-ভাই,একটা পয়সা...
- পয়সা নেই ভাই।
-মিছে কথা কন ক্যান?পয়সা নাই মানে?এত বড়ো মানুষ আর পয়সা নাই?
-সত্যিই পয়সা নাই।টাকা আছে চলবে?
-চলবো।দ্যান
অবাক হয়ে বলল রোগা পাটকুলি একটা ভিক্ষুক
মিসির আলি ১০০ টাকার একটা নোট এগিয়ে দিলেন।রিকশায় বসে আছেন। হুড খোলা রোদ রাগছে তাও তিনি হুড খুলে বসে আছেন।
-১০০ টাকা!নিমু না!!
-নিবেন না কেন?
-সবাই দেয় ৫ টাকা ১০ টাকা আপনে এতো দিবেন ক্যান?
মিসির আলি ১০০ টাকাটা পকেটে ভরে ১০ টাকার একটা নোট বের করে দিলেন।
- ধন্যিবাদ।আল্লার কাছে খাস দিলে দু'য়া করলাম আপনি অনেক কটি পতি হইবেন।
-কোটি-পতি হওয়ার জন্য তো আপনাকে দু'য়া করতে বলিনি আমি।
ভিক্ষুকটি সরে গেলো।লোকটার মাথায় নিশ্চিত গন্ডগোল আছে।
||
-আপনার জন্য সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছি।এতক্ষন কোথায় ছিলেন?
-একটু কাজ ছিলো।অপেক্ষা করছিলেন কেন?কোন বিশেষ দরকার?
-নাহ।খোঝ নিতে এলাম আর কি।আপনার এইবারের কাজের মেয়েটাতো খুব ভালো।এমন কাজের লোক পাওয়া মুশকিল এখন।আমাকে তিন কাপ চা করে খাইয়েছি।এমন স্বাদের চা যে এইটুক্কু একটা বাচ্চা বানাতে পারে তা আমি কল্পনাও করিনি।
-হুঁ।
সমস্যা শুরু হয়ে গেছে।মিসির আলি 'হুঁ'বলা শুরু করেছেন।একবার হুঁ বলা মানে হুঁ বলতেই থাকবেন।তবে এই থেকে পরিত্রান পাওয়ার একটা উপয় আছে মিসির আলিকে প্রশ্ন করতে হবে।প্রশ্ন করলে।তো আর হুঁ বলতে পারবেন না!
প্রশ্ন করা শুরু করলো নাজিমুদ্দিন
-শরীর খারাপ নাকি?
-হুঁ।
-খাওয়া দাওয়া করছেন ঠিক মতো?
-হুঁ
নাহ,হুঁ হুঁ করেই যাচ্ছেন।আর একবার ট্রায় করতে হবে যদি হুঁ বলেন তাইলে ভাবতে হবে থিওরিতে গোলমাল আছে।
-এখন কি ঘুমাবেন?
-হ্যা।
নাজিমুদ্দিন মনে মনে খুশি হলো কারন থিওরি ভুল নেই।
-আমি কি তাহোলে চলে যাবো?
-যান।দাড়ান একটা জিনিস দেখানোর আছে আপনাকে।
মিসির আলি একটা খাতা নাজিমুদ্দিন কে দিয়ে বললে
-এটা দেখুন।
নাজিমুদ্দিন দেখলেন।নামতা লেখা।৬ এর ঘর পর্যন্ত।
-হুম।নামতা লেখা।
-এটা মৃত্তিকার লেখা।
-ও
-মজার বিষয় কি জানেন?
-কি?
-আমি কিন্তু ওকে মাত্র ৩ ঘর পর্যন্ত নামতা শিখিয়েছি।কিন্তু ও ৬ ঘর পর্যন্ত লিখে ফেলেছে!খুব ব্রিলিয়ান্ট মেয়ে।
-ও!
-আমার মনে হয় এবার ও ঠিক আছে।ও কে এবার নিয়ে যেতে পারেন।
অবাক হয়ে গেলেন নাজিমুদ্দিন সাহেব।
-নিয়ে যাবো মানে?কোথায় নিয়ে যাবো?
