তুমি কি কখনও জোনাকির সাথে গল্প করেছ? হয়ত করেছ বা করনি। আমার সাথে তোমার বিয়ে হলে আমি তোমাকে গ্রামে নিয়ে যাব। সেখানে গিয়ে দুজন সারারাত জোনাকির সাথে গল্প করব। আর একদিন জোৎস্না রাতে দুজন নৌকায় করে সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াব। আচ্ছা নৌকায় কি মাঝি থাকবে নাকি আমি চালাব? তুমি যা বলবে তাই হবে।
গতকাল কি হয়েছে শোন, প্রতিদিনের মত ঘুমাতে যাবার পূর্বে, রুমের সব আলো নিভিয়ে একটা মোমবাতি জ্বালিয়েছি। উদ্দেশ্য মোমের নিভু আলোয় তোমার চাঁদমুখ খানার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা। কিন্তু বুকপকেটে হাত দিয়েই দেখি তোমার একমাত্র ছবিটা ওখানে নেই। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলামনা। পুরা রুমটা তন্নতন্ন করে খুঁজলাম কিন্তু কিছুতেই কিছু হলনা। মন খারাপ করে কপালে হাত দিয়ে মেঝেতে বসে পরলাম। এর মধ্যে মনে পরল যে, লন্ড্রিতে দেয়া পাঞ্জাবির পকেটে তোমার ছবিটা। বিন্দুমাত্রদেরী না করে সেই রাতেই চলে গেলাম লন্ড্রির দোকানে। দোকানিকে সব খুলে বলার পর তিনি বললেন ছবিটা যেন আমি
পরে নেই। আমি বললাম এখনই লাগবে। শেষমেশ দোকানির সাথে ঝগড়া করে তোমার ছবিটা নিলাম। দোকানি আমার উপর খুব ক্ষেপে আছে। সে বলেছে আমি যেন আর তার দোকানে না যাই। অবশেষে যখন ছবিটা নিয়ে বাসায় ফিরলাম তখন মুয়াজ্জিন
ফজরের আজান দিয়ে দিয়েছে। মাঝেমাঝে ইচ্ছে হয় তোমার আর একটা ছবি চাইব। কিন্তু পরক্ষনেই মনে হয় দুটো ছবি থাকলে
যেকোন একটার উপর আমার ভালবাসা কমে যাবে। তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি ছবি আর চাইব না।
লিখতে লিখতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলাম বুঝতেই পারিনি। স্বপ্ন দেখে জেগে উঠে আবার লিখছি। অবশ্য স্বপ্ন না দুঃস্বপ্ন
দেখেছি। দেখলাম যে, দৈত্যের মত একটা লোক এসে আমাকে বলল আমি যেন তোমাকে ভুলে যাই। তুমি নাকি আমাকে ভুলে গেছ। আমি বিশ্বাস করিনি। কেননা আমি তো জানি যে তুমি আমায় কতখানি ভালবাস। আচ্ছা "ভালবাসি ভালবাসি" গানটা কি
আবার একটু শোনাবে? তোমার মনে আছে সেদিন তোমায় প্রশ্ন করেছিলাম, "একফোঁটা চোখের পানি সমান কত ফোঁটা রক্ত?"
প্রশ্নটা শুনে তুমি খুব রাগ করেছিলে। কিন্তু এই একই প্রশ্ন যদি তুমি আমাকে করতে তাহলে আমি কি উত্তর দিতাম জানো? উত্তর
দিতাম, "তোমার একফোঁটা চোখের পানি সমান আমার শরীরের সমস্ত রক্ত।" তোমার জানতে ইচ্ছে করেনা যে, আমি তোমায় কতটা
ভালবাসি? এমন প্রশ্ন কখনও করলে আমি এককথায় উত্তর দিয়েদেব। বলব, আকাশের বিশালত্বের হয়ত শেষ আছে কিন্তু আমার
ভালবাসার শেষ নেই।
আর একটা কথা, খুব বেশি ইচ্ছে করছে তোমার হাতে বানানো এককাপ চা খেতে। কখনও যদি এমন হয় যে, সকালবেলা ঘুম থেকে
উঠেই দেখব তুমি একটা নীল শাড়ি পরে হাতে এককাপ চা নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছ। আর তারপর দুজনে মিলে এককাপ চা
ভাগাভাগি করে........!!!
না! আর চিন্তা করতে পারছিনা। এসব চিন্তা করতে গেলেই হৃদযন্ত্র খানা অচল হয়ে পরে। আজ আর লিখতে পারছিনা। হাতটা অবশ হয়ে আসছে।
ভাল থেক।
ইতি,
তোমার....!!
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৩৩