নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জয়দেব করের লেখাজোকা

জয়দেব কর

অন্ধ আমি অন্ধকারে আলো কুড়াই,গন্ধরাজের গন্ধে মাতাল জীবন পোড়াই!

জয়দেব কর › বিস্তারিত পোস্টঃ

চর্যাগীতির কবি বনাম নীড়হারা সন্ধানসূত্রের আকস্মিক বিশ্লেষণ।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:০৪

চর্যাগীতির কবি নামক সাড়ে চার ফর্মার একখানা পেপারব্যাক বই উপহার পেলাম খড়িমাটির কর্ণধার কবি মনিরুল মনিরের কাছ থেকে। বইটি লিখেছেন মাসুম খান। নানান কাজের চাপে থাকায় বইটি পরে পড়ব বলে একটু নেড়েচেড়ে দেখছিলাম। হঠাৎ চোখে পড়ল বইটির শেষ লেখাটির শেষের দিকে। একটু খটকা লাগল। যেহেতু আমি নিজেও চর্যাগীতির ও বুদ্ধমতবাদের পাঠক হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে কিছু জানার-বোঝার চেষ্টা করছি সেহেতু আমি প্রবন্ধটি পাঠ করার চেষ্টা চালালাম। চর্যাগীতির কবিদের জীবন-দর্শন নামক প্রবন্ধটির যে লাইনটি চোখে পড়েছিল তা উপস্থাপন করছি, "বৌদ্ধধর্মে কোনো কালেই নারীর প্রব্রজ্যা বা দীক্ষিত হওয়ার অধিকার ছিল না, সেই নারী যখন দীক্ষাদাত্রী হন, তখন তাঁদের বৌদ্ধধর্মের অনুসারী বলা এক অসম্ভব কল্পনা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না।" এমন বক্তব্য লেখক কোন যুক্তির উপর উপস্থাপন করলেন তার সন্ধান করতে গিয়ে দেখি তিনি প্রবন্ধের অন্য জায়গায় বেশ কিছু বিষয় উপস্থাপন করেছেন। সেগুলো নিম্ন রূপ।

১। নারীর প্রব্রজ্যা গ্রহণের বিষয়ে তথাগত বুদ্ধ কট্টর ছিলেন। এ বিষয়ে সিংহলী ভাষায় বিনয় পিটকে নারীর প্রব্রজ্যা হওয়ার কথা পাওয়া যায়। কিন্তু ভারতীয় বৌদ্ধ শাস্ত্রে এমন সংবাদ মিলে না। ভিক্ষু শীলভদ্র রচিত থেরীগাথার ভূমিকায় নলিনাক্ষ দত্ত বলেন, "সংস্কৃত ত্রিপিটকের মধ্যে আমরা স্থবিরগাথা পাইয়াছি। ইহা পালি থেরগাথা ও অপদানের সংস্কৃত রূপান্তর। সংস্কৃত ভাষায় থেরীগাথা এ পর্যন্ত পাওয়া যায় নাই। এমনকি এই গ্রন্থের কোন উল্লেখও পাই নাই। বিনয়পিটক তৃতীয় স্তম্ভে বলা হয়েছে যে_'অতপর মহাপ্রজাপতি গৌতমী ভগবান তথাগত প্রবর্তিত ধর্ম বিনয়ে আগার হতে অনাগারিকভাবে নারীকে প্রব্রজ্যার অনুজ্ঞা দিচ্ছেন না। এ ভেবে দুঃখী, দুর্মনা, অশ্রুমুখী হয়ে রোদন করতে করতে ভগবানকে অভিবাদন করে তার পুরোভাগে দক্ষিণপার্শ্ব রেখে প্রস্থান করলেন। ' মিসেস বুদ্ধ স্বামী বিরহী হয়ে প্রব্রজ্যা গ্রহণে আগ্রহী হলে তাঁকে যখন প্রব্রজ্যা প্রদান করা হলো না, তখন তিনি বুদ্ধের প্রধান সেবক আনন্দের দ্বারস্থ হলেন।
আনন্দ বুদ্ধের নিকট এ বিষয়ে অনুরোধ করলে তিনি তাঁকে ফিরিয়ে দিয়ে বলেন_ 'নিস্প্রয়োজন, তোমার এ বিষয়ে অভিরুচি না হোক। শেষ পর্যন্ত আটটি শর্তে নারীদের ভিক্ষুণী হতে অনুমোদন করেন_

২। তথাগতের দুই/চারটি বাক্যই বলে দেয় বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনে নারীর অবস্থা।

উপরের ন্যায় আরও অনেক কিছু উপস্থাপন করে প্রাচীন বুদ্ধমতবাদে নারীদের ব্যাপারে লেখক এই ভাবে মীমাংসা টানেন_ 'আমরা জানি, প্রাচীন অবস্থায় বৌদ্ধ অনুশাসনে প্রব্রজ্যায় নারীর অবস্থান ছিল না। নারীরা ভিক্ষুণী হতেও পারত না। আনন্দ রাজমহিষীকে বুদ্ধবাণী দিলে তাঁকে ভর্সৎনা শুনতে হয়েছে। আবার সিংহলে প্রাপ্ত সিংহলি ভাষার ত্রিপিটকে থেরীগাথা নারীদের প্রব্রজ্যা হওয়ার কাহিনি রয়েছে কিন্তু সংস্কৃত ত্রিপিটকে নারী প্রব্রজ্যার কোনো কাহিনি বা নারী চরিত্র নেই বা থেরীগাথার উল্লেখ নেই। সুতরাং সে যুগে বৌদ্ধধর্মে নারীর প্রব্রজ্যা হওয়ার অধিকার আপেক্ষিক।'

মূলকথা হলো লেখকের অনুমান বুদ্ধমতবাদে নারীর স্থান অতি নীচু। বুদ্ধ নারীদের প্রব্রজ্যার অধিকার দেননি , এটাই তিনি প্রমাণ করতে চেয়েছেন। শুধু তাই নয়, আদিপর্বের বুদ্ধমতবাদে সঙ্ঘ নারীবিবর্জিত ছিল বলতে চেয়েছেন। যার জন্য তিনি সংস্কৃত সাহিত্যকে প্রমাণ হিসেবে নিয়েছেন। তিনি বারবার সংস্কৃতের তুলনা করতে উল্লেখ করেছেন সিংহলি ভাষার কথা। তিনি কি সিংহলি ও পালি ভাষার তফাৎ নির্ণয়ে ব্যর্থ? সিংহলি হরফে পালি? নাকি সিংহলি ভাষাটাই পালি? তিনি যে চুল্লবর্গের উদাহরণ টেনেছেন। সেটিও কিন্তু সতপ্রিয় মহাথের পালি থেকেই অনুবাদ করেছেন। পালির বর্তমানে কোনো লিপি নেই। তাই বাংলায় লিখলে বাংলা হরফ। সিংহলিতে লিখলে সিংহলি হরফ দিয়ে লিখতে হয়।

সংস্কৃত বা পালি

তিনি প্রথমে (উপরের ১নং দ্রষ্টব্য) নলিনাক্ষ দত্তের লেখা ভূমিকা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন, সেই একই লেখা খেয়াল করলে পেতেন নলিনাক্ষ লিখেছেন, 'নানাবিধ ভাষায় ত্রিপিটক প্রচারের দ্বারা সহজেই অনুমেয় বৌদ্ধগণ শাস্ত্রচর্চায় কতদূর অগ্রসর হইয়াছিলেন, সংস্কৃত ও পালি ত্রিপিটক তুলনা করিলে দেখা যায় যে, পালি ত্রিপিটক সর্বাপেক্ষা প্রাচীন আর এই ত্রিপিটকেই মূল বৌদ্ধধর্মের নীতি, দর্শন এবং ইতিহাসের সুষ্ঠু পর্যালোচনা রহিয়াছে।' থেরবাদীদের সবকিছুই পালিতে লিপিবদ্ধ এটা ইতিহাসসিদ্ধ। সংস্কৃত ত্রিপিটক সর্বাস্তিবাদীদের গ্রন্থ বলে ড. বিনয়েন্দ্রনাথ তার বৌদ্ধ সাহিত্য গ্রন্থে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, 'সর্বাস্তিবাদ ও তাঁহাদের শাখা মূলসর্বাস্তিবাদ সম্প্রদায়ের পালি পিটকের সমান্তরাল একটি সম্পূর্ণ সংস্কৃত পিটক ছিল। যদিও এই সংস্কৃত পিটকের সমস্ত মূলগ্রন্থ পাওয়া যায় নাই, তথাপি ইহার নিদর্শন পাওয়া যায় মধ্য এশিয়া, পূর্ব তুর্কিস্তান, গিলগিট ও নেপালে প্রাপ্ত পুঁথি ও খণ্ডিত পাণ্ডুলিপিতে।, চৈনিক ও তিব্বতী অনুবাদে এবং ললিতবিস্তর, মহাবস্তু, অবদান, দিব্যোদান, অসংগের সূত্রালংকার, সটীক অভিধর্মকোশ ইত্যাদি গ্রন্থের উদ্ধৃতিতে। সংস্কৃত পিটকের সকল গ্রন্থ চৈনিক অনুবাদেই পাওয়া যায়।' চৈনিক অনুবাদে আমরা দশাধ্যায় ভিক্ষুণী প্রাতিমোক্ষ নামক গ্রন্থের দেখা পাই।

