পারিবারিকভাবেই ফরহাদ ও নুসরাতের এঙ্গেজমেন্ট হয়ে গেল। দুটো পরিবারেই এখন বিয়ের প্রস্তুতি চলছে। আলমগীর সুরাইয়া ও তার মেয়ে নুসরাতকে বিয়ের কার্ড দেখাচ্ছে।
আলমগীরঃ তাড়াতাড়ি চয়েজ করো যে কোন কার্ডের ডিজাইনটা বেশী ভালো লাগে। সবাইকে তো বিলি বন্টনও করতে হবে, নাকি?
সুরাইয়াঃ আমার যদি ক্ষমতা থাকত আমি পৃথিবীর সব মানুষকে ইনভাইট করতাম আমার মেয়ের বিয়েতে। মহা ধুমধামের সাথে আমার মেয়েকে বিয়ে দেব। সবাই যাতে তাক লেগে যায়।
সুরাইয়া তার মেয়ের কপালে চুমু দিল।
আলমগীরঃ তা তো বটেই।
নুসরাতঃ আম্মা, একটা কার্ডও আমার পছন্দ হচ্ছে না।
আলমগীরঃ তো এক কাজ করো। তোমার বিয়ের কার্ড তুমি নিজেই ডিজাইন করো।
নুসরাতঃ গুড আইডিয়া। আমিই ডিজাইন করব। থ্যাঙ্ক ইউ পাপা।
আলমগীর ও সুরাইয়া হেসে দিলেন।
*****
নুসরাত ও ফরহাদ কেএফসিতে এসেছে।
নুসরাতঃ তোমার বিয়ের কেনাকাটা সব শেষ হয়েছে?
ফরহাদঃ হ্যাঁ, তোমার?
নুসরাতঃ একদমই না। আরো অনেক কেনাকাটা বাকি আছে। শেষই হতে চায় না।
ফরহাদঃ ও তাই?
নুসরাতঃ হুম। জানো, আমাদের বিয়ের কার্ড আমি নিজেই ডিজাইন করেছি।
ফরহাদঃ তাই?
নুসরাতঃ হুম। আমার বাবা কী বলেছে জানো?
ফরহাদঃ কী বলেছে?
নুসরাতঃ বিয়ের পর বাবার কোম্পানি তোমার নামে করে দেবে। তুমিই সেই বিজনেস সামলাবে।
ফরহাদঃ মানে কী?
নুসরাতঃ মানে বাবার বিজনেসে তুমি হেল্প করবে। তিনি তোমার নামে করে দিচ্ছেন সেটা।
ফরহাদ এংগেজমেন্ট রিং খুলে ফেলল। তারপর তা টেবিলে রেখে বলল, আমি এ বিয়ে করব না।
ফরহাদ চলে যাচ্ছিল। নুসরাত তার পথ রোধ করে দাঁড়াল। নুসরাত বলল, বিয়ে করবে না মানে?
ফরহাদ বলল, বিয়ে করব না মানে করব না। তোমরা কী ভেবেছ, আমি তোমার বাবার বিজনেসের লোভে তোমায় বিয়ে করছি?
নুসরাত বলল, আমি কখন একথা বললাম? তুমি আমার কথা বুঝতে পারোনি। বাবা তো এটা তোমাকে গিফট হিসেবে দিচ্ছেন।
ফরহাদ বলল, ফর গড সেক, আমার এই গিফট চাইনা। তোমরা কেমন মানুষ সেটা আমার জানা হয়ে গেল।
নুসরাত বলল, প্লীজ এরকম করো না।
ফরহাদ বলল, আমাকে যেতে দাও। এ বিয়ে হচ্ছে না।
নুসরাত ফরহাদের পায়ে পড়ল আর বলল, প্লীজ, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আর কখনও এ ব্যপারে তোমাকে কিছু বলব না। প্লীজ আমাকে ক্ষমা করে দাও।
ফরহাদ বলল, ঠিক আছে, ওঠো।
নুসরাত উঠল আর ফরহাদের হাতে রিং পড়িয়ে দিল।
*****
সকালবেলা আলমগীর নুসরাতের রুমে এলো।
আলমগীরঃ ফরহাদকে বলেছিস বিজনেসের ব্যপারে?
নুসরাতঃ তুমি চিন্তা করো না, ছয় মাস পর আমার ফাইনাল এক্সাম। তারপর আমিই তোমার বিজনেসে হেল্প করব। ফরহাদকে এ ব্যপারে জড়িও না।
আলমগীরঃ সে কিছু বলেছে তোকে?
নুসরাতঃ না, তেমন কিছু বলেনি।
*****
সুরাইয়া ও ফাতেমা বেগম কথা বলছেন।
সুরাইয়াঃ আম্মা, খুব ভালো ছেলে ফরহাদ। নুসরাতকে খুব সুখে রাখবে
ফাতেমা বেগমঃ মাশাল্লাহ।
সুরাইয়াঃ আমি তো নুসরাতের বিয়ের আশাই ছেড়ে দিয়েছিলাম। ও যা জেদী মেয়ে। একবার যখন বিয়ে না করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে, হয়তো সত্যি সত্যিই কখনই বিয়ে করবে না। কিন্তু ও যে ফরহাদকে মন দিয়ে রেখেছে সেটা তো আমি জানতামই না।
ফাতেমা বেগমঃ সবসময় আল্লাহর উপর ভরসা রাখা উচিৎ। আল্লাহ তার পেয়ারা বান্দাদের কখনও নিরাশ করেন না। তিনি সর্বজান্তা, তিনি দয়াময়।
সুরাইয়াঃ জানেন আম্মা, ফরহাদের পিতামাতাও অনেক ভালো। আজকাল তো শ্বশুর শ্বাশুরীরা কত কিছু ডিমান্ড করে পাত্রীপক্ষের কাছে। অথচ তারা একটি সুতাও চায়নি আমাদের কাছে। উল্টো বিয়ের পর থাকার জন্য তাদের নামে একটি ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছেন।
ফাতেমা বেগমঃ আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু তারা সবাই একসাথেই তো থাকতে পারতো!
সুরাইয়াঃ যাই হোক মা, আমার মেয়ে প্রথম থেকেই নিজের সংসার গুছিয়ে নিতে পারবে- এর চেয়ে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে!
ফাতেমা বেগমঃ আল্লাহ মহান। তিনি সকলের মঙ্গল করুন। আমিন।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৩০