ফাতেমা বেগম তার পুত্রবধু সুরাইয়ার সাথে কথা বলছেন।
ফাতেমা বেগম ।। তুমি তাহলে পর্দা করা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছ?
সুরাইয়া ।। আমাদের সোসাইটিতে কেউ ওরকম পোশাক পড়ে না। এটা আমাদের টেস্টের ব্যপার, আমাদের রুচিশীলতার ব্যপার।
ফাতেমা বেগম ।। ছোট ছোট কাপড় পরাটা রুচিশীলতার ব্যপার হতে শুরু করল কবে থেকে?
সুরাইয়া ।। আম্মা, এটাই এখনকার ফ্যাশান। আর আপনার ছেলে এমন পোশাক পড়াটাই পছন্দ করেন।
ফাতেমা বেগম ।। আগে তুমি কত ভালো ছিলে! কত পরহেজগার ছিলে! পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে, কুরআন তেলাওয়াত করতে, হিজাব করে চলতে। হটাৎ কী ভূত আছর করল, সব ছেড়ে দিলে। বদলে গেলে। মেয়েটাকেও তো কাফের বানিয়েছ! দ্বীনের ব্যপারে কিছুই সে জানে না। আমার তো মাঝে মাঝে ভয় হয়, না জানি কখন আল্লাহর গজব নেমে আসে! আল্লাহর নাফরমান বান্দা দুনিয়া আখেরাত কোনখানেই সফলকাম হতে পারে না।
সুরাইয়া ।। আপনি দুয়া করেন ওর জন্যে, আম্মা।
******
নুসরাত বিছানায় বসে বসে আপনমনে হাসছে আর বারবার মোবাইলের স্ক্রিনে ফরহাদের নাম্বার দেখছে। নুসরাত ভাবছে, কল দেবো? না থাক। এতো রাতে কল দিলে কি ভাববে! দিলেই বা কি ক্ষতি! ফোন তো কল করার জন্যেই, নাম্বার নিয়েছি তো কথা বলার জন্যেই। না থাক। যদি রাগ করে, যদি খারাপ মেয়ে ভাবে! না, দেই একটু। দুই মিনিটের বেশী তো কথা বলব না। শুধু জানতে চাইব, কেমন আছেন। বাসায় ঠিকমত পৌছেছেন কী না। হুম, সাহস কর নুসরাত। এত এক্সাইটমেন্ট কাজ করছে কেন? কেমন যেন শিরশির করছে সারা দেহে। আগে তো কখনও এমন হয়নি।
নুসরাত ফরহাদকে ফোন দিল।
ফরহাদ বই পড়ছিল। হটাৎ দেখল অচেনা নাম্বার থেকে কল এসেছে। সে অবাক হয়ে রিসিভ করল।
ফরহাদঃ হ্যালো
নুসরাতঃ হ্যালো
ফরহাদঃ কে বলছেন?
নুসরাতঃ গেস করুন।
ফরহাদঃ রঙ নাম্বার।
ফরহাদ ফোন কেটে দিল। নুসরাত আবার কল দিল।
ফরহাদঃ দেখুন আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। আপনি ভুল নাম্বারে বারবার কেন কল করছেন?
নুসরাতঃ আপনি বুঝি আমাকে ভুল নাম্বার দিয়েছেন?
ফরহাদঃ সরি? বুঝলাম না।
নুসরাতঃ আপনিই আমাকে এই নাম্বার দিয়েছিলেন।
ফরহাদঃ কে আপনি?
নুসরাতঃ আমি নুসরাত।
ফরহাদঃ নুসরাত! সরি, নুসরাত নামে তো আমি কাউকে চিনি না।
নুসরাতঃ এত দ্রুত ভুলে গেলেন! আজ বার্থডে পারটিতেই তো কথা হলো।
ফরহাদঃ ও আচ্ছা! আই গট ইট। আপনি সেই ড্যাব ড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকা মেয়েটা!
নুসরাত হেসে দিল।
ফরহাদঃ সো, হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?
নুসরাতঃ মানুষ বুঝি হেল্প চাওয়ার জন্যেই শুধু ফোন দেয়?
ফরহাদঃ তো আর কি জন্যে ফোন দেয়?
নুসরাতঃ এমনি এমনিও তো দিতে পারে।
ফরহাদঃ তাই? জানতাম না তো।
নুসরাতঃ কী জানতেন না?