তছাড়াও যদি লেখকের দৃষ্টিতে অশোকের শিলালিপি পড়ত তাহলেও তিনি ভিক্ষুণীসঙ্ঘের অস্তিত্ব কোনোভাবেই অস্বীকার করতে পারতেন না। গ্রন্থে অনেক কিছু প্রক্ষিপ্ত ঢোকে গেলেও শিলালিপিতে ঢোকার সে সুযোগ নেই। তারপর বুদ্ধযুগের বিভিন্ন স্থাপত্যের কথা বাদই দিলাম। আর বুদ্ধকে নিয়ে কাজ করতে গেলে ধর্মানন্দ কোসম্বী রচিত ভগবান বুদ্ধ গ্রন্থটি যে কতখানি প্রয়োজনীয় তা শুধু পড়লেই বোঝা যাবে। আম্বেদকর, রিস ডেভিডস, রাহুল সাংকৃত্যায়ণ, বেণীমাধব বড়ুয়া, ড. অমূল্যচন্দ্র সেন, ড. বিনেয়ন্দ্রনাথ চৌধুরী, রবীন্দ্রবিজয় বড়ুয়া, সাধনকমল চৌধুরী, ধম্মানন্দা ভিক্ষুণীসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ গবেষক রয়েছেন যাদের পাঠ করলে ইতি-নেতি সব দিক নিয়ে ধারণা পরিষ্কার হয়।

লেখক তার উদ্ধৃতিতে বুদ্ধের সাক্ষাৎপ্রার্থী তথা প্রব্রজ্যপ্রার্থীর কথা তোলে ধরতে গিয়ে কেন এমন তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন বুঝতে পারছি না! মিসেস বুদ্ধ (!) বলে যে কথার অবতারণা করেছেন তা তিনি চুল্লবর্গের কোথায় পেয়েছেন? গৌতমী যদি বুদ্ধের বিমাতা হন তবে মিসেস বুদ্ধটা কে? তিনি এটা কোথায় পেলেন? এটা গবেষকের চূড়ান্ত দূর্বলতা কিংবা অসততা নয় কি? তারপর 'তথাগতের দুই/চারটি বাক্যই বলে দেয় বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনে নারীর অবস্থা' (২ নং দ্রষ্টব্য)_ এটা কি একচোখা বিশ্লেষণ হয়ে গেল না? প্রাচীন গ্রন্থ বিশ্লেষণে যেমন নেতিবাচক দিকগুলো আসবে তেমন আসবে ইতিবাচক দিকগুলো। ইতিবাচক বা নেতিবাচক কোনো পক্ষ গ্রহণ করা একজন লেখকের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ইতি-নেতিকে বিশ্লেষণ করেই তো যুক্তিগ্রাহ্য সত্যের উপস্থাপন করতে হয়। লেখকের দায় শুধু তো প্রকাশে নয়, উপস্থাপনের ও অনুসন্ধানের শিল্পেও রয়েছে। উপস্থাপনের দুর্বলতা মূলত পূর্ব অনুমানের আরোপিত সন্ধানের দিকে আঙুল ছোড়ছে। নারীর প্রতি বুদ্ধের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে আজ নাহয় আর কথা বললাম না। কিছু খোড়াক দিয়ে গেলাম।

১। Click This Link

২। Click This Link

৩। Click This Link

৪। Click This Link

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৯

রাজীব নুর বলেছেন: কিছু নারী আসলেই বিষাক্ত।
তাদের সমস্ত শরীরে বিষ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.