বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ধৃষ্টতা দেখিয়েই চলেছে পাকিস্তান। ক্রিমিনাল সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর আমির আলবদর বাহিনীর প্রধান মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকর করায় দেশটির জাতীয় পরিষদে সর্বসম্মতভাবে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস হয়েছে গত বুধবার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিজামীর মৃত্যুদ- কার্যকর করায় তারা গভীরভাবে মর্মাহত। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, '১৯৭১ সালের ডিসেম্বরের আগের কথিত অপরাধে নিজামীর ফাঁসি দেয়া হয়েছে। মূলত পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত রাখা ছিল তার একমাত্র অপরাধ। ত্রুটিপূর্ণ বিচারে বিরোধী নেতাদের হত্যা করে তাদের কণ্ঠরোধ করার প্রক্রিয়া পুরোপুরি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।'
পাকিস্তানের মর্ম কার জন্য বেদনায় ভারাক্রান্ত হবে সেটা আমাদের বিবেচ্য নয়। তাদের মর্ম একাত্তরের হত্যাকারী নিজামীগংয়ের জন্য বেদানাহত হোক চাই আজকের জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের জন্য বেদনাহত হোক তাতে আমাদের বলার কিছু থাকে না। কারও মর্মের ওপর তো নিয়ন্ত্রণ চলে না। আমাদের আপত্তি হচ্ছে, পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব পাস হওয়া নিয়ে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের কোন বিচার কাজ নিয়ে পাকিস্তান নিন্দা প্রস্তাব পাস করে ধৃষ্টতা দেখিয়েছে। বাংলাদেশ একাত্তরে তার নাগরিকদের ওপর চালানো হত্যা-নির্যাতনের ঘটনায় তারই কিছু নাগরিকের বিচার করছে। নিজামী পাকিস্তানপ্রেমী হতে পারে কিন্তু পাকিস্তানের নাগরিক নয়। বাংলাদেশ তার কোন নাগরিকের অপরাধের বিচার করলে এবং বিচার অনুযায়ী দ- কার্যকর করলে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে কেউ নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করে কীভাবে। বিষয়টি আমাদের বিস্মিত করে। আমাদের বিস্ময় আরও বেড়ে যায় যখন আমরা জানতে পারি, সেই নিন্দা প্রস্তাব সর্বসম্মতভাবে পাস হয়। আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে, দেশটির জাতীয় পরিষদের সদস্য হন কারা। তাদের মধ্যে কি এমন একজনও নেই যার মনে এ সত্য প্রতিভাত হয় যে- এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়।
পাকিস্তান বলছে, 'কথিত অপরাধে' নিজামীর ফাঁসি হয়েছে। আমরা বলতে চাই, নিজামীর অপরাধ ছিল সর্বজনবিদিত এবং সেই অপরাধ আদালতে অকাট্যভাবে প্রমাণিত হয়েছে। পাকিস্তান বলছে, 'পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন সমুন্নত' রাখাই ছিল নিজামীর অপরাধ। সন্দেহ নেই পাকিস্তানের সংবিধান এবং আইনই নিজামীর মতো ক্রিমিনাল সৃষ্টি করেছে।
আমরা জানি, নিজামী একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বহু নিরপরাধ মানুষ হত্যা করেছে, বুদ্ধিজীবীদের হত্যার মূল নকশাকার সে, লুটতরাজসহ বহু অপরাধ সে সংঘটিত করেছে। তবে আমরা এটা জানি না যে, হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ করাই পাকিস্তানের সংবিধান ও আইন কিনা।
নিজামীর বিচারকে পাকিস্তান ত্রুটিপূর্ণ বলেছে। প্রথম কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে পাকিস্তান কথা বলার কে? আমরা বলতে চাই, নিজামীর বিচার করা হয়েছে একাত্তরের শহীদ ও নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার দেয়ার জন্য, পাকিস্তানকে খুশি করার জন্য এ বিচার করা হয়নি। একাত্তরের শহীদদের পরিবার ও নির্যাতিতরা মনে করছেন, নিজামীর মৃত্যুদ-ের মধ্য দিয়ে ন্যায়বিচার পেয়েছেন। নিজামীর বিচার সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ হয়েছে। সে প্রতিটি আইনি সুযোগ গ্রহণ করেছে।
নিজামীগংয়ের বিচারকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিপন্থী বলেছে পাকিস্তান। তাদের এ মন্তব্য আমাদের হাসির খোরাক জুগিয়েছে। যে দেশ সব সময়ই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আর্মির বুটের নিচে থেকে শাসিত হয়, যে দেশ জঙ্গিবাদ-মৌলবাদের লালনভূমি সে দেশের কাছ থেকে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সবক নেয়ার প্রয়োজন নেই।
পাকিস্তানের ধৃষ্টতা সব সীমা ছাড়িয়ে গেছে। দেশটি সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধীদের দালালি করছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারীদের এখনও যারা সমর্থন ও মদত জুুগিয়ে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার কোন যুক্তি আমরা দেখি না। বাংলাদেশ এমন কিছু পাকিস্তানে রপ্তানি করে না যার স্বার্থে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা জরুরি। আর পাকিস্তান তো শুধু জঙ্গিবাদ, জঙ্গি, ষড়যন্ত্রকারী ভিন্ন আর কিছু বাংলাদেশে পাঠানোর সামর্থ্য রাখে না। এ বিবেচনায় পাকিস্তানের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করাই যুক্তিযুক্ত।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:৪০