নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
উপরে সংযুক্ত যে ছবিটি দেখিতেছেন তা হলও সেই বিল্ডিং যার নিচে চাপা পড়ে মারা গেছে ঘানার জাতীয় ফুটবল দলের ফুটবলার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল নিউ ক্যাসেল ইউনাইটেড এর ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান আতৎসু। ১২ তলা এই বিল্ডিংটি ২০১১ সালে তৈরি শুরু হয়ে ২০১৩ সালে উদ্ভোদন হয়। এই বিল্ডিংটির দৈর্ঘ্য ছিলও ১৩৪ মিটার ও উচ্চতা ছিলও ৬৪ মিটার। মোট ২৪৯ টি এপার্টমেন্ট ছিলও এই বিল্ডিং এ। এই একটি মাত্র বিল্ডিং ধ্বসে চাপা পড়ে ৭৫০ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পটি কারণে ১ মিনিট ৫ সেকেন্ড ধরে ঝাঁকুনি হয়। এই বিল্ডিংটি মাত্র ৪৫ সেকেন্ড পড়েই ধ্বসে পড়ে। তার মানে পুরো বিল্ডিং এর কোন মানুষই রুম থেকে নিচে নামার সময়টুকুও পায় নি।
এখানে উল্লেখ্য যে এই বিল্ডিংটিকে গণ্য করা হতো ঐ এলাকার সবচেয়ে আধুনিক ও এলিট বিল্ডিং। তুরস্কে ২০০০ সালের পরে যে বিল্ডিং কোড তৈরি হয়েছে সেই বিল্ডিং কোড অনুসারে কোন স্থানে বিল্ডিং তৈরি করতে হবে ঐ স্থানে ২৫০০ বছরের মধ্য সর্বোচ্চ যে মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই ভূমিকম্পে টিকে থাকতে পারে এমন বিল্ডিং। সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা স্বপত্য প্রকৌশলীরা রা যখন বহুতল বিল্ডিং এর নকশা প্রণয়ন করেন তখন বিল্ডিং এমন ভাবে ডিজাইন করেন যে প্রত্যেকটি বিল্ডিং এর একটি নির্দিষ্ট দোলন মান থাকে। কোন স্থানে ভূ-পৃষ্টের নিচে দিয়ে ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট তরঙ্গ প্রবাহিত হওয়ার সময় ঐ স্থানের মাটিতে দোলনের সৃষ্ট হয়। বিল্ডিং এর নিজস্ব দোলন ও ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট দোলনের মান একই পরিমাণ হলে বিল্ডিংটি সর্বোচ্চ পরিমানে দুলতে থাকবে ও বিল্ডিংটির সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্ষতি হবে।
খুব সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করি। ধরুন আপনি একটি দোলনাতে দুলিতেছেন। এমন সময় আপনার কোন বন্ধু এসে পিছন থেকে দোলনাটিকে চাপ দেওয়া শুরু করে প্রতিবার কাছে আসার সময়। আপনার কি মনে পড়েছে আপনার বন্ধুটি কয়েকবার পিছন দিকে থেকে নিয়মিত ভাবে ঐ রকম চাপ দেওয়ার পরে আপনার দোলনাটি সামনে ও পিছনে অনেক দূরে যাওয়া শুরু করে ও খুব দ্রুত সামনে ও পিছনে যাওয়া আসা করে। অনেক সময় দুলনি সহ্য করতে না পেরে অনেকে দোলনা থেকে ছিটকে পড়ে যায়। ঠিক একই ধরনের ঘটনা ঘটে ১২ তলা এই বিল্ডিং এর ক্ষেত্রে ৬ ই ফেব্রিয়ারীর ভূমিকম্পের সময়।
আপনার বন্ধুর সাহায্য ছাড়াই আপনি যখন দুলতে থাকেন সেই রকম দোলন বিল্ডিং এরও থাকে। কিন্তু ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট তরঙ্গের দোলন মান যখন বিল্ডিং এর প্রাকৃতিক দোলন মানের সময় হয় ও একই দশায় মিলিত হয় (পদার্থ বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় constructive interference) তখন বিল্ডিং এর ঝাঁকুনির মান তার প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক ঝাঁকুনির সর্বচ্চ সহ্য সীমা অতিক্রম করে যায় ও বিল্ডিংটির ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয় কিংবা পুরো বিল্ডিংটি ধ্বসে পড়ে।
