তাবলীগ জামাত হক জামাত, ভাল জামাত, কল্যাণকামী জামাত, কল্যানকর জামাত । কিন্তু এই জামাতের বিপুল সংখক কর্মীরা ইদানিং চিন্তা ও কর্মে বিপথগামী হয়ে যাচ্ছেন । তাদের এই বিপঠগামীতার স্বরূপ উন্মোচন ও গতি-প্রকৃতি বিশ্লষণ -ই পোষ্টের উদ্দেশ্য । তাবলীগ জামাতের বিরোধীতা আমার উদ্দেশ্য নয় ।
বিপথগামীতার মূলে : তাবলীগ জামাতে অংশ নেয় সর্বস্তরের মুসলমানেরা । এই জামাতে দাওয়াতের কাজে অংশ নেওয়ার জন্য শুধুমাত্র নিজামুদ্দীন আউলিয়া বা খাজা মঈনুদ্দীন চিশতীরাই অং নেন না, বরং এতে অংশ নেন ডাক্তার ইন্জিনিয়ার, কোটিপতি ব্যবসায়ী, কৃষক-শ্রমিক, এমনকি দিন মজুর বা রিকশা ওয়ালারাও । তাই ভাল লোকের পাশাপাশি এমন লোকেরাও এই কাজে অংশ নেয় যাদের এখনও আত্ম-সংশোধন হয়নি । আর বিপথগামীতার মুলেই রয়েছে এই আত্মসংশোধণ না হওয়া এবং ধর্মীয় নিষ্টার অভাব একটা জন গোষ্ঠী ।
আত্ম-সংশোধন হয়নি এমন লোকদের চিন্তা ভাবনার গতিধারা : এই শ্রেণীর লোকেরা সর্বদাই নিজেকে বড় মনে করে, নিজের মতের বিপরীতে সকল মত ও চিন্তা ভাবনাকে বাতিল মনে করে । নিজের কৃতকর্মকে শ্রেষ্ঠ মনে করে, অপরের কাজ কর্মকে বেকার - অর্থহীন মনে করে। নিজের চিন্তা ভাবনাকে নির্ভুল ও অপরের চিন্তা ভাবনাকে ফালতু মনে করে, নিজের চেষ্টা - উদ্দোগকে সর্বদা উপকারী মনে করে আর অন্যের কাজ-কর্মকে অনর্থক বা ক্ষতিকর মনে করে । আর এই সমস্যা আক্রান্ত মানুষ সমাজের সব জায়গায়, সব দলে, সব সংগঠনেই দেখা যায় ।
ধর্মীয় পরিমন্ডলে নিষ্ঠা বা এখলাস অর্জিত হয়নি এমন লোকেরা কোন কাজ করলে তার মূলে থাকে আত্মপ্রচার, ব্যাক্তি স্বার্থ, নিজেকে বা নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা করা, নিজেকে বড় হিসেবে উপস্হাপন করা, অন্যকে প্রভাবিত ও অনুগত করা, সর্বপোরি নিজের কতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা ।
যার ফলশ্রতিতেই শুরু হয় বিপথগামীতা ।
আত্ম- সংশোধনহীন গোষ্ঠীর চিন্তা ধাবিত হয় কয়েকটি দিকে :
১. অন্যদের ইমান -ই বেকার, অপূর্ণ বা ত্রটিযুক্ত ।
২. অন্যদের আমলকে বেকার, অগ্রহণযোগ্য । আর গ্রহণজোগ্য হলেও খুবই সামন্য । বিশেষ করে নিজের আমলের তুলনায় অপরের আমল অতি নগন্য ।
৩. নিজের দল-ই শ্রেষ্ঠ দল বা জামাত।
৪. নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ । নিজের বা নিজ মতের অনুগত নয় এমন আলেমের কথাও গ্রহণযোগ্য নয়।
১. অন্যদের ইমান -ই বেকার, অপূর্ণ বা ত্রটিযুক্ত
এ জাতীয় চিন্তা ভাবনার শিকার হয় মূলত ধর্মীয় বাতেল দলগুলো । দ:খের বিষয় ইদানিং হকপন্হীদের মাঝেও এই রোগটি দেখা যাচ্ছে।
খারেজীরা প্রথম এই মত চালু করে। তাদের বক্তব্য ছিল গুনাহ করলে মানুষ কাফের হয়ে যায় । আর মুসলমান কাফের হলে হত্যাযোগ্য। এর পর এ মতবাদ চালায় মুতাজিলারা । তারা বলত গুনাহ করলে মানুষ আর মুমিন থাকে না।