ফরহাদঃ এত রাতে এমনি এমনিও কোন মেয়ে ফোন দিয়ে ডিস্টার্ব করতে পারে, সেটা জানতাম না।
নুসরাতের মন খারাপ হয়ে গেল।
নুসরাতঃ আপনি ডিস্টার্ব ফিল করছেন?
ফরহাদঃ এনি ডাউট?
নুসরাতঃ আই এম সরি। গুড নাইট।
নুসরাত ফোন কেটে দিল। তার অনেক কান্না পাচ্ছে। সে আবিদকে কল করল।
আবিদঃ হ্যালো
নুসরাত নীরব।
আবিদঃ হ্যালো, হ্যালো নুসরাত...
নুসরাত ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল।
আবিদঃ নুসরাত, তুমি কাঁদছ কেন? কি হয়েছে?
নুসরাত কান্নাজড়িত কন্ঠে বলল, আমি রাতের বেলা ফোন করলে তুমি বিরক্ত হও?
আবিদঃ হটাৎ এ প্রশ্ন! কি হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে তোমায়?
নুসরাতঃ আমার প্রশ্নের উত্তর দাও। তুমি বিরক্ত হও আমি রাতে ফোন দিলে?
আবিদঃ না তো। বিরক্ত হবো কেন?
নুসরাতঃ মিথ্যে কথা। তোমরা ছেলেরা খুব খারাপ, খুব বাজে। তোমরা মেয়েদের মন বোঝো না, তাদের হৃদয়ের ভাষা বোঝো না। তোমরা এক একটা চোখহীন টিউবলাইট।
নুসরাত ফোন কেটে দিল। হটাৎ দেখল ফরহাদের কল এসেছে। নুসরাত রিসিভ করল, হ্যালো।
ফরহাদঃ হ্যালো নুসরাত, আই এম সরি। আমার এভাবে বলাটা ঠিক হয়নি। একচুয়ালি আমি এভাবে রাতের বেলা কোন মেয়ের সাথে কথা বলিনি তো, তাই। আর আমার খুব পছন্দের একটা বই পড়ছিলাম, হটাৎ তোমার কল আসায় কনস্যান্ট্রেট ব্রেক হয়ে গিয়েছিল। তাই একটু রেগে গিয়েছিলাম। আই এম সরি এগেইন।
নুসরাতঃ ওকে, এখন আর সাফাই দিয়ে কি হবে। থাপ্পর মেরে সরি বললে কী লাভ? দাগ তো থেকেই যায়।
ফরহাদঃ সরি? বুঝলাম না।
নুসরাতঃ এখন বিরক্ত হচ্ছেন না তো আমার কথায়?
ফরহাদঃ না না, বিরক্ত হচ্ছি না। তুমি বলো।
নুসরাতঃ আপনার ফ্যামিলিতে কে কে আছে?
ফরহাদঃ আমি আর আমার মা বাবা।
নুসরাতঃ আপনি বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান?
ফরহাদঃ হ্যাঁ। কেন?
নুসরাতঃ আমিও।
ফরহাদঃ তাই?
নুসরাতঃ হুম। আপনার সাথে আমার ভালো মিল আছে।
ফরহাদঃ তাই তো দেখছি!
নুসরাতঃ আমি আপনার সাথে দেখা করতে পারি?
ফরহাদঃ জরুরী?
নুসরাতঃ খুব জরুরী। আপনাকে আমার অনেক কথা বলার আছে।
ফরহাদঃ বলো?
নুসরাতঃ না, সাক্ষাতে বলব।
ফরহাদঃ ওকে।
******
ফরহাদের সাথে কথা বলা শেষ করে ফোন কাটতেই আবিদের কল এলো।
নুসরাতঃ হ্যালো আবিদ
আবিদঃ এতোক্ষণ কার সাথে কথা বলছিলে? আর তোমার মুড হটাৎ করে এত ভালো হলো কি করে? আলাদিনের চেরাগ পেয়েছ নাকি?
নুসরাতঃ তাই ধরে নাও।
আবিদঃ মানে?
নুসরাতঃ কাল ক্যাম্পাসে বলব। এখন খুব ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।
আবিদঃ গুড নাইট।
(চলবে...)
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৮