অন্যদের মুভি রিভিউ দেখে মনে হল কাজটি আমারও করা উচিত। আজ আমি ভারতীয় মুভি থ্যাংকস মা (Thanks Maa) নিয়ে কিছু কথা বলব। এটা আমার দ্বিতীয় মুভি রিভিউ।
প্রথম রিভিউ ছিল যুগ্ধ শিশু
ইরফান খানের পরিচালিত মুভিটি ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়েছে। তারপরও কেন জানি মনে হয় মুভিটি অনেকেই দেখেনি। ১২০ মিনিটের ছবিটিতে মূল ভুমিয়ায় রয়েছে কিছু পথশিশু, যারা তাদের জন্ম পরিচয় জানে না। আইডিএম এ মুভিটি ৭.৬ রেটিং পেয়েছে।
আসুন মূল কাহিনীতে আসা যাক।
ছবিটির প্রথমেই কিছু বস্তির বাচ্চাদের জীবিকার তাগিদে চুরি করতে দেখা যায়। যারা ভিন্ন সময়েই নানা জায়গায় চুরি করে পরে তা নিজেদের মাঝে ভাগ করে নেয়। একসময় একটি ছেলে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ও তাকে বাচ্চাদের নার্সিং হোমে রাখা হয়। নার্সিং হোমের তত্বাবধায়ক ছেলেটির সাথে সেক্স করতে নানাভাবে চেষ্টা করে, ভয়ে ছেলেটি রাতের আধারে নার্সিং হোম ছেড়ে পালিয়ে আসে।
কিন্তু পালানোর সময় সে মূল ফটকের সামনে গাড়ি থেকে এক মহিলাকে একটি বাচ্চাকে রেখে যেতে দেখে। কিছু কুকুর বাচ্চাটিকে কামড় দিতে চাইলে সে বাচ্চাটিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। ছবিটির মূল ভুমিকা শুরু এখানেই।
একজন বাচ্চা যে নিজেই অবহেলিত তার পক্ষে অপর একটি নবজাতকের যত্ন নেয়া যে কী কঠীন তা ছবিতে ফুটে উঠেছে। এতো কষ্টের পরও সে বাচ্চটিকর তার কাছ থেকে হাতছাড়া হতে দেয়নি। নবজাতকটিকে নিয়ে চার পথশিশুর যে ব্যস্ততা তা ছবিটি না দেখলে বুঝবেন না।
বাচ্চটির মাকে খুজে পেতে চলে তাদের নানা কৌশল। যার মাঝে ফুটে উঠেছে পুরুষদের অন্য নারীদের প্রতি আসক্ততা, নানা অসামাজিক দিক, পতিতালয়ের বাস্তব কিছু দিক। যেমন সমাজে সবাই ছেলে সন্তান চাইলেও পতিতালয়ে সম্পুর্ণ ভিন্ন। কেননা তাদের সমাজে কোন অবস্থান নেই আর পতিতালয়ে সবাই একটা সময় পর্যন্তই কাজ করে তারপর তাদের আর কেউ খোজও নেয় না। এসময় একটি মেয়েই তাদের অন্য দিতে পারে। মা হয়ে মেয়েকে অন্যের কাছে বেচার মতো কিছু কষ্টকর ও অসামাজিক দিক যেমন ছবিটিতে আছে, তেমনি সমাজের অসৎ চরিত্রের মানুষকেও দেখানো হয়েছে যারা নিজ স্ত্রীকে ঘরে রেখে এমন কাজে লিপ্ত হয়।
অনেক পথ চলার পর অবশেষে বাচ্চাটির মাকে খুজে পেলেও, মাটি বাচ্চাকে নিতে অস্বীকার করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে দেখা যায় সন্তানটির জনক মেয়েটির নিজ বাবা।
অবাক করার মতো হলেও ২০০৯ এ মুক্তি পাওয়া ছবিটির কাহিনি আজ ভারতে বর্তমান। কেন জানি ভারতে অস্বাভাবিহ হারে নিজ ঘরেই নারী নির্যাতন বেড়ে গেছে।
ছবিটির শেষে ভারতে নারী নির্যাতনের উপর নানা তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
এমন একটি ছবির নাম Thaks Maa রাখার যুক্তিটা অনেক সুন্দর। কেননা আমাদের সকলেরই উচিত নিজ মাকে ধন্যবাদ জানানো। কারণ তিনি আমাদের পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, তার পরিচয়ে বড় করেছেন, জীবনের প্রতি মুহুর্তে তার মমতার হাত মাথায় রেখেছেন। যদিও আমরা অনেক সময়ই মাকে ভুলে নানা মানুষকে নিয়ে আনন্দে মেতেছি, কিন্তু মা সবসময়ই তার সন্তানকে আগলে রেখেছেন।
যারা ছবিটি দেখেননি তাদের দেখার অনুরোধ রইল।
আসুন আরও একবার বিশ্বের সকল মমতাময়ী মাকে স্বরণ করি, তাদের প্রতিদান দেবার ক্ষমতা বিধাতা আমাদের দেননি। তবে সেবা করার কিছু সুযোগ দিয়েছেন। যাদের মা গত হয়েছেন, তাদের কিছু বলার নেই। আসুন আমরা পৃথিবীর সব মাকেই সন্মান করি, কারণ মা তো মা ই হয়, হোক না সে আপনার বা আমার।