somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা . . . (ধারাবাহিক, সত্য ঘটনা অবলম্বনে।) পর্ব: ৪

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাইট ডিউটি অফিসারেরা সব বুঝিয়ে দিয়ে বিদায় নেবার কিছুক্ষন পর নাইট ডিউটি ডক্টর-ইন-চার্জ এলো। মধ্য বয়সী এশিয়ান মহিলা। সারারাত ডিউটি করে ক্লান্ত, এখন তারও যাবার পালা। আরেক বার কনফার্ম করলো শিশুটির বাঁচার সম্ভাবনা নেই। তার মৃত্যু এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তাই বলে চেষ্টায় কোন ক্রুটি রাখা যাবেনা। নাইজেল বাচ্চার নাম নোটবুকে টুকে রাখলো। এফিয়া বিইগাম (Afia Begum)। স্যাল নাইজেলকে শুধরে দিলো। বললো, এরা বেঙ্গলী ফাদার এন্ড মাদার। বেবীর নাম আফিয়া বেগম, এফিয়া বিইগাম না। "বিভিন্ন জাতির মানুষের নাম ইংরেজী অক্ষরে লেখা হলে উচ্চারণ ওদের মত না হয়ে ইংরেজদের মত হবে এটা স্বাভাবিক। আমরা পাবলিক সার্ভেন্টস্‌, আমাদের চেষ্টা করতে হবে প্রকৃত উচ্চারণ করার চেষ্টা করা। রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন ওয়ান অফ দ্য টপ প্রায়োরিটিজ। "

নাইজেলকে যথাসম্ভব বেঙ্গলী উচ্চারণ করার চেষ্টা করতে বলে ফোন নিয়ে ওয়ার্ডের বাইরে চলে গেলো স্যাল। হাসপাতালে যত কম রেডিও ব্যাবহার করা যায় সে চেষ্টা করে পুলিশ। ওয়ার্ডের ভেতর দুনিয়ার সব ইকুইপমেন্ট, রেডিওর ওয়েভ রেডিয়েশানের কারনে কখন কোন বিপদ হয় কে জানে? তাছাড়া স্টাফ এবং পেশেন্টদের প্রতি সৌজন্যবোধ বলেও একটা কথা আছে। ওয়ার্ডের ভেতর আবার মোবাইল সিগনাল পাওয়া যায়না, তাই স্যালকে বাইরে যেতে হল। প্রতি মুহুর্তের আপডেট কন্ট্রোলকে আর ডিউটি ইন্সপেক্টরকে পাঠাতে হচ্ছে। এর মধ্যে আরেক প্যাঁড়া শুরু হয়েছে। সি আই ডি থেকে ফোন আসছে বার বার, ডিউটি ডি.আই.(Detective Inspector) একটু পর পর আপডেট চাচ্ছে। কারন বাচ্চার মৃত্যু হবে, আসামীরা (মাতা-পিতা) গ্রেফতার হবে। এ্যারেষ্ট নোট, ইনিশিয়াল ইনভেষ্টিগেশনের সকল তথ্য ক্রাইম রিপোর্টে যাবে। প্রাথমিক সকল সাক্ষ্য-প্রমাণ (witness statements and evidences) নিয়ে, কম্পাইল করে আপলোড দেবে তারপর স্যাল আর নাইজেল মিলে কেইস হ্যান্ডওভার করবে। "বুঝলাম তোমরা সেকেন্ডরি ইনভেস্টিগেটরস্‌, আরে ভাই ইনিশিয়াল ইনভেষ্টিগেশন শেষ হোক তো আগে! মেয়েটা এখনও বেঁচে আছে ফর গড'স সেক!" সম্বিৎ ফিরে পেয়ে চারপাশে তাকায়। জোরে বলে ফেলেছিলো, নাহ্‌ আশেপাশে কেউ নেই। স্ট্রেস অভিজ্ঞ স্যালকেও কাবু করে ফেলেছে। নাইজেল বেচারা নতুন অফিসার, তাকে সাহস দিতে হবে।

