একজন সম্মানিতা রাম ছাগল কহিলেন আমাদের পূর্বপুরুষ নিশ্চয়ই জিরাফ ছিলেন, দেখিতেছো না আমার কি সুন্দর গ্র ীবা।
অন্য একজন স্থুলকায়া বলিলেন, না তুমি ভুল ভাবিতেছো, আমাদিগের পূর্বপুরুষ আসিয়াছে হাতি থেকে, দেখিতেছো না আমাদিগের কিরূপ লম্বা লম্বা ঝুলা কান।
সুতনু একজন বামা রামছাগল খিলেন, আসলে আমাদিগের পূর্বপুরুষ ছিলেন সম্বর হরিন, দেখিতেছো না আমাদের তীক্ষ শিং এবং সেক্সি পদচতুষ্ঠয়। অতএব সেখানে বিষম গোলোযোগের উপক্রম হইলো, সেই ফোরামের অধিকারি, তিনকোনা চাকতি গলায় ঝুলাইয়া তৎক্ষণাত আসিলেন সেখানে, আসিয়া বলিলেন আমাদিগকে শান্ত হইতে হইবে, অন্তত এক মৃগশিশুর জন্য আমরা কি কিছু দিন শান্ত থাকিতে পারি না, তা তোমরা কি নিয়া গোলোযোগ করিতেছো।
ছানা রামছাগল পেছন থেকে ব্যাঁ করিয়া উঠিল, তিনকোনা দাদা আমার দু চোখে বন্যা আসিয়া পড়িতেছে, উহারা আমাকে টাহাদিগের খেলায় নেয় না, বলিয়াছে আমি নাকি দুধ ভাত, আমি খেলিবোই খেলিবো আমাকে না নিয়া তাহারা নিজদিগের মধ্যে কিরূপ আমোদ করিতেছে, তাহারা গল্প করিতেছে বলিয়াছে আমার নাকি সেসব কথা শুনতে নেই।
তিনকোনা দাদা এবার অভয়ের মুদ্্রা দিয়া বলিলেন, আহা বাছাটাকে খেলায় লহিতাছো না কেনো? সে কি গোস্তাখি করিয়াছে?
তুমি বরং 3 পায়ে যেই ক্যারিকেচার শিখিয়াছো তাহাই দেখাও, আমি উহাকে উষ্ঠা বলিয়া থাকি, ভুমি হতে একটা পদ স্খলিত হইলেই তাহাকে উষ্ঠা বলা হয়, তুমি সেই কসরত দেখাও, দিদিরা তোমাকে খেলায় ডাকিবে? কি তোমরা উহাকে খেলায় নিবে না? কহিয়া তিনকোনা এক চোখ মুদিয়া একটা ইশারা করে। যাহার অর্থ এটা মিছিমিছি সান্তনার জন্য বলা, তোমরা ইহাকে বেশী গুরুত্ব দিও না।
অতঃপর সেই তিনকোনা লকেট ঝুলানো দাদা রেল লাইন ধরিয়া নির্বাসনে গেলেন।
অনেক দিন নাকি অল্প দিন ঠাওর পাওয়া মুশকিল, ফোরামের ঘরে বাতি জ্বলে না, দিবারাত্রি নেই তাই কেউই সঠিক দিবস নির্নয় করিতে পারে না, অবশেষে একদিন তিনকোনা দাদা আবার ফোরামে উপস্থিত হইলেন, তত দিনে তাহার বেশবাসে সামান্য পরিবর্তন আসিয়াছে, তার চিবুকে ছাটের দাড়ি, কোথাকার কোন বিশেষজ্ঞ তাহাকে বলিয়াছে তুমিতো বেশ অংক জানো, 0 এবং 1 পাশাপাশি বসিয়ে জটিল জটিল সব অংকের হিসাব মিলিয়ে দাও, তুমি নাকি একটা হিসাবে দেখিয়েছো, পাশাপাশি 2টা 1 থাকলে পরিস্থিতির বিচারে সেটাকে কখনও 11 বলা যায়, কখনও তা 3 হয়, কখনও 2, বুলিয়ান এলজ্যাব্রার এই নিয়ম আমি এখনও শিখে উঠতে পারি নাই ভাই, আমাকে একটু দীক্ষা দিবে তুমি, সদ্যছাটা দাড়িতে মিহি আঙ্গুল চালিয়ে তিনকোনা দাদা কহিলেন, সমস্যা নেই দাঁড়াল দাদা, আপনাকে আমি আঁক কষা শিখিয়ে দেবো খন, আপাতত ভীষন ব্যাস্ত, ঐ যে পশ্চিমের বাগানে নতুন কাঁঠাল পাতা আসিয়াছে, সেখানে যাবো, নতুন কাঁঠাল পাতায় ভুড়িভোজ সারিয়া আসিবো। আমার আবার নতুন পাতা হজম হয় না, তবুও খাই, এবং ভুগি, এসব সেরে গেলে আসবো, এসে অবশ্যই আপনাকে আঁক শিখাবোই শিখাবো। এর মাঝে আপনি নিজে পড়িয়া জানিতে চেষ্টা করুন।
