somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিরালা

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ট্যাক্সি থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলো মাহিন।সামনে দুইতলা একটা হোটেল। হোটেলের সামনে একটা জং ধরা সাইনবোর্ড,সবুজ কালি দিয়ে লেখা,
নিরালা
আবাসিক /অনাবাসিক
প্রো:কুদ্দুস আলি শেখ
ভাগ্যকূল মিষ্টান্ন ভান্ডারের পূর্ব পাশ্বে, কলারোয়া
'হুঁম এই হোটেলটাই'
হোটেলের অবস্থ্যা খুব একটা যে ভালো তা বলা যাবে না।কারন দরজার সামনে কিছু মাছি উড়ছে।পাশে জিলাপি বানানো হচ্ছে, এই জন্য বোধহয় মাছি।একটা কাচের ছোট্ট ঘর তার মধ্যে সিঙ্গারা। জলন্ত চুলা।গরম গরম জিলাপি তাই ভেতরে ঢুকেই মাহিন মোটামুটি ভিড় দেখতে পেলো।হোটেলের মালিককে সহজেই চেনা গেলো কারন তিনি ক্যাশিয়ারের চেয়ারে বসে আছে।পাশে একটা ফ্যান চলছে,ফ্যান দিয়ে ঘড় ঘড় জাতীয় শব্দ হচ্ছে।লোকটার সামনে সিঙ্গারা আর জিলাপি।৩ টা সিঙ্গারা আর এক বাটি জিলাপি।খদ্দের দের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন আর সিঙ্গারায় কামড় বসাচ্ছেন আর মাঝে মাঝে 'ঘররররর....'জাতীয় শব্দ করে ঢেঁকুর তুলছেন।এই ঢেঁকুর মোটে সহ্য করতে পারেনা মাহিন, তাই নাকে রোমাল চাপা দিয়ে ক্যাশিয়ার,এই হোটেলের মালিক কুদ্দুস আলি শেখের কাছে গেলো।
-ভাই, একটা রুম হবে?
-উঁ।কি কইলেন?
খদ্দের দেখতে এতই ব্যাস্ত যে মাহিনকে খেয়ালই করেনি কুদ্দুস আলি শেখ।
-বলছি একটা রুম হবে?
-অ।হ্যায়,হইবো।এসির হাওয়া খাইবার চান?না ফ্যানের বাতাস
বাবা এসিও আছে এই হোটেলে।মাহিন অবাক হয়ে যায়।
-এসি কত? আর নন এসি কত?
-এসি পার ডে পইরব আপনার,স্যাতশ টাকা।আর নুন এসি পইরব ফাচ'শ টাকা।
লোকটা পাঁচ'শ কে ফাচ'শ বলল।ছোট্টবেলায় অনেক বাচ্চা 'প'বলতে পারে না।যেমন, পাপা রে বলে ফাফা।
-এসি সহ নিবো।
-নিইলা নিইব্যেন আমার কি?তয় এসি চলমু না।এসিতে টিভির রিমোট দিয়ে ঘা দিলে হইতে পারে, তবে সিওর আছি না।
-এসি চলবে না তাহোলে এসি রুম কেন নিবো?নন এসি দিন তাহোলে।
-নিলে নিব্যেন আমার তয় কি?
লোকটার বাজে বকার অভ্যাস আছে। বাচাল টাইপের লোকদের অপছন্দই করে মাহিন।তার ছোট্ট ভাই আদীবকে সে দাম দেয় না কারন,সে সেকেন্ড চুক্তিতে কথা বলে!সেকেন্ডে সেকেন্ডে তার কথা বলা চাইই চাই।এই জন্যে ম্যাসেঞ্জারে সে আদীবকে পুরো একদিন ব্লক দিয়ে রেখেছিলো!
-এটাচ বাথ্রুম হবে তো?
-এটাচ বাথ্রুম নিইল্যা একশু টাকা এক্সট্র‍্যা দেওয়ান লাগব।
আজব জায়গায় আসোলেই।মনে মনে ভাবল মাহিন।
-আচ্ছা তাইই দিন।রুমের চাবি দিন।
-একটু অপেক্ষ্যা করান লাগবো।
-কেন?
