নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে"
আমার দেশের বাড়ি উত্তর বঙ্গের মঙ্গা পিড়িত নীলফামারী জেলায়। বাপ-দাদা পুরো দস্তুর কৃষক। আব্বা গত বছর থেকে নিজে জমি চাষ করা বন্ধ করে দিয়েছে ধানের মূল্য না পেয়ে। এখন বেশি ভাগ জমি চুক্তি দিয়ে দেয় মৌসুমের শুরুতে। ভূমিহীন কৃষক বা ক্ষুদ্র কৃষকরা নির্দিষ্ট অংকের টাকার বিনিময়ে ঐ মৌসুমে চাষ করার জন্য লিজ নেয়। উৎপাদিত ফসল পুরোটাই লিজ নেওয়া কৃষক পায়। চলুন জেনে নেই জমি লিজ নিয়ে কৃষক কতটুকু লাভবান হলো।
গতকালকে ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম ধানের মণ কত? সে উত্তর দিলো ধানের মণ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা ও বিআর ২৯ ধানের মণ ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আমাদের জেলায় ৩২ শতকে ১ বিঘা হয়। ভেজা অবস্থায় ১ বিঘা জমিতে সর্বোচ্চ ধান হয় ১৮ মন; গড়ে ১৫ মণ। সর্বোচ্চ পরিমাণ ধান উপপাদন হয়েছে ও ধানের মণ গড়ে ৫০০ টাকা হিসেবে ধরলে ১ বিঘা জমিতে উৎপন্ন ১৮ মণ ধানের মূল্য হয় ৯০০০ টাকা। ১ বিঘা জমিতে ধান লাগানো, আগাছা নিড়ানি, ধান কাটা ও মাড়াই কড়া বাবদ খরচ হয় ৩ হাজার টাকা। বোরো ধান সম্পূর্ণটাই সেচ ও কীটনাশক নির্ভর। ১ বিঘা জমিতে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকার সার ও ১৫০০ টাকার সেচ লাগে। আমি ধরে নিলাম প্রত্যেক কৃষক নিজের গরু দ্বার জমি চাষ করেছে। কিন্তু সত্য কথা হলো আমাদের নিজেদের হাল চাষে জন্য কোন গরু নাই। আমি হলফ করে বলতে পারে আমাদের গ্রামের তিন চতুর্থাংশ মানুষের এখন হাল চাষে জন্য কোন গরু নাই। পাওয়ার টিলার ভাড়া করে জমি চাষ করি। ১ বিঘা জমি ৩ বার চাষ ও ১ বার মই (মাটি সমান করা) দিতে হয়; খরচ সর্বনিম্ন ৮০০ টাকা। উপরোক্ত হিসাব হতে দেখা যাচ্ছে ১ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করলে উৎপাদন খরচ হয় সর্বমোট:
১) ধান লাগানো, আগাছা নিড়ানি, ধান কাটা ও মাড়াই করা = ৩০০০ টাকা
২) রাসায়নিক সার = ১৫০০ টাকা
৩) কীটনাশক = ৫০০ টাকা
৪) জমি চাষ ও মাটি সমান করা = ৮০০ টাকা
৫) সেচ = ১০০০ টাকা
============================================
সর্বমোট উৎপাদন খরচ: = ৬৮০০ টাকা
অথাৎ প্রতি বিঘা জমিতে উৎপন্ন ধানের বাজার মূল্য থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে ২২০০ টাকা। আমাদের গ্রামে ৪ জন মানুষের একটি পরিবারে গড়ে ৫ বিঘা জমি আছে ধরে নিলে সেই পরিবারের ৬ মাসের উপার্জন হয় ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ, মাসে ১৮৩৩ টাকা। যে কৃষকের ১০ বিঘা জমি আছে তার মাসিক গড় উপার্জন ৩৬৬৬ টাকা; যে কৃষকের ২০ বিঘা জমি আছে তার মাসিক গড় উপার্জন ৭৩৩২। আমাদের গ্রামে ২০০ টা পরিবারের মধ্যে মাত্র ৮ টা পরিবার আছে যাদের ২০ বিঘা বা তার চেয়ে বেশি জমি আছে; ১০-১৫ টা পরিবার আছে যাদের ৫ থেকে ১৫ বিঘা জমি আছে। ৫০ টা পরিবার আছে যাদের নিজের বাড়ি ভিটা ছাড়া আর কিছু নাই অন্যের বাড়িতে কামলা দেয়। ৫০ টা পরিবার আছে যাদের ১ থেকে ৩ বিঘা জমি আছে।
আমি, প্রায় আম্মাকে প্রশ্ন করি? আব্বা কি কথিত জীন বা ভুতের সোনার মোহর পেয়েছে নাকি? না হলে ছোট বোনকে প্রতি মাসে কেমন করে ৭/৮ হাজার টাকা পাঠায়?