-আর অভিনয় করতে হবে না,আমি সবটা জেনে এসেছি।মৃত্তিকা আপনার মেয়ে।ক'দিন আগে বলেছিলেন মনে আছে যে আপনার স্ত্রী ফিট হয়ে পড়ে গেছেন?শরীর খারাপ।আমি আপনাদের বাসা থেকেই ঘুরে আসলাম।আপনার স্ত্রীর শরীর খারাপ না।মেয়ের শোকে ভেঙে পড়েছে।মিথ্যে না বললেও পারতেন।এবার কারনটা বলুন।এই সব করতে গেলেন কেন?
নাজিমুদ্দিন সাহেবকে অনুতপ্ত মনে হলো।
-আসোলে আমি চেয়েছিলাম আমার মেয়ের ভিত টা যেন শক্ত থাকে, তাই আপনার এখানে পাঠিয়েছিলাম।বর্তমানে লেখা পড়ার যা অবস্থা তাতে ভিত শক্ত হওয়ার কোন উপায় আছে কি?
-নাজিমুদ্দিন সাহেব।ঘটনা খুলে বলুন।এটা মোটেও মূল কারন না।
-মূল কারন কি আমার স্ত্রী আপনাকে বলেছেন?
-না বলেন নি।
-ও।মৃত্তিকা কি বলেছে ওর সমস্যাটা?
-কিসের সমস্যা?না।কোন সমস্যার কথা বলেনি।
-ও।তাইলে বোধহয় সুযোগ পায়নি।
-নাজিমুদ্দিন সাহেব,অনেক্ষন বাইরে ঘুরেছি রোদে শরীর টা খারাপ লাগছে মূল কারনটা তাড়াতাড়ি বলতে পারলে বলুন নাইলে মৃত্তিকাকে নিয়ে চলে যান।
-বলছি আমি।মৃত্তিকারই বলার কথা ছিলো।সে যখন বলেনি আমিই বলছি।
মিসির আলির কপালে ভাজ পড়ল।এই ভাবে তিনি আগে কখনো নাজিমুদ্দিন কে দেখেননি।
-মৃত্তিকার একটা অসাধারন ক্ষমতা আছে।
মিসির আলি সিগারেট ধরালেন।
-কি ক্ষমতা?আপনি বলতে থাকুন।থামবেন না।
-আপনি বিশ্বাস করবেন কি জানি না।আসোলে এটা সত্যি কি না সেটা যাচাই করার জন্যই আপনার এখানে পাঠিয়েছিলাম।মৃত্তিকা ভবিষ্যৎ দেখতে পারে!
মিসির আলি সিগারেটে লম্বা একটা টান দিয়ে ধোয়া ছাড়লেন।তারপর বললেন,
-ভবিষ্যৎ দেখে, কেমন করে বুঝলেন?নিশ্চয় কোন প্রুভ আছে?প্রুভটা বলুন।
-জ্বি।প্রুভ আছে।বহু প্রুভ আছে! একবার মৃত্তিকা আর আমরা দু'জন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি।ও হঠাৎ বলল,কি সুন্দর আকাশ!বাবা বৃষ্টি হলে ভিজবো তো?আকাশে তখন প্রখর রোদ।বৃষ্টি হওয়ার নাম গন্ধও নেই।
আমি বললাম,বৃষ্টি হবে কেন?মৃত্তিকা বলল, ভিজতে দেবে কি না বলো।আমি বললাম,হ্যা দেয়া যেতে পারে।
-আর তারপরেই বৃষ্টি নামলো তাই না?
-জ্বি।তারপরেই না ঠিক।বিকালে নেমেছিলো।
-বুঝেছি,এবার আপনি বিদেয় হন।আর প্রুভ লাগবে না।মৃত্তিকাকে নিয়েই বিদেয় হন।রোদ হওয়া মানেই যে বৃষ্টি হবে না তার কোন মানে নেই।আর আমার সাথে এই ধরনের।খেলা খেলবেন না প্লিস।এগুলো ভালো লাগে না।
-এগুলো মজা না ভাই।বিশ্বাস করুন।ও সত্যিই দেখতে পাই।আচ্ছা এবার আরও একক্টা ঘটনা বলছি..একবার একটা টিয়া পাখি আনলাম।মৃত্তিকার সে কে খুশি।খুশিতে আটখানা।কিন্তু হঠাৎই আনন্দ নুয়ে গেলো।আমি বললাম,কি হয়েছে মা।ও তখন বলল,বাবা টিয়া পাখিটাওতো বাজবে না।তুমি একে ছেড়ে দাও, এর মৃত্যু আমার সহ্য হবে না।আমি অবাক হয়ে বললাম কি বলছিস এসব?মরবে কেন পাখিটা?ও বলল,মরবে বাবা মরবে।পরের দিন সকালে যেয়ে দেখি সত্যিই মরে পড়ে আছে পাখিটা!এবার বিশ্বাস করছেন?