-খোরশেদ গিছে পরিষ্কার করতে।বেশি সময় লাগব লাগবো না।বোঝেনই তো ব্যাপার স্যাপার।৫ মিনিট বহেন।ওই ছোফায় বহেন।
-'ব্যাপার স্যাপার'বলতে কি বোঝাতে চাচ্ছেন এই ভদ্রলোক?
সরু চোখে তাকালো মাহিন
-সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস আছে একখান সিগারেট ধরান।সিগারেট শেষ হওয়ার সাথে সাথেই দেখবেন রুম সাফ শ্যাষ।খোরশেদ খুব ভালা পুত।সাফাই করতে টাইম ল্যাগে না হের।
-মাহিন কোন উত্তর না দিয়ে বাইরে তাকালো।জ্বলন্ত চুলা, গরম জিলাপি।ব্যাস্ত রাস্তা।
-সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস নাই না?ফোকলে হেসে প্রশ্নটা করল, কুদ্দুস আলি শেখ।
এইসব প্রশ্নের উত্তর না দিলে লোকে বেয়াদব বলবে তাই অনিচ্ছাসত্ত্বেও উত্তর দিলো মাহিন।
-খাই!
-ধরান না কেন?স্টক নাই?আমার কাছে আছে, নেন।
-আছে, আমার কাছে।ধন্যবাদ আপনাকে।
সাত মিনিট হবে হবে এমন সময় লোকটা আবার কথা বলে উঠল,
-আপনের রুম রেডি,যাইতে পারেন।
-চাবিটা দিন।কত নং রুম?
-২৩৩ নং রুম।সিড়ি দিয়া উইঠ্যা বা দিকে।
-ধন্যবাদ।
মাহিন চাবি নিয়ে যাবে এমন সময় লোকটা আবার বলল,
-সার্ভিস লাগবো নয়?
-সার্ভিস মানে?
-অঁ।কিছু না যান।
বলেই লোকটা ঘররররর....করে আবার ঢেঁকুর তুলল।
মাহিন মনে মনে লোকটাকে ধন্যবাদ দিলো এতক্ষন ঢেঁকুর না দেয়ার জন্য!
রুম দেখে আশ্চর্য্য না হয়ে পারল না, মাহিন।বাহ্যিক দিক দিয়ে হোটেল কে যদি কেও বিচার করে তাহোলে সে জীবনে সেরা ভুলটা করবে!চমৎকার ঘর।ঘরের সাথে একটা বারান্দাও আছে।বারান্দা দিয়ে সকাল ১১ টার ঝলমলে রোদ পড়েছে।লোকটার সাথে কথা বলে যা মেজাজ খারাপ হয়ে গেছিলো ঘরটা দেখে সেই মেজাজ ফুরফুরা হয়ে গেলো মাহিনের।বাথ্রুমো চমৎকার।
কাপড় ছেড়ে মাহিন বাথ্রুমে গেলো ফ্রেশ হওয়া দরকার। সে এখানে এমনি এমনি আসেনি!
রাতে মাহিন শুয়ে শুয়ে গার্ল্ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলছে এমন সময় গেট ধাক্কার আওয়াজ পেলো।মাহিন ঘড়ি দেখল, রাত ১১:১৪ এই সময় কে আসবে?
-কে?
বলে গেট খুলল মাহিন।একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে।চোখে পানি!মনে হচ্ছে অনেক কস্টে পানি আটকে আছে।হাতে চুড়ি,পায়ে নুপুর,মেক আপ,টিপ, কাজল দিয়ে সুন্দরী সাজার চেস্টা।তবে এসব না করলেও তাকে সুন্দরী বলে চালিয়ে দেয়া যায় অনায়াসে।
-কি চান?
-ভেতরে ঢুকতে দিবেন না?
বলেই মেয়েটা ঘরে ঢুকে খাটের পর বসে পড়ল!
-আজব।কি করছেন টা কি?আপনি কে?
মহিলাটা যেন তার কথা কানেই নিলো না।সে খাটের ওপর উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ি খুলতে লাগল,আর কাদতে কাদতে জোরে চেচাতে লাগল,
-নিন আসেন।আসছেন না কেন?আসেন।আসেন আসেন....
