ছেলেটির ডাক নাম সাগর। আমাদের গ্রামে সে সুমন নামে ও সবার কাছে বেশ পরিচিত। আমরা ক্লাস ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে একসাথে পড়া-লেখা করেছি; এ সুবাদে সে আমার বন্ধু। শুধু বন্ধু বললে ভুল হবে, সাগর আমাদের ভালো বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম একজন। আমি যে এলাকায় বসবাস করি এখানেই তাঁর মামার বাড়ি, তাই এখানে থেকেই সে স্কুল জীবনের লিখা-পড়া শেষ করেছে।
সাগর অনেকদিন যাবত রক্ত নিয়ে কাজ করছে। একি মধ্যে সাগর বন্ধু-বান্ধব নিয়ে রক্তের একটি সংগঠন তৈরী করে ফেলেছে। রক্ত নিয়ে দিনে ৪/৫ টা পোষ্ট সে দিবেই দিবে। ঘুরে ফিরে একি কথা রক্ত দাও! রক্ত চাই! রক্ত...রক্ত আর রক্ত। মানে খাই, খাই একটা অবস্থা। যেখানেই সে রক্তের সন্ধান পায় সেখানেই তার দলবল নিয়ে হাজির হয়।
তাঁর রক্তের পোষ্ট দেখতে দেখতে আমাদের অনেকের মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে। একি ধরণের পোষ্ট বার বার দেখতে ভালো লাগেনা। তাঁর রক্ত নিয়ে পাগলামি দেখে আমরা হাসাহাসি করি। রম্য-রস নিয়ে কমেন্টস করি। বলি হাজারো কথা।
আমরা এ বয়সে কবিতায় যখন ভালোবাসার রঙ-তুলিতে প্রেয়সীকে সাজাতে ব্যস্ত; সাগর তখন রক্তের প্রয়োজনে ছুটছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। ঝড়-বৃষ্টিতে সব কিছু থেমে যায় কিন্তু সাগর ছুটছেই ছুটছে; তাকে কোন ভাবেই থামানো যাচ্ছে না।
আমাদের গাজীপুর স্কুলে বিভিন্ন অনুষ্ঠান হয়, রাজনৈতিক নেতা সহ বিভিন্ন মানুষদের সংবর্ধিত করা হয়। সেখানে তো সাগর সহ তাঁর দলকে হাজির করা যায়। তাদের কাজকে এ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরা যায়। তাদের হাত ধরে কত মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে তার গল্প শুনানো যায়। সেখান থেকেই ছেলে-মেয়েরা শিখবে এবং সাগরদের জন্ম হবে।
কিন্তু যারা মানুষ ও সমাজের জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে কাজ করে যাচ্ছে তারাই সমাজে আজ মূল্যহীন। মূল্য আছে সমাজের চোর, বাটপার আর দূর্নীতিরবাজদের; সাগরেরা সবকিছুর আড়ালেই রয়ে যায় চিরদিন।
তাঁর একি ধরণের পোষ্ট দেখে আমরা হাসি। ভাবি ছেলেটা পাগল হয়ে গেছে। কিন্ত “সাগরের” মতো এমন পাগলামি করা ৬৪ জেলায় যদি ৬৪ টা ছেলে থাকতো তবে বাংলাদেশ রক্তের অভাবে কেউ মারা যেতো না। সব কিছু আল্লাহর হাতে কিন্তু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। আমাদের সমাজে এমন একজন সাগরই যতেষ্ট; যার হাত ধরে সমাজ, দেশ ও জাতির পরিবর্তন হবে।
People are getting tired by doing a small amount of work but you are never tired to make people smile. This is the best work on this earth. Keep doing good work. We may forget you after a month or year later, but the world will surely remember you till the end.
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৮