দুই মাস পূর্বে আব্বার আমাকে বলে এক সময় তোদের ৪ ভাই বোনের পড়া লেখার খরচ চালিয়েও প্রতি বছর জমি কিনেছি। এই বছর ধান উৎপাদনের হিসাব দিয়ে আমাকে বলে এই আমার উপার্জন; এবার তুই চিন্তা কর ঢাকায় রেখে তোর বোনকে কিভাবে লেখা-পড়া করাবি। সৌভাগ্য বলি আর দুর্ভাগ্য বলি আমাদের ৪ ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট জনই ঢাকায় পড়তে এসেছে; তাও মাস্টার্স করার জন্য; মাত্র ২ বছরের জন্য। ১ বছরের মধ্যেই আব্বার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। যে কৃষকের ছেলে-মেয়ে ঢাক শহরে ম্যাচে থেকে অনার্স পড়া-লেখা করতেছে তাদের বাবা-মার কথা চিন্তা করলেই মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে যায়।
গ্রামে অনেক কৃষক উপরোক্ত ৮ টা পরিবার যাদের ২০ বিঘা বা তার চেয়ে বেশি জমি আছে তাদের কাছ থেক জমি বর্গা নেয় এক মৌসুম কিংবা বছরের জন্য। আমাদের এলাকায় প্রতি বিঘা জমির বর্গা চাষ মূল্য ৫০০০ টাকা ইরি ধানের মৌসুমের জন্য (জানুয়ারী থেকে মে মাস পর্যন্ত)। ছোট ভাইয়ের কাছে ধানের মূল্য জানার পড়ে গত ২ দিন ধরে চিন্তা করতেছি যে কৃষক বিঘা প্রতি ৫০০০ টাকা জমি ভাড়া ও ৬ হাজার ৮০০ টাকা উৎপাদন খরচ মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমিতে মোট ১১ হাজার ৮০০ টাকা খরচ করে ৯০০০ টাকার ধান উৎপাদন করে ২ হাজার ৮০০ টাকা ঋণের শৃঙ্খলে জড়িয়ে পড়ল সে আদৌ কি পেল?
এই মৌসুমে যে কৃষক গুলো বরো ধান চাষ করে ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়ল; অথবা নিজের মূলধন হারাল সেই কৃষক আগামী মৌসুমে ধান চাষের মূলধন পাবে কোথায়? এই বছর যে দোকান হতে বাকিতে সেচের ডিজেল, সার, কীটনাশক ও বীজ কিনেছিল উৎপাদিত ধন বিক্রি করে সেই মূল্য পরিশোধ করলে আগামী ডিসেম্বর মাসে আমন ধান উঠা পর্যন্ত খাবে কি? কোন কৃষকের ছেলে-মে শহরের কলেজে কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া-লেখা করলে তাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাবে কোথা হতে?
উপরের এই ছবিটা প্রকাশিত হয়েছিল দৈনিক প্রথম আলোতে, ২১ শে ডিসেম্বর ২০১৪ সালে। ছবির শিরোনাম ছিলো "জমি আছে তিন বিঘা, কিন্তু তা চাষ করার মতো টাকা কিংবা হালের গরু নেই আজিজার রহমানের। তাই বাধ্য হয়ে ভাতিজাসহ কাঁধে জোয়াল তুলে নিয়েছেন তিনি। আর পেছনে লাঙল ঠেলছে চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া ভাতিজা হামিদ। এভাবে জমি চাষ হলেই বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করবেন তিনি। ছবিটি আজ বগুড়ার গাবতলী উপজেলার মেন্দিপুর গ্রামের পুঁটিয়ার বিল এলাকা থেকে তোলা। ছবি: সোয়েল রানা, বগুড়া"
এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৯ শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ দৈনিক প্রথম আলোতে। ছবির শিরোনাম ছিলো: "বোরো চাষ প্রায় শেষ। পুরো মৌসুমেই হালের গরুর অভাবে জমি চাষ করতে পারেননি এই দুই কৃষক। বাধ্য হয়ে গরু ছাড়া জমি চাষ দিতে লাঙল ঠেলছেন নিজেরাই। স্বপ্ন দেখছেন ভবিষ্যৎ ফসলের। ছবিটি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হাওর এলাকা থেকে তোলা।ছবি: আনিস মাহমুদ, সিলেট"
যে কৃষক এই বছর ধান উপদান করতে গিয়ে মূলধন হারাল ও ঋণ গ্রস্তহলো সেই কৃষকটিকে হয়ত পরের বছর মৌসুমের শুতে চাষের গরু ২ টি বিক্রি করে জমি লিজের টাকা পরিশোধ করতে হবে; অবশিষ্ট টাকা দিয়ে বীজ, সার ও কীটনাশক কিনতে হবে। গরুর অভাবে চাষের লাঙ্গলের জঙ্গালটি উঠে যাবে বৃদ্ধ কৃষক ও তার যুয়ান ছেলের ঘারে আর লাঙ্গলের মুটিয়াটি ধরিয়া থকিবেন কৃষকের স্কুল পড়ুয়া নাতি।
এই ছবিটি প্রকাশিত হয়েছিল ২৩ শে অক্টোবর ২০১২ দৈনিক প্রথম আলোতে। ছবির শিরোনাম ছিলো:
"হালের বলদের স্থানে লাঙল (লাংলু) টানছেন কৃষক মাহতাব, আর লাঙল ধরে আছে তাঁর দুই শিশুসন্তান। বড় লাঙল দিয়ে চাষের পর স্থানীয় ছোট লাঙল (লাংলু) দিয়ে জমির মাটি আলগা করতে ব্যস্ত তারা। পাশে খেতের আগাছা পরিষ্কার করছেন মাহতাবের স্ত্রী। মাহাতাব জানান, বসতভিটা ছাড়াও তাঁর নয় শতক জমি ছিল। মেয়ের বিয়ের খরচ মেটানোর জন্য সম্প্রতি সেই জমিটুকু তিনি দুই লাখ টাকায় বিক্রি করে দেন। এখন সম্পদ বলতে তাঁর বসতভিটাটুকুই সম্বল। পরে তিনি এক গৃহস্থের কাছ থেকে ১৭ হাজার টাকায় আড়াই বিঘার এই জমিটি পত্তন নেন। কিন্তু চাষ করার মতো হালের বলদও তাঁর নেই। তাই হালের বলদের কাজটি তাঁকেই করতে হচ্ছে। দিনমজুর নেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় শিশু ছেলেদের দিয়ে খেতের কাজ করাতে হচ্ছে।"
উপরে যে ৩ টা ছবি হলো সারা বাংলাদেশের বর্গা চাষিদের দৈনন্দিন জীবনের চিত্র।
আন্তর্জাতিক পত্রিকার পাতায় প্রতি সপ্তাহে কবর বেরোয় ঋণের বোঝা সহ্য না করতে পেরে অনিল অনিল আম্বানি, মুকেশ আম্বানির ভারতে কৃষকের আত্ম হত্যা। কয়েক দিন পূর্বে খবরে দেখলাম বয়স্ক গরু এখন কৃষকের মাথার বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন বিজেপির সরকারের মৌলবাদী রাজনৈতিক পলিসির কারণে। ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যে শুধু ২০১৩ সালে ৩১৪৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করে। ২০০৪ সালে ১৮ হাজার কৃষক আত্মহত্যা করে ভারতে। আত্মহত্যার অন্যতম প্রধান করান গুলো হলো শস্য উৎপাদন না হওয়া; ন্যায্য মূল্য না পাওয়া; উৎপাদন মূল্য অপেক্ষা খরচ বেশি হওয়ায় ঋণ গ্রস্ত হয়ে পড়া ও সেই ঋণ পরিশোধ করার কোন উপায় না থাকা। "farmers suiciding in india" লিখে গুগলে সার্চ দিন দেখবেন কয়েক শত সংবাদ সুত্র।
