কোন এক প্রভাতের বাদল দিনে প্রকৃতির মাঝে আমি একটি মৃত প্রায় বকুল ফুল কুড়িয়ে পেয়েছিলাম। সে ফুল অযত্নে, অনাদর, অবহেলায় নিস্তেজ হয়ে লুটিয়ে পড়েছিল মৃত্তিকার বুকে। তার চোখে ছিল জল। সে ফুল কাতর নয়নে আমার পানে অপলক দৃষ্টিতে থাকিয়ে ছিল। বেঁচে থাকার নিরব ও করুণ আকুতি নিয়ে ছটফট করছিলো আশ্রয়হীন এক ডানা ভাঙ্গা পাখির মতো। যে ফুল পৃথিবীর সবটুকু বিশ্বাস, ভরসা, ভালোবাসা নিয়ে আমার কোলে মাথা রেখেছিল; সে ফুলের অযত্ন আমি কোন দিন হতে দেইনি। তাকে শত মমতায় বুকে জড়িয়েছি। পৃথিবীর সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে তাকে আগলে রেখেছিলাম আমার বক্ষে। সে লোকের চোখে দেখতে কেমন জানিনে, আমার কাছে সে ছিলো সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মতো সুন্দর। রাতের আকাশে শত কোটি তারার ভিড়ে পূর্ণিমার চাঁদ।
আমি তাকে আমার সকল অন্তর দিয়ে ভালোবাসতাম। মায়া-মমতা ও আদর-স্নেহে আমার হৃদয়ে আগলে রাখতে চাইতাম। তার হাসি-খুশি মুখখানি বসন্তের রৌদ্রের দীপ্ত আলোয় মতো ঝলমল করতো। আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতাম। তার মুখের হাসির মাঝে আমি আমার সুখ খুজে পেয়েছিলাম। তার চোখের অশ্রুজল আমার জীবনকে ভাসিয়ে নিত অনন্ত অসীম বেদনার স্রোতে। চোখের জলে নয়, আমি তাকে অন্ধকারে প্রদীপ হয়ে পৃথিবী আলোকিত দেখতে চেয়েছি।
যাকে আমি পেয়েছিলাম বৃষ্টি ভেজা বাদলে দিনে; অনাদর, অবহেলায়, এক পৃথিবী দু:খ নিয়ে সে একদিন বৃষ্টির মতোই মেঘের কালো অন্ধকারে হারিয়ে গিয়েছিল আমার জীবন থেকে। তার মূল্য আমি বুঝেছি প্রথম জীবনেই কিন্তু হারিয়ে যাবার পর বুঝছি হৃদয় ভাঙ্গার কি অসীম বেদনা! সে বেদনা আমার কাছে আজ ম্লান, বিবর্ণ, নিষ্প্রদীপ। অন্তরে অতোষণীয় ক্ষত নিয়ে পথচলা সহজ নয়; তবু চলতে হয়, বাঁচতে হয়, জীবনকে ভালোবাসতে হয়।
ভালোবাসা তো সস্তা বাজারের পন্য নয় যে, চাইলেই ভুলে থাকা যায়। কিন্তু যে ফুলকে আমি আমার সমস্ত অন্তর দিয়ে মায়া-মমতা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আগলে রেখেছিলাম সে ফুল আমায় ঠিকি ভুলে গিয়েছে। সময় বদলে গেছে, বদলে গিয়েছে চারপাশ। সময় ও স্রোত কেউই আমাদের জন্য থেমে থাকেনি। চলেছে পৃথিবীর এপাশ থেকে ওপাশে। তবু মাঝে মাঝে হৃদয় খানি ব্যাথা-বেদনায় ভরে উঠে। সে ব্যাথা, সে দহন সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই; তবু চলেছি জীবনের টানে গন্তব্যহীন মায়াভরা এক অজানা পথের নেশায়। আমার অন্তর্যামী জানেন, তার জন্য আমার হৃদয়ে কী গভীর ক্ষত, কী অসীম বেদনা! আমার সমস্ত প্রীতি, স্নেহ, অনুরাগ ছিলো শুধু তাকে ঘিরেই। তাকে হারানোর ব্যাথা আমি সইতে পারি না। যখন স্মৃতিগুলো মেঘ হয়ে মনের আকাশে জমাট বাধে, আমি একাগ্র চিত্তে গগন পানে চেয়ে থাকি অভিমান, অনুরাগ ও তৃষ্ণার্ত চোখে। অন্তরিক্ষ হতে ঝরে পড়ে শত বছরের জমে থাকা বেদনার নীল অশ্রুজল। সেথায় চির-অতৃপ্ত হৃদয় নিয়ে চেয়ে থাকি হাজার বছর।
জীবন থেকে কত শত বছর হারিয়ে গিয়েছে কিন্তু তুমি আজও আছো আমার হৃদয়ে অমলিন পুষ্পাটিত গোলাপের ন্যায়। মিশে আছো পূর্ণিমার চাঁদ হয়ে আমার সমস্ত অন্তর জুড়ে। হয়তো তুমি আগের মতো সেই ছোট্টটি নেই; বদলে গিয়েছো সময়ের সাথে নদীর স্রোতের মতো। তবু আমার কাছে তুমি সেই বাদল দিনের ফুলের মতোই আজও সমুজ্জ্বল। সে ফুল আমার দু’চোখের জ্যোতি, আমার হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা, আদর, প্রীতি, মমতা, অনুরাগ!
-আজ ফেইসবুকে হঠাৎ করে একটি ছোট্ট মেসেজ এসেছে,
- “চাচ্চু, আমাকে তুমি চিনতে পারোনি? “আমি তোমার বাদল দিনে হারিয়ে যাওয়া সেই ফুল, যাকে তুমি ভালোবেসেছিলে। আগলে রেখেছিলে শত মায়া-মমতায়।”
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ৮:৫০