দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম জার্মান সেনাপতি জার্মান ১৪তম আর্মির কমান্ডার সিগমুন্ড উইলহেম ওয়াল্টার ভন লিস্ট জার্মানির ওয়াটারবার্গ(বর্তমান ইলক্রেচবার্গ) এর কাছে উলম এ ১৮৮০ সালের ১৪ মে জন্ম গ্রহন করেন। ১৮৯৮ সালে তিনি তৎকালিন বাভারিয়ান আর্মির ক্যাডেট হিসাবে যোগদান করেন। এবং ১৯০০ সালে তিনি লেফটেন্যান্ট হিসাবে পদন্নতি পান। এবং ১৯১৩ সালে তিনি ক্যাপ্টেন পদন্বতি পেয়ে জার্মান আর্মিতে যোগদান করেন। এবং সেই পদে থেকে তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভন লিস্ট জার্মান সেনা বাহিনীতে থেকে যান। যুদ্ধের শেষ দিকে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯১৯ সালে তিনি মেজর পদে পদন্বতি পান। যদিও জার্মান সেনাবাহিনীকে তখন কাট ছাট করে অনেক ছোট করে ফেলা হয়। তিনি তখন জার্মান সেনাবাহিনীতে স্থান পান। তিনি তখন প্রশাসনের পদে দায়িত্ব পালন করেন। এর মাঝে ১৯২৩ সালে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হন। তিনি ১৯২৭ সালে তিনি কর্নেল পদ গ্রহন করেন। এবং ১৯৩০ সালে জেনারেল মেজর(ব্রিগেডিয়ার জেনারেল) এবং ১৯৩২ সালে লেফটেন্যান্ট জেনারেল(মেজর জেনারেল) হন। ১৯৩৮ সালে অষ্ট্রিয়া যখন জার্মানীর সাথে একত্রিত হয় তখন তিনি অষ্ট্রিয়ার সামরিক বাহিনীকে জার্মান সামরিক বাহিনীর সাথে একত্রিত করার মূল দায়িত্ব তিনি পালন করেন।
১৯৩৯ সালে জার্মান ১৪ তম আর্মির চালানো পোল্যান্ড অভিযানের সময় লিস্ট ১৪ তম আর্মির কমান্ডার ছিলেন। ১৯৩৯ থেকে ১৯৪১ পর্যন্ত তিনি ফ্রান্স এবং গ্রিসে অবস্থিত ১২ তম আর্মির কমান্ডার ছিলেন। ১৯৪১ সালে তিনি তিনি দক্ষিন পূর্বে অবস্থিত জার্মান বাহিনীর কমান্ডার ইন চিফ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪২ সালের জুলাই আমে তিনি সোভিয়েত অভিযানে থাকা আর্মি গ্রুপ এ এর কমান্ডার নির্বাচিত হন। তখন আর্মি গ্রুপ এ ইষ্টার্ন ফ্রন্টে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছিল।
পোল্যান্ড, ১৯৩৯
লিস্ট তার আর্মিকে পোল্যান্ডের দক্ষিনে পোল্যান্ড আর্মির ফাঁদে পড়া ওয়ারশ এর কাছে জার্মান আর্মির একটি গ্রুপকে উদ্ধার করার জন্য সেই দিকে অভিযান চালান। কিন্তু তার আগেই বিখ্যাত ট্যাংক কমান্ডার জেনারেল হ্যানজ গুদেরিয়ান এর জার্মান উনিশতম প্যানজার তাদের উদ্ধার করে। ১৯তম প্যানজার তাদের সাথে ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯* সালে ব্রেষ্ট লিটভস্কে মিলিত হয়।
পোল্যান্ড অভিযান শেষে, যখন পোল্যান্ডের পূর্বাংশ রাশিয়া দখল করেছিল(মলটভ-রোবেনট্রপ চুক্তি)। লিস্ট তখন তার ১২ তম আর্মি নিয়ে তখন পোল্যান্ডে অবস্থান করেছিল। পোল্যান্ড অভিযান শেষে লিস্ট তার কর্ম দক্ষতার কারনে জেনারেল ফিল্ড মার্শাল(ফিল্ড মার্শাল) পদে ভূষিত হন। ১৯৪১ সালের শুরুর দিকে অপারেশন বারবারোসার জন্য জার্মান সেনাবাহিনী ইষ্টার্ন ফ্রন্টে প্রস্তুত হতে থাকে। অপারেশন বারবারোসা মূলত রাশিয়া দখল এর জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। জার্মানী বিশ্বাস করতো অপারেশন বারবারোসা শুরু করার পূর্বে গ্রীস এর ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তে আশা জরুরি। ফিল্ড মার্শাল ভন লিস্ট অপারেশন মিতরার জন্য বুলগেরিয়ান আর্মির জেনারেল স্টাফ এর সাথে বৈঠক করেন জার্মান বাহিনীর জন্য বুলগেরিয়ার ভিতর দিয়ে ফ্রি প্যাসেজ এর জন্য। ১৯৪১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী লিস্টের অধিনে থাকা জার্মান ১২ তম আর্মি বুলগেরিয়াতে অবস্থান নেয় এবং ট্রিপ্যাক্ট চুক্তির অধিনে আসে বুলগেরিয়া।
