সম্পদে, ভূমিতে, সৈন্যে মুসলিম বিশ্বই অনেক বেশি শক্তিশালী। মুসলিম বিশ্ব বয়কট করলে গোটা অমুসলিম বিশ্ব একদিনেই ধসে পড়বে।কিন্তু তারপরও আজ মুসলিম বিশ্ব পদানত কেন?
মুসলিম বিশ্ব নিজেদের শক্তি ও সম্পদ, ঐতিহ্য ও গৌরবের কথা নিজেরাই জানে না।
মুসলিম বিশ্বের জন্য নিজেদের জরীপ বিভাগ করা জরুরী। পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ ছেড়ে দেয়াই মুসলমানদের আজকের অধঃপতনের কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বসের করা এক তালিকা অনুযায়ী কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র। ম্যাগাজিনটি বলছে, তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের সুবাদে ১৭ লাখ জনসংখ্যার দেশটি মাথাপিছু আয়ের দিক থেকে সবচেয়ে ধনী দেশ।
২০১৪ সালে কাতারের মাথাপিছু বার্ষিক জিডিপি ছিল ৮৮ হাজার ডলার। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত ৪৭ হাজার ৫০০ ডলার জিডিপি নিয়ে ষষ্ঠ এবং কুয়েত ছিল ১৫তম অবস্থানে।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আয়োজক এবং ২০২০ সালের অলিম্পিক গেমস আয়োজনের প্রতিযোগিতাকারী কাতার ইতোমধ্যেই সর্বোচ্চ বিনিয়োগকারী দেশে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ দেখা যাচ্ছে, হারাম খেলাধুলায় কাতারসহ আরব দেশগুলো দুই হাতে খরচ করে কিন্তু মুসলিম ভাইয়েরা না খেয়ে অকাতরে মারা যাচ্ছে সেদিকে দৃষ্টি নেই। অপরদিকে শুধু কাতারই নয়; ধনী মুসলিম দেশ আছে আরো বহু এবং তাদের সংগঠনও আছে।
প্রসঙ্গত, উন্নয়নশীল-৮ বা ডি-৮এর সদস্য দেশগুলো হলো- বাংলাদেশ, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। এসবগুলোই উল্লেখযোগ্য মুসলিম দেশ। কিন্তু এরাও কেউই দুর্ভিক্ষপীড়িত সোমালিয়ার পেছনে দাঁড়ায়নি এবং এখনো দাঁড়াচ্ছে না। মুসলিম জনসংখ্যা সংখ্যাগরিষ্ঠ উন্নয়নশীল আটটি দেশের অর্থনৈতিক জোট ডি-৮এর সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বর্তমানে আন্তঃবাণিজ্যের পরিমাণ ১শ ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১৮ সালের মধ্যে এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ৩শ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হবে। জানা গেছে, মুসলিম অধ্যুষিত আটটি রাষ্ট্রের সমন্বয়ে গঠিত ডি-৮এর আওতায় বিশাল মানব ও প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে।
সম্মিলিত উদ্যোগে এ সম্পদ কাজে লাগিয়ে ডি-৮ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।
পৃথিবীতে মুসলমানের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩০০ কোটি এবং মুসলমান দেশের সংখ্যা ৬৫-এরও অধিক।
পৃথিবীতে মোট তেল ও গ্যাসের ৮০ ভাগ, কয়লার ৬০ ভাগ, স্বর্ণের ৬৫ ভাগ, রাবার ও পাটের ৭৫ ভাগ এবং খেজুরের ১০০ ভাগই মুসলমান দেশের। সুবহানাল্লাহ!
পৃথিবীর মোট দেশের আয়তনের তিনভাগের একভাগ এখনো মুসলমানদের দেশসমূহ। পৃথিবীর মোট ৩ কোটি সৈন্যের এক কোটিই মুসলমান। সুবহানাল্লাহ! অমুসলিম বিশ্বের ৮৭ ভাগ বাণিজ্যই মুসলমানের সাথে।
অর্থাৎ মুসলমানরা চাইলেই যেকোনো মুহূর্তে সারাবিশ্ব দখল করে নিতে পারে। এবং অমুসলিম বিশ্ব তথা লুটেরা কাফিররা মুসলমান বিশ্বের তথা মুসলমানদের সম্পদ হরণ করেই বা নির্ভর করেই বেঁচে আছে। সুবহানাল্লাহ! কিন্তু মুসলমান সে বিষয়ে বড়ই বেখবর।
তারপরেও মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পশ্চিমা হানাদার শক্তির আগ্রাসনের শিকার। তাদের সামরিক অস্ত্রের দাপটে নিজেদের সম্পদ তাদের হস্তান্তর করতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মুসলমানরা তাদের গোলামী করছে। মুসলিম বিশ্ব বিশাল সম্পদের সমারোহে সমৃদ্ধ। তার মধ্যে তেল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। মধ্যপ্রাচ্যের তেল ছাড়া ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতিতে চরম ধস নেমে আসবে। এ আশঙ্কায় তারা বিভিন্ন খোঁড়া অজুহাত দাঁড় করে পর্যায়ক্রমে ইরাকে সামরিক হামলা চালিয়ে জাতীয় অর্থনীতিতে চরম বিপর্যয় টেনে এনেছে। এরপর তারা নতুন ইস্যু দাঁড় করিয়ে ইরানের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ ঘোষণা করেছে। লেবাননেও মার্কিন মদদপুষ্ট ইসরাইলী হানাদর বাহিনী আক্রমণ চালাচ্ছে। ১৯৪৮ থেকে এ পর্যন্ত ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধ-সংগ্রাম তো চলছেই। আজ ফিলিস্তিনের মা-বোনেরা অনাহারে দিনাতিপাত করছে। সবকিছু মিলে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অবস্থা চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে। কবে এ সমস্যা দূর করে শান্তি ফিরে আসবে তা-ই বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা। মুসলিম বিশ্বে যে বিশাল সম্পদের ভান্ডার রয়েছে যা দ্বারা মুসলিম বিশ্ব সমগ্র বিশ্ববাসীর উপর সর্বাধিক অর্থনীতিতে সমৃদ্ধ হতে সক্ষম।
সে ধারণা স্পষ্ট হওয়ার জন্য নিম্নে মাত্র কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো: মুসলিম বিশ্বে অপরিশোধিত পেট্রোল ও গ্যাস মজুদের পরিমাণ-দেশের নাম পেট্রোল ( বিলিয়ন ব্যারেল) গ্যাস (ট্রিলিয়ন ঘনফুট)
– ইরান ৮৮.২ ৭৪১.৬- ইরাক ১০০.০ ১০৯.৫ – কুয়েত ৯৫.৫ ৫২.৯ – ওমান ৫.১ ২৫.২ – কাতার ৩.৭ ২৫০.০- সউদী আরব ২৬১.২ ১৮৫.৯- সিরিয়া ২.৫ ৭.০- আরব আমিরাত ৯৮.১ ২০৪.৬- ইয়ামেন ৪.০ ১৫.০- মিসর ৩.৯ ২১.৩- নাইজেরিয়া ২০.৮ ০.৪- তিউনিসিয়া ০.৪ ০.৪
– ইন্দোনেশিয়া ৫.২ ৫.৯- মালেশিয়া ৪.৩ ৫.২
অমুসলিম বিশ্ব ও মুসলিম বিশ্বে খনিজ সম্পদ ও শস্য সম্পদের তুলনামূলক অবস্থান:শতকরা মুসলিম বিশ্ব শতকরা শস্য সম্পদ অমুসলিম বিশ্ব
– তেল ২৫% ৭৫%- রাবার ২৫% ৭৫%
– গ্যাস ২৫% ৭৫%- পাট ২৫% ৭৫%
– কয়লা ৪৫% ৫৫%- খেজুর ০০% ১০০%- লোহা ৪২% ৫৮%- সীসা ৫০% ৫০%- চম্বুক ২৫% ৭৫%- স্বর্ণ ২৫% ৭৫%
– রৌপ্য ৩৫% ৬৫%
প্রসঙ্গত, পবিত্র বিদায় হজ্জ উনার মশহুর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “আমি তোমাদের জন্য দুটো জিনিস রেখে গেলাম। যতদিন পর্যন্ত তা আঁকড়িয়ে ধরবে, ততদিন পর্যন্ত সাফল্যের শীর্ষে থাকবে। আর যখন তা থেকে বিচ্যুত হবে তখনই লাঞ্ছিত, পদদলিত হবে।”
বলার অপেক্ষা রাখে না, মুসলমানরা আজ পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের থেকে বঞ্চিত বলেই এরূপ লাঞ্ছিত পদদলিত হচ্ছে। দরিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে।
এর থেকে মুক্তি লাভ পেতে হলে পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র সুন্নাহ শরীফ উনাদের অনুসরণ ব্যতীত কোনো বিকল্প নেই। উপরোক্ত মুসলিম বিশ্বের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য দেখে একথা বলা যায় যে- গোটা বিশ্বাবাসীই মুসলিম বিশ্বের কাছে ঋণী।
বিশেষ করে মুসলিম বিশ্ব তার জ্বালানি তেল বহির্বিশ্বে রপ্তানি না করলে ইউরোপ-আমেরিকার ইলেক্ট্রনিক, মিডিয়া, প্রযুক্তি, শিল্প-বাণিজ্য সবকিছুতে ধস নেমে আসবে। কিন্তু বিপরীত দিকে মুসলিম বিশ্বই আজ তাদের থেকে চরম নিম্নমানে পতিত হয়েছে।
ওআইসি’র সদস্যভুক্ত ৫৭টি দেশের সক্রিয় সৈন্য রয়েছে প্রায় ৫২ লাখ, সামরিক বাজেট প্রায় ১৭৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
ইসরাইলের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮০ লাখ ৪৯ হাজার ৩১৪ জন, সক্রিয় সেনা রয়েছে ১ লাখ ৬০ হাজার; বার্ষিক সামরিক বাজেট প্রায় ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
তার মধ্যে যে আলোর স্ফুরণ ঘটেছে, তা কি কখনো প্রতিরোধযোগ্য? কখনোই নয়। তাই কালের বিবর্তনে ও সময়ের প্রয়োজনে এখন নায়ক থেকে মহানায়ক
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০০