দাঁড়াল দাদা নিজে পড়িয়া জানিবার চেষ্টা করিলেন এবং বাপ রে বাপ কি কঠিন আংক, গালে খুর দিয়া ভাবিতে লাগিলেন, অবশেষে তার পিতৃনামবিস্মৃত হইলেন।
নতুন কাঁঠাল পাতা চর্বন করিয়া, অবশেষে একদিন তিনকোনা দাদা ফিরিয়া আসিলেন, আসিয়া দেখেন দাঁড়াল মাথার চুল উস্কোখুস্কো, বির বির করিয়া কহিতেছে, কে আমার বাবা, কে আমার বাবা, তিনকোনা দাদা প্রমাদ গনিলেন, খিলেন ভাইটি একটু শান্ত হউন, এসবই বিপক্ষ দলের গোপন অভিসন্ধি, দাঁড়াল হাকড়ে কেঁদে উঠিলেন, বলিলেন আমার হারিয়ে যাওয়া ভাইটি তোর জন্যই তো আমি বসিয়া ছিলাম, আমাকে বাবার কাছে নিয়া চল, আমি বাবার কাছে যাইবো। বাবা কেমন আছে।
তিনকোনা দাদা বিব্রত স্বরে কহেন দাদা আপনি তো আমার মায়ের পেটের ভাই নন, সম্মাদের দাদা, আপনি কেনো আমার বাবাকে অসম্মানিত করিবার প্রচেষ্টা করিতেছেন? আমার বাবা যেখানে সেখানে বীর্যস্খলন করেন না, তিনি সরকারি চাকুরে, সরকারি গুদামেই তাহার অব্যাবহৃত বীর্য জমা থাকে।
যাহাই সোক সেদিন ফোরামে আসিয়া দেখে নতুন একজন আসিয়াছে তাহার ফোরামে, আস্ত বামা রামছাগল, তাহার শালীনতার খোলস দিয়ে গোটা শরীর ঢাকা, পায়ে হাল ফ্যাশানের হাইহিল জুতা, গলায় একটা কলিং বেলট ঝুলিয়ে ব্যাঁ ব্যাঁ করিতেছে আপন খেয়ালে।
তিনকোনা মুগ্ধ হইয়া দেখে, আর ভাবে আহা বেশ তো মেয়েটি। দিব্যি চটপটে, আমার সাথে কি কথা কহিবে প্রান খুলে? এবং তিনকোনা দাদা মেয়েটিকে তাহার দিকে আকর্ষিত করিবার চেষ্টায় রত হয়।
অন্য দিকে সেই বন্যা শরনার্থি ছাগশিশুও আশ্রয় খুঁজছে, মেরি হ্যাজ এ লিটল ল্যাম্ব এর মতো কোমল মেষশাবক লইয়া এক বালিকা তুঙ্গ পোজের ছবি দিয়াছিলো, বন্যার্ত ছাগ শিশু সেই মেষশাবক হইতে চায়। মেয়ের কোলে উঠে আদর খেতে চায়, কিন্তু সবাই কি আর সব কিছু পায়??
এক দিন এক সুফি ছাগল হুড়ো দিয়া উঠিলো সেই ফোরামে, ছাগলে ছাগলে কোনো ভেদাভেদ নাই, সবাই একই ঘাসপাতা খাইয়া বাঁচে, সবাই একই স্বরে গান গায়, কিন্তু ছাগলের মধ্যে সাম্যবাদ থাকিতে নেই, তিনকোনা তুমি গিয়া বাঁশপাতা খাও, ইহার পরে সেই ফোরামে কাহারও কারও উপর বিতৃষ্ণা আসিলে কহিতো যাও বাঁশ পাতা খাও।
যাহাই হোক তিন কোনা এবং সুফি ছাগলে মধ্যে একটা বিষয়ে ঐক্য ছিলো, তাহাদিগের বিশ্বাস ছিলো সেই কোন সুদুর অতীতে এক ছাগলের ব্যাঁ রবেই এত সব গাছপাতা তৈয়ার হইয়াছে, ইহা যেমন দেখিতেছো ইহা তেমন ছিলো না অতীতে, অতীতে কিছুই ছিলো না এখানে , আমি ব্যাঁ করিয়াছিলাম বলিয়াই ইহার উদ্ভব হইয়াছে, আমি দীর্ঘ এবং প্রলম্বিত একটা ব্যঁণ করিলাম এবং ইহা শ্রবণ করিয়া বিন্দু থেকে বিচু্যত হইয়া সিন্ধুর সৃষ্টি হইলো, অতঃপর আমি আবারও ব্যাঁ করিলাম, শুন্যতা আকার পাইলো, এবং উহা সবুজ হইয়া গেলো, সবুজ অবশ্য ঘৃনার রং মাঝে মাঝে নবীনের রংও সবুজ হয়, তবে আমি নিশ্চিত সেই দিন শুন্যতা আমাকে ঘৃনা করিয়াই সবুজ হইয়াা ছিলো। এবং অতঃপর আমি খুর দিয়া আঘাত করিলাম মাটিতে , ওমনি কয়েকটা রামছাগলশিং উঁচিয়ে খাড়া হইলো, উহারাই তোমাদিগের আদিপুরুষ, আমি ছাগলশ্রেষ্ঠকে আমারই স্বরূপে সৃষ্টি করিয়াছি, উহাকে সৃষ্টি করিব বলিয়াই আমি এত বার ব্যাঁ ব্যাঁ করে এত কিছুর জন্ম দিলাম।
