নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
এই পর্বে আমি আপনাদেরকে পরিচিত করে দিতে চাই মেডেন-জুলিয়ান স্পন্দন বা সংক্ষেপে এমজেও চক্র এর মতো আর একটি চক্রের সাথে যার সাথে সম্পর্ক রয়েছে ভারত উপ মহাদেশের মৌসুমি বৃষ্টিপাতের সাথে। এই চক্রটির নাম হলও ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু বা Indian Ocean Dipole (IOD) নামে পরিচত। ভারত মহাসাগরীয় দ্বিমেরু বলার কারণ হলও পূর্ব ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা যখন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে সেই সময় পশ্চিম ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে। কয়েক বছর পর-পর পূর্ব ও পশ্চিমের পানির তাপমাত্রার বিনিময় হয়। যেমন বর্তমানে পূর্ব ভারত মহাসাগরের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ থেকে ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি রয়েছে। অথচ, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে একই স্থানের সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা প্রায় ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা।
যেহেতু কয়েক বছর পর-পর সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রার পার্থক্যের মান পরিবর্তিত হয় তাই এটাকে ভারত মহাসাগরীয় দোলন বা স্পন্দনও বলা হয়ে থাকে। আমরা হাইস্কুলের বইতে পড়েছি এল নিনো (পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ঐ স্থানের ৩০ বছরের গত তাপমাত্রা অপেক্ষা বেশি) ও লা নিনা (পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় সমুদ্র পৃষ্ঠের পানির তাপমাত্রা ঐ স্থানের ৩০ বছরের গত তাপমাত্রা অপেক্ষা কম) সম্বন্ধে। এলনিনো ও লা নিনাকে একত্রে এল নিনো সাউদার্ন ওসিলেশন (El Niño–Southern Oscillation (ENSO)) বলে। আবহাওয়া বৈজ্ঞানিকরা Indian Ocean Dipole (IOD) কে El Niño–Southern Oscillation (ENSO) এর যমজ ভাইও বলে থাকে।
Indian Ocean Dipole (IOD) ও বাংলাদেশের উপর বৃষ্টিপাতের প্রভাব:
পজিটিভ আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD) ) দশা: স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে কম সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল)
ফলাফল: বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘ, বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা পশ্চিম ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলোতে ( পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে)। পক্ষান্তরে এই দশার সময় অস্ট্রেলিয়া ব্যাপি খুবই কম বৃষ্টিপাত হয় ও প্রচন্ড খরা ও বনে আগুন লাগা অবস্হা দেখা যায়।
কৌশল: ওয়াকার সার্কুলেশন এর মাধ্যমে। শক্তিশালী ইস্টারলি (পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত বায়ু) বায়ু প্রবাহের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের গরম পানি পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের উপকূলে জমা হয়ে বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘের সৃষ্টি করে।
নেগেটিভ আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD)) দশা: স্বাভাবিকের চেয়ে কম সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরে এবং স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল)
ফলাফল: বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘ, বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা পূর্ব ভারত মহাসাগর সংলগ্ন দেশগুলোতে। পক্ষান্তরে এই দশার সময় পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোতে (ইথিওপিয়া, কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, ইত্যাদি) খুবই কম বৃষ্টিপাত হয় ও প্রচন্ড খরা ও বনে আগুন লাগা অবস্হা দেখা যায়।
কৌশল: ওয়াকার সার্কুলেশন এর মাধ্যমে। নিরক্ষ রেখা বরাবর প্রবাহিত ইস্টারলি (পূর্বদিক থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত বায়ু) বায়ুর গতি কমে যাওয়ার কারণে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পশ্চিমা বায়ু প্রবাহের কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের গরম পানি পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগরের উপকূল থেকে পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল) জমা হয়ে বেশি বাষ্পীভবন, বেশি মেঘের সৃষ্টি করে।
নিউট্রাল আইওডি (Indian Ocean Dipole (IOD) ) দশা: সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা দীর্ঘদিনের গড় অবস্হায় থাকে পশ্চিম ভারত মহাসাগর ও আরব সাগর এবং পূর্ব ভারত মহাসাগরে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা উপকূল) এর মধ্যে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: Indian Ocean Dipole (IOD) ও El Niño–Southern Oscillation (ENSO) এর মধ্যে পজিটিভ সম্পর্ক রয়েছে। অর্থাৎ, যখন El Niño–Southern Oscillation (ENSO) পজিটিভ দশায় থাকে (El Niño) তখন IOD ও পজিটিভ দশায় থাকে। একই ভাবে যখন El Niño–Southern Oscillation (ENSO) নেগেটিভ দশায় থাকে (La Niña) তখন IOD ও নেগেটিভ দশায় থাকে। তবে ENSO ও IOD এর সম্পর্কের মধ্যে কিছুটা সময় গ্যাপ রয়েছে। ENSO একটি দশায় পৌছার কয়েক সপ্তাহ পরে IOD সেই দশায় পৌছায়।
এই বিষয়ের বিস্তারিত জানার জন্য নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটগুলোতে গুরুত্বপূর্ন তথ্য পাওয়া যাবে:
Indian Ocean Dipole (IOD)
Meet ENSO’s neighbor, the Indian Ocean Dipole
The Indian Ocean Dipole (IOD)
Indian Ocean Dipole: What is it and why is it linked to floods and bushfires?
©somewhere in net ltd.