পেলে ম্যারাডোনার নাম তো সবাই শুনেছেন। কিন্ত বেস্টের নাম কখনো শুনেছেন কি? শুনে না থাকলে নড়েচড়ে বসুন। কারণ, আজ আপনাদের শোনাবো এক ফুটবল বেস্টের গল্প।
উত্তর আয়ারল্যান্ডের কর্দমাক্ত মাঠে এক কিশোর ফুটবলারকে ফুল ফোটাতে দেখে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন বব বিশপ। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই স্কাউট (খুদে প্রতিভা খুঁজে বার করেন যাঁরা) সেই কিশোরটির খেলা দেখ এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলেন, সঙ্গে সঙ্গে ক্লাবের সদর দপ্তরে টেলিগ্রাম পাঠান, ‘আই থিংক আই হ্যাভ ফাউন্ড আ জিনিয়াস।’ grin emoticon
সেই ‘জিনিয়াস’টি এরপর সত্যি সত্যিই ফুল ফুটিয়েছেন ক্লাব ফুটবলে। সেই কিশোরটিকে বলা হয় কখনোই বিশ্বকাপ না খেলা সর্বকালের সেরা ফুটবলার। শুধু বিশ্বকাপ নয়, ফুটবলীয় শক্তির বিচারে খর্বশক্তির দল উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্মেছিলেন বলে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন শিপেও খেলা হয়নি কখনো!
উত্তর আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টে ২৫শে মে ১৯৪৬ সনে জর্জ বেস্ট নামক এই ফুটবল কিংবদন্তীর জন্ম। ছেলেবেলা থেকেই ছিলেন দুর্দ্দান্ত ও বেপরোয়া । ফুটবলের প্রতি ছিল তার প্রচণ্ড আকর্ষণ। তারই পরিক্রমায় মাত্র নয় বছর বয়সের স্থানীয় জুনিয়র ফুটবল লীগে আবির্ভাব ঘটে তার। ছিলেন উইং ফরওয়ার্ড। মাত্র দশ বছর বয়স থেকেই কোন ডিফেন্ডারকে বোকা বানাতে পারতেন। তাঁর ভেল্কিকে দর্শকরা বলতো ‘‘মাংকি ট্রিকস্‘‘। বেস্টের অভাবনীয় প্রতিভা তাকে মাত্র সতেরো বছর বয়সে ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেডে খেলার সুযোগ করে দেয়।
১৭ বছর বয়সে ইউনাইটেডের হয়ে অভিষেক। টানা ১১ বছর খেলেছেন রেড ডেভিলদের হয়ে। ১৯৬৮ সালে প্রথম ইউরোপিয়ান কাপ (এখনকার চ্যাম্পিয়নস লিগ) জেতা ইউনাইটেড দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। ওই মৌসুমে ক্লাবের হয়ে ৫৩ ম্যাচে করেছিলেন ৩২ গোল। মনে রাখবেন, বেস্ট কিন্তু স্ট্রাইকার ছিলেন না। মূলত ছিলেন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। পরের চার মৌসুমে আরও ৯৪ গোল। খ্যাতির হাত ধরে আসে অর্থ, আসে অন্ধকার পথে পা বাড়ানোর হাতছানি। নারী, মদ আর জুয়ার নেশায় নিজেকে শেষ করে ফেলেন। না হলে হয়তো তাঁর নাম উচ্চারিত হতো ফুটবলের সর্বকালের সেরাদের সঙ্গে একই কাতারে। সেই প্রতিশ্রুতি ছিলই। বেস্ট কতটা অপ্রতিরোধ্য ছিলেন সেটা বোঝা যাবে একবার এক ম্যাচে তাঁকে আটকানোর দায়িত্ব পাওয়া এক ডিফেন্ডারের কথায়। রয় ফেয়ারফ্যাক্স নামের সেই খেলোয়াড়টি বলেছিলেন, ‘আমি একবারই তাঁর সবচেয়ে কাছাকাছি যেতে পেরেছিলাম! যখন ম্যাচ শেষে আমরা হাত মেলাচ্ছিলাম।'’
