উৎপল শুভ্রের বাংলাদেশ বিরোধী লেখার প্রমাণ প্রথম পাই যখন গত এশিয়া কাপের ভারতের কাছে বাংলাদেশ হেরে যাওয়ায় ওনার উল্লাসপূর্ব রিপোর্ট ছাপা হয়। বাংলাদেশের সব বাংলা পত্রিকায় যখন মুশফিকের সেঞ্চুরীর পরও বাংলাদেশ ম্যাচ হেরে যাওয়ায় হাহাকার আর কষ্টের রিপোর্ট ছাপা হচ্ছিলো, তখন শুভ্রের রিপোর্টের হেডিং ছিলো- "মুশফিক ভালো , তবে কোহলী আরও ভালো" সেই সাথে রিপোর্টের পুরো অংশ জুড়ে ছিলো কোহলীর বায়োগ্রাফি, ওর ছোটবেলার কোচ কি বলেছিলো, অমুকে কি বলেছিলো ইত্যাদি। বাংলাদেশের পত্রিকায় বাংলাদেশের ম্যাচ হেরে যাওয়ায় যে ন্যুনতম দুঃখের ছিটেফোটা পাওয়া উচিত সেই ভ্দ্রতায়ও সে যায় নি।
এবারের অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপের খবর নিয়ে রিপোর্ট। ১৯ শে মার্চের ঐতিহাসিক চুরি এবং কালো দাগের ম্যাচে যখন বাংলাদেশের আনাচে কানাচে প্রতিবাদ আর অন্যায়ের রিরুদ্ধচারণ করা হয়েছে তার কোনকিছুই এই বাংলাদেশ বিরোধী রিপোর্টারের মনে দাগ কাটেনি। বরং সেই ম্যাচের বাংলাদেশে প্রকাশিত সবগুলো বাংলা খবরের কাগজের মধ্যে একমাত্র ওর ম্যাচ রিপোর্টেই সেই রোহিত শর্মার আউটে রুবেলের বলের অন্যায় নো কলের কথা আসে নাই, মাহমুদুল্লাহর ছয়কে ক্যাচ বানিয়ে দেওয়ার অন্যায়ের কথা আসে নাই, রায়নার এলবিডব্লিও চুরির কথা তো দূরে থাক। গ্যালারীর বাঙালী দর্শকদের প্ল্যাকার্ড, চোখের জল কোন কিছুই এই পাষন্ড বাংলাদেশ বিরোধীর লেখায় আসে নাই, বরং কলকাতার পত্রিকার মতো ঐ ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের ব্যার্থতার কথা (!) মোটা দাগে দেখিয়ে দিয়েছে (ঠিক একই ভাবে আজকাল মাশরাফির ভুলগুলা দেখায় চলছে!)। শোনা যায়, বাংলাদেশ ইন্ডিয়ার চুরির ম্যাচে যখন অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত বাংলাদেশী সাংবাদিকরা টাইগারদের দলের সাথে ছিলো, তখন এই রিপোর্টার ফুরফুরে মেজাজে সেমিফাইনাল কাভার করতে চলে গিয়েছিলো।
ঠিক একই প্রক্রিয়া অনুসরন করে এবারের টি২০ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করছে। রিপোর্ট লেখার নামে বিভিন্ন ইন্ডিয়ান প্লেয়ারদের জন্মস্থান, অমুক ইন্ডিয়ান খাবার, অমুক ইন্ডিয়ান রেকর্ডধারী খেলোয়াড়, অমুক স্টেডিয়ামের স্মৃতিচারণে সে যতগুলো শব্দ ব্যবহার করেছে, তার দশভাগের একভাগও টাইগারদের খবরে ব্যয় করে নাই। আবার টাইগারদের খবরের মধ্যেও বিভিন্ন জনের সাক্ষাৎকারের নামে বিতর্কিত মন্তব্য বের করে আনবার চেষ্টা করে চলেছে। আইসিসি আর ইন্ডিয়ার যৌথ প্রযোজনার অন্যায় সিদ্ধান্ত- তাসকিন আর সানিকে নিষিদ্ধ করবার ঘটনায় বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব যখন উচ্চকিত, তখন এই উৎপল শুভ্রের লেখায় সেটা কমগুরুত্বের " তাসকিন-সানি বিতর্ক " হিসেবেই থমকে থাকে। তাসকিন নিষিদ্ধ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যখন মাশরাফির অশ্রু ঝরে, যে চোখের জলে বাংলাদেশ তো বটেই কলকাতার সিনিয়র বাঙালী সাংবাদিকেরও চোখের জল আসে, সেই মাশরাফির অন্যায় বিরোধী চোখ হয় উৎপল শুভ্রের পরবর্তী টার্গেট। মাশরাফির বাধভাঙা কান্নাকে শুধুমাত্র এই একটি পত্রিকার রিপোর্টেই খুব বাজেভাবে তুলে ধরা হয়েছে। শুধুমাত্র পত্রিকা পড়বার অভিজ্ঞতা থেকেই সেদিন বুঝেছিলাম, এইবার মাশরাফিকে টার্গেট করা হবে। বাস্তবে অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের পর হলোও তাই। যে দলটার মনোবল ভেঙেচুড়ে দেবার জন্য আইসিসি-ইন্ডিয়া তাসকিন সানির নিষিদ্ধের নাটক করলো, সেই বিদ্ধস্ত অবস্থা থেকে যে দলটি লড়াই করতে পারবে, তা মনে হয়, আইসিসি, ইন্ডিয়া, উৎপল শুভ্র কেউই ভাবতে পারে নাই। আর সবাই জানে, এই লড়াই করতে পারলো, তার জন্যে একমাত্র কৃতিত্ব অধিনায়ক মাশরাফি। এইবার ষড়যন্ত্রের নতুন মোড়ক খোলা হলো, মঞ্চে আসলো বিশেষজ্ঞরা, অযাচিত ভাবে মাশরাফিকে শতভাগ দায়ী করে ভিলেন বানানোর প্রক্রিয়া শুরু হলো, আর তাতে ঘি ঢাললো কে? সেই উৎপল শুভ্র। যেই লোকের বেতন হয় বাংলাদেশের মানুষের গাটের পয়সা থেকে কেনা পত্রিকায়, সেই লোক এই দেশের ক্রিকেটকে শেষ করে দেয়ায় মহাউৎসাহে ঝাপিয়ে পড়লো। এই এশিয়া কাপে "সাকিবের ক্যাচে ম্যাচ হারলো বাংলাদেশ" শীর্ষক অপমানজনক রিপোর্টর পর আনিসুল হক এই রিপোর্টারটির সম্বন্ধে একটি কমেন্ট করেছিলেন ফেসবুকে (সম্ভবত তার করা সবচেয়ে কুৎসিত মন্তব্য- যা তিনি করতে বাধ্য হয়েছিলেন)।
খেলার রিপোর্টেও যে দেশপ্রেম থাকে তা দেখিয়েছেন রাজীব হাসান, পবