somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের ৭ম পর্ব

২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এর আগে ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাসের ৬টি পর্ব দিয়েছি। আজ দিচ্ছি ৭ম পর্বঃ
.
থিও দেখল, হঠাৎ করেই ওর পতন থেমে গেছে। এক সেকেন্ডের জন্য, ওর কাছে মনে হল ও যেন মাঝ-আকাশে ঝুলছে।
সে চারপাশে তাকাল, দেখল লালচে-চেহারার একজন সার্জেন্ট স্থির চোখে চেয়ে আছে ওর দিকে, তার একটা হাত দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে থিওর বেল্টটিকে।
ওই সার্জেন্ট থিওর বেল্ট ধরে ওকে তুলে দুর্গ-প্রাচীরের ওপরে শুইয়ে দিল। থিওর কাছে তখন ওর শরীরের তলায় থাকা ভূমিটিকে খুব ভারী এবং শক্ত বলে মনে হচ্ছিল। সে উঠে দাঁড়ানোর আগেই, কন্সট্যান্স দৌড়ে ওর কাছে এল এবং থিওর ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ল। থিওর মাথাটাকে নিজের বুকের কাছে এনে আশ্রয় দিল সে। "আমি ভেবেছিলাম তুই বুঝি হারিয়ে গেছিস," মেয়েটি বলল। "আমি ভেবেছিলাম আমরা বুঝি হারিয়ে গেছি।"
আরও বেশকিছু সৈনিক ঘটনাস্থলে পৌঁছাল। সার্জেন্ট চিৎকার করতে থাকল, সবাইকে বলছে যে ওদের অবশ্যই নিরাপদ কোথাও সরে যাওয়া উচিত। কিন্তু এই চিৎকার-চেঁচামেচি থিও এবং কন্সট্যান্সকে স্পর্শ করল না। ওরা যেন তখন তীব্র শোকে পরিপূর্ন আলাদা একটা জগতে বিরাজ করছে। থিও কান্না করছিল। থিওর কাছে মনে হল, এমন মেয়েলি আচরণ করা ওর উচিত হচ্ছে না। কিন্তু ওর বাবা-মা ওকে ছেড়ে দুনিয়া থেকে চলে গেছে। সে এত প্রবলভাবে হতাশা অনুভব করছিল যে এটা ওর হৃদয়কে চূর্ন-বিচূর্ণ করে দিচ্ছিল।
যখন সে কন্সট্যান্সকে বলল যে কী ঘটেছিল, মেয়েটি আকাশ বাতাস কাঁপিয়ে ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় চিৎকার করে উঠল। ওকে স্বান্তনা দেয়া থিওর পক্ষে অসম্ভব। থিও ওকে শক্ত করে ধরে রাখল, এমনভাবে ওর গায়ে হাত বুলিয়ে ওকে ঠাণ্ডা করতে চাইছিল যেন ও একটা শিশু। ওদের দুনিয়াটা হঠাৎ করেই বিস্ফোরিত হয়ে গেছে। একদম এক মুহুর্তের মধ্যে একটা সাজানো গোছানো পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। আশা এবং স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ, ভালোবাসার মানুষেরা ইটের তলায় নিষ্পিষ্ট। এটাই হচ্ছে যুদ্ধের নিষ্ঠুর, নির্মম বাস্তবতা। থিও বুঝতে পারল ওদের জীবনটা এবার অনিশ্চিত হয়ে গেছে। কিভাবে সে নিজের জীবনকে পুনর্নির্মাণ করবে।
"এটা আমার ভুলের কারণে হয়েছে," কন্সট্যান্স ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। "আমাদের উচিত ছিল বাসাতেই থাকা। আমি যদি তোকে নিয়ে এখানে না আসতাম..."
থিও ওর বোনের কব্জিটা শক্ত করে ধরল। "ওই কথা বলবি না। আমরা দুজনেই এখানে এসেছিলাম। আমরা দুজনেই সমানভাবে দোষী। আমি তোকে এই দোষ একলা নিজের ঘাড়ে নিতে দেব না।"
কন্সট্যান্স ওর চোখের ওপরে আছড়ে পড়া এক গোছা চুল সরিয়ে দিয়ে নিজের গাল থেকে কান্নার জল মুছল। "ধন্যবাদ। এখন থেকে আমাদের উচিত একজন আরেকজনকে দেখে রাখা।" এই কথা বলেই কন্সট্যান্স আবারও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাদতে শুরু করল।
ওরা দুজনেই বুঝতে পারছিল, বাবা-মা ওদেরকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় ওরা দুজনেই গভীর একটা গর্তে পতিত হয়েছে, এখন থেকে ওদেরকে একত্রে থাকতে হবে। "আমাকে প্রমিজ কর, কনি। প্রমিজ কর, যা-ই ঘটুক না কেন, তুই কখনই আমাকে ছেড়ে যাবি না।"
"আমি প্রমিজ করলাম।"
"কখনও যাবি না?"
"কখনও যাব না। আমি প্রমিজ করলাম।"
নিচে, সিপাহীদের একটা দল ততক্ষণে তাদের উদ্ধার কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা ধ্বংসস্তূপের মাঝে পড়ে থাকা মনসুর এবং ভেরিটির প্রাণহীন দেহ পুনরুদ্ধার করছে।
******
"এই দুঃখজনক ঘটনা থেকে আমরা যেই শিক্ষা পেলাম তা আমরা কখনই ভুলব না," গভর্নর সন্ডার্স বিষণ্ণ কণ্ঠে বললেন। "মনসুর কোর্টনি এবং তার স্ত্রীর মৃত্যু অবশ্যই বৃথা যেতে দেয়া যাবে না।"
তিনি নিশ্চুপ কাউন্সিল রুমের চারপাশে তাকালেন। ফরাসিদের বোমাবর্ষণ থেমে গেছে। বোমাবর্ষনের একমাত্র চিহ্ন বলতে রুমের মধ্যে থাকা কয়েকটা পেইন্টিং। ওগুলো তখনও দেয়ালের গায়ে তেরছা হয়ে ঝুলছিল। সন্ডার্স মনে মনে ঠিক করলেন, তিনি তার চাকর-বাকরদেরকে বলবেন ওই পেইন্টিংগুলোকে যেন আবারও ঠিকঠাক করে বসায়।
টেবিল ঘিরে যেসব পুরুষ বসেছিল, তারা মুখ ঘুরিয়ে চারপাশে তাকাল। তাদের চেহারা আবেগহীন। ভারতে এরকম অকাল মৃত্যু খুবই স্বাভাবিক। ওরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আছে, ওখানে থাকা ওদের প্রত্যেকেই মনসুরের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়েছিল। মনসুর মারা যাওয়ায় যেটা আর ফেরত দিতে হবে না।
"আমি আজ দুপুরে ফরাসি কমান্ডারের কাছে একজন দূত পাঠাব, প্রস্তাব দেব যুদ্ধবিরতির," সন্ডার্স বলে চলল। "আমাদের আত্মসমর্পণের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ওরা। ওরা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে এই শহরকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দেবে। কিছুক্ষণ দরাদরি করার পরে আমরা তাদেরকে সেই অর্থ দেব, যা হবে পনেরো লাখ গোল্ড প্যাগোডা।"
রুমের মাঝে থাকা মানুষেরা জোরালো শব্দে নিঃশ্বাস ফেলল।
"স্বাভাবিকভাবেই, ওই টাকাটা দেবেন লন্ডনে থাকা কোম্পানির পরিচালকবৃন্দরা। কোর্টনিদের মৃত্যুর পরে ওদের মনে কোনও সন্দেহ নেই যে, কোম্পানির স্বার্থকে সমুন্নত রাখার জন্য আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি।"
কাউন্সিল রুমে থাকা মানুষদের শরীর এবার রিল্যাক্সড হল। এই অবরোধ তুলে দেয়া হবে, লন্ডন টাকাটা পরিশোধ করবে, এবং ওরাও আবারও ফিরে যেতে পারবে ওদের ধন-সম্পত্তি বানানোর কাজে। মনসুর কোর্টনি দেখা যাচ্ছে আসলেই বৃথাই মারা যায়নি।
স্কোয়ারস, ওই ইঞ্জিনিয়ার, মুখ তুলে তাকাল। "আর মনসুরের বাচ্চাদের কী হবে?"
থিও এবং কন্সট্যান্স তখন বসে ছিল গভর্নরের অফিসের বাইরের হলরুমে। কাঁদতে কাঁদতে থিওর চোখজোড়া ফুলে গেছে, চোখের নিচে কালসিটে দাগ-ও পড়েছে।