একটু পর স্যাল ওয়ার্ডে ফিরে এলো। নাইজেলকে জিজ্ঞেস করলো, “এ পর্যন্ত ক’টা এ্যারেস্ট করেছো?”
নাইজেল বললো, “সাত, আট. . . কিংবা বিশ?” খানিকটা বিব্রত যেন।
ফিক করে হেসে ফেলে স্যাল। তারপর দ্রুত সিরিয়াস হয়ে বললো,
“লিসেন মেইট, দিস বেইবী ইজ ক্লিনিকলি ডেড। বাচ্চার ইনজ্যুরি দেখে আর তার বাবা মায়ের ভারবাল স্টেটমেন্ট থেকে ডাক্তাররা যা পেয়েছে এগুলো খুবই সন্দেহজনক। যে কোন সময়ে বাচ্চাকে অফিসিয়ালি ডেড ঘোষণা করা হবে। এই কেইসের অফিসার ইন-চার্জ তুমি। ডাক্টর ইন-চার্জের নাম সবার আগে নেবে। সাবজেক্ট এর ডিটেইল, তার মা বাবার ডিটেইল ইতিমধ্যে নোট করে নিয়েছ তাই না?”
নাইজেরল হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। শিশুটির এখন সাবজেক্ট। স্যাল এবার আসল কথা বললো,
“যখনই ডাক্তার আফিয়াকে ডেড ঘোষণা করবে সাথে সাথে তুমি মা এবং বাবা দুজনকে এ্যারেস্ট করবে। যেহেতু তুমি ইন-চার্জ হ্যান্ডকাফ পরাবে কি পরাবেনা সেটা একান্তই তোমার সিদ্ধান্ত তবে আমি হলে ড্যাডকে কাফ পরাতাম কারন সে সাইজে ডাবল। রিস্ক এ্যাসেসমেন্টের বিষয়টা মনে রাখবে, অফিসার্স সেইফটি ইজ প্যারামাউন্ট। চিন্তা কোরোনা, আমি সারাক্ষন তোমার পাশে আছি।” নাইজেলের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম দেখে স্যাল তাকে আশ্বস্ত করলো। স্যাল লেভেল-টু অফিসার। টেজার ট্রেইন্ড। হোলস্টারে ইলেক্ট্রিক টেজার-গান আছে ওটা দিয়ে পঞ্চাশ হাজার ভোল্ট শক দেওয়া যায়। যত ভয়ংকর আসামী হোক মূহুর্তে কাবু।

নাইজেল বললো, “একসাথে দুজন কখনো আগে এ্যারেষ্ট করিনি, আমি কি এ্যারেষ্ট রিজন এবং ক’শন দুবার আলাদাভাবে দেবো?”
স্যাল আবার বললো, “না না তার প্রয়োজন নেই, বাচ্চাকে মৃত ঘোষণার সাথে সাথে বাবা, মা দুজনই প্রচন্ড রিএ্যাক্ট করবে, আমার ধারনা অনেক শব্দ করে কান্নাকাটি করবে। এটা আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি কারন ওরা বেঙ্গলী, আমিও বেঙ্গলী। তুমি দৃঢ়ভাবে ওদের থামাবে, তরপর বলবে – ‘আফিয়ার মৃত্যুর ঘটনা সন্দেহজনক, তাই তোমাদের দুজনকে গ্রেফতার করা হল’। তারপর এ্যারেষ্ট কেন জরুরী সেটা বলবে, কমপক্ষে দুটো কারন তো আছেই ‘পুলিশি তদন্ত এবং পুলিশ কাস্টডিতে নিয়ে রেকর্ডেড ইন্টারভিউ, আর ‘অন্যের জীবন নাশ করা থেকে তাদের বিরত রাখা’ – তারপর ক’শন দেবে। একবারেই হবে। ডাক্তারের ঘোষণা থেকে শুরু করে এ্যারেষ্ট করে থেকে শুরু করে প্রিজন ভ্যানে তোলা পর্যন্ত অবশ্যই বডিক্যাম অন রাখবে। এনি কোশ্চেন?”
“আমি ক’শন ভুলে গেছি।” নাইজেল বললো। ওর হার্টবিট বেড়ে গেছে।
“দুর পাগল! কপাল মোছো।” স্বস্নেহ হাসি দিয়ে একটা টিস্যু এগিয়ে দিলো স্যাল।

