সুরাইয়া নারায়নগঞ্জে এসেছে তার শ্বাশুড়ী ফাতেমা বেগমের সাথে দেখা করতে।
ফাতেমা বেগমঃ আরে, আজ সূর্য কোন দিক দিয়ে উঠেছে? তুমি আমার বাসায়?
সুরাইয়াঃ কেন, আমি আপনার বাসায় আসতে পারিনা বুঝি আম্মা?
ফাতেমা বেগমঃ কোনদিন তো আসোনি। তাই অবাক হলাম! এসো ভেতরে এসো।
সুরাইয়া বাসার ভেতরে এসে বসল।
ফাতেমা বেগমঃ এলেই যখন, আলমগীরকে সাথে নিয়েই আসতে। নুসরাতের বিয়ের পর ওকে তো দেখিইনি।
সুরাইয়াঃ আম্মা, আপনি জানেন তো ও কত বিজি মানুষ!
ফাতেমা বেগমঃ হ্যাঁ, এতই বিজি যে নিজের মায়ের সাথেও দেখা করার সময় হয় না। নুসরাতের কী খবর?
সুরাইয়াঃ তার কথাই তো বলতে এসেছি আম্মা। খুশির সংবাদ।
ফাতেমা বেগমঃ শোকর আলহামদুলিল্লাহ। আমি তো সারাক্ষণ এই দোয়াই করছিলাম যে আমার নাতনীর কোল একটি ফুটফুটে ফেরেশতা দিয়ে ভরে যাক।
সুরাইয়াঃ ফরহাদদের ফ্যামিলি তো খুবই খুশি। জানেন আম্মা, তারা পার্টিও রাখছে আগামী সপ্তাহে।
ফাতেমা বেগমঃ খুশি তো হবেই। বংশের প্রথম প্রদীপ আসছে। আল্লাহ সবাইকে এভাবে খুশিতে রাখুন।
*****
নুসরাতের বাসায় তার ফ্রেন্ড সুমাইয়া এসেছে।
সুমাইয়াঃ কেমন লাগছে?
নুসরাতঃ খুব খুশি লাগছে। আরো বেশী খুশি লাগছে ও কে খুশি হতে দেখে। জানিস, ও বাসায় দোলনা কিনে আনতে চায়। আমি বললাম, আগে বেবি হোক, তারপর কেনো। সে শুনতেই চায় না। পুরো ঘরটাকে খেলনার দোকান বানিয়ে ফেলতে চায়।
সুমাইয়া হাসল।
নুসরাত বলল, তোর খবর কী, বল?
সুমাইয়া বলল, আগামী সপ্তাহে আমি আর হাসান আমেরিকা চলে যাচ্ছি।
নুসরাতঃ ওয়াও! গ্রেট নিউজ।
সুমাইয়াঃ হুম, তবে তোদের ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট লাগছে।
নুসরাতঃ দেখিস, ওখানে গিয়ে আবার আমাদের ভুলে যাস না।
সুমাইয়াঃ তোর মত প্রিয় বন্ধুকে আমি ভুলতে পারি?
নুসরাতঃ আচ্ছা, আবিদের কী খবর? ও তো আমার বিয়েতেও এলো না!
সুমাইয়াঃ ও সৌদি আরবে ওর ভাইয়ের কাছে চলে গেছে। এটুকুই শুধু জানি।
নুসরাতঃ আমাদেরকে জানিয়েও গেল না।
*****
নুসরাত তার দাদির বাসায় ঘুরতে এলো।
ফাতেমা বেগমঃ এই অবস্থায় জার্নি করা ঠিক না, বোন।
নুসরাতঃ কী করব, দিদা! তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিল খুব। তাই চলে এলাম।
ফাতেমা বেগম হেসে বললেন, আমি বুড়ি মানুষ। আজ আছি, কাল নেই। তোর চিন্তা করা উচিৎ ভবিষ্যৎ নিয়ে, তোর পেটে বেড়ে ওঠা ফেরেশতাটিকে নিয়ে।
নুসরাতঃ হুম। ওর কথাই তো সারাক্ষণ ভাবি।
ফাতেমা বেগমঃ ফরহাদ কেমন আছে? ও কে নিয়ে এলেই পারতিস!
নুসরাতঃ ও তো অফিসে। সন্ধ্যায় ফেরার সময় আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। আমরা বাইরে ডিনার করব। তারপর বাসায় ফিরব।
ফাতেমা বেগমঃ কেন? বাসায়ও তো ডিনার করতে পারিস!
নুসরাতঃ না, বিনুকে আজকে রাতের খাবার বানাতে নিষেধ করে দিয়ে এসেছি।
ফাতেমা বেগমঃ বিনু কেন? তুই রান্না করিস না?
নুসরাতঃ না, আমার রান্না বান্না করতে ভালো লাগে না, সেটা তো তুমি জানোই দিদা।
ফাতেমা বেগমঃ এ কেমন কথা? তোর বিয়ে হয়ে গেছে। তোর সংসারের কাজ এখন তোরই সামলানো উচিৎ। কাজের লোকের হাতে ছেড়ে দেয়া ঠিক না। তাছাড়া প্রতিটি পুরুষই চায় তার স্ত্রী তার জন্য কিছু রাধুক, তাকে স্পেশাল কিছু রান্না করে খাওয়াক।
নুসরাতঃ ফরহাদ সে রকম না। সে রকম কিছু হলে ও আমাকে বলত।
ফাতেমা বেগমঃ সবকিছু মুখের কথায় বোঝানো যায় না, কিছু কথা নীরবতা থেকে বুঝে নিতে হয়। বোকা মেয়ে!
*****
নুসরাত ও ফরহাদ রেস্টুরেন্টে এসেছে ডিনার করতে।
নুসরাতঃ আচ্ছা, তুমি কী আমাকে নিয়ে আনহ্যাপি?
ফরহাদঃ এমন কথা বলছ কেন?
নুসরাতঃ আহ, বলোই না, তুমি কী আমাকে নিয়ে আনহ্যাপি?
ফরহাদঃ না তো।
নুসরাতঃ আমি জানতাম, তুমি এই রিপ্লায়ই দেবে। আমি তোমাকে কত ভালবাসি! আমার মত ভালো তোমাকে আর কেউ বাসতে পারবে না। কেউ না।
ফরহাদঃ হুম।
নুসরাতঃ আমি ভাবছি, একটা রান্নার কৌর্স করব। রান্নাবান্না শিখব। তারপর তোমার পছন্দের পছন্দের ডিশ বানিয়ে খাওয়াবো।
ফরহাদঃ তাই?
নুসরাতঃ হুম। আমি তোমাকে আমার বিরুদ্ধে কখনও কোন অভিযোগ করার সুযোগ দেব না।
*****
ফরহাদ ও নুসরাত সিঁড়ি বেয়ে তাদের ফ্ল্যাটে উঠছিল। হটাৎ নুসরাত সিঁড়ি থেকে নীচে পড়ে গেল। প্রচন্ড ব্যথা পেল সে। ফরহাদ দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। ডক্টর চেকআপ করে এসে ফরহাদকে বলল, সরি, ব্যাড নিউজ। আপনাদের বাচ্চাটা নষ্ট হয়ে গেছে।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:২৪