বলা হয়ে থাকে চিত্রশিল্পীদের মধ্যে সবচেয়ে হতভাগ্য চিত্রশিল্পী হলেন ভিনসেন্ট ভ্যান গগ। তিনি তার জীবন কালে তার আঁকা একটি ছবিও বিক্রি করে যেতে পারেন নি। তিনি যখন তীব্র অর্থ কষ্টে পড়েছিলেন তখন এক জমিদার কন্যা তার কানের প্রশংসা করেছিলেন। মানসিক ভাবেও তিনি সে সময় ভেঙ্গে পড়েছিলেন। তিনি তার কান কেটে সেই জমিদার কন্যাকে উপহার হিসাবে পাঠিয়েছিলেন। বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি চিত্রকর্ম গুলোর মাঝে ভিনসেন্ট ভ্যান গগের কাজ গুলোকে বিবেচনা করা হয়। রুক্ষ সৌন্দর্যের এবং আবেগময় সততার প্রকাশ, সপ্রতিভ রং এর ব্যবহারের কারণে তাঁর কাজ বিখ্যাত ছিল যা বিংশ শতাব্দীর শিল্পকলায় সুদূরপ্রসারি প্রভাব রেখেছিলো। তিনি পেইন্টিংএ প্রথম জল রংয়ের সার্থক ব্যবহার করেন। তার সব শিল্পকর্ম জল রংএ করা। দীর্ঘ বিষন্নতা ও মানসিক অসুস্থতার ফলে তিনি মাত্র ৩৭ বছর বয়সে আত্নহত্যা করেন।
০১. হোয়াইট হাউস ইন নাইট
হোয়াইট হাউস ইন নাইট ভিনসেন্ট ভ্যান গগ তার মৃত্যুর ছয় সপ্তাহ আগে আকেঁন। তৈল চিত্রটি তিনি ১৮৯০ সালের ১৬ জুন আকেঁন। তৈলচিত্রটি আকাঁর নিখুত সময় বের করেছিলেন টেক্সাস ইউনিভার্সিটির জ্যার্তিবিঞ্জানী ডোনাল্ড ওলসন আর রাসেল ডাউসার। তার তৈলচিত্রের তারকার অবস্থান দেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন আকাশটি ১৮৯০ জুন মাসের ১৬ তারিখের আকাশ।
তৈলচিত্রটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মস্কো থেকে চুরি হয়।
০২ ওয়াইন্ড বিটেন দ্য ট্রি
ভিনসেন্ট ভ্যান গগের অন্যতম সৃষ্ঠি হলো এই পেইন্টিংটি। ওয়াটার কালারে আকাঁ এই ছবিতে একটা নিসঙ্গ গাছের বাতাসের সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে দেখা যাচ্ছে। পেইন্টিংটার মাঝে নিজেকে তুলে এনেছেন ভ্যান গগ। গাছটা হচ্ছেন তিনি নিজে। পারির্পাশ্বিক পরিস্থিতির সাথে তিনি এই পেইন্টিংএর মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। পেইন্টিংটা ভ্যান গগ ১৮৮৩ সালে আকেঁন। তখন তিনি ছিলেন মানসিক ভাবে খুবই বিধ্বস্ত। পেইন্টিং টি খুবই উচ্চ মূল্যে এক ধনকুবের কিনে নেন। কিন্তু পরবর্তীতে পেইন্টিংটি সেই ধনকুবের প্রাইভেট কালেকশন থেকে চুরি হয়।
০৩. দ্য এজ অব উড
ভিনসেন্ট ভ্যান গগের আরেকটি অসাধারন চিত্র কর্ম হলো দ্য এজ অব দ্য উড। ওয়াটার কালারে আকাঁ এই পেইন্টিংটি তিনি ১৮৮২ সালে আকেঁন। ছবিটার মাঝে একটা বিসন্নতার ছোয়া আছে। যা ছবিটাকে আরো বাস্তব করে তুলেছে।
পেইন্টিংটি বর্তমানে নেদারল্যান্ডস এর ওটেরলো শহরের করলার-মুলার মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
০৪. দ্য ইয়োলো হাউস
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এই তৈলচিত্রটি আকেঁন ১ মে ১৮৮৮। তিনি সেই সময় ফ্রান্সে ছিলেন। তিনি ফ্রান্সের আরলেস শহরের এই বাড়িটি ভাড়া নেন। এই বাড়িটি চার রুমের ছিল। এর মাঝে একটি বেড রুম। একটি ডায়নিং ও একটি কিচেন ছিল। বাড়িটার পাশে একটি হোটেল ছিল যার কথাও তিনি পেইন্টিংএ তুলে এনেছেন।
পেইন্টিংটি বর্তমানে নেদারল্যান্ডসএর রাজধানী আমর্স্টাডেমএর ভ্যান গগ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