আধুনিক কালে বাতেল মৌদুদীবাদীরা এ মত চালায় এই বলে যে হুকুম একমাত্র আল্লাহর, আর তাই রাষ্ট্রকে মানলে আপনি ইমান থেকে বের হয়ে যাবেন। মুলত এই দাবী প্রথম খারেজীরাই করেচিল। তবে জামাতের যে সমস্ত কর্মী কেন্দ্রের প্রতি অনুগত তাদের ইমান সরকারী আইন মানলেও ঠিক থাকবে । সেটা হিকমতে আমালী, ইসলাম প্রতিষ্ঠার কোশল হিসেবে সহিহ! এছাড়া এ মতের শিকার কথিত 'আহলে হাদীস' সম্প্রদায় । এরা বলে আপনি আবু হানিফার কঠা মানলে মুশরিক হয়ে যাবেন, কিন্তু আলবানী বা জাকির নায়েকের কুরাণ বা সহিহ হাদীস বিরোধী কথা মানলেো ইমান ঠিক থাকবে । কেননা আলবানী গং কুরাণ - হাদীসে নাম করে যত আবর্জনাই খাওয়াক সব - পবিত্র, যেহেতু দেড় হাজার বছরে ( সাহাবাদের সহ ) কেউ - ই কোরাণ হাদীস বুঝেনি বা মানে নি তাই । আলবানী বা বংশালের কথাই কুরান, সেটাই হাদীস।
খুবই দু:খজনক কথা এই যে আজকাল হকপন্হীদের মাঝেও এই রোগ কম-বেশী বিস্তার করছে । অনেক জেহাদপন্হী বলে ফেলেন আপনি জেহাদ না করলে আপনার ইমান - ইসলাম - এবাদত সব বেকার । ইসলামী রাজনৈতীর সাথে সংশ্লিষ্ট কেউ কেউ বলে ফেলেন, সরকারকে মানা হুকুম মানার ক্ষেত্রে শিরক !
মানে কি ?
সরকার মানলে ইমান আমল সব বরবাদ হয়ে যাবে ? মৌদুদীর ভুত ভর করেছে কিছু মৌলানার কাধেও !
তাবলীগের কিছু কর্মী কিভাবে অন্যদের ইমানকে বেকার মনে করে ? ওনারা অনেক সময় ' আমি যদি ব্যবসা না করি সংসার চলবে কি করে ' - এ জাতীয় কথা শিরক ! আবার কেউ কেউ সরসরি শিরক না বললেও বলে ফেলেন তাকওয়ার খেলাফ ! অথচ এই উম্মতের মাঝে সবচেয়ে বড় ইমানদার যিনি, হযরত আবু বকর রা: - ও এই কথা বলেছেন !
কেউ কেউ এটাও বলে ফেলেন তাবলীগে না গেলে ইমান শিখা যায় না, ১২ বছর মাদ্রসায় পড়লে এলেম শিক্ষা হয়, ইমান শিখা হয় না ।
নীচের পোষ্টগুলোতে এ বিষয়টা দেখে নিতে পারেন :
তাবলীগ জামাতের কিছু কর্মীদের একটি ভুল : হিজরত ছাড়া, ইমান পূর্ণ হয় না, ইয়াক্কীন তৈরী হয়না।
তাবলীগ জামাতের কর্মীদের একটি ভুল : ইমান বৃদ্ধির উপায় শুধু দাওয়াত
তবলীগ জামাতের কিছু কর্মীদের আর একটি ভুল ' দাওয়াত দিলে যেভাবে ইমান বাড়ে তা অন্য কোন উপায়ে বাড়ে না '
তবলীগ জামাতের কিছু কর্মীদের একটি ভুল ' শুধু দাওয়াত দিলে ইমান বাড়ে, দাওয়াত না দিলে যেভাবে ইমান কমে যায় '
নিজের আমলের তুলনায় অপরের আমল অতি নগন্য:
এবার আসা যাক আমলের বিষয়ে বিপথগামীতার একটি ধারা অন্যদের আমলকে বেকার, অগ্রহণযোগ্য মনে করা। আর গ্রহণজোগ্য হলেও খুবই সামন্য । বিশেষ করে নিজের আমলের তুলনায় অপরের আমল অতি নগন্য ।
তাবলীগ জামাতের কর্মীরা একটা কথা জোড়েশোড়ে প্রচার করে থাকে, ওনাদের সাথে গিয়ে কোন নেক আমল করলে ৪৯ কোটি গুন সওয়াব হবে । একটা ঈদ করলে ৪৯ কোটি ঈদের সোয়াব হবে ।
মানে কি ?