গ্রিস,১৯৪১
গ্রিস ও যুগস্লাভিয়া অভিযান শুরু হয় ১৯৪১ সালের ৬ এপ্রিল। এসময় ১২তম জার্মান আর্মি গঠিত ছিল চারটি আর্মাড ডিভিশন ও ১১টি মটোরাইজ ইনফেন্ট্রি ডিভিশন দ্বারা। যা ছিল গ্রিস ও যুগস্লাভিয়ার মিলিত বাহিনীর থেকেও শক্তিশালী। অপারেশন শুরুর মাত্র ৭ দিনের মাথায় যুগস্লাভিয়ার রাজধানী বেলগ্রেডের পতন হয়। এবং এথেন্সের পতন হয় ২৭ এপ্রিল। এর মাধ্যমে বলকান অঞ্চলে ব্রিটিস সেনাবাহিনীর প্রাধান্যের অবসান হয়।
ককেসাস অভিযান ও বরখাস্ত, ১৯৪২
১৯৪২ সালের প্রথমে ভন লিস্টের উপর আর্মি গ্রুপ এ এর কম্যান্ড ন্যস্ত করা হয়। আর্মি গ্রুপ এ তৈরি করা হয়েছিল বসন্তের নতুন অভিযানের জন্য যার কোড নাম ছিল কেইস ব্লু। তার উপর দায়িত্ব ছিল রোস্তভ দখল করে আযাববাইজানের বাকু তৈল ক্ষেত্রের দিকে অগ্রসর হবার জন্য। জার্মান বাহিনী প্রথম দুই মাস খুবই ভাল অগ্রসর হয়। এসময় তারা রোস্তোভের ৬৫০ কিলোমিটার কাছে এসে পরে।
কিন্তু আগষ্টের শেষে এসে জার্মান বাহিনী আর অগ্রসর হতে পারে না। তাদের ফুয়েল সংকট ও গোলাবারুদের সংকট দেখা দেয়। তাছারা সোভিয়েত আর্মির একটা গ্রুপ তাদেরকে নিয়োমিত আক্রমন করে যাচ্ছিল। পরিস্থিতি আর ও খারাপ হয় যখন জার্মান বিমান বাহিনী স্ট্যালিনগ্রাদ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরে। এবং জেনারেল পাওলাস এর অধিনে থাকা ষষ্ঠ আর্মিকে রক্ষার শেষ চেষ্টা করে।
তার এই ব্যর্থতায় হিটলার খুবই রেগে যান, কারন লিস্ট এসময় হিটলারকে অনুরোধ করেছিলেন আর্মি গ্রুপ এ কে জার্মানীতে ফিরিয়ে নিতে। ফলে হিটলার তাকে ৯ সেপ্টেম্বর তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়। এবং নিজে আর্মি গ্রুপ এ এর কম্যান্ড গ্রহন করেন। সে সময় ফিল্ডমার্শাল ভন লিস্ট তার বাড়িতে ফিরে যান। এবং তিনি আর কখনও আর্মিতে যোগদান করেন নি।
গ্রেফতার এবং বিচার
যুদ্ধ শেষে ভন লিস্ট মিত্র বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন। ১৯৪৭ সালে ফিল্ড মার্শাল ভন লিস্ট সহ আর ১১ জন কে আমেরিকান কোর্টে হাজির করা হয়। এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় যুদ্ধাপরাধের এবং মানবতা বিরোধী অপরাধের। এবং পার্টিযানদের হত্যার ব্যাপারেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ভন লিস্ট তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভুল প্রমান করতে পারেন নি। কোর্ট তাকে আজীবনের জন্য বন্দি ঘোষনা করে ১৯৪৯ সালের ফ্রেরুয়ারীতে। কিন্তু ১৯৫২ সালের ডিসেম্বরে তিনি অসুস্থ শরীরের জন্য জেল থেকে মুক্তি পান। তারপরও তিনি ১৯ বছর বেচে থাকেন এবং ১৭ আগষ্ট ১৯৭১ সালে মৃত্যু বরন করেন।
কর্নেল- ১ মার্চ ১৯২৭
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল- ১ নভেম্বর ১৯৩০
মেজর জেনারেল- ১ অক্টোবর ১৯৩২
লেফটেন্যান্ট জেনারেল- ১ অক্টোবর ১৯৩৫
জেনারেল- ২০ এপ্রিল ১৯৩৯
ফিল্ড মার্শাল- ১৯ জুলাই ১৯৪০
পদক তালিকা
উন্ড ব্যাজ(১৯১৮) কালো
আয়রন ক্রস(১৯১৪) ১ম ও ২য় শ্রেনী
আয়রন ক্রস(১৯৩৯) ১ম ও ২য় শ্রেনী
হাউজ অব অর্ডার(১৯৩৯)
নাইট ক্রস অব আয়রন ক্রস(৩০ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯)