নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“Those who have the privilege to know have the duty to act.”― Albert Einstein

মোস্তফা কামাল পলাশ

"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"

মোস্তফা কামাল পলাশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও শিক্ষার্থী মূল্যায়ন সম্বন্ধে কিছু অভিজ্ঞতা

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ ভোর ৪:১৭



শিক্ষা জীবনে আজ যে পর্যায়ে এসেছি তার বেশিভাগ কৃতিত্বের জন্য আমি চিরকৃতজ্ঞ শিক্ষকদের কাছে, যারা আমাকে দিয়েছেন অসাধারণ পাঠদান, নৈতিক উপদেশ, ও অনুপ্রেয়না। আমি নিজে এই সেমিস্টারে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা কোর্সে Teaching Assistant + Instructor হিসাবে কাজ করতেছি। গত সপ্তাহে প্রথম আসাইনমেন্ট এর নম্বর প্রদান করেছি। গতকাল এক শিক্ষার্থী (আসাইনমেন্টে ৯০% নম্বর পেয়েছে) আমাকে ই-মেইল করেছে যা পুরোটাই তুলে দিলাম বন্ধু লিস্টে থাকা প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষকদের জন্য।

"Hi Mostofa,

I got my grade for the place story and I really appreciated your helpful feedback. I didn't receive any negative feedback, so I'm just wondering what I could've done to receive full marks. I have class during your office hours on Wednesday so I'm unable to meet, but if you could email back with what I missed and why I didn't receive full marks, that'd be great!

Thank you so much,"

আমার ব্যক্তিগত মতামত হলও শিক্ষক জীবনে শিক্ষা দানের পরে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলও শিক্ষার্থীদের সঠিক মূল্যায়ন প্রদান করা। এই মূল্যায়ন হতে পারে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন কিংবা শিক্ষার্থীর নৈতিক আচরণের মূল্যায়ন। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ভবিষ্যতের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুনগত শিক্ষক তৈরির জন্য মাস্টার্স ও পিএইচডি ছাত্র-ছাত্রীদের বিশেষ ট্রেনিং প্রদান করে থাকে। কানাডার বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র থাকাকালীন এই রকম একটা ট্রেনিং করেছিলাম যার নাম ছিলও "Foundations in University Teaching "। ঐ কোর্সে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিলে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে মনোযোগ ধরে রাখবে, ক্লাসে পড়ানো বিষয় গুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ঐ কোর্সে হাতে-কলমে শিক্ষা দেওয়া হয় কিভাবে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করতে হবে। পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার পরে কিভাবে মন্তব্য প্রদান করতে হবে যাতে করে শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফলের পরেও বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরবর্তী কোর্স গুলোতে ভালো করার অনুপ্রেরণা পায় কিংবা যারা ইতিমধ্যেই ভালো ফলাফল করেছে সেই ফলাফল ধরে রাখে কিংবা আরও ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করে।

গত সপ্তাহে ৫৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে পৃথক-পৃথক মূল্যায়ন প্রদান করেছি। কোন শিক্ষার্থীকে কি মূল্যায়ন প্রদান করেছি তা লিখে রেখেছি নিজের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কথা ভেবে। মূল্যায়ন গুলো যোগ করে দেখি আকারে ২০ পৃষ্ঠা ও শব্দ সংখ্যায় ৯ হাজার। নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত বৈজ্ঞানিকদের বেশিভাগই তাদের জীবনের সফলতার কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন শিক্ষা জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া শিক্ষকদের ভালো শিক্ষা দান ও অনুপ্রেরণা। নির্দিষ্ট করে বললে বলতে হয় বিভিন্ন শিক্ষকের মূল্যায়ন তাদেরকে অনুপ্রাণিত করেছে। তাই আমি চেষ্টা করি সুযোগ পেলেই শিক্ষার্থীর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়ন করার সময় সঠিক দিক নির্দেশনা ও মূল্যায়ন প্রদান করার যাতে করে খারাপ ফলাফলে অনুপ্রেরনা হারিয়ে না ফেলে। ভালো ফলাফল করলে ভবিষ্যতে যেন আরও ভলো করার চেষ্টা করে।

ছবি: আমার উচ্চ শিক্ষা জীবনের প্রথম সুপারভাইজার শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ আব্দুল হান্নান স্যার ও তার মহীয়সী সহধর্মী-নি সিলেটের সরকারি অগ্রগামী স্কুলের শিক্ষিকা রোকেয়া ম্যাডাম।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সের গবেষণা প্রজেক্টে আমার সুপারভাইজার ছিলেন স্যার। আমার গবেষণা কাজটি করেছিলাম বাংলা একাডেমীর পাশে অবস্থিত বাংলাদেশ আণবিক শক্তি কমিশনে। সেখানে আমার সুপারভাইজার ছিলেন ডাঃ দিলিপ কুমার শাহ (পরবর্তীতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন)। ঢাকার আণবিক শক্তি কেন্দ্রের পরীক্ষাগারে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে রেজাল্ট নিয়ে থিসিস লেখা শেষ করে সেই থিসিস পাঠালাম হান্নান স্যারকে। স্যার আমাকে বললেন সিলেটে আসো থিসিসে অনেক সংশোধন করতে হবে। আমি ঢাকা থেকে সিলেটে আসলাম। রবি থেকে বৃঃপতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্যারের রুমে বসে থিসিস সংশোধন করলাম। শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে জাগার পূর্বে স্যারের ফোন। স্যার বুঝতে পেরেছে যে আমি ঘুম থেকে তখনও উঠিনি। স্যার বলেছেন বাসায় চলে আসো একসাথে সকালে নাস্তা করে থিসিসের অবশিষ্ট সংশোধন গুলো করি। আমিও কোন মতে দাঁত ব্রাশ করে সারের বাসায় উপস্থিত হতাম। সকালের নাস্তার পরে কাজ শুর করে দিন গড়াতে থাকে, এর পর দুপুরের খাওয়াও সারের বাসায় করি; খাওয়ার পরে আবারও থিসিস সংশোধনের কাজ চলতে থাকে; এভাবে সন্ধ্যা গড়ায় আমাদের কাজ চলতে থাকে; রাতের খাবারও সারের বাসায় করে ম্যাচে ফিরি ঘুমানোর জন্য। পরের দিন শনিবারও একই ভাবে সারাদিন সারের বাসায় থিসিসের অবশিষ্ট সংশোধন শেষ করি। স্যার আমার থিসিসের প্রত্যেকটি বাক্যের গঠন, গ্রামার চেক করে দিয়েছেন। শুধু ঠিক করে দেওয়াই না, ভুল কোথায় সেটাই বলে দিতেন। ঢাকা থেকে থিসিস প্রিন্ট করে সিলেটে পাঠাই। থিসিসের ভাইবার তারিখ নির্ধারিত হওয়ার পরে স্যার ফোনে নির্দেশ দেন স্লাইড তৈরি করে তাকে পাঠাতে ও ভাইবার দুই দিন পূর্বে সিলেটে আসার জন্য। স্যার আবারও প্রেজেন্টেশনের স্লাইড ঠিক করে দেন। থিসিস প্রেজেন্টেশন এর পূর্বের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে সারের রুমে ৩ বার প্রাকটিস করি সারের সামনে। স্যারের একটাই লক্ষ যে তার ছাত্রটির উৎকর্ষতা নিশ্চিত করা। আমার পরে স্যার ধ্রুব এর থসিসি সুপারভাইজ করেন। তার কাছ থেকে শুনেছি স্যার একই ভাবে তার থসিসি সংশোধন করেন। ধ্রুব পরবর্তীতে নেদেল্যান্ডে মাস্টার্স ও জার্মানির বিশ্ববিখ্যাত ম্যাক্সপ্লাক ইন্সিসটিটিউট থেকে পিএচডি ডিগ্রী শেষ করে বর্তমানে নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেছে। বাবা হিসাবেও হান্নান সারকে আমি অনুসরণ করি। স্যারের দুই জমজ ময়ের একজন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সাইন্সে ও অন্যজন বিশ্ববিখ্যাত Massachusetts Institute of Technology (MIT) এ অনার্সে অধ্যায়ন করছে। স্যারের স্ত্রীও এখন শিক্ষিকা অসাধারণ গুনি মানুষ। স্যারের বাসায় যখন সারাদিন থিসিস সংশোধন করতাম ম্যাডাম উৎসাহ দিতেন ও এখনও স্যারের কাছে আমার শিক্ষা সম্বন্ধে খোজ নেন।

