ঋতুপর্ণ ঘোষের "দহন" দেখলাম ।
দেখছিলাম আর জ্বলছিলাম...কষ্টে কষ্টে নীল হয়ে যাচ্ছিলাম । জীবনের এতো কাছ থেকে নেয়া বলেই এই ধরনের সিনেমাগুলোকে মনে হয় জীবনধর্মী সিনেমা বলা হয়। যা আমাদেরকে ভাবতে বাধ্য করে। আমাদের মাঝে অতি আপনজনের পর হয়ে উঠা, অপরিচিত হয়ে উঠা...হৃদয়ের রক্তক্ষরণ চারপাশটাকে লালে লাল হয়ে জমাট বেঁধে ফেলা...
সত্যিই প্রতিটা মেয়ের কানে কানে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে...নারী... এতো আধুনিকতা, এতো শিক্ষা, ক্ষমতায়ন...তুমি কি সত্যিই তোমার পাশে কাউকে দেখতে পাচ্ছ ?!
ইউটিউবে "দহন"
উইকিপিডিয়ায় "দহন"
আইএমডিবি রেটিং-এ "দহন" ১০ এ ৮.১
"খেলা "
আমি কখনোই সেভাবে সাপোর্ট করি নি, বিদেশী সিনেমা আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে কোনভাবে প্রভাব ফেলতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে চলুক নিয়মিত। বিশেষ করে ভারতীয় সিনেমাতো নয়ই (আর পাকিস্তানী সিনেমার প্রশ্নই উঠে না)।
কিন্তু "দহন" দেখার পর দেখলাম "খেলা" । দেখে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কিছু শেখানোর জন্যে হলেও এসব সিনেমা চালানো উচিত প্রেক্ষাগৃহগুলোতে।
এতো জীবন ঘনিষ্ট ! মনে হয় নিজের জীবনের লুকিয়ে রাখা, জানালার পাশে অভিমান করে দাড়িয়ে থাকার মুহুর্তগুলো এই লোক জানলো কেমন করে?!
কেমন করে জানলো বরের সাথে কতোদিন রাগ করে ভেবেছি ...এই অপেক্ষার শেষ হোক।
"খেলা"য় বিশেষ দুটো দিক একটা হচ্ছে পরিচালক হিসেবে প্রসেনজিৎ-এর কাজে নিঁখুত রাখার যে প্রবণতা তা যে কোন উপায়েই হোক...এমনটি কি বাস্তবে খুব বেশি দেখা যায়?
হয়তো ঋতুপর্ণ ঘোষ নিজে তেমন ছিলেন !
আরেকটি বিষয়, একজন স্ত্রীর চরিত্রে মণিষার অভিনয় অন্য উদাসীন স্ত্রীদের জন্যে সত্যিই শিক্ষণীয়। সাথে এটা্ও একটা বিষয় যে, একজন শিক্ষিত স্ত্রী তার স্বামীর পেশাগত কাজে কতোটা সহায়তা করতে পারে। সে ঘরে পুরো সময় দিলেও তার প্রাইভেট টিউশনী করানোটা আমায় বেশ আনন্দিত করেছে ।
নিজের অনুভবে রাখা দৃশ্য গুলো এই লোক এতো অবলীলায় কিভাবে সেলুলয়েডের ফিতায় আটকালো ....?!!!
আমার অনেক টাকা নেই। না হলে বড় পর্দায় দেখানোর দায়িত্বটা আমিই নিতাম আমাদের অবহেলিত, সিনেমা পাগল, বুভুক্ষ দর্শকদের জন্যে ।
ইউটিউবে "খেলা"
উইকিপিডিয়ায় "খেলা"
"খেলা" আইএমডিবির রেটিং ৭.৪
"উনিশে এপ্রিল"
"উনিশে এপ্রিল" দেখার সময় ছোড়া প্রসেনজিৎকে দেখে চমকে উঠেছিলাম ! পরে বুঝলাম আমি নিজেই ১৭ বছর পেছনে পরে আছি।...তবুওতো পেছন থেকে উঠে আসার চেষ্টা...তাই বা কম কি !
সিনেমাটা দেখার এক পর্যায়ে মনে মনে বলে উঠেছিলাম ...ুত্তা ! তুই যদি মায়ের পছন্দের লুতুপুতু মেয়েই বিয়ে করবি তাইলে প্রেম করতে গেলি ক্যান ! গররররর....
