বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে ক্লাসের কয়েকজন বন্ধু মিলে ঠিক করলাম যে, টুরে যাবো, কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগ এমন এক মরার বিভাগ যেনো কারো কোন কাজে উৎসাহ নেই,উদ্যম নেই।
ধুর তোরা তরুনই না!! তোরা হইলি বুড়া!!
কিন্তু যাবো কেমনে? স্যাররাই যে যেতে চায় না
তাহলে কি আমরা যাব না?
ধুর মনে হয় যাওয়া হবে না।
আনমনে সনি মেয়েটা বলে উঠলো তোরা গেলেও আমি যাবো না গেলেও আমি যাবো, রাজশাহী্তে থাকতে থাকতে বোর হয়ে গেলাম।
সে কি সনি কোন মেয়েই তো যেতে চাচ্ছে না , তুই কি একা যাবি?
কোন ছেলে না গেলেও আমি একাই যাবো, সেইন্ট মার্টিন দ্বীপে গিয়ে বসে থাকবো নীল সাগর দেখবো।
কয়েকদিন পর
স্যার আমরা টুরে যাব- নাহিদ ভাই চেয়ারম্যান স্যার কে গিয়ে বলেই ফেললো।
তোমার কয়জন?
স্যার ১০/১২ জন।
মেয়ে ৪ জন।
সেকি? বাপমা গুলো মেয়েদের যেতে দিবে?
স্যার এই ৪ টা মেয়ে ছেলেদের চেয়েও দুর্দান্ত!!!
ঠিক আছে দেখি।
মেলা পেচাল হলো, এবার আসলো আসল হিরো, জামিল দ্য গ্রেট ভাই।
জামিল ভাই বললো ৪ টা মেয়েকে সাথে নিয়ে ঘুরার সুযোগ মিস করব? ভাবিস কি!!সেইন্ট মার্টিন যাবই। এবং সেখানে রাত যাপন করব আমরা। সেইন্ট মার্টিনে রাত যাপন না করলে কোন মজা নাই।
বারবিকিউ পার্টি হবে, ফায়ারক্যাম্প হবে, হবে আড্ডা। কোন চিন্তা করোনা আমি ব্যবস্হা করে ফেলবো
পাক্কা কয়েকদিন ব হুত খ্যাচ ম্যাচ ক্যাচ শেষে স্যারস হ মোট ১৬ জনের টিম হলো। যে স্যার সাথে যাবেন উনি ডিপার্টমেন্টে খুবই সিনিয়র আর গোবেচারা টাইপের।চেয়ারম্যন স্যার বিড়ালের ঘন্টাটা উনার গলায় শেষমেষ বাঁধলেন।মেয়ে মাত্র ৪টা। তারমাঝে আমি একটা।
সব আয়োজন শেষ। এবার যাবার পালা।
যাবার আগের দিন আদরের ছোটবোন রিফাত আমার ঘরে এসে বললো আপু প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একটা জিনিস খেয়াল করেছি কিন্তু আপনাকে বলা হয়নি। আপনাদের টুরটা একদিন দারুচিনি দ্বীপ সিনেমাটার সাথে মিলে।
তাই? জানিনাতো!!
কেনো আপনার কাছে দারুচিনি দ্বীপ বইটা দেখেছিলাম, পড়েননি?
না।
তাহলে টুর থেকে ঘুরে এসে পড়ে নিয়েন, ওরা অবশ্য শেষমেষ টুরে যেতে পারেনি আপনাদের মত।
না আমি এখনই পড়বো।
পরেরদিন টুর হটাত ঘুমিয়ে গেলাম।সকালে উঠে গোছগাছ করে ট্রেনে উঠার আগে বইটা হাতে ধরার সময় হলোনা। ট্রেনে বইটা পড়লাম একটানে।
পড়ে সাথে সাথে রিফাত কে মেসেজ দিলাম না ওরা শেষ পর্যন্ত টুরে যেতে পেরেছিল।
রিফাত ফিরতি মেসেজ দিলো খুব ভালো লাগলো আপনি বইটা পড়েছেন বলে।
মজার ব্যাপার হলো আমাদের টুরে ও মাত্র ৪ টাই মেয়ে ছিল ঠিক দারুচিনি দ্বীপের মত!
টুরের পর যখন মাস্টার্স পরীক্ষা দিলাম, বাসায় আসলাম ঈদে দারুচিনি দ্বীপ সিনেমাটা দেখালো। লুকিয়ে অনেক কাঁদছিলাম আর দেখছিলাম।
একটু আগে আম্মু ফোন করে নিউজটা দিলো। অনেকদিন ভেবেছি ব্লগে এই টুর টা নিয়ে লিখব কোনদিন লেখা হয়ে ওঠেনি।
আজ এই দুঃসংবাদ পেয়ে এটা লিখতে হবে ভাবিনি কোনদিন।
হুমায়ূন আহমেদ স্যার আর নেই। তিনি চলে গেছেন সবকিছুর ঊর্ধে। আমিও ওনার ব্যক্তিগত বিষয়টা নিয়ে খুব বাজে ফিল করতাম একসময়। কিণ্তু ঐ টুর আমাকে কেনো জানি পাল্টে দিয়েছিল।
শ্রদ্ধাজ্ঞলি জানাই আপনার চরণে । যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন। আপনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়মাঝে, আজীবন।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:৩৯