ওর বাবা মনসুর ওর কাছ থেকে ছুটে যাচ্ছে, এই দৃশ্যটা বারবার ওর মাথার মধ্যে ভেসে উঠছিল। এটা যেন এমন একটা দুঃস্বপ্ন, যেটা থিও বারবার চেষ্টা করার পরেও মাথা থেকে কিছুতেই তাড়াতে পারছিল না।
অন্যদিকে, কন্সট্যান্স তার তীব্র শোক অন্যভাবে প্রকাশ করছিল। কাঁদতে কাঁদতে ওর চোখের সব অশ্রুজল ঝরে পড়েছে। সে একদম স্থির হয়ে চেয়ারটাতে বসেছিল। ওর চেহারাটা ফ্যাঁকাসে এবং আবেগহীন। মেয়েটি থিওর ঘাড়ের পেছনটায় হাত বুলিয়ে দিল, যেভাবে ওদের মা থিওর সাথে করত যখন থিও ছোট ছিল। ওই স্পর্শে থিও এমনভাবে শিউরে উঠল, যেন ওর শরীরটায় আগুনের ছ্যাকা লেগেছে।
"ওরা আমাদেরকে নিয়ে কী করবে?" সে জিজ্ঞেস করল, ওর কণ্ঠস্বরটা যেন বহুদুর থেকে ভেসে আসছে।
"আমার জানা নেই।"
তখনই দরজাটা খুলে গেল। গভর্নরের একজন ভৃত্য ওদেরকে ইশারা করল রুমের ভেতরে ঢুকে যেতে। থিও উঠে দাঁড়াল।
"শক্ত হ," কন্সট্যান্স বলল, ভাইয়ের হাতে আলতো করে চাপ দিচ্ছে। "আমি এখন তোর ওপরেই নির্ভর করছি।"
থিও বোনের দিকে তাকিয়ে নড করল।
এরপরে গভর্নরের অফিসে পা রাখল ওরা। সন্ডার্স থিও এবং কন্সট্যান্সকে ধরে ধরে তার ডেস্কের বিপরীত প্রান্তে রাখা দুটো চেয়ারে বসিয়ে দিল এবং সর্বোচ্চ চেষ্টা করল চেহারায় একটা সহানুভূতিশীল দৃষ্টি ফুটিয়ে তোলার জন্য। যদিও সে ঠিক নিশ্চিত না কাজটা সে ঠিকমতো করতে পারল কিনা। সে থিওর দিকে তাকাল। বালকটি যেন উন্মাদগ্রস্ত হয়ে গেছে, অন্যদিকে বালিকাটিকে দেখে কিছুটা স্থিরচিত্ত বলেই মনে হচ্ছে। ওর সবুজাভ চোখজোড়ায় শান্ত, সমাহিত ভাব। নাহ, একে এখন আর বালিকা বলা যায় না, সন্ডার্স নিজেই নিজেকে শোধরাল। এর আঁটসাঁট জামার ভেতরে ওর অকালপক্ষ স্তনজোড়া নিঃশ্বাসের সাথে ফুলে ফুলে উঠছে। একে এখন পরিপুর্ণ একজন মহিলাই বলা যায়।
সন্ডার্স ভাবল, এই মেয়েকে মাদ্রাজে নিজের কাছেই রেখে দেবে কিনা।
সে নিজের চেহারায় গাম্ভীর্য ফুটিয়ে তুলল। "তোমাদের বাবা-মায়ের মৃত্যুতে আমি যে কী পরিমাণ কষ্ট পেয়েছি তা বলে বুঝাতে পারব না। তোমার বাবা ছিলেন একজন ভালো মানুষ, কলিগ হিসেবে তার মতো মানুষ হয় না। আমি তাকে আমার একজন বন্ধু হিসেবেই দেখতাম। আর তোমাদের মা ছিলেন আমাদের সমাজের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তিত্ব। তাদের এভাবে চলে যাওয়ায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত।"
সন্ডার্সের কথার সাথে একমত হওয়ার ভঙ্গিতে কন্সট্যান্স ওর মাথাটা সামান্য নোয়াল।
"কিন্তু এখন তোমরা এতিম।" তিনি নিজের ডেস্ক থেকে সামনের দিকে ঝুঁকে এলেন এবং দৃষ্টিতে কঠোরতা ফুটিয়ে থিওর দিকে তাকালেন। "তোমার ওপরে কি শয়তান ভর করেছিল? তুমি কেন অমন বোমাবর্ষণের সময় নিজের বোনকে সাথে নিয়ে দেয়ালের ওপরে গিয়েছিলে?"
থিওর চেহারাটা অপমানে লাল হয়ে উঠল। ওর মনের একটা অংশ চাইছিল চিৎকার করে উঠতে, ব্যাখ্যা করতেঃ "ওটা আমার দোষ ছিল না, ওটা ছিল কন্সট্যান্সের বুদ্ধি।" কিন্তু সে নিজের বোনের প্রতি এতটা নির্দয় হতে পারবে না। "আমি যুদ্ধ দেখতে গিয়েছিলাম," সে মিথ্যা বলল।