তৈল কবি সৈয়দ সামসুল হকের দেওয়া "ধান কন্যা শেখ হাসিনা" ও বামপন্থি সম্পাদকদের কথিত "সফল কৃষি মন্ত্রী" দিনের আলোতে ঘোষণা দেয় দেশ ধান উৎপাদনের স্বয়ং সম্পূর্ণ কিন্তু রাতের অন্ধকারে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে বিদেশ থেকে চাল আমাদনির অনুমতিপত্রে সাক্ষর করেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি তথ্য দেখে গত ২৯ শে মার্চ ২০১৫ তারিখে চাল আমদানি নিয়ে দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখা হয়েছে নিম্নোক্ত শিরোনামে "এই আগ্রাসী আমদানি বন্ধ করতে হবে"।
"গত বছরের জুলাই থেকে এ বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যে চাল আমদানি হয়েছে, তার ৯১ শতাংশ হয়েছে সরকারী পর্যায়ে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণপত্র পর্যালোচনায় দেখা গেছে, আড়াই হাজার কোটি টাকার চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারী পর্যায়ে আমদানি হয়েছে মাত্র ২৩৯ কোটি টাকার চাল। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে ৯ লাখ ২৬ হাজার টন চাল আমদানি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে চালের আমদানি আরও বেড়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৭ মার্চ পর্যন্ত চাল আমদানি হয়েছে ১১ লাখ ৯ হাজার টন। আর আমদানি ঋণপত্র খোলা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টন। অব্যাহতভাবে এ রকম চাল আমদানির কারণ সরকারের তরফে ব্যাখ্যা করা হয়নি। দেশ যদি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণই হয়, তাহলে এত চাল আমদানি কেন?"
"আবারও চাল আমদািন শুরু করতে হয়েছে বাংলাদেশকে। সরকার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের দাবি করলেও চলতি অর্থবছরে পৌনে চার লাখ টন চাল আমদানি করা হয়েছে৷ আরও আট লাখ ৩৫ হাজার টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা হয়েছে৷" ৭ ই জুন ২০১৪ সালে দৈনিক প্রথম আলো
পানি ছাড়া কাঁঠাল বৃক্ষ বাঁচিতে পারে না। কিন্তু পানিই অধিক সময় কাঁঠাল গাছের গোঁড়ায় জমিয়া থাকিলে সেটি বৃক্ষের মৃত্যুর কারণ হইয়া থাকে। সঠিক সময়ে পরিমাণ মতো পানি দিতে না পাড়িলে কাঁঠাল বৃক্ষের মুচি ঝড়িয়া পড়ে। একই উদাহারন কৃষকের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ব্লগার কল্লোল মোস্তফার ওয়াল স্ট্যাটাস থেকে জানিতে পাড়িলাম:
"সরকার দিনাজপুরের চালকল মালিকদের কাছ থেকে সরকার ১ লাখ ৬ হাজার টন চাল কিনবে আর সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে কিনবে মাত্র ৩ হাজার ৫৬১ টন ধান! সারা দেশ থেকে সরকার চালকল মালিকদের কাছ থেকে চাল কিনবে ৮ লক্ষ ৫০ হাজার টন আর কৃষকের কাছ থেকে ধান কিনবে মাত্র ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন।
এবার বরো মৌসুমে ধান উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ টন। কোথায় ১ কোটি ৯০ লাখ টন আর কোথায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার টন! এত অল্প পরিমাণ ধান কৃষকের কাছ থেকে কিনে কি হবে!
ভর্তুকির টাকাটা কার কাজে লাগবে হে মাননীয় সরকার?"
উনি আরও লিখেছেন "মে মাসের ১ তারিখ ধান কেনার ঘোষণা দিয়ে এখনও (২২ মে) সেই ধান কেনা শুরু না করার কি কারণ থাকতে পারে! ভারত থেকে সস্তায় চাল ঢুকে যে বাজার নষ্ট করল সেটাই বা সময় মতো বন্ধ করা হলো না কেন?"