ইতালির ট্রিয়েস্তে শহরে পোষ্ট-গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা করতে গিয়ে প্রথম সেমিস্টারে প্রথম যে কোর্সটা শুরু হয়েছিল সেটার নাম ছিলও Wave Physics বা তরঙ্গ পদার্থবিদ্যা। এই কোর্সটি পড়িয়েছেন ইতালির ট্রিয়েস্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকম্প বিজ্ঞানী অধ্যাপক ফ্যাবিও রোমানেলী। আমার জীবনে যত শিক্ষক পেয়েছি প্রাইমারী স্কুল থেকে আজ পর্যন্ত সেই সকল শিক্ষকের মধ্যে যে সকল শিক্ষকের ক্লাসে পড়ানোর স্টাইল আমার পছন্দ হয়েছে তাদের শীর্ষ ৫ জনের মধ্যে একজন হলও অধ্যাপক ফ্যাবিও। পদার্থ বিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করার পরেও কেন আবারও ইতালিতে এসে তরঙ্গ পদার্থবিদ্যা পড়তে হচ্ছে প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাকে দ্বিতীয় সেমিস্টার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে যতক্ষণ পর্যন্ত না অধ্যাপক ফ্যাবিও দ্বিতীয় সেমিস্টারে Seismology বা ভূকম্পনবিদ্যা কোর্সটি পড়ানো শুরু করে নি। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে Seismology বা ভূকম্পনবিদ্যার প্রায় ৫০% হলও তরঙ্গ পদার্থ বিজ্ঞানের ব্যবহারিক প্রয়োগ।
ভূমিকম্প সহ্য করে টিকে থাকতে পারবে এমন বিল্ডিং ডিজাই কারার জন্য সর্বাগ্র প্রয়োজন তরঙ্গ পদার্থ বিজ্ঞান সম্বন্ধে গভীর জ্ঞান। প্রত্যেকটি ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্টি ভূ-কম্পন তরঙ্গ আকারে পৃথিবীর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয়। আগামীকাল ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্টি বিভিন্ন তরঙ্গ নিয়ে লিখবো। ও কোন ধরনের তরঙ্গ বিল্ডিং এর জন্য সর্বোচ্চ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বহুতল বিল্ডিং তৈরির একদম শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞ ও দক্ষ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার কিংবা স্বপত্য প্রকৌশলীর তত্বাবধান প্রয়োজন ভূমিকম্প নিরোধক বিল্ডিং তরী করার জন্য তাও বুঝতে পারবেন আগামীকালের লেখা প্রকাশের পরে।
দ্বিতীয় ছবিতে হলুদ রং এর উপরের পুরো অংশটি ছিটকে পরেছে যেমন করে দোলনা হতে মানুষ ছিটকে পড়ে একসময় প্রচণ্ড দুলুনি সহ্য করতে না পারে। বিল্ডিং এর ফাউন্ডেশন ও উপরের অংশ ভূমিকম্পের কারণে সৃষ্ট দোলনের সাথে তাল মিলাতে পারে নি।
২| ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪৮
করুণাধারা বলেছেন: অতি প্রয়োজনীয় বিষয় নিয়ে লিখিত পোস্ট সুলিখিত পোস্ট। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ ভোর ৪:৩৪
কালো যাদুকর বলেছেন: অনেকে বলেন, ব্লগে ভাললেখা আসে না। তারা এই ব্লগটি পরুক এবং কি বলে দেখি।
৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ সকাল ১১:০৪
চোরাবালি- বলেছেন: এদেশে কোড মেইনটেন করে বিল্ডিং করতে গেলে যে পরিমাণ খরচ হয় সে মোতাবেক কাস্টমার পাওয়া যায় না। সবাই ফ্লাট খোজে। এখন ঢাকা শহরে সারে ৩ বা ৪হাজার টাকা স্কয়ারফিটে ফ্লাট সেল হয় যেখানে কোন মেনইটেন করতে গেলে সে পরিমাণ খরচ হয়। সবাই বলে আরে কিছু হবে না আল্লাহ মরণ রাখলে কেও ঠেকাতে পারবে না।
৫| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:০৫
শায়মা বলেছেন: বাংলাদেশে একমাত্র নিয়তিকে মেনে নেওয়া ছাড়া মনে হয় পথ নেই। ওমন এক ভূমিকম্প হলে কি যে হবে সেটা হয়ত কেউ কখনও কল্পনাও করতে পারছে না।
৬| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: সব সময় খেয়াল করেছি আসন্ন বিপদের আগে আপনি পোষ্ট দেন। যা খুবই দরকারী পোষ্ট।
আমি ভূমিকম্পে মরতে চাই না।
©somewhere in net ltd.
১| ০৩ রা মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৭
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
টেকনোলজির সাহায্যে জাপানে ভুমি থেকে উপরে ঘর বানানোর প্রসেসিং চলছে।