আমাদের জীবন থেকে কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ১টি ইংরেজী বছর, ২০০৯ সাল। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য রাত থেকে শুরু হবে ১লা জানুয়ারী, নতুন একটি বছর, ২০১০ সাল। এই ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য রাতে বর্ষবরণের নামে বাঙালী মুসলমানসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মুসলমানগণ মেতে উঠে বেপর্দা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা আর মাতলামীর এক হারাম আনন্দে। কোন মুসলমান ভেবে দেখেছে কি- মাত্র কিছুদিন পূর্বেই আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে আশূরা, যার অন্যতম প্রধান শিক্ষা হলো হক্বের উপর দৃঢ় চিত্ত থাকা। কিন্তু এই বেপর্দা, বেহায়াপনা, বেলেল্লাপনা আর মাতলামী কি হক্বের উপর দৃঢ় চিত্ত থাকার নমুনা? আমাদের কি আদৌ বোধদয় হবে না? আর থার্টি ফাস্ট নাইট কি মুসলমানদের জন্য পালণীয় কোন উৎসব? এটা কি দ্বীন ইসলামের কোন অংশ?
মূলতঃ ১লা জানুয়ারী পালনের ইতিহাস ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত নয়। এটা পালন মুসলমানদের কাজ নয়। ইতিহাসের তথ্য অনুযায়ী খ্রিস্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম ইংরেজী নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করেন। সাধারণভাবে প্রাচীন পারস্যের পরাক্রমশালী সম্রাট জমশীদ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ সালে এই নওরোজের প্রবর্তন করেছিল এবং এ ধারাবাহিকতা এখনো পারস্য তথা ইরানে নওরোজ ঐতিহ্যগত নববর্ষের জাতীয় উৎসব পালিত হয়। ইরান হতেই ইহা একটি সাধারণ সংস্কৃতির ধারা বহিয়া মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন মুসলিম দেশ এবং ভারত উপমহাদেশে প্রবেশ করে। মেসোপটেমিয়ায় এই নববর্ষ বা আকিতু শুরু হতো নতুন চাঁদের সঙ্গে। ব্যাবিলনিয়ায় নববর্ষ শুরু হতো মহাবিষুবের দিনে ২০ মার্চ। অ্যাসিরিয়ায় শুরু হতো জলবিষূবের দিনে ২১ সেপ্টেম্বর। মিসর, ফিনিসিয়া ও পারসিকদের নতুন বছর শুরু হতো ২১ সেপ্টেম্বর। গ্রীকদের নববর্ষ শুরু হতো খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত ২১ ডিসেম্বর। রোমান প্রজাতন্ত্রের পঞ্জিকা অনুযায়ী নববর্ষ শুরু হতো ১ মার্চ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫৩-এর পরে ১ জানুয়ারিতে। ইহুদীদের নববর্ষ বা রোশ হাসানা শুরু হয় তিসরি মাসের প্রথম দিন গোঁড়া ইহুদীদের মতে সেই মাসের দ্বিতীয় দিন। মোটামুটিভাবে তিসরি মাস হচ্ছে ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর। মধ্যযুগে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশে নববর্ষ শুরু হতো ২৫ মার্চ, তারা ধারণা করতো, এদিন দেবদূত গ্যাব্রিয়েল যিশুমাতা মেরির কাছে যিশু খ্রিস্টের জন্মবার্তা জ্ঞাপন করে। অ্যাংলো-স্যাকসন ইংল্যান্ডে নববর্ষের দিন ছিল ২৫ ডিসেম্বর। পহেলা জানুয়ারি পাকাপোক্তভাবে নববর্ষের দিন হিসেবে নির্দিষ্ট হয় ১৫৮২ সালে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার প্রবর্তনের পর। ধীরে ধীরে শুধু ইউরোপে নয় সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী নববর্ষ পালন করা হচ্ছে।
সুতরাং থার্টি ফাস্ট নাইট পালন মুসলমানদের কোন উৎসব নয়, বরং এটি বিজাতীয়-বিধর্মীদের উৎসব। থার্টি ফাস্ট নাইট পালন অর্থ হলো বিজাতীয়-বিধর্মীদের অনুসরণ, অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন। তাই সকল মুসলমানদের এই সমস্ত বিজাতীয়-বিধর্মীদের অনুসরণ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য।