নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
আপনি কি কখনও সমুদ্র সৈকতে কিংবা নদীর কূলে হেঁটেছেন? আপনি কি লক্ষ করেছেন সমুদ্র উপকূলে কিংবা নদীর কূলে ভেজা শক্ত বালুর উপর কিছুক্ষণ লাফা-লাফি করার পরে ঐ স্থানের বালু আলগা হয়ে পানি জমে যায়?
১৯৮৫ সালে মেক্সিকো শহর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে একটা ভূমিকম্প হয়েছিল যার কারণে মেক্সিকো শহরের অনেক বিল্ডিং উল্টে পড়ে। নিচের সংযুক্ত ছবিতে দেখুন। আপনি প্রশ্ন করতে পারেন কেন মেক্সিকো শহর এর বিল্ডিং গুলো ভেঙ্গে না পড়ে ঐ ভাবে উল্টে পড়ে গেল। উত্তরটা হবে: মেক্সিকো শহর যেস্হানে গড়ে উঠেছে ঐস্হানটি কোন এক সময় লেক ছিল। লেকটি শুকিয়ে গেলে ঐ ভূমির উপর শহরটি গড়ে উঠে। ঠিক যেমনটি হচ্ছে আমাদের ঢাকা শহরে। ভূতাত্ত্বিক ভাবে বাংলাদেশের ভূমি গড়ে উঠেছে গঙ্গা ও ব্রক্ষমপুত্র নদ বাহিত পলি মাটি দিয়ে। ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক গভীর পর্যন্ত পলিমাটি বিস্তৃত ও গঠন অনেক নরম। এই মাটির নিচ দিয়ে তরঙ্গ প্রবাহিত হলে ভূমি অনেক বেশি উচ্চতায় কম্পিত হবে ও বিল্ডিং এর নিচের ফাউন্ডেশনের মাটি নরম হয়ে পড়বে যেহেতু মাটি পানি দ্বারা প্রায় সংপৃক্ত থাকে (এই প্রক্রিয়াকে Liquefaction বলে)।
"When liquefaction occurs, the strength of the soil decreases and, the ability of a soil deposit to support foundations for buildings and bridges is reduced as seen in the photo (SC) of the overturned apartment complex buildings"
আপনি কি কখনও সমুদ্র সৈকতে কিংবা নদীর কূলে হেঁটেছেন? আপনি কি লক্ষ করেছেন সমুদ্র উপকূলে কিংবা নদীর কূলে ভেজা শক্ত বালুর উপর কিছুক্ষণ লাফা-লাফি করার পরে ঐ স্থানের বালু আলগা হয়ে পানি জমে যায়? যদি কখনও উপরোক্ত বিষয়টি লক্ষ না করে থাকেন তবে সমুদ্র পাড়ে কিংবা নদীর পাশে যাদের বাড়ি তারা আজই ভেজা ও শক্ত বালুর উপর কিছুক্ষণ লাফা-লাফি করে দেখবেন সেখানে পানি জমে কি না। অথবা এক কাজ করতে পারেন। একটি গামলা বা বালতির মধ্যে ১ ফুট গভীরতার শুকনো বালু নিয়ে তার মধ্যে আস্তে-আস্তে পানি ঢালবেন এমন ভাবে যে পুরো বালু ভেজা দেখাবে কিন্তু বালুর উপরে যেন কোন পানি না জমে। এবার বালুর উপরে একটা কাচের গ্লাস কিংবা ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি উচ্চতার বর্গাকৃতির কাঠের টুকরো বালু-ভর্তি গামলা কিংবা বালতির ঠিক মধ্যখানে ভেজাল বালুর মধ্যে ২ থেকে ৩ ইন্বিচি গভীরে প্রবেশ করিয়ে দাঁড়করিয়া রাখবেন। এবারে গামলাটিকে কিংবা বালতিটিকে ২ থেকে ৩ মিনিট ঝাঁকুনি দিবেন। দেখবেন যে কাঁচের গ্লাসটি কিংবা কাঠের টুকরোটির গোঁড়ার বালু আলগা হয়ে গ্লাস ও কাঠের টুকরোটি একপাশে হেলে পড়েছে কিংবা বালুর মধ্যে কিছুটা তলিয়ে গিয়েছে কিংবা বালু পর্যাপ্ত পরিমাণে ভেজা থাকলে ও ঝাঁকুনির পরিমাণ সঠিক হলে ও কাঠের টুকরোটি বেশি লম্বা হলে পুরো টাই পড়ে গেছে এক পাশে। কেউ যদি উপরোক্ত পরীক্ষা করে ভিডিও করে আমার সাথে শেয়ার করেন তবে আমি আমার ওয়াল থেকে প্রকাশ করবো।
উপরে যে পরীক্ষায় ভেজা বালুর উপর ঝাঁকুনির কারণে যেমন করে কাঠের টুকরো হেলে পড়েছে ঠিক একই ভাবে পুকুর, জলাভূমি, খাল ইত্যাদি ভরাট করা স্থানে বিল্ডিং নির্মাণ করলে বড় ভূমিকম্পের কারণে ঐ বিল্ডিংগুলোর ধ্বসে পড়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। এই সিরিজের ৪ নম্বর পর্বে ৪ প্রকারের ভূকম্পন তরঙ্গের কথা উল্লেখ করেছিলাম আপনাদের হয়ত মনে আছে। ঐ ৪ প্রকার তরঙ্গের মধ্যে রেইলিগ তরঙ্গ (Rayleigh waves) ও ভালোবাসা তরঙ্গ (Love waves) ভূ-পৃষ্ঠের উপরের দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়। পক্ষান্তরে Primary waves (p wave) ও Secondary waves (s wave) ভূ-অভ্যন্তর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকালের পোষ্টে ব্যাখ্যা করেছি যে ভূ-পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহিত রেইলিগ তরঙ্গ (Rayleigh waves) ও ভালোবাসা তরঙ্গ (Love waves) সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে বিল্ডিং এর। এই দুইটি তরঙ্গ সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে দুই কারণে: প্রথম কারণ হলো তরঙ্গ দুইটির চলার সময় মাটি কণাগুলোকে তাদের স্থান থেকে পুরো-পুরি বিচ্যুত করে। দ্বিতীয় প্রধান কারণ হলও সবচেয়ে ধীরগতিতে চলে রেইলিগ তরঙ্গ (Rayleigh waves) ও ভালোবাসা তরঙ্গ (Love waves)। এই দুইটি তরঙ্গের কম্পাংক খুবই কম যার কারণে এই দুইটি তরঙ্গের বিস্তার হয় সর্বোচ্চ পরিমাণে। একই সাথে এই দুইটি তরঙ্গ ভেজা ও নরম মাটির মধ্যে আটকে পড়ে অনুরণন সৃষ্টি করে যার কারণে আটকে পড়া ছোট-ছোট তরঙ্গ সম-দশায় পরিণত হয়ে বড় তরঙ্গের সৃষ্টি করে ও ভূমিকে সর্বোচ্চ পরিমাণে আন্দোলিত করে। এই কারণে জলাভূমি ভরাট করে তৈরি করা বিল্ডিং ভূমিকম্পের সময় পুরোপুরি ভেঙ্গে না গিয়ে বিল্ডিং এর গোঁড়ার মাটি আলগা হয়ে পুরো বিল্ডিং ধ্বসে পড়ে।
ঠিক এই কারণে মেক্সিকো শহর এর অনেক বহুতল বিল্ডিং ভেঙ্গে না পড়ে ঐ ভাবে উল্টে পড়ে গিয়েছিল। ভূমিকম্প নিয়ে একাডেমিক পড়া-লেখায় Liquefaction নিয়ে আলোচনা করা হলে সব সময় মেক্সিকো শহর এর কেস আলোচনা করা হয়ে থাকে।
আশাকরি উপরের ব্যাখ্যা বুঝতে সাহায্য করবে বাংলাদেশের চার-পাশে বড় ভূমিকম্পের সম্ভব্য উৎপত্তিস্থল গুলো ঢাকা ও সিলেট শহর অনেক দূরে অবস্থিত হলেও ঢাকা ও সিলেট শহরের অনেক বাড়ি-ঘর কেন প্রচণ্ড ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে?
=============================================================================
ভূমিকম্প নিয়ে "বাঁচতে হলে জানতে হবে" সিরিজের পূর্বের লেখাগুলো নিচের লিংকে গিয়ে পড়ার জন্য সকলকে আমন্ত্রন জানাবো:
=============================================================================
বাঁচতে হলে জানতে হবে (পর্ব ৪): ভূমিকম্পের কারণে বাড়ি-ঘর ভেঙ্গে পড়ে কেন বা বাড়ি-ঘরে ফাটল সৃষ্টি হয় কেন?
বাঁচতে হলে জানতে হবে (পর্ব ৩): ভূমিকম্প নিরোধক বিল্ডিং তৈরি করতে বিল্ডিং তৈরির একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো/স্থাপত্য প্রকৌশলির তত্বাবধান নিশ্চিত করতে হবে
বাঁচতে হলে জানতে হবে (পর্ব ২): বাংলাদেশের কোন বিভাগ ও জেলায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকম্প ঝাঁকুনি অনুভূত হবে?
বাঁচতে হলে জানতে হবে বাংলাদেশের ভূমিকম্পের ঝুঁকি সম্বন্ধে
তুরষ্কের ভূমিকম্প থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা ব্যবহার করে বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব
বাংলাদেশের ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে আমি গত ১৩ বছর ধরে নিয়মিত ভাবে সামহোয়ারইন ব্লগে লিখে আসছি। আমার পূর্বের ব্লগ-পোষ্ট গুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইলো সকলকে
হিমালয় পর্বত অঞ্চলে প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিকদের পূর্বাভাস ও বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের করনীয়
ভূমিকম্প গবেষকরা কেন বলেন ঢাকা ও সিলেট শহরের অনেক বাড়ি-ঘর প্রচণ্ড ভূমিকম্প ঝুঁকিতে আছে?
একটি বড় মাপের ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবেলায় বাংলাদেশের মানুষ ও সরকার কতটুকু প্রস্তুত?
২| ০৬ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৩৮
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট পড়ে মনে হচ্ছে মৃত্যু কুপে বসে আছি।
©somewhere in net ltd.
১| ০৫ ই মার্চ, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
করুণাধারা বলেছেন: ঢাকা শহরের পুরানো ঢাকা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাছাড়া অধিকাংশ এলাকাই বালুমাটির, মতিঝিল তৈরি হয়েছে ঝিল ভরাট করে। অতএব আপনার দেয়া তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, সুউচ্চ অট্টালিকা শোভিত ঢাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে দু মিনিট লাগবে।
আপনার পুরো লেখায় কঠিন শব্দ শুধু তরঙ্গের কম্পাঙ্ক, তরঙ্গের বিস্তার, সম- দশা ইত্যাদি। এইগুলোর সংজ্ঞা জানা না থাকলেও লেখাটা সহজবোধ্য। তারপরেও এই পোস্টে পাঠক নেই, কারণ আমরা ভূমিকম্প নিয়ে ভাবতে বা জানতে পছন্দ করিনা, নিতান্তই যদি এসে যায় তখন ধীরে সুস্থে জেনে নেব!!