-না।একজন মানুষের পক্ষে কখনো ভবিষ্যৎ দেখা সম্ভবনা।উহু।কক্ষনো সম্ভব না।আপনি এবার বিদেয় হন।
-আচ্ছা চলে যাচ্ছি।অন্তত মৃত্তিকা থাক?ওর মুখ দিয়েই না হয় শুনবেন।
-না তার দরকার নেই।কারন মৃত্তিকার এই ক্ষমতা আমিও লক্ষ্য করেছি!আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম এই জন্যেই।যদি আপনার স্ত্রী কিছু বলতে পারেন।তবে আপনার স্ত্রীর সাথে কথাই হলো না।উনি খুব অসুস্থ।
উনি যে অসুস্থ হয়ে পড়বেন তা আমি মৃত্তিকার কাছ থেকেই শুনেছি।ঠিকানাও ও দিয়েছে। আর মৃত্তিকা যে আপনার মেয়ে তা আমি অনেক দিন আগেই টের পেয়েছিলাম।
নাজিমুদ্দিন অবাক হয়ে মিসির আলির দিকে।তাকিয়ে রইলেন
-আপনি সবটা জেনে গেছেন?!
-হুঁ
-তারমানে আপনি বিষয়টা নিয়ে ভাবা শুরু করেছেন?
-হুঁ
-নাজিমুদ্দিন সাহেব আনন্দের চোটে এমন জোরে দাঁড়িয়ে পড়লেন যে পেছন থেকে চেয়ারটা ধপাস করে পড়ে গেলো!
-যান এবার।
-মৃত্তিকাকে নিয়ে যাবো?
-হুঁ।
যাওয়ার সময় মৃত্তিকা বলল,চাচা যাচ্ছি।
-যাও মা।
-আপনি যাবেন আমাদের বাসায়?
-না মা।এখন না পরে একদিন।
-কেন চাচা?চলুন না।
-মৃত্তিকা,অতি বুদ্ধিমান আর রুপবতী নারীদের থেকে দূরে থাকতে হয়।
-ও।
২ মাস পর
======
মিসির আলি মৃত্তিকাদের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন।২ মাস আগের মিসির আলি আর ২ মাস পরের মিসির আলির মধ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে।আগে মিসির আলি ছিলেন,রোগা-পাটকুলি,অসুস্থ। এখন অনেকটা সুস্থ তিনি আর একটু মোটাও হয়েছেন!কলিং বেল টিপেছেন সাত মিনিট আগে।এখনো কেও দারজা খোলেনি।মিসির আলি মৃত্তিকার জন্য একটা বই নিয়ে এসেছে,বইয়ের নাম,Common Mistakes in Mathematics.
দরজা খুললেন নাজিমুদ্দিন। খুলেই অবাকিত চোখে তাকিয়ে রইলেন।
-আরে মিসির আলি সাহেব আপনি?আসুন আসুন।ইশ!না জানি কতক্ষন বাইরে দাঁড়িয়ে আছে!বললাম দরজা খুলতে অথচ কাজের বুয়াটা খোলে নি...এভাবে বুয়াটাকে বিদেয় করতে হবে।ফাকিবাজ টু দি পাওয়ার সেভেন!ভেতরে আসুন।বসুন বসুন।
-হুম।
-কি খাবেন বলুন।চা কফি?আপনি আজ আসবেন এটা মৃত্তিকা আমাকে গতকালই বলেছিলো!
-কিছু খাবো না।ব্যাস্ত হবেন না।কিছু কথা আছে সেগুলো বলেই চলে যাবো
-তাই হয় নাকি?এই প্রথম আসলেন আমাদের বাড়ি কিছু না খেলে কেমন করে হবে?একটু বসুন আমি আসছি...
নাজিমুদ্দিন সাহেব দু কাপ কফি নিয়ে এসেছেন।
-এবার বলুন।কথাগুলো কি মৃত্তিকার ব্যাপারে?