আমি বাস্তবে এভাবে গালি দেই না... দিয়ে অভ্যস্থ্য না। কিন্তু ক্রোধ চেপে রাখতে পাচ্ছিলাম না...মা, ডাক্তার মেয়ে পছন্দ করবে না, মা একটু ঘরোয়া বউ চায় এবং পরবর্তীতে মেয়ের মা-বাবার পেশা নিয়ে পরে যায় টানা হেচড়া ...এসব ইতং বিতং যে ছেলে ভাবে সে ক্যান প্রেম করে একটা মেয়ের জীবনকে এভাবে বিবর্ণ করে দেয় ?!
কিন্তু আমার দেখার ধারাবাহিকতাকে কিভাবে অদ্ভুতভাবে বদলে দিয়ে প্রেমিক-প্রেমিকার সম্পর্কের টানা পোড়েন থেকে ক্যারিয়ারিস্ট মা আর দিনের পর দিন মায়ের ব্যাস্ততায় সন্তানের দুরে সরে যাওয়া......
স্বামীর সাথে স্ত্রীর প্রফেশনাল (বরং ফিনানশিয়াল বলি) কনফ্লিক্ট ! স্ত্রীর বেশি খ্যাতি, টাকা কামানোকে স্বামীর মেনে নিতে না পারা...
একই ঘরের বাসিন্দা হয়েও দুই ভুবনে রয়ে যাওয়া... বড্ড কষ্ট পাচ্ছিলাম।
একটা সময় চোখের কোনে হয়তো একটু জলের আচঁ পাচ্ছিলাম...বুকের ভেতর চিনচিনে ব্যাথা...
বোঝাপড়া গুলো ভালো থাকলে, স্বচ্ছ থাকলে...সম্পর্কের উন্নতি হতে বাধ্য । এর জন্যে চাই দুজনকে দুজনের বোঝার চেষ্টা। যা দুই পক্ষেরই উচিত।
ইউটিউবে "উনিশে এপ্রিল"
উইকিপিডিয়ায় "উনিশে এপ্রিল"
আই্এমবিডির রেটিং ৬.৯
রেইনকোট
রেইনকোট দেখলাম।
এটাই প্রথমবার না। এর আগেও কয়েকবার কিছু অংশ দেখে ছেড়ে দিয়েছি। টানতে পারে নি আমায়। স্লো বলেই হয়তো... অথবা ইদানিং হিন্দি চ্যানেলের অনাগ্রহটাও হয়তো ভর করেছিল সিনেমাটা দেখার সময়।
যাই হোক, বেশ কিছুদিন/মাস ধরেই নারীদের শক্ত অবস্থানে থাকা সিনেমা খুঁজতাম মনে মনে। তা যে কোন ভাষারই হোক।
ঋতুপর্ণ ঘোষের "দহন", "খেলা", "উনিশে এপ্রিল" দেখে আমার সেই আগ্রহ যথেষ্টই মিটেছে।
বলছিলাম "রেইনকোট" এর কথা ।
অনেক বড় ঘরণী ঘর পায় না...
অনেক বড় সুন্দরী বড় পায় না...
রেইনকোট দেখে আমার তাই মনে হয়েছে.......।।
প্রথম দিকে ঝিমানো ভাব থাকলেও সিনেমাটার মাঝ বরাবর এসে নীরুর অনুপস্থিতিতে বাড়িওয়ালার আগমন এবং এরপর ঘটে যাওয়া বিষয়গুলোই দর্শকদের চাঙ্গা করে তুলতে যথেষ্ট।
একটা বিষয় খুব অবাক করা ! আমার খুব পরিচিত একজন তার বিয়ের প্রথম ৩ বছর তার বাসায় জানায়ই নি যে কতোটা মানসিক অশান্তিতে আছে। বরং শ্বশুড়বাড়ির যতো পজিটিভ কথা সে সবাইকে বলে বেড়াতো হাসি মুখে ।
৩ বছর পর সেই পরিচিতার নিকটাত্নীয় ওর শ্বশুরবাড়িতে এসে ইনকোয়ারী করলে বেড়িয়ে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর, কষ্টকর জীবনের কাহিনী।
যাই হোক...আমি নীরুর হাসি মুখে একেরপর এক বলা ভোলানো কথায় একটু সন্দেহ করছিলাম বটে ! কিন্তু তা এমন নির্মম সত্য হবে ! বুঝি নি।
আর ভালোবাসা সত্যিকারের হলে ভালোবাসার মানুষটির যে কোন ক্ষতি দেখে অন্যপক্ষ যখন সেই কষ্ট দূর করার জন্যে নিদোর্ষ চেষ্টা করে তখন সেই ভালোবাসাকেই কি স্বর্গীয় ভালোবাসা বলে ?