নাইজেল ওয়ার্ডের এক কোনে, যেখানে নার্সদের কম্পিউটার গুলো আছে সেখান থেকে একটা চেয়ার নিয়ে আফিয়ার বেড থেকে খানিকটা তফাতে বসে অবজার্ভ করছে। তার ভিকটিম একটি ফুলের মত নবজাতক শিশু, নাম আফিয়া। তার সাসপেক্ট দুই জন, আফিয়ার মা এবং বাবা। কান্না পাচ্ছে নাইজেলের, এটা তার জন্য অস্বস্তিকর।

রয়েল লন্ডন হসপিটালের ছয় তলায় ‘সি’ ওয়ার্ড মোটামুটি বড়, চারটা বেড। চারটার মধ্যে দুটো বেড খালি কারন পেশেন্ট দুজন। এক দিকে আফিয়া, উল্টো দিকের বেডে ছয়/সাত বছরের একটা ছেলে। ছেলেটা ঘুমাচ্ছে, বেডে মা বসে আছে। দেখতে মেডিটেরানিয়ান বলে মনে হল। আফিয়ার বাবা এবং মা সর্বক্ষন আছে ওয়ার্ডে। এ মূহুর্তে বাবা নেই, হয়তো টয়লেটে বা বাইরে পরিবারের অন্যদের সাথে কথা বলতে গেছে। পিডিয়াট্রিক ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে বাচ্চার মা-বাবা ছাড়া অন্য কারো প্রবেশ নিষেধ। আফিয়ার বেডের পাশে হাঁটু ভেঙ্গে বসে একটানা কেঁদে যাচ্ছে তার মা। চিকন সুরে চিঁহিঁ কন্ঠে কাঁদছে। একটু খেয়াল করে বুঝতে পারলো কোরআন রিসাইট করছে। লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস-এ চাকরী না করলে কোরআন রিসাইট কি সেটাই জানতে পারতোনা নাইজেল। মনে হচ্ছে গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে আফিয়া। বাচ্চাটার দুহাতের বাহুতে কয়টা সুঁই ঢুকিয়েছে কে জানে? মুখ দিয়ে চলছে ভেন্টিলেশন। নাইজেল ভাবছে ফুসফুসের যে অবস্থা ভেন্টিলেশনে কাজ হবে? মণিটরের স্ক্রীনে হার্ট রেট ‘নাম্বার’ না দেখিয়ে ব্লীপিং লাভ আইকন দেখাচ্ছে, তার মানে হার্ট সচল তবে খুবই দুর্বল। ব্লাড প্রেসার লাইন প্রায় সরল রেখার মত, হাল্কা ইতিউতি উঠানামা করছে। জীবন প্রদ্বীপ নিভু নিভু, নাইজেল ভাবে। অক্সিজেন স্যাচ্যূরেশন ৬৫ আর ৭৫ এর মধ্যে উঠানামা করছে যা কিনা খুবই রিস্কি, ৭৫ এর বেশী হতেই হবে। নাইজেলের আবার অস্থির লাগছে। ৭৫ থেকে বাড়েনা কেন? রেসপিরেশন লেভেল ১৯, নাইজেল জানেনা এটা সেইফ কি আনসেইফ। টেম্পারেচার ৩৬.৪ বা ৩৬.৫, নরমাল।

চেয়রে বসে নাইজেল অপেক্ষা করছে। বাচ্চাটা মারা যাবে, তারপর বাচ্চার মা এবং বাবাকে এ্যারেষ্ট করবে।


চলবে. . .
পর্ব: ১
পর্ব: ২
পর্ব: ৩

সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণপরিষদের সাথে বিএনপির সখ্যতার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭


বিএনপির নেতাদের সাথে গণপরিষদের নেতাদের ঘন ঘন সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে।বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন বিএনপি হাই কমান্ড থেকে পটুয়াখালী -৩(দশমিনা-গলাচিপা) আসনের নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২



সুকান্তর একটা কবিতা আছে, দুর্মর।
"সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।" মানুষের ভবিষ্যৎ বলা সহজ কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×