-জ্বি।
-মৃত্তিকাকে কি ডাকব?
-এখন না।অবশ্য না ডাকলেও সমস্যা নেই,মৃত্তিকা পর্দার আড়াল থেকে সব শুনছে. ...
নাজিমুদ্দিন হতচকিয়ে গেলেন।
-শুনুন।কথা মাঝে কথা বলবেন না এতে ফলো নষ্ট হয়ে যায়।আমি শেষ করবো তারপর প্রশ্ন করবেন।
-জ্বি আচ্ছা
-গত দুই মাস ধরে আমি মৃত্তিকার ব্যাপারে ভেবেছি,যা পেরেছি তথ্য ঘেটেছি।সব কিছু ভেবে যা পেলাম সেটা হলো,ভবিষৎ দেখা বলে আসোলেই কিছু নেই।কেও সেটা পারবে না।পারার কথাও না।সৃষ্টিকর্তা কাওকে এই ক্ষমতা দিয়ে পাঠায়নি।পাঠালে তার কোন কদর থাকবে না।অনেকে আছে যেমন মৃত্তিকা এরা তাদের বুদ্ধি দিয়ে বলে থাকে,মিলে যায়। এরকম একটা পদ্ধতি আছে সিক্সথ সেন্স বলে।অথাৎ আগে থেকে অনুমান করে বলা।আমার মতে এই সিক্সথ সেন্স বলেও কিছু নেই।যারা প্রচন্ড ক্ষুরধার মস্তিষ্কের অধিকারী তারা কিছু সূত্র দেখেই বলে দেয় যে এটা হবে।আর সেটা হয়ে গেলেই সবাই ভাবে সে ভবিষৎ দেখতে পারে।মৃত্তিকার ব্যাপারেও ঠিক একই।মৃত্তিকার সব ব্যাপার পর্যালচনা করলে দেখবেন একটা না একক্টা সূত্র বা ক্লু আছেই,যা আমাদের চোখে পড়েনি,অথচ এই ছোট্ট মেয়েটা তা দেখে ফেলেছি।অনেকে বলে অনেক সাধুরা নাকি ভবিষৎ বলে দিতে পারে।আশা করি আর বলতে হবে না সাধুদের ব্যাপারটা।এগুলো ভন্ডামি।সুতরাং মৃত্তিকার এই ব্যাপারের কোন টেনশান করার কিছু নেই।আপনি আমাকে আরও একটা ব্যাপার বলেছিলেন,মৃত্তিকার নাকি প্রায়ই নাক দিয়ে রক্ত পড়ে!মাথায় ব্যাথ করে।আপনি বলেছেন এগুলো হয় তার ওই ভবিষৎ দেখার কারনে।আসোলে এটা মোটেও কারন না।আপনি একবাত ওর মাথাটা সিটি স্ক্যান করান নিশ্চয় কোন সমস্যা আছে।ডাক্তার দেখান।এর সাথে ভবিষৎ দেখার কোন সম্পর্ক নেই।আমার কথা শেষ।আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে বলুন,না হলে মৃত্তিকাকে ডাকুন।
নাজিমুদ্দিন কাপে চুমুক দিতেও ভুলে গেছে।
পর্দার আড়াল থেকে মৃত্তিকা বের হয়ে এলো।
মিসির আলি বললেন,
-কেমন আছো মা?
মৃত্তিকা জবাব দিলো না।
-এই বইটা নাও,এটা তোমার জন্য এনেছি।
মৃত্তিকা বই নিলো না।
-আচ্ছা এখানে রেখে গেলাম।ভালো থেকো মা।
মিসির আলি কয়েকদিনের মধ্যেই মৃত্তিকার ব্যাপারটা ভুলে গেলেন।আর কোন খোঝ খবর নিলেনও না।যদি নিতেন তাহোলে জানতে পারতেন,ঢাকার এপোলো হাসপাতালে রাত্রি ১.৩৪ মিনিটে মৃত্তিকা মারা গেছে।
**মিসির আলিকে নিয়ে এই প্রথম লিখলাম,সবার পরামর্শের কারনে এরপর থেকে চরিত্র সৃষ্টি করেই লিখব।ভুল ত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি।রেটিং ও দিতে পারেন।