-মাহিন রীতিমত অবাক।কাওকে ডাকবে কি না বুঝতে পারছে না।
এমন সময় মেয়েটা খাটে বসে কাদতে লাগল,মিন মিন করে বলতে লাগল,'আসেন!'আসেন'
-এমন করছেন কেন?শাড়ি পরেন প্লিস।কি হয়েছে আপনার?
মেয়েটা যেন একটু অবাকই হল।বলল,আসবেন না?
-কোথায় আসব?এইসব পাগলামি বন্ধ করেন প্লিস।কি হয়েছে বলুন।
-আপনি অন্য সবার মত না।
কথাটা বলেই সে মাহিনের পা জড়িয়ে ধরল,স্যার আমাকে বাচান। বাচান প্লিস।
-আরে আরে কি করছেন।উঠুন।খুলে বলুন কি হয়েছে।
-গেট টা একটু দিবেন?
-কিছু ভাবল মাহিন,তারপর গেট টা দিয়ে আসলো।
এবার বলুন।
-স্যার আমি গরিব ঘরের মেয়ে।এই হোটেলের মালিক,কুদ্দুর শেখ আমার বাড়িতে টাকা দিয়ে আমাকে কিনে নিয়েছে স্যার!আমাকে বাচান।
-সব শুনল আদীব।সব ঠিকই আছে তাহোলে! আচ্ছা আপনি পুলিশকে বলছেন না কেন?
-ওরা যেয়ে হুমকি দেয় স্যার।টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে তাই আমি এখন বিক্রিত!
-আচ্ছা। আমি সাহায্য করব আপনাকে।যান চলে যান।
-স্যার সত্যি তো স্যার?
-হুঁ। সত্যি।যাও।আচ্ছা তোমার মতো আরও কি কেও আছে?
-আছে স্যার।অনেক আছে।সবার একই দশা!বাচান স্যার প্লিস।
-আচ্ছা।যাও তুমি এখন।

রাত ১ টা।
হুলুস্থুলু পড়ে গেছে হোটেলে।কারন চারিদিকে পুলিশ ঘেরাও করে নিয়েছে।
কুদ্দুর আলি ঘুম। গভীর ঘুম।দরজা ধাক্কার শব্দ শুনে বেশ বিরক্তই হল কুদ্দুস আলি শেখ।দরজা খুলে দেখে,দুদিন আগে আসা সেই আগন্তুক।মাহিন।
-কি চান?এত রাতে?আপনার যা লাগবে খোরশেদ কে কন।
-শীঘ্রি আসেন না।আপনার হোটেল পুলিশ ঘেরাও করেছে।
-মানে?
কিছুই বুঝতে পারছেন না কুদ্দুস আলি শেখ।
-মানে বলার সময় নেই।আমার সাথে আসুন তাড়াতাড়ি, পালাতে হবে।
কুদ্দুস আলি কিছু বলতে যাচ্ছিলো,মাহিন তাকে সে সুযোগ দিলো না।হাত ধরে টেনে নিয়ে চলল।একটা ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো সে
বাইরে চেচামি দেখে কুদ্দুস আলি শেখ এতক্ষন চুপ করে ছিলো।এখন ঘরে এসেসে বলল,এবার বুঝান তো কি হইচ্চে।
-আপনার হোটেলের সব কিছু পুলিশ জেনে গেছে।এখন তারা আপনার হোটেল ঘেরাও করেছে।আপনাকে খুঝছে।
-কিছুতেই সম্ভবন হইতে পারে না এইডা।এখানকার পুলিশ ইন্সপেক্টরকে মাসে মাসে আমি ট্যাকা দিই।উনি প্রায়ই এহানে রাত কাটিয়ে যান।সে কুছুতেই এই কাম করতে পারবে না।
-মুচকি হাসল মাহিন।আপনি বোধহয় জানেননা,নতুন অফিসার এসেছেন,বলেই সে হ্যান্ডকাফ বের করল।
কুদ্দুস আলি শেখ পুরো পুরো হতভম্ব।এমটা সে কল্পানাও করেনি।
**পাঠক, গল্পটাকে সাজিয়েছিলাম একভাবে আর টাইপ করেছি অন্যভাবে।গল্প লেখার ক্ষেত্রে প্রায়ই দেখি এমনটা হয়।আপনারা কি এই সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন কখনো?
গল্পে বানান ভুল থাকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইলো।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:৫৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×