The Gift of the Magi যারা পড়েছেন তারা রেইনকোট-এর সার্থকতা ভালো বুঝতে পারবেন।
"রেইনকোট" এর ইউটিউব লিংক
উইকপিডিয়ায় "রেইনকোট"
আইএমডিবি রেটিং -এ " রেইনকোট " ১০-এ ৭.১
আবহমান
"আবহমান" দেখার শুরুতে আমার প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া হচ্ছে...
"চিবিয়ে চিবিয়ে কথা বলে আমার হৃদয়টাকে রক্তাক্ত করার পর যে রক্তচুম্বণটা দাও,
সেই রক্ত চুম্বনের নেশায় আমি বার বার নেশাগ্রস্থ হতে চাই................."
এটা রূপক অর্থে বলা হয়েছে... যারা আবহমান দেখেছেন তারা আমার এই কথার মর্ম বুঝবেন।
দেখার শুরুতে হেব্বি চাঙ্গা মুডে ছিলাম !
চাঙ্গা এতোটাই ছিলাম যে, রিতিমতো কাব্য সৃষ্টি করে ফেলেছিলাম !
মাঝখানে বেশ কিছু কাজ সেরে আবার দেখতে বসলাম ....!
....................................................!
আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না !
"আবহমান" নিয়ে কিছু আদৌ লিখতে পারবো কি না বুঝতে পাচ্ছি না !
শেষ করার পর আমি "তব্দা" বলতে যা বোঝায় তাই হয়ে গেছি !
আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে !
হাউমাউ করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে !
আমি আমার চোখ থেকে বেরিয়ে আসা জলের স্রোত থামাতে পাচ্ছি না !
কোন সিনেমা দেখে সিনেমা যে বানিয়েছে তাকে অনুভব করেছি এমন হয় নি !
কিন্তু আজকে করতে পাচ্ছি !
আমি অনেক দেরী করে ফেলেছি !
বড্ড বেশিই দেরী করে ফেলেছি ............!
ইসসস ! এই মানুষটা কেন আরো অনেকগুলো বছর বেঁচে থেকে আরো আরো সিনেমা বানালো না !
ইউটিউবে "আবহমান"
উইকিপিডিয়ায় "আবহমান"
আইএমডিবি-র রেটিং ৭.১
ফেসবুকে-
"আবহমান" নিয়ে অনাহুত অর্ণব-এর মতামত...
খুব দূরে কোথা থেকে যেনো অস্পষ্ট ভেসে আসছে নৈশব্দের গান। সাঁই করে বেজে উঠে ম্লান হয়ে যায় এক ফোঁটা ফেরারী বাসের সাইরেন। চোখ থেকে ঘুম নেমে বিমূর্ত দর্শক। শেষরাতের বিচ্ছিন্ন ভোরে আমি ধাঁধাঁয় পড়ে গেলাম ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘আবহমান’ দেখে। ধন্যবাদ পনিপু।
Selim Anwar
ইয়া মাবুদ...ঋতুপর্ণ_ঘোষ তোমার মাথা খেয়েছে,,,বাংলা সিনেমা দেখে পাগল হওয়ার কিআছে..বস্তাপচা বাংলা সিনেমা আমার দেখতেইচ্ছা করেনা
বিশেষ ধন্যবাদঃ
ব্লগার জালিস মাহমুদ
ব্লগার হাসান মাহবুব
ব্লগার বিডিআইডল
ব্লগার নাফিজ মুনতাসির
ব্লগার মুহাম্মদ রাফিউজ্জামান সিফাত
ব্রগার আরিফ আরাফাত রুশো এবং
Ratul Khan
ও
Linkon Husain
এবং
ব্লগার লিঙ্কনহুসাইন-
রিভিউ আশা করেছিল যে আমার কাছ থেকে। লিঙ্কন, চেষ্টা করলাম প্রতিটা সম্পর্কেই অল্প করে বলতে।
--------------------------------
নিজস্ব ব্লগ সাইটেও প্রকাশ করা হলো
Click This Link