আমার শিক্ষা জীবনে হান্নান সারের মতো একাধিক গুনি শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষা পাওয়া সৌভাগ্য হয়েছে, বিশেষ করে ম্যাডাম ও স্যারের শিক্ষাদান, শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দান ও বিশ্ববিদ্যালয় পরবর্তী জীবনেও যারা শিক্ষাথীদের নিয়মিত অনুপ্রেরণা দেন ও সাহায্য করেন। পরবর্তীতে সেই সকল শিক্ষকদের নিয়ে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে রয়েছে।

পরিশেষে বন্ধু লিস্টে থাকা প্রাইমারি স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সকল শিক্ষকদের অনুরোধ করবো রাজনৈতিক মতাদর্শ, ধর্ম ও বর্ণ বিদ্বেষ, নিজ জেলা বা অঞ্চল প্রীতি, কিংবা আবেগ ও অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান, নৈতিক উপদেশ, ও অনুপ্রেয়না প্রদান করে তাদের শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবন গঠনে ভূমিকা রাখবেন।

৫ ই অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস, এই শিক্ষক দিবসে আমার জীবনে পাওয়া সকল শিক্ষক ও অন্য সকল শিক্ষকদের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে শুভেচ্ছা ও সেই সাথে সকলের দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।


মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৫০

রাজীব নুর বলেছেন: আমার একজন প্রিয় শিক্ষক আছেন। যদিও উনি আমার সরাসরি শিক্ষক নয়। উনি ফরিদপুরের রাজেন্দ্র কলেজের প্রফেসর আলতাফ। উনার কাছ থেকে আমি অনেক শিখেছি। উনার তুলনা হয়। গ্রেট ম্যান। আপনার পোষ্ট পড়ে আমার প্রফেসর আলতাফ স্যারের কথা খুব মনে পড়ছে।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৭

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
রাজীব ভাই, কোন কোন সময় সরাসরি শিক্ষন না হলেও শ্রদ্ধা চলে আসে বা প্রিয় শিক্ষক হতে পারে। যেমন আব্দুল্লা আবু সায়ীদ, সিরাজুল ইসলাম, কায়কোবাদ ইত্যাদি।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ সকাল ১১:৫৮

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: আপনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। জেনে ভাল লাগল। আমিও এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে ছাত্র। এই বছরই ই গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করলাম।

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৮

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
শুনে খুশি হলাম নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা শুনে। কোন ডিপার্টমেন্ট থেকে পাশ করলেন?

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৯

বলেছেন: হিসাবে কাজ করছি ( কি হিসাবে))

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:০৯

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
আপনাকে ধন্যবাদ ভুল ধরিয়ে দেবার জন্য। সংশোধন করে দিয়েছি।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:১৭

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: আমি ইইই থেকে কমপ্লিট করলাম। আমি আপনার সিভি দেখলাম যদি ভুল ভাল না বকে থাকি তাহলে এইটা মনে হয় আপনার সিভি। মোস্তফা কামাল পলাশ সিভি

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২২

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
হ্যা, এটা আমারই সিভি। তবে অনেক পুরাতন।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:০৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: একজন ভালো শিক্ষক জীবন বদলে দিতে পারেন। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থায় এখন গলদ ঢুকেছে। যেটার পরিনতি ভয়াবহ !

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১০:২৪

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন:
আপনার সাথে একমত। শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ার শুরতেই যদি দূর্ণিতী হয় তবে সেই সকল শিক্ষক দিয়ে শিক্ষার গুনগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব না। আমারদের ভবিষ্য খুব ভালো কিছু নির্দেশ করে না; মানহীন গ্রাজুয়েট তৈরী করা ছাড়া।

৬| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:২২

নূর আলম হিরণ বলেছেন: টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার নামে বাংলাদেশে একটা সরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। তারা মনে হয়না সঠিক ভাবে ট্রেইন করে শিক্ষকদের।

৭| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৯ রাত ১১:৪১

সাকিবুল ইসলাম সাজ্জাদ বলেছেন: পুরাতন সিভিই এত সমৃদ্ধ, আপডেটেডটা যা কি হবে :) যাই হোক ভাল নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক পেয়ে ব্লগে।

৮| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৭

দয়িতা সরকার বলেছেন: কেমন আছেন ? আপনার ব্লগে মাঝেমাঝে আসি। ভালো লাগে পড়তে। টিচারদের প্রতি আপনার শ্রদ্ধা , ভালবাসা দেখে সত্যিই মনে হচ্ছে না এখুন এমন স্টুডেন্ট আছে যারা টিচারদের এভাবে মনে রাখে। আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.