ব্লগে প্রথম পোষ্ট দিলাম। একদিন পর ঘুরে এসে দেখলাম তিনবার পঠিত, তিইইইনবাররর। মানে আমার পোষ্ট তিনজন মানুষ পড়েছে। খুশীতে আত্নহারা হবার জোগাড়। পরে জানলাম আমি নিজেই তিনবার রিলোড দিয়েছিলাম। সেটা তিনবার পঠিত বলে কাউন্ট করেছে। দুষ্টু ব্লগ!
ব্লগে এসে যেদিন প্রথম লেখা দিই সেদিন মনে মনে ভেবেছিলাম দিই আল্লাহর নাম নিয়ে একটা লেখা, খারাপ হলে মানুষ দুএকটা গালি না হয় দিবে। আমি চুপেচাপে লগ আউট করে পড়ে নিয়ে খুদাপেজ বলে বিদায় নিব। সামনা সামনি এসেতো আর কেউ বলতে পারবে না “বালছাল লেইখা ব্লগ লেখতে আইছস, বাসায় বইসা বইসা খাতা কলমে লেখ”
যাকগে প্রথমদিকে ব্লগের কিছুই বুঝি না। এক অথৈ জলে পড়া অবস্থা। সবাই ছাগু ছাগু করে। কিন্তু এই ছাগু জিনিসটা কি? আমি জ্ঞানী কিসিমের মানুষ নিজেই বানিয়ে ফেললাম ছাগু মানে হল ছাগলের গু। বাহ আমি নিজেতে মুগ্ধ। এরপর মুগ্ধ হলাম ব্লগারদের জ্ঞান দেখে। কি ভারী ভারী লেখা। ব্লগাররা সবাই অলরাউন্ডার এটাও বুঝলাম, যে ভালো গল্প কবিতা রম্য লিখতে পারে সে ভালো ক্যাচালও করতে পারে। প্রচলিত কিছু ব্লগ শব্দের মধ্যে কস্কি মমিন শব্দটায় আঁটকে গেলাম। এখানে মমিন কিছু একটা বুঝিয়েছে, এবং এটা শুনে কেউ একজনকে মমিনকে বলেছে ‘কি বলতাছস মমিন”। চোখের সামনে খাপো নামের একটা শব্দ প্রায় ঘোরাফেরা করতো। এটার অর্থও বুঝি না। নিজেই বুঝে নিলাম খাপো মানে খালার পোলা। বাট খালার পোলা গালি হইলো কোন দিন থেকে? কনফিউশন কনফিউশন! তারপর একটা সময় দেখলাম “মাল্টিনিক, মাল্টি নিক বলে সবাই চেঁচামেচি করছে। আমি ভাবলাম এমন কোন ব্লগার যে এক নিক থেকেই গল্প কবিতা রম্য ইতিহাস,বিজ্ঞানসহ মাল্টি বিষয়ে ব্লগিং করে থাকে। কিন্তু না আমি ভুল, ব্লগারের গোপন নিকের নামই মাল্টি নিক। মাল্টি নিকে ব্লগিংকে মাল্টিবাজি বলা হয়। ভাগ্যিস ম এর পর গ পড়ে যায় নাই ভুলে।
নতুন নতুন ব্লগার হবার পর যা হয় আরকি। বন্ধুরা তখনও ব্লগ চিনে উঠতে পারেনি। আমারতো অনেক ভাব তখন। সুযোগ পেলেই ব্লগের গল্প জুড়ে দিই। মাঝে মাঝেই ঝাড়ি খাই। তবুও থামিনি। ভাব নেয়া থামে না।ঘটনা শুরু হল শাহবাগ আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে। মানুষ ব্লগার শুনলে চমকে উঠে, হাত দিয়ে ধরে দেখতে চায়। শাহবাগ আন্দোলনের তৃতীয় দিন জাদুঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি এবং আরেক ছোট ভাই যে কিনা ব্লগিং করে সামুতেই। আমরা ব্লগের আলাপই করছিলাম। এক বয়স্ক লোক এসে জিজ্ঞেস করলেন “বাবা আপনারা কি ব্লগার?
-জ্বি আঙ্কেল?