"প্রার্থনা করি, আরেকটা যুদ্ধ যেন তোমাকে দেখতে না হয়। যুদ্ধ খুবই ভয়াবহ জিনিস, এটা বাচ্চাদের জন্য না।" সন্ডার্স ওকে লেকচার দিল। "এই শিক্ষাটা পাওয়ার জন্য তোমাকে খুব বড় একটা মূল্য দিতে হল।"
তিনি মদের বোতল থেকে নিজের জন্য এক গ্লাস মদ ঢাললেন। "কিন্তু এখন, এই প্রেসিডেন্সির চীফ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে, আমাকে অবশ্যই তোমাদের অভিবাকত্ব এবং শিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।"
"আমাদের ব্যাপারে আপনার পরিকল্পনা কী?" থিও জিজ্ঞেস করল।
সন্ডার্স শুভাকাঙ্ক্ষীর দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালেন। "কলকাতায় তোমার একজন কাজিন আছে। যতদূর মনে পড়ে, তার নাম জেরার্ড কোর্টনি।"
"আমাদের এর আগে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি," কন্সট্যান্স বলল "ওর বাবার সাথে আমাদের বাবার সম্পর্ক অতটা ঘনিষ্ঠ না।"
সন্ডার্স তার হাতে ঢেউ খেলিয়ে এই আপত্তিটিকে উড়িয়ে দিলেন। "কিন্তু সে হচ্ছে এই ভারতের সবচেয়ে প্রভাবশালী মানুষদের একজন। ওর বাবা, মানে তোমাদের চাচা, ক্রিস্টোফার কোর্টনি। যদিও আমার উচিত তাকে এখন ব্যারন ডার্টমাউথ নামে ডাকা, যেহেতু তিনি তার পৈতৃক পদবী দাবি করেছেন। অবসর নিয়ে লন্ডনে চলে যাওয়ার আগে তিনি ছিলেন ভারতের সবচেয়ে ধনবান মানুষ। তোমরা যদি তার ছেলের বাড়িতে থাকো, তোমাদের কোনও রকম অভাব থাকবে না।"
হঠাৎ করে সন্ডার্সের চেহারা থেকে বন্ধুত্বপূর্ণ ভাবটা উধাও হয়ে গেল। "মাই ডিয়ার, তোমরা এতদিন যাবত খুবই আরামদায়ক একটা জীবনযাপন করেছ। আমার মনে হয় না তোমরা জানো যে বাইরের দুনিয়াটা কত নিষ্ঠুর এবং নির্মম হতে পারে... বিশেষ করে তাদের জন্য যাদের কাছে কোনও টাকা পয়সা নেই। আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব আমি করব, কিন্তু আগেই বলে নিচ্ছি, সারাজীবন তোমাদেরকে রক্ষা করা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।"
এই কথাটা পুরোপুরি সত্য না। তিনি ইচ্ছা করলে কন্সট্যান্সকে মাদ্রাজে রেখে দিতে পারেন এবং অভিভাবক হিসেবে তার অধিকারকে ব্যবহার করে বেশ ভালো রকম কামনাতৃপ্তি মিটিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু সেটা করলে তার উদ্দেশ্যপূরণ হবে না। "যদি না তোমাদের অন্য কোনও পরিবার থাকে, যার কথা আমি বিবেচনা করতে পারি?"
কন্সট্যান্স ওর ঠোঁট কামড়াল। আফ্রিকার দক্ষিন-পূর্ব উপকূলের কোনও এক জায়গায় ওর চাচা টম এবং চাচী সারাহ থাকেন, তাদের পরিবার সাথে নিয়ে। কিন্তু ওদের সাথে শুধু একবারই ওর সাক্ষাৎ হয়েছে, তখন সে খুবই ছোট। এবং ওর কোনও ধারণা নেই কিভাবে এখন সে তাদেরকে খুঁজে পাবে। ওদের বাড়ির অবস্থান, মানচিত্রে অপ্রদর্শিত উপসাগরের একটা অঞ্চলে। যেখানে লোকজনের বসতি একেবারেই নেই। খুব সতর্কতার সাথে তাদের বাড়ির অবস্থানকে অন্য মানুষদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। কিভাবে একজন ষোল বছর বয়সি এতিম বালিকা ওটা খুঁজে পাবে। যে কিনা তার সারাটা জীবন কাটিয়েছে ভারতে, এবং এই অচেনা পথ পাড়ি দেয়ার জন্য ওর সাথে আছে শুধু ওর ছোট ভাইটা।
