ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়—কথাটি মানতে না পারলে তোমরা সোজা জঙ্গলে চলে যাও।
আচার্যবাঙ্গালী
‘গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লে’র সংখ্যা বাংলাদেশে খুব বেশি বেড়ে গেছে। আর দিনের-পর-দিন এই গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়লদের স্পর্ধা খুব বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা গোটা জাতির জন্য অশনী সংকেত। একটি শ্রেণী আজ বাংলাদেশে পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক ফায়দা-লুটতে পবিত্র ইসলামধর্মকে সজ্ঞানে-অজ্ঞানে ব্যবহার করছে। এরা আজ একেকজন আমাদের ধর্মের চাঁই সেজে বসেছে। এরা সবাই আত্মস্বীকৃত ও স্বঘোষিত মোড়ল। আর এরা সবসময় ধর্মব্যবসায়ী। এদের মধ্যে কোনো ধার্মিক নাই। এদের মধ্যে কোনো ঈমানদার নাই। আর এদের মধ্যে কোনো মানুষ নাই। এরা সেই পাকিস্তান-আমল থেকে নিজেদের স্বার্থের ফায়দা-লুটতে পবিত্র ধর্মকে নিজেদের স্বার্থরক্ষার একমাত্র হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। এই বিভ্রান্ত-পাপিষ্ঠগোষ্ঠী সবসময় আমাদের ইসলামধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে।
এই ধর্মব্যবসায়ী-পশুগোষ্ঠী এখনও জানে না যে, ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়। আর এরা এখনও মানে না, স্বীকার করে না: ধর্মের চেয়ে মানুষ বড়। এই পশুগোষ্ঠীই এখন জোরপূর্বক আমাদের ধর্মের নেতা সেজে বসেছে। এরা নিজেরা ইসলামধর্ম মানে না। ইসলামীজীবনবিধান এদের ভালো লাগে না। এদের ভালো লাগে শুধু জঙ্গীবাদ, আর ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ। এরা মানুষহত্যাকারী জালেমগোষ্ঠী। এদের কেউই মুসলমান নয়। কিন্তু এরা সবসময় মুখে-মুখে ইসলাম-ইসলাম করে থাকে। আর দেশের ভিতরে ইসলামের নামে মানুষহত্যা করছে।
সাম্প্রতিককালে দেশে বেশ কয়েকজন ব্লগার নিহত হয়েছে। আর এদের হত্যাকারী একাত্তরের সেই পরাজিত-শকুনগোষ্ঠী। এরা এখন নানাছদ্মনামে, উপনামে, গুপ্তনামে ঘাতকসংগঠন গড়ে তুলেছে। কিন্তু আমরা এদের চিনে ফেলেছি। তবুও এদের কিছু করতে পারছি না। যাক সে-সব কথা।
এই পশুগোষ্ঠী নিজেরা আজও মানুষ হয়নি। এরা নাস্তিকতার ধুয়া তুলে দেশের ভিতরে শুধু নিজের স্বার্থে একের-পর-এক ব্লগার-হত্যা করে চলেছে। পবিত্র ধর্ম ইসলাম এদের মানুষহত্যার কোনো পারমিশন দেয়নি। আর মহান আল্লাহ ও তাঁর পবিত্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এদের মতো খবিসদের মানুষহত্যার কোনো পারমিশন দেননি। তবুও এরা তাদের মনগড়া শয়তানীনীতির ধ্বজা উড়িয়ে মানুষহত্যায় মেতেছে।
কোনো ব্লগার যদি স্বেচ্ছায় ধর্মঅবমাননা করে থাকে—তাহলে, তার বিরুদ্ধে প্রচলিত-আইনে সরাসরি মামলা করা যেতে পারে। তার কৃত-অপরাধের জন্য তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। তার অপরাধ কতটুকু তা প্রকাশ করতে হবে। আর তা না করে সোজা তাকে হত্যা করলে সমাজে-রাষ্ট্রে আর ধর্ম থাকে না। তা হয় চরম অধর্ম। আর এই অধর্মই যেন এখন দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে। কিন্তু এর থেকে আমাদের দ্রুত বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা কখনও ধর্মবিরোধী নই। তাই, কেউ যদি ধর্মবিরোধী হয়ে রাষ্ট্রের কোনো ধর্মকে অপমান করে থাকে। তাহলে, তার বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান করবে রাষ্ট্র। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এখানে, অন্য কারও নাকগলানোর কোনো সুযোগ নাই। কিন্তু তোমরা যারা নিজেদের লাভের আশায় বেপরোয়া-গতিতে মানুষহত্যা করছো—তোমরা কোন ‘কচুবনের কালাচাঁদ’?
পবিত্র রাসুলের যুগেও বহু বিধর্মী, নাস্তিক, মূর্তিপূজারী ছিল। কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো তাদের কাউকে হত্যার আদেশ দেননি। এমনকি জিহাদের বাইরে কোনো বিধর্মীকে সামান্যতম আঘাত করা কিংবা তাকে গালি দেওয়াও কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ছিল। আর হত্যা তো দূরের কথা। ইতিহাসে আছে—আর ঘটনাগুলো সবাই জানে: মক্কার পরিচিত-ফিগার আবু জেহেল প্রকাশ্যে রাসুলকে গালি দিতো, রাসুলকে অপমান করতো, রাসুলের নামে অযথা কুৎসারটনা করতো। এমনকি সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বহুবার ধোঁকা দিয়েছে। তবুও তো পবিত্র রাসুল তাকে হত্যার আদেশ দেননি। কিংবা আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কখনও সামান্য কিছুও বলেননি। এরই নাম আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
এখন যারা নিজেদের স্বার্থে রাসুলের বাণীকে অগ্রাহ্য করে মানুষহত্যায় মেতে উঠেছে, তারা ইসলামের কেউ নয়। এরা মক্কার আবু জেহেলের বংশধর। ইসলামে এদের মতো পশুর কোনো প্রয়োজন নাই। আর পবিত্র ইসলাম এদের কখনও স্বীকার করে না। তোমরা যারা মানুষকে ভালোবাসতে শেখোনি, মানুষকে তার অধিকার দিতে শেখোনি, তারা মানুষের সমাজ থেকে এখনই বেরিয়ে যাও। আর যারা নিজেদের স্বার্থে মানুষহত্যার মতো জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়েও নিজেদের মুসলমান ভাবছো, তারা এখনই সোজা জঙ্গলে চলে যাও। কারণ, তোমাদের মতো পশুর জন্য তা-ই সর্বাপেক্ষা উত্তম স্থান। তোমরা আর মানবসমাজে বসবাস করে মানুষের ক্ষতি কোরো না। মহান আল্লাহ-রাসুলের দোহাই তোমাদের।
আচার্যবাঙ্গালী
ঢাকা।