ছোট্টবেলায়, আপু বইটা ধরিয়ে দিয়েছিলো।প্রচন্ড দুষ্ট ছিলাম বলে আপু জাফর স্যারের নাট-বল্টু বইটা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলো,যা পড় এটা। আমি মাসখানেক লাগিয়ে 'নাট-বল্টু'বইটা শেষ করে বলেছিলাম,আর আছে জাফর স্যারের?তারপর সেই থেকেই শুরু।প্রচন্ড বইপড়ার ক্ষুদা।বাবা-মা কেও বই পড়ে না।বই পাবো কই?টিফিনের টাকা জমাতে শুরু করলাম।কিন্তু সেটা দিয়ে আর কতই বা সম্ভব?তবে, 'সেবা'ছিলো পাশে।
আমার বোন একের পর এক বই দিয়েও ক্লান্ত।তবে সে,বড়দের বই থেকে আমাকে আলাদা রাখত।এই জন্য তাকে এত্ত গুলো ভালোবাসা!তবে তখন এই কথাটা বুঝতামনা।তখন শুধু ভাবতাম,বই মানেই তো বই,বড় ছোট কি?কোন এক কারনে,হুমায়ূন আহমেদ স্যারের বই ও আমাকে পড়তে দিলো না আপু।হুমায়ূনীয় স্বাদ থেকে পুরোপুরো বঞ্চিত!একদিন দেখি আপুর ঘরে একটা বই পড়ে আছে।হেভি মোটা(তখনকার হিসাবে হেভি মোটা)।খুটিয়ে খুটিয়ে নাম পড়লাম।বইয়ের নাম,অপেক্ষা।লেখকের নামও খুটিয়ে খুটিয়ে পড়লাম।লেখকের নাম খুটিয়ে পড়ার কারন হচ্ছে,স্কুলের পরীক্ষায় লেখক পরিচতি থেকে প্রশ্ন দিতো।লেখকের নামের বানান,জন্ম-মৃত্যু এসব মুখস্ত করতে হতো। তাই লেখকের নাম খুটিয়ে পড়তাম।লেখকের নাম,হুমায়ূন আহমেদ।
বইটার ফ্লাপ থেকে লেখা পড়লাম।মাথার উপ্রে দিয়ে গেলো!কি লেখা এসব?আপুর দিকে তাকালাম।আপু বলল,যা নিয়ে যা।কিন্তু খবরদার পৌসু দিন ফেরত দিতে হবে,এটা আমার বান্ধবীর বই।আর বইতে যদি একটা আচঁর ও পড়ে তাইলে কান টেনে লাল করে দেবো। বুঝেছিস?আমি জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে বললা,জ্বি।বুঝেছি।
আপু মানেই ডেঞ্জারাস!কানটেনে লাল করে দেবে যখন বলেছে তখন দেয়ার চান্সই বেশি।
আপু বলল,১৫০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়বি।পড়ার পর আমার কাছে আসবি।এক সাথে কাঁদবো।
আমি ১৫০পৃষ্ঠা পরে আপুর কাছে গেলাম।আপু বলল,কিছু বুঝেছিস?আমি জোরে জোরে মাথা নেড়ে বললাম, জ্বি বুঝেছি।আসলে কিছু বুঝিনি।ফ্লাপের লেখা যেমন মাথে উপ্রে দিয়ে গিয়েছিলো, ভেতরেও তেমন উপ্রে দিয়ে গেলো।সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে,চরিত্রের নাম মনে থাকে না!হুমায়ূন আহমেদ মা কেও যেমন নাম ধরে ডেকেছেন বাবাকেও ডেকেছেন আবার দাদিকেও নাম ধরে ডেকেছেন।শুধু নাম ধরে না পুরো নাম ধরে ডেকেছেন।এসব পড়ে তো মাথা ঘুলিয়ে গেলো।
আপু বলল,যা।পুরোটা পড়।
কাঁদা বা এই ধরনের কিছুই করলো না।
আমি পড়া শেষ করে দিয়ে আসলাম।সেই কাঁদা আর হলো না।আসোলেই আমি তখন বুঝতেই পারেনি,আপু কেন ১৫০ পৃষ্ঠা পড়ে, কাঁদার কথা বলল?একসাথে কাঁদতে যাবো কেন?কাঁদার মতো তো কিছুই হয়নি।
আজ অনেক দিন পর।
গত পৌসুদিন বইয়ের দোকানে গিয়েছিলাম।ঢাকায় বইমেলা চলছে।বইমেলা যাওয়ার চান্স নাই।তাই এখান থেকে বই কিনতে হবে।আমি দোকানদারকে বললাম,ফেলুদা সমগ্র ১, লোকাল প্রিন্ট দিন আঙ্কেল।আঙ্কেল বের করে দিলেন।আমি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফেলুদা সমগ্র বইটা দেখছি।বইটা পড়া অনেক আগেই শেষ সংগ্রহে রাখাব বলে কেনা।হঠাৎ হুমায়ূন আহমেদ সেকশানে চোখ গেলো। এক পলকে যে বইটার নাম চোখে পড়ল সেটা হচ্ছে,অপেক্ষা।বইটা নিয়ে আসলাম।
১৪৬ পৃষ্ঠা এসে বেধে গিয়েছি।আর পারছি না।কিভাবে পড়ব?চোখে ঝাপসা নিয়ে কি পড়া যায়?এমন করে লেখে কেমনে?কি অসাধারন লেখা।সাথে যাথে বোনকে ম্যাসেজ দিলাম,"অপেক্ষা বইটা পড়ছি।১৫০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত শেষ।বাসায় আসবা কখন?একসাথে কাঁদবো"
আপু সিন করে রেখে দিলো।কোন রিপ্লে দিলো না...
"সৃষ্টিকর্তা যাকে দেন উজার করে দেন যাকে দেন না তাকে কিছুই দেন না'
বই:অপেক্ষা
লেখক:হুমায়ূন আহমেদ।
প্রকাশনী:আফসার ব্রাদার্স
মূল্য:৩০০ টাকা মাত্র(গায়ের মূল্য)
পড়ার আমন্ত্রন রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৫১