অবশেষে একদিন সেই রামছাগল ধরাধামে অবর্ত ীর্ন হইলেন, তাহার লম্বা রোমশ কান ঝুলছে, তাহার মখমলের ন্যায় গায়ের পশম, আর তার কি সুন্দর সুললিত কণ্ঠ, আহা কি মধুর, সেই মহামানউ ছাগল কখনই ব্যাঁ ছাড়া অন্য কোনো স্বর বলেন নি,তার মতো অপূর্বকান্তি ছাগল কখনই জন্মিবে না। তাহার বচনামৃত সংগৃহীত আছে ব্যাঁ করি শরিফে।
তাহার রসবোধ অসামান্য ছিলো, একদা নিশিকালে যখন তাহার পঞ্চম সঙ্গির গৃহে অবস্থান করিতেছিলেন তখন তিনি উদাস স্বরে কহিলেন আজকালকার যুগে জীবনের ব্যাপ্তি বড় সংক্ষিপ্ত। আজি হইতে 40 বছর পরে এখন যাহারা জাগিয়া রহিয়াছে তাহাদিগের কেহই থাকিবে না, তাহার সঙ্গি সাথীগন বড়ই উৎকণ্ঠিত হইলেন, আর 40 বছর পরে এই পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকিবে না তাহা হইলে, তাহার গন্যমান্য 70 জন সঙ্গিকে বিভিন্ন বাগানের ঘাসলতাপাতার ভাগ বুঝাইয়া দিয়া তিনি পাহাড়ে চড়তে গেলেন, এবং উহার পর আর তাহাকে কেহই দেখে নাই। লোকমুখে শোনা যায়, তিনি নাকি কোন এক্সপ্লোরার টিমের সঙ্গি হইয়াছিলেন, তাহাদের উদরে চেপে কিছু দুর গিয়েও ছিলেন অতঃপর সবাই তাহাকে ত্যাগ করিয়াছে, পরম আমোদে, এক্সপ্লোরার দলের তুখোড় রাঁদুনির প্রশংসায় সেদিন পঞ্চমুখ ছিলেন সব সদস্যরা। এমন স্বাদু ছাগল আর কি জন্মাবে কখনও? নিজের দেহ দিয়া অন্যজনের উদরপূর্তি করিবার মতো মাহাত্ব্য ক'জনায় দেখাতে পারে।
যাহাই হোক খবর পাইলাম তিনকোনা দাদা নাকি সামান্য বায়ুগ্রস্থ হইয়াছেন, তাই তিনি ঘোষনা করিয়াছেন এখন ফোরাম অতি পবিত্রস্থান বিবেচিতো হইবেক, উহাতে প্রবেশের পূর্বে সবাইকে ওজু করিয়া লইতে হইবেক এবং পেটে কোষ্ঠ রেখে আলাপন চালানো যাইবে না। উক্ত নিয়ম তৈরি করার পর থেকে তিনকোনা দাদা নিখোজ।
তাহার ছবি দিয়া বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হইয়াছে, বিভিন্ন থানায় খবর দেওয়া হইয়াছে, তাহাকে হারাইয়া তাহার মালিক দিখু দ্্রাবির পাগলপ্রায়, খোঁয়ারে খোঁয়ারে খুজছে এই হারানো রামছাগলটিকে। তাহার নিয়মিত বিচরনস্থলে তাহাকে দেখা যায় নাই,
অবশ্য বিভিন্ন লোক মন্তব্য করিয়াছে, তাহাকে উত্তরের রেল লাইন ধরে হাটিয়া যাইতে দেখা গিয়াছে, কেহ কহিতেছে তাহার সহিত সুফি ছাগলের সংঘাত থাকার কারনে সুফি ছাগল তাহাকে গুম খুন করিয়াছে, সত্য মিথ্যা জানি না, আপনার যদি এই ছবির ছাগলটিকে খুণজিয়া পান তাহা হইলে দীখু দ্্রাবিরকে খবর জানাইবেন, তাহার যোগাযোগের বিস্তারিত পাইবেন সব স্থানীয় থানায়।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০