মামুন হুসাইন, মৃত্যভূক নদীর নিরাসক্ত চারণ
মামুন হুসাইনকে প্রথম ঠিক কবে পড়েছি হিসেব করে বলা মুসকিল, তবে মনে আছে কোন এক ছোটকাগজে খটমটে একটা গল্প পড়তে পড়তে বিরক্ত হতে হতেও এড়াতে পারছিলাম না, গল্পটা মগজ সাঁতরে আরো গভীরে কোথাও যাওয়ার পাঁয়তারা করছিল! আর ভাবছিলাম, কে হে তুমি, এমন হেয়ালিপুর্ন দুর্ভেদ্যতার বয়ান কিভাবে করো, কবিতার মতো রক্তপাত ঘটাও অথবা অণুমাংশের গভীরে কিভাবে দেখতে পাও? আখতারুজ্জামন ইলিয়াস, মাহমুদুল হক, কায়েস আহমেদ,ওয়াসি আহমেদ, জাকির তালুকদার এদের পরে মামুন হুসাইনের সাথে পরিচয় একটা ঘটনা বটে!
আমার পাঠের অবিস্তৃত সীমার মধ্যে মামুন হুসাইন হুঠহাঠ হানা দেন মাঝে মাঝে। তার মৃতদের শহরে (নিক্রপলিস) খালি পায়ে ঢুকে পড়ে পা কেটেছি অনেকবার এবং একসময় আবিস্কার করেছি; বস্ততঃ আমিও ঐ মৃতদেরই দলে।
"বারান্দা থেকে দেখলো- একখন্ড গৃহত্যাগী কটনবাড উড়ে আসার সময় ধূসর আতাগাছের পাতায় জড়িয়ে থাকা মাকড়সার জালে এই মাত্র আটকে গেল। কিছু দিন থেকে ওকে লম্বা কবিতায় পেয়েছে। অরফ্যানেজ থেকে কয়েক ছাত্র- এরকম নাম দিয়ে অনেক ক'টি বাক্য তৈরী করল মাথায়।"
এরকম অনির্দিস্ট শুরুর পরে আমিও খাপছাড়া দৌড়াচ্ছি তবে বেখাপ্পা নয় কিন্তু! ষাটের দশকে যখন বাঙলা নামের একটি দেশের জন্ম প্রক্রিয়া সবে শুরু হচ্ছিল, সে সময় মামুনেরও জন্ম; ফলে দেশটির প্রসবজনিত রক্তপাতের স্মৃতি খুব একটা না থাকলেও জন্ম পরবর্তি সময়ে বারবার আরো বিবিধ রক্তপাতের উপলক্ষ্যের তিনি চাক্ষুষ সাক্ষি। পুঁজি'র মোহন ছত্রাক আর সাম্যের তলানি এবং এদের মেকানিজমে দাঁত-নখ নিয়ে মৌলবাদ.........সব কিছুই দেখছেন তিনি। একনাগাড়ে মৃতদের এই শহরে হাঁটাহাঁটি বেশ মুসকিল; মৃত-প্রায়মৃত-জীবন্মৃত সব মানুষের লাশ স্নায়ুতন্ত্রের দখলে মুখিয়ে থাকে সব সময়। একেটা লাইল যেন অভাগা দেশটার একেকটা ধমনী! ফ্ল্যাপ থেকে কয়েক ছত্র:
উন্নয়ন রাজনীতির সহজবোধ্য উদাহরণ তৈরীর লক্ষ্যে, বহুকাল আগে পুরো শহর এবং আমাদের জনপদ একটি সমাধিক্ষেত্রে রুপান্তরিত হয়। মৃত মানুষেরা সেদিন সন্তর্পনে তাদের মৃতগান লিখে-লিখে েকখন্ড মলিন "বৃহৎ বংগ" দিকচিন্হহীন পৃস্ঠার ভাঁজে লুকিয়ে রাখে। কিন্ত বিবিধ দুর্যোগের পরস্পরা সেইসব মৃত্যদৃশ্যকে আবারও হত্যা করে অথবা অপরুপ সেই হত্যাচক্রের সঠিক দিনতারিখ অগোছালো করে ফেলে।
বর্তমান লেখক সেই অপ্রকাশিত জীবনপন্জির কিয়দংশ বাংলাভাষী পাঠকের উদ্দেশ্য সংকলিত করেছেন। এই পাঠচক্র আমাদের পূর্বাপার সকল আত্মরক্ষার কলাকৌশল তছনছ করে, অথবা নিয়ে চলে'.....এক অচিন নিক্রপলিসের ভেতর-উঠোনে, যেন মৃত্য আমাদের জন্য কিন্ঞ্চিৎ সহজ হয়, আর সুখকর হয়।
মৃতদের শহর ঘুরেই ঝাঁপ দেব মৃত্যভূক নদীতে (মানুষের মৃত্য হলে) আর এর পরে একে একে পাঠের অপেক্ষায়ঃ
শান্ত সন্ত্রাসের চাঁদমারি
কয়েকজন সামান্য মানুষ
বালকবেলার কৌশল
আমাদের জানা ছিল কিছু
নিরুদ্দেশ প্রকল্পের প্রতিভা
রাস্ট্রযন্ত্রের খেলাধুলা
কর্নেল ও কিলিং বিষয়ক এন্ড গেম..........