উনার চোখের পানি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি “বাবা আপনাদের হাতটা দেন, একটু ধরি”। আমরা হাত দিলাম। উনি কিছুই বললেন না। অনেক্ষন চুপ কতে দুজনের হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন। আমরা সামান্য বিব্রত। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। একটা সময় উনি নিজে থেকেই বললেন “বাবারা এই হাত দিয়া লেখেন, আরো অনেক লেখেন, লেইখা দেশটারে পাল্টাইয়া দেন। আপনারা পারবেন, এইটা দেখাইয়া দিছেন”
এসব ব্যাপারের সামনা সামনি হবার অভিজ্ঞতা আমাদের নেই। আমরা দুজনেই হতভম্ব হয়ে রইলাম। কিছুই বলার নেই। আঙ্কেল চলে গেলেন। আমি ব্লগিং করে কি অর্জন করেছি সে হিসাব করিনা। তবে সেদিনের সেই আঙ্কেলের সাথে দেখা হওয়াটাকে অর্জন হিসাবে নিই। আঙ্কেল একটা অর্জন দিয়ে গেলে। বিপরীত প্রতিক্রিয়াও দেখেছি। আমারদেশ ব্লগারদের স্ক্রিনশর্ট নিয়ে নিউজ করেছে। চারিদিকে ছিছি পড়ে গেছে। কাজীপাড়ায় এক দোকানে চা খেতে গিয়েছি। তারা জানলো না তারা বসে বসে যাদের গালি দিল তাদের একজন তাদের গালি তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে হা করে শুনেছে।
কালের পরিক্রমায় ব্লগে আজ আমার তিন বছর বয়স। তিনবছরে ছাইপাশ লেখার সাথে যারা ছিলেন তাদের ধন্যবাদ। যারা মুখ খুলে বলতে পারেন নাই “বালছাল লেখা” তাদেরকে বেশী ধন্যবাদ। বলে ফেললে তিন বছর কাটাতে পারতাম না। আর যারা বলেছেন বালছাল বাট..... তাদেরকে বেশী ধন্যবাদ। তাদের জন্যই তিনবছর। এবার আবার কাহিনীতে ফিরে যাই। নতুন ব্লগাররা আসবে, কলকলাবে। তাদের জন্য কিছু তথ্য, যা অবশ্যই জানতে হবে
১. ব্লগিং হচ্ছে তেলযুক্ত খাবারের মত, লোভ লাগবে, খিদা মিটবে, স্বাদ লাগবে এবং ওজন বাড়াবে। বেশীর ভাগ ব্লগারদের সাস্থ্য মাশাল্লাহ ভালো।
২. ব্লগ হচ্ছে এক ধরণের নেশা! এই নেশায় আক্রান্তদের জন্য কোন প্রতিকার নেই। এই নেশায় আক্রান্ত হলে ক্যালকুলেটার দেখলেও মনে হবে “ ইশ যদি ক্যালেকুলেটর দিয়ে সামুতে লগ ইন করতে পারতাম”
৩.ব্লগে কোন পোষ্ট পড়েই আপনি মজা পেয়েছেন বলে চলে গেলে হবে না, ব্লগের পূর্ণ মজা পেতে হলে অবশ্যই কমেন্টস পড়তে হবে। কমেন্টস হচ্ছে খাবার শেষে দইয়ের স্বাদ। মাঝে মাঝে এই দই পোলাওর চেয়েও ভালো হয়।
৪. ব্লগিং করতে বসার আগে শুকনো খাবার, চা সিগারেট, মুড়ি সব আশেপাশে রাখতে হবে। কারণ পোষ্ট পড়ার মাঝখানে খিদা লাগলেও উঠা সম্ভব না। মাঝে মাঝে মনে হতে পারে পিসির সামনে থেকে যদি প্রাকৃতিক কর্মটি সারার ব্যবস্থা থাকতো ভালো হতো।
৫. ছেলেরা নারী ব্লগারের ব্লগে ঘনঘন যেতে সাবধান, এটা ফেসবুক না। যার ব্লগে যাবেন সে কিন্তু বুঝে যাবে আপনি গিয়েছেন। সবচে বড় কথা যতগুলো নারী ব্লগার সবাই কিন্তু নারী না!
৬. পুরোপুরি না জেনে জ্ঞান ফলানো ঠিক না,এরকম জ্ঞান ফলাতে গিয়ে কট খেলে ভরে দিবে। ভরে দেয়ার আদুরে ব্লগ নেইম পুন্দানী!
আজকে আর উপদেশ দিব না। বেঁচে থাকলে আগামি বছর দিব।
আমার ব্লগে তৃতীয় বছরপূর্তিতে যা যা ঘটেছে :
১. কাদের মোল্লা ফাঁসি, এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। কেবল ব্লগে জন্মদিন উপলক্ষে এত বড় গিফট আশা করিনি।
২. তৃতীয় জন্মদিনকে সামনে রেখে বিরোধীদল এর আগে পরে অবরোধ দিয়ে দেশকে অচল করে দিয়েছে। কারণ বিরোধী দল চায় সবাই নিজের জায়গায় থাকুক, এবং নোমান নমির ব্লগ পড়ুক।
৩. জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ-তারানকোর বাংলাদেশ সফরের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল আমার ব্লগে তৃতীয় বছর পূর্তি।
৪.আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরী সেদিন শেখ হাসিনাকে ফোন দিয়েছিলেন, কারণ আমার ফোন বন্ধ ছিল বলে শুভেচ্ছা জানাতে পারেননি। সরি কেরী, মুপাইলে চার্জ ছিল না।
৫. এরশাদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উনি বলেন " আমি ছেলেদের ব্লগ পড়ি না, মেয়েদের লিঙ্গ সরি লিংক থাকলে দাও"
এই ব্লগে এসে অনেক মানুষের সাথে পরিচয়, তাদের ভিন্নধর্মী লেখার সাথে পরিচয়, অনেক কিছু জানা, আলাদা একটা পৃথিবীর খোঁজ, ব্লগ থেকে রাস্তায় নামা আরো কত কি! ভাবতেই ভালো লাগে, বলতে ভালো লাগে, আমি সামহোয়্যারইন ব্লগে ব্লগিং করি, ইমন জুবায়ের আমার সহব্লগার ছিলেন। ইমন ভাই ভালো থাকুক।