দেশের প্রত্যেকটা সংবাদ পত্রের সারা দেশের কৃষকদের এই দুর্দশার চিত্র উঠে আসতেছে গত ২ সপ্তাহ হতে। এই সকল মূর্খ, ভণ্ড ও প্রতারক রাজনীতিবিদের ভুল পলিসির কারণে দিনে দিনে বাংলাদেশের কৃষকদের ঘাড়ে চাপিতেছে কৃষি ঋণের বোঝা। গত কয়েক বছরে দেশে বন্যা কিংবা অনাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে ধানের উৎপাদন ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হলে বিদেশ থেকে চাল আমদানির মতো ভুল পলিসি চালু থাকলে আগামী কয়েক বছরে ভারতীর কৃষকদের মতোই বাংলাদেশের কৃষকদের কৃষি ঋণের চাপ সহ্য করতে না পেড়ে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন উপায় থাকবে না।
২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:১৯
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ
২| ২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:০৯
রুপম হাছান বলেছেন: ভাই মোস্তফা কামাল পলাম, আপনি যেখান থেকে এই রিপোর্ট করেছেন তা শুধু ঐ কাজের সাথেই জড়িত হলে করা যায় কিন্তু যাদের উদ্দেশ্যে আপনি রিপোর্টটি করেছেন তারা কি আদৌ গায়ে মাখবে!? একটি প্রবাদ আছে-সাপের বিষের যাতনা সেই বুঝে যেই দংশনের শিকার হয়েছে। এই সমাজে তো এখন আর সেই গরীব দুঃখীর নেতা ভাসানী নেই।
বিট্রিশ আমল থেকেই এই প্রথা চলে এসেছে বাংলায়। হয়তো সময়টা বদলেছে সাথে সাথে কাজের ধরণটাও। যদিও আগে ছিলো জমিদারি প্রথা, এখন না হয় মন্ত্রী পরিষদ প্রথা। জমিদাররাও ঠিক গরিব কৃষকদের খাজনা তুলে জমিদারী ঠিক রেখেছে। এতে করে কোন কৃষক খাজনা দিতে পারবে আর কে পারবে না; তাদের কাছে তা দেখার প্রয়োজন ছিলোনা। ঠিক তেমনটি এখনও তাই বিদ্যমান।
তবে যারা এসবের দায়িত্বে নিয়োজিত তারাই চাইলে হয়তো অনেক কঠিন সমস্যা সমাধান হতে বাধ্য। তাহলে হয়তো সাধারণ জনগনের কিংবা গরীব-দুঃখীর আক্ষেপ করার মতো তেমন কোনো উপকরণ কিংবা যুক্তি আর অবশিষ্ট থাকবে না। সবাই ভালো থাকবে।
আমরাও তাই দেশ ও দেশের সরকারের কাছে এমনটাই আশা করি। ধন্যবাদ আপনাকে একটি সঠিক কৃষি নির্ভর প্রতিবেদন প্রকাশ করার জন্য।
২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:২২
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: ভাই নিজের কৃষক পরিবার থেকে এসেছি তাই কৃষকের দুঃখ বুঝতে পারে। একবার শস্যের দাম না পেলে কৃষক বাবার পক্ষে সন্তানের লেখা-পড়া চালানো কত টুকু কষ্টকর সেটা সারা জীবন দেখেছি। তাই চেষ্টা করি অন্য কৃষকের দুঃখ মানুষের সামনে তুলে ধারার। আপনাকেও ধন্যবাদ পরে মন্তব্য করার জন্য।
আপনার সাথে একমত। একটু চেষ্টা করলেই এই সকল কৃষকদের কষ্ট লাঘব করার সম্ভব। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধবে কে?
৩| ২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ১:১৯
কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:
মাঝে মাঝে চিন্তা করি দেশে না আবার ধান চাষের উপর ৫৭ ধারা আইন প্রণয়ন করা হয় !!! ধানের শীষ সরকারের মনোঃপুত না হবার মত যথেষ্ট কারণ রয়েছে কিনা তাই
২৫ শে মে, ২০১৫ রাত ৯:০৩
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: আপনার মন্তব্য পড়ে ব্যাপক বিনোদিত হইলাম কান্ডারি ভাই
৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:২১
এক নিরুদ্দেশ পথিক বলেছেন: পলাশ ভাই, আপনি কৃষকের জীবনের সংগ্রাম এবং যন্ত্রণাকে ফুটিয়ে এনেছেন।
১। একটি বাস্তবিক কস্ট মডেল দিয়েছেন যা আমাদের লেখালেখিতে কাজে আসবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
১) ধান লাগানো, আগাছা নিড়ানি, ধান কাটা ও মাড়াই করা = ৩০০০ টাকা
২) রাসায়নিক সার = ১৫০০ টাকা
৩) কীটনাশক = ৫০০ টাকা
৪) জমি চাষ ও মাটি সমান করা = ৮০০ টাকা
৫) সেচ = ১০০০ টাকা
============================================
সর্বমোট উৎপাদন খরচ: = ৬৮০০ টাকা
অথাৎ প্রতি বিঘা জমিতে উৎপন্ন ধানের বাজার মূল্য থেকে উৎপাদন খরচ বাদ দিলে অবশিষ্ট থাকে ২২০০ টাকা।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
বন্তুত উৎপাদন খরচ তো আরো বেশি, (চাষির নিজের শ্রম ঘন্টা বাদ দিয়ে)- তাঁর স্ত্রীর তাঁর সন্তানের শ্রম ঘন্টা হিসেব করলে এই কস্ট মডেল নেগেটিভে যাবে, ভেবে দেখুন চাষির নিজের তাঁর স্ত্রীর তাঁর সন্তানের শ্রম ঘন্টা কিন্তু শিক্ষায় কিংবা অন্য একটি চাকুরিতে ব্যয় হতে পারতো।
একদিকে টুলস না থাকার কারনে উৎপাদন বাড়ছে, বীজ অধিকার না থাকায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে, ঋন থাকায় উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
অন্যদিকে নিজস্ব সংরক্ষণ ব্যবস্থা না থাকায় এবং ঋন এর দায়ে কাঁচা ধান/আন প্রসেসড ধান বিক্রি করে দিতে হচ্ছে যার দাম কম। সরকার কৃষক থেকে ধান না কিনায় তাঁরা প্রতারিত হচ্ছেন। আবার যারা বিক্রি করছেন তাঁরা পাওনা টাকার জন্য দিনের পর দিন কৃষি অফিস এবং ব্যাংক এ ঘুরে ঘুরে শ্রম ঘন্টা ব্যয় করছেন।
অঞ্চল ভিত্তিক সমন্বিত চাষাবাদ না থাকায়, একই এলাকায় একটি নির্দিষ্ট ফসলের বাম্পার ফলন হয়, সেই এলাকায় ফলনের দাম কমে যায়। এতে কৃষক আরো ক্ষতিগ্রস্ত।
ফলে উৎপাদন খরচ আরো বেশি, কৃষক যত ছোট তাঁর উৎপাদন খরচ তত বেশি।
জানিনা, কৃষকের দিন কবে বদলাবে!
১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৩
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন: সত্য কথা বলতে কি এই রকম পোষ্ট কেউ পড়ে না। এমনিতেই পোষ্ট অনেক বড় হয়ে গিয়েছিল তাই ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও আরও বেশি তথ্য যোগ করা সম্ভব হয় নাই। আপনার প্রতিটি লাইনের সাথে একমত। অর্থনীতির ভাষায় বলতে হয় আমাদের দেশে কৃষকের সন্তান ও স্ত্রী এর অপরচুনিটি কষ্ট এত কম যে আমরা সেগুলোকে গন্যই করি না নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থার তুলনা করতে।
উপরেই জেনেছেন যে আমার জেলা হলো নীলফামারী। এ বছর আমন ধান উঠেছে ২ মাস পূর্বে। কোন পত্রিকায় আসতেছে না উত্তর বঙ্গের কৃষকদের ধান নিয়ে দুর্দশার চিত্র। আমার ছোট ভাই এক সাথে ধানের ব্যবসা করে ও টিভি-ফ্রিজের শো-রুম এর ব্যবসা আছে। আমি তাকে প্রতি সপ্তাহে জিজ্ঞাসা করি কিরে এই সপ্তাহে কয়টা টিভি, ফ্রিজ বিক্রি করলি? সে বলে ধানের দামের এই অবস্থা। কৃষক ধান বিক্রি করে সার, কীটনাশক ও বীজের দোকানের বাকি পরিশোধ করতে পারতেছে না টিভি-ফ্রিজ কিনবে কোথা থেকে?
সবচেয়ে কষ্ট লাগে বাংলাদেশের প্রচলিত সংবাদ মাধ্যম গুলোর নীরবতা। তারা সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে এখন কোন সংবাদ করে না যা সরকারের কোন ব্যর্থতা নির্দেশ করে। বাংলাদেশটা যদি ইসলাম ধর্ম প্রধান দেশ না হতো তবে পশ্চিমা বিশ্ব বা ভারতের মতো হাজার হাজার কৃষক আত্মহত্যা করতো প্রতি বছর।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে মে, ২০১৫ সকাল ১০:০৮
সুমন কর বলেছেন: চমৎকার বলেছেন।