তিনি যোগ দেবার পরে শুরু হয় ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড্ এর স্বর্ণযুগ। সেই বছর এফ্ এ কাপ পরের বছর এফ,এ,কাপ পরের বছর লীগ চ্যাম্পিয়ান শীপ ও ইউরোপীয়ান ক্লাব জিতে নেয় ম্যানচেষ্টার ইউনাইটেড। সে সময়ে ববি চার্লটন, ডেনিশ ল ও জর্জ বেষ্ট এর জোট ছিল যে কোন রক্ষণভাগের জন্য এক মূর্তিমান ত্রাস। বেস্টের বল কন্ট্রোল ও শূন্য বল দখলের ক্ষমতা ছিল অতুলনীয়। দু‘পায়েই ছিল প্রচন্ড শট । তিনি মাত্র ১৯ বছর বয়সে লীগে ২৮টি গোল করে হলেন সর্বোচ্চ গোলদাতা। ১৯৪৬ থেকে ১৯৭৮ পর্যন্ত তিনি উত্তর আয়ারল্যান্ডের জাতীয় দলের ৩৭ বার প্রতিনিধিত্ব করেন। মাত্র ১৯ বছর বয়স থেকেই ‘‘ফুটবলের বিটলস্‘‘ ফুটবল ম্যাজেসিয়ান‘‘ অভিধায় ফুটবল অনুরাগীর সমাদর লাভ করতে থাকেন। দর্শকদের এত অনুরাগ ও স্তুতি খুবই স্বপ্ল সংখ্যাক খেলোয়াডের জীবনে আসে।
এই ফুটবল কিংবদন্তীর কখনো ফুটবল বিশ্বকাপ খেলা হয়ে উঠে নি। আর এই কারণেই জর্জ বেস্টকে বলা হয় কখনোই বিশ্বকাপ না খেলা সর্বকালের সেরা ফুটবলার। ফুটবলীয় শক্তির বিচারে খর্বশক্তির দল উত্তর আয়ারল্যান্ডে জন্মেছিলেন বলে শুধু বিশ্বকাপ নয় বরং ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপেও খেলা হয়নি কখনো।।
বেস্ট ফুটবল মাঠে সেরা ছিলেন, ছিলেন মাঠের বাইরের সেরাও। কথায় তাঁর জুড়ি মেলা ভার। ছিল অসাধারণ রসবোধ।কয়েকদিন আগে ছিল তাঁর অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী। বেস্টকে স্মরণ করার সবচেয়ে ভালো উপায় সম্ভবত তাঁর কিছু অমর বাণীই আবার স্মরণ করা! আসুন বেস্টের এমনই কয়েকটি বাণীই জেনে নিই—
★ মদ খাওয়া একবার বাদ দিয়ে দিয়েছিলাম,অবশ্য তখন আমি ছিলাম ঘুমের মধ্যে। বাপরে, কি চিজ মাইরি!
★ একবার বলেছিলাম, গাজ্জার (পল গ্যাসকোয়েন) আইকিউ ওর শার্টের নম্বরের চেয়ে কম। এই শুনে ও আমাকে বলল, ‘আইকিউ জিনিসটা আবার কী?’
★ ১৯৬৯ সালে আমি একবার নারী ও অ্যালকোহল ছেড়ে দিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে বাজে ২০ মিনিট।
★ মদ, নারী এবং দামি গাড়ির পেছনে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি। এ ছাড়া আমার জীবনের বাকি সব কিছুই ছিল অপচয়। ( ওরেশাল্লা! কস কি ভাই এইগুলা?)
★ আমি কালো হয়ে জন্মালে কেউ পেলের নাম জানতেই পেত না।
★ আমি অনেক কিছুই মিস করি—মিস কানাডা, মিস যুক্তরাজ্য, মিস ওয়ার্ল্ড।
ব্যস, ফুটবলের সেরা ও কথাতেও সেরা জর্জ বেস্টকে নিয়ে এখনকার পোস্ট এই পর্যন্ত ই! আর কিছু লিখতে গেলেই মাথা খারাপ হয়ে যাবে রে ভাই!
© আহমদ আতিকুজ্জামান
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:৫৭