ওনাদের সাথে যারা কাকরাইল থেকে জামাত বন্দী হয়ে গিয়ে হজ করবেন ওনারা অন্যদের তুলনায় ৪৯ কোটি সংখক হজের সোয়াব পাবেন ? কেউ কেউ এভাবেও হিসাব দেখান তাবলীগে গিয়ে একবার সুবহানাল্লাহ বললে ঘরে বলে লাগাতার ১৩ বছর সুবহানাল্লাহ বলার সোয়াব পাওয়া যাবে ! সুবহানাল্লাহ !!
আমি ৪৯ কোটিগুন সোয়াবের পক্ষে - বিপক্ষে কোন যুক্তি তর্কে আপাতত যাব না, শুধু ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটা তথ্য বলা ডরকার মনে করছি ১৪০০ বছর ধরেই মুসলমানরা আল্লাহর রাস্তায় মেহনত- মুজাহাদা - জেহাদ ইত্যাদী করছে, তবে ৪৯ কোটি গুন সোয়াবের কথা ১০০ বছর আগেও কেউ শুনে নি!
আর যখন মেনে নেওয়া হচ্ছে তাবলীগী জামাতে গিয়ে আমল করলে ৪৯ কোটিগুন সোয়াব, তখন অন্যদের আমল বিনা বাধায় একেবারেই মুল্যহীন হয়ে যাচ্ছে !
তৃতীয় বিষয় : নিজের দল-ই শ্রেষ্ঠ দল বা জামাত একটা কথা খুব শোনা যায় ' এইটাই কাম ' । আমি নিজে কাকরাইল মসজিদে দায়িত্বশীল ব্যক্তির কাছ থেকেও একথা শুনেছি । এ জাতীয় কথা দ্বারা অপরাপর দ্বীনী কাজগুলোকে এক প্রকার অস্বীকার -ই করা হয় , যেটা খুবই মারাত্মক ।
অনেক সময় এই ভাবে বলা হয় এই কাজ নবী ওয়ালা কাজ, নবী ওয়ালা কাজ শ্রেষ্ঠ কাজ । পবিত্র কোরাণের ভাষায় তেলওয়াত, কিতাবুল্লাহ ও সুন্নতের তালীম, তাজকিয়া সবই নবী ওয়ালা কাজ। কিন্তু মুবাল্লিগ ভাইরা দেখা যায় এগুলোর কথা উল্লেখ করেন না, বরং বলে যান 'এই কাজ নবী ওয়ালা কাজ' । ফলে মানুষ বুঝে তাবলীগের কাজটা নবী ওয়ালা কাজ, তেলওয়াত করে মানুষকে কুরাণ শুনান নবী ওয়ালা কাজ না!
এভাবে 'নবী ওয়ালা কাজ' একপেশে আলোচনা বা ব্যক্ষার দ্বারাও এ দাবী করা হয় নিজেদের দলই শ্রেষ্ঠ, নিজেদের কাজ ই আসল, অন্যরা সব বেকার !
এখলাস বুঝার উপায় কি ?
ওলামায়ে কেরাম বলেন, যদি কেউ দ্বীনের কাজ করে, আর তার এলাকায় অপর কেউ এসে দ্বীনের আর কোন কাজ শুরু করে, আর এতে করে প্রথম ব্যক্তির মন খুশী হয়, তবে বুঝা যাবে তার এখলাস আছে । আর যদি দেখা যায় অন্যের দ্বীনি কাজের প্রতি বৈরীতা পোষণ করে, অসহযোগিতা করে, অন্যদের নিরুৎসাহ করেতবে বুঝতে হবে এখলাস নেই ।
বিপথগামী হবার চতুর্থ ধারা হচ্ছে নিজেদের সবয়ংসম্পুর্ণ মনে করা : তাবলীগ জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইলিয়াস রহ : বার বার একটা কথা বলেছেন, আহলে এলেম ও আহলে জিকিরের তত্তবধানে থেকে তাবলীগের কাজ করতে । এই বিষয় টি বিস্তারিত ও দীর্ঘ আলোচনা সাপক্ষ । তাই এ নিয়ে ভিন্ণ একটি পোষ্ট দেখে নেবার অনুরোধ করছি : Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪৫