ভদ্রমহিলা ছিলেন হাড়গিলে, লিকপিকে। লম্বায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। ওজন ৫৯ কেজি। সেকেন্ড লাইন ডিফেন্সে লম্বার জন্যে সুযোগ পেতেন সবচেয়ে আগে। তবে প্যারেডটা্ও ভালোই পারতেন। যারা বাদ পড়ে যেতো তারা তখন মনের ঝাল মেটাতে ট্রেনিং ক্যাম্পের শেষের দিন ভদ্রমহিলাকে উপাধি দিতেন ' পাইলট হতে চা্ও, তবে বাঁশ হয়ে যা্ও" সুযোগ না পেয়ে বাঁশ খেয়ে এখন বাঁশ উপাধিই দিতে হচ্ছে তাঁকে।
তিনি তখন ভদ্রমহিলা ছিলেন না মোটেও। কালো, সুপারি গাছের মতো লম্বা এক মেয়ে। ইয়ে মানে পরবর্তীতে ফেয়ার এ্যান্ড লাভলি মেখে তিনি ফর্সা হয়ে বিবাহযোগ্যা হয়েছেন।
যাই হোক, প্রথম বাচ্চা হ্ওয়ার পর ভদ্রমহিলার স্বাস্থ্যটা একটু খোলতাই হয়েছে। ওজন তখন ৬৮কেজি। BMI জানান দিলো You have a normal body weight. Great job! আর কোন বাচ্চা নেওয়ার চিন্তা না থাকলেও দ্বিতীয় বাচ্চা নিলেন। এই সময় পেটের বাচ্চার ওজন যেনো ঠিক থাকে তাই যা ইচ্ছে তাই খেয়েছেন। এবার শরীর বাড়তি খাবার পেয়ে তাকে হাত উজাড় করে মোটা করেছে। ৮৩ কেজি তখন তিনি। স্বোয়ামীর বন্ধুদের গেটটুগেদারে গিয়ে বুঝতে পারলেন এ দুনিয়া পিত্তলথি! (এই কথাডার আসল মানে নিজেও ভালো করে জানি না)। চেহারা মোটার চোটে ভচকে গেছে। পয়লা বৈশাখে সাজগোজ করে ছবি তুলে ভাবলেন খুব সুন্দর লাগছে! নিজেকে আয়নায় সবাই সুন্দর দেখে! তাঁর আর দোষ কি!
কিন্তু স্বোয়ামীর বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে মোটা লুসি তখন পাতলা ফিনফিনে! চড়ুই পাখির মতো উড়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি নাকি শুধু সবজি খেয়ে ওজন কমিয়েছেন!
ছেলেটা ছয়মাস বয়স হলে শুরু হলো ভদ্রমহিলার দৌঁড়ঝাঁপ। এর মধ্যেই পড়লেন ববিতার প্রিয় খাবার আলুভর্তা! তখনই নিশ্চিত হলেন ববিতা নিশ্চয়ই আলু খেয়েই আলুর মতো হয়েছেন! শুরুতেই আলু ছেটে ফেললেন খাবার তালিকা থেকে। এরপর গরুর গোশত বাদ। ভাতের প্লেটের আকার ছোট হলো।
ধানমন্ডি লেকের পারে শুরু হলো হাঁটার প্রতিযোগিতা। সাথে হামদর্দের শাফী শুরু হলো সকালে খালি পেটে দুই চামচ রাতে খাবার আগে দুই চামচ।
মোটামুটি ছয়মাস, বছর খানেকের মধ্যেই ৭৪ কেজিতে নেমে এলো। সবাই খোঁচায়। ইন্ডিয়ান নায়িকা হবে নাকি এই বলে টিপ্পনী কাটে। কিন্তু এই ওজনেও তিনি প্রায় দুই কেজি ওভার ওয়েট তা তো জানেন না।
ওজন কমিয়ে এখন নিশ্চিন্ত মনে চলছে খাইদাই। বাড়ির ভারী আসবাবপত্র এদিক সেদিক করতে গিয়ে তিনি এবার বিছানায় পড়লেন। আর ওজন হুহু করে বেড়ে কিছুদিনেই ৭৯ কেজি। বেচারী হাঁটতে পারছেন না। ব্যায়াম করাতো দূরের কথা। একেবারে বেডরেস্ট। মাসখানেক বিছানায় থাকার পর আবার শুরু হলো বাড়তি ওজনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
এবার এক প্রথম সারির দৈনিক সংবাদপত্রে ওজন কমানোর একটা মারদাঙ্গা লিস্টি পেয়ে শুরু হলো
সকালে ডিম, সবজি দিয়ে স্যুপ। দুপুরে এক টুকরা মুরগীর মাংস দিয়ে সবজি স্যুপ আর রাতে...শুধু সবজি স্যুপ।
এক সপ্তাহেই দুই কেজি ওজন কমে গেছে!