"ঠিক আছে। কাজিন জেরার্ডের সাথে থাকার জন্য আমরা কলকাতায় যাব," কন্সট্যান্স বলল, এই সিদ্ধান্তটা ওদের জীবনে কেমন গুরুত্ব ফেলবে তা অনুধাবন করার চেষ্টা করছে। ভারতবর্ষকে চেনে ও, এখানকার আচার, প্রথা, নিয়ম-কানুন বুঝে। কোন জায়গায় প্রভাব খাটালে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলবে সেটাও জানে। সে এমন কোনও উপায় ঠিকই খুঁজে বের করে নেবে, যাতে করে ওর আর থিওর বেঁচে থাকতে কোনও সমস্যা না হয়।
"এই সিদ্ধান্তটা নিয়ে বুদ্ধিমানের কাজ করেছ। আমি সব বন্দোবস্ত করে দিচ্ছি যাতে তোমরা কলকাতায় যাওয়ার প্রথম জাহাজেই চড়ে বসতে পারো।"
কন্সট্যান্স ওর সবুজাভ চোখজোড়া সন্ডার্সের ওপরে নিবদ্ধ করল। ওই চোখের দৃষ্টি এত সুস্থির এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ, সন্ডার্সের কাছে মনে হল এত কমবয়সি একটা মেয়ের তো এত প্রজ্ঞা থাকার কথা না। সন্ডার্স ওই দৃষ্টির সামনে ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেল।
"আর আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া সহায়-সম্পত্তির কী হবে?" কন্সট্যান্স জিজ্ঞেস করল।
"ওটাকে ট্রাস্টের হাতে ন্যস্ত করা হবে, যতদিন না তোমরা উপযুক্ত বয়সে পৌঁছাচ্ছ।" সন্ডার্স ওকে আশ্বস্ত করল। "আমি নিজে ওই ট্রাস্টি বোর্ডের একজন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব-পালন করব।" সে এমন ভঙ্গিতে একটা হাত তুলল, যেন সে কারুর কোনও আপত্তি শুনবে না। "তোমাদের বাবার কাছে আমার অনেক ঋণ। তার জন্য এটুকু তো আমি করতেই পারি।"
এ-কথা বলার সময় সন্ডার্সের নিজের বিবেকের কাছে কোনও অপরাধবোধ জাগ্রত হল না। জীবনে ব্যবসা ছাড়া আর আছেটা কী। এবং এই বাচ্চা দুটো হচ্ছে জাস্ট ব্যবসায়ের উপকরণ, যাদের ভাগ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা নিয়তি তার হাতে তুলে দিয়েছে। ওরা এমন একটা ব্যবসায়িক সম্পত্তি যার বেশ ভালো মূল্য আছে। এবং সন্ডার্স অবশ্যই নিশ্চিত করবে, যাতে এদের কাছ থেকে লাভ তুলে নেয়া যায়। মনসুরের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সে এমনভাবে লুটেপুটে খাবে যে, ওর বাচ্চাদের নামে শেষে গিয়ে দুটো পয়সাও আর অবশিষ্ট থাকবে না।
এবং সেটা হবে, যদি ওই সম্পত্তি দাবী করার জন্য যথেষ্ট সময় যাবত ওরা বেঁচে থাকে আরকি। ওরা কলকাতায় যাচ্ছে। কলকাতা শহরটা যেই অস্বাস্থ্যকর, চারিদিকে দুর্গন্ধময় জলাভূমির ছড়াছড়ি। এবং ওই বাজে পরিবেশে দুই লাখ মানুষ ভীষণ নোংরা অবস্থায় থাকে। স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা করে না। একজোড়া কমবয়সি ছেলে-মেয়ে, কলকাতা শহরে সদ্য আগত, ধরেই নেয়া যায় ওরা এই শীতকালটাও টিকবে না। আর শীতকালটা যদি কোনোরকমে বাঁচেও, নিশ্চিতভাবেই গ্রীষ্মকালে এরা জ্বরে ভুগে মারা যাবে। (চলবে)
***


ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের প্রথম পর্বঃ
https://mbasic.facebook.com/photo.php?fbid=2985829594796406&id=100001081832019&set=a.422627021116689&source=56

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের দ্বিতীয় পর্বঃ Click This Link

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের তৃতীয় পর্বঃ
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=3211705148875515&id=100001081832019&_ft_=mf_story_key.3211705148875515:top_level_post_id.3211705148875515:tl_objid.3211705148875515:content_owner_id_new.100001081832019:throwback_story_fbid.3211705148875515:photo_id.3211705005542196:story_location.4:story_attachment_style.photo:thid.100001081832019:306061129499414:2:0:1593586799:5167009495212656913&__tn__=*s-R

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের চতুর্থ পর্বঃ
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=3213814051997958&id=100001081832019&_ft_=mf_story_key.3213814051997958:top_level_post_id.3213814051997958:tl_objid.3213814051997958:content_owner_id_new.100001081832019:throwback_story_fbid.3213814051997958:photo_id.3213813895331307:story_location.4:story_attachment_style.photo:thid.100001081832019:306061129499414:2:0:1593586799:2041402156577410201&__tn__=*s-R

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের পঞ্চম পর্বঃ
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=3220982584614438&id=100001081832019&_ft_=mf_story_key.3220982584614438:top_level_post_id.3220982584614438:tl_objid.3220982584614438:content_owner_id_new.100001081832019:throwback_story_fbid.3220982584614438:photo_id.3220982351281128:story_location.4:story_attachment_style.photo:thid.100001081832019:306061129499414:2:0:1593586799:-6887371295566324405&__tn__=*s-R

ঘোস্ট ফায়ার উপন্যাস অনুবাদের ষষ্ঠ পর্বঃ
https://mbasic.facebook.com/story.php?story_fbid=3230524416993588&id=100001081832019&refid=17&__tn__=*s-R
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:৫৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দেশনায়ক তারেক রহমানকে সম্পৃক্ত করার নেপথ্যে  

লিখেছেন এম টি উল্লাহ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:০৮


আগেই বলেছি ওয়ান ইলেভেনের সরকার এবং আওয়ামীলীগের যবনায় জনাব তারেক রহমানের বিরুদ্ধে পৌনে একশ মামলা হলেও মূলত অভিযোগ দুইটি। প্রথমত, ওই সময়ে এই প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা হয়েছিল দেশনায়ক তারেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পকে নিয়ে ব্লগারদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



**** এডমিন টিমের ব্লগারেরা আমাকে বরাবরের মতোই টার্গেট করে চলেছে, এভাবেই সামু চলবে। ****

ট্রাম্পের বিজয়ে ইউরোপের লোকজন আমেরিকানদের চেয়ে অনেক অনেক বেশী শংকিত; ট্রাম্প কিভাবে আচরণ করবে ইউরোপিয়ানরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্পের বিজয়, বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশ প্রসংগ

লিখেছেন সরলপাঠ, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১

ট্রাম্পের বিজয়ে বাংলাদেশে বা দেশের বাহিরে যে সব বাংলাদশীরা উল্লাস করছেন বা কমলার হেরে যাওয়াতে যারা মিম বানাচ্ছেন, তারাই বিগত দিনের বাংলাদেশের ফ্যাসিস্টের সহযোগী। তারা আশায় আছেন ট্রাম্প তাদের ফ্যাসিস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঠেলার নাম বাবাজী !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩১

এক গ্রামীণ কৃষক জমিদার বাড়িতে খাজনা দিতে যাবে। লোকটি ছিলো ঠোটকাটা যখন তখন বেফাস কথা বা অপ্রিয় বাক্য উচ্চারণ করে ক্যাচাল বাধিয়ে ফেলতে সে ছিলো মহাউস্তাদ। এ জন্য তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শীঘ্রই হাসিনার ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৩৮


পেক্ষার প্রহর শেষ। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিশ্ব মানবতার কন্যা, বিশ্ব নেত্রী, মমতাময়ী জননী, শেখ মুজিবের সুয়োগ্য কন্যা, আপোসহীন নেত্রী হযরত শেখ হাসিনা শীগ্রই ক্ষমতার নরম তুলতুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×