০৫. ফার্ম হাউস এমঙ্ ট্রি
এই পেইন্টিংটি ভিনসেন্ট ভ্যান গগ আকেঁন ১৮৮৩ সালের গ্রীষ্মে। জল রং এ আকাঁ এই পেইন্টিংটি পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ মিউজিয়াম অব আর্টে সংরক্ষিত আছে।
০৬ দ্য স্টেট লটারি
সারা জীবন দরিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত ভিনসেন্ট ভ্যান গগ সব সময় প্রচুর অর্থের আশা করতেন। তিনি ভাবতেন তার চিত্রকর্ম গুলো তিনি প্রচুর দামে বিক্রি করে ভাগ্য ফিরাবেন। কিন্তু তার এই স্বপ্ন কখনোই সত্য হয়নি।
০৭. ইরিস
ভিনসেন্ট ভ্যান গগের সারা জীবন কেটেছে দরিদ্রের কষাঘাতে। সারা জীবন তিনি স্বপ্ন দেখেছেন তার আঁকা তৈল চিত্রগুলো খুবই উচ্চ মূল্যে তিনি বিক্রি করবেন। তিনি তার মৃত্যুর আগে কোন তৈলচিত্র তিনি বিক্রি করে যেতে পারেন নি। এই পর্যন্ত তার যতগুলো তৈলচিত্র উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়েছে তার মধ্যে এটি অন্যতম। তার মৃত্যুর এক বছর আগে ১৮৯০ সালে ফ্রান্সে তিনি এই তৈলচিত্রটি আঁকেন। এর ঠিক ৯৭ বছর পর ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর এই চিত্রকর্মটি ১০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় বর্তমানে ৮৭৮ কোটি টাকা বিক্রি হয়। বর্তমানে এটি লস এঞ্জলস জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
০৮. দ্য পপি ফ্লাওয়ার
মাদক জগৎ এর রাজা বলতে আমরা হিরোইনকেই বুঝি। কিন্তু ১৮০০ সালের দিকে এটি মাদক হিসাবে ব্যবহার হতো না। ব্যবহার হতো ঔষূধ হিসাবে। আজকে ব্যথানাশক হিসাবে অনেকে মারফিন ব্যবহার করে থাকেন ডাক্তারের পরামর্শ অনুসারে। এই মারফিন কিন্তু এই পপি ফুল থেকেই আসে। ১৮৮৬ সালে আকা এই চিত্রকর্মটি ভ্যান গগের অন্যতম সেরা একটি সৃষ্টি। চিত্রকর্মটি কায়রোর মাহমুদ খলিল মিউজিয়াম থেকে ২০১০ সালের আগষ্ট মাসে চুরি হয়। মিশরিও কতৃপক্ষ বিশ্বাষ করে চিত্রকর্মটি দুই ইতালীয় পর্যটক চুরি করে। এবং কায়রো বিমানবন্দর দিয়ে তারা ইতালির রোমে নিয়ে যায়। এই চিত্র কর্মটি ১৯৭৭ সালেও চুরি হয়েছিল। দশ বছর পর এটি কুয়েত থেকে উদ্ধার করা হয়। এই চিত্রকর্মপি উদ্ধার করার পুরস্কার হিসাবে মিউজিয়ামটি ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার পুরস্কার ঘোষনা করেছে। চিত্রকর্মটির আনুমানিক মূল্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
০৯. কনগ্রেসন অব দ্য রেমফোর্ড চার্চ
ভিনসেন্ট ভ্যান গগ এই অসাধারন কাজটি করছেন ১৮৮৪ সালে। এই তৈল চিত্রটি বর্তমানে আমাস্টার্ডামে ভ্যান গগ মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।
১০. দ্য পটেটো প্লান্টার
পৃথিবীর সকল দেশেই তার প্রধান খাদ্য শষ্যকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। সমুদ্র কন্যা হল্যান্ডও এর বাইরে নয়। তাই সর্বকালের শেষ্ঠ ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভ্যান গগও তার তুলির আচড় থেকে আলু চাষকে বাদ দেন নি। ১৮৮৪ সালে আকা এই তৈলচিত্রটি বতর্মানে জার্মানীর ফন ডার হাইড মিউজিয়ামে সংরক্ষিত আছে।