হাঁটাতো চলছেই। কিছুদিনেই ৭৬ কেজিতে চলে এলেন।
আবার শুরু হলো মজাদার খাবারে যোগদান। মাঝেমাঝেই বন্ধুদের আড্ডায় স্টারে চলে বিরিয়ানি। পরিবারের সঙ্গে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে পেট পুরে খাবার!
বাচ্চাদের স্কুল বদলে যাবার কারণেই হোক বা বাচ্চারা বড় হয়ে যাবার কারণে এখন আর স্কুলের সামনে বসে থাকতে হয় না আর লেকের পারে হাঁটাও হয় না। ওজন কি আর চুপটি করে বসে থাকে নাকি!
তিনিও মহাসমারোহে বেড়ে চলেছেন।
এই দফায় ৮১!
ভদ্রমহিলা দৌঁড়ালেন পুষ্টিবিদের কাছে।
পুষ্টিবিদ যা লিস্ট দিলেন খুব পছন্দ না হলেও হাঁটার নিয়মটা পছন্দ হয়েছে।
প্রথম দিন ১০ মিনিট হাঁটতে হবে
এর পর প্রতিদিন একমিনিট করে বাড়াতে হবে।
আর সকাল ৭:৩০ থেকে ৮:৩০ এর মধ্যে ৩০ গ্রামের একটা লাল আটার রুটি।
ডিম সেদ্ধ একটা
সবজি আধা কাপ।
এক কাপ গ্রিন টি।
যার কড়া দুধের চা না হলে সকাল জমে না তার অবস্থা রীতিমতো টাইট!!! চা খেতে না পেরে বেচারীর ঝিমুনি কমে না!
হালকা নাস্তা ১০:০০ থেকৈ ১১:০০টার মধ্যে বিস্কুট/ক্রাকারস ২পিছ অথবা মুড়ি/খই ১ কাপ
বাদাম ৬/৭টি
টক জাতীয় ফল ২/৩টি
চা এক কাপ
এবার যেহেতু আলাদা করে গ্রিন টির কথা বলেনি তাই আয়েশ করে দুধ চা খেতে অসুবিধা নেই।
দুপুরে ১:০০ থেকে ২:০০টার মধ্যে
ভাত ১ কাপ (১২০ গ্রাম)
মাছ ১ টুকরা (৩০ গ্রাম)
সবজি আধা কাপ
শাক আধা কাপ এবং লেবু
হালকা নাস্তা বিকেল ৪:৩০ থেকে ৫:৩০ এর মধ্যে
সাদা বিস্কুট ২ পিছ অথবা মুড়ি ১ কাপ
স্যুপ ১ বাটি
টক দই/বাদাম
ফল ২টি
রাত (৮:০০ থেকে ৮:৩০ এর মধ্যে)
রুটি ২টি
মাছ ১ টুকরা (৩০ গ্রাম)
সবজি আধা কাপ
রাতে ঘুমানোর আগে (খাওয়ার দেড় ঘন্টা পর মানে এগারোটার আগে ঘুমাতে হবে কিন্তু)
সর বা চিনি ছাড়া এক গ্লাস দুধ
নিষিদ্ধ খাবার
১। মিষ্টি। যতো রকমের, ধরণের
২। বাইরের শরবত সহ মিষ্টি পানীয়
৩। খাসী, গরু, হাসঁ, কলিজা, মগজ, মুরগীর চামড়া, বড় মাছের ডিম, মাথা, চিংড়ি মাছ
৪। তেলে ভাজা খাবার
৫। ঘি, মাখন, মেয়োনেজ, ফাস্টফুড
৬। আইসক্রিম, চকোলেট
৭। মিক্সড খাবার= দুধভাত, বিরিয়ানি, হালিম, তেহারি
৮। কাঁচা লবণ ও লবণাক্ত খাবার
কম পরিমাণ খেতে হবে
১। ভাত, রুটি, মুড়ি, খিচুরী, পোলাও চিড়া
(এই জন্যেইতো বলি! ওজন না কমে খালি বাড়েই ক্যান!!)
২। মিষ্টি ফল: আম, কলা, আঙ্গুর, পাকা পেয়ারা, খেজুর, কাঁঠাল, আতা, তরমুজ
(আমার ফলাভ্যাসের মূলে কুঠারাঘাত!!!)
৩। সবজি: কচু, আলু, কাঁচা কলা ইত্যাদি
ইচ্ছেমতো খাওয়া যাবে:
১। ডাটা, করলা সহ বাদ দেয়াগুলো ছাড়া বাকী সব সবজী
২। সব ধরণের টক/দেশী ফল
লক্ষণীয় বিষয়:
প্রতিদিন হাঁটা/ব্যায়াম/সাঁতার / ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ/যোগ ব্যায়াম/সাইক্লং ১ ঘন্টা
।
।
দেখা যাক ভদ্রমহিলা পরবর্তী ব্লগদিবসে শুরুর না শেষের ছবির মতো হয়ে উপস্থিত হন
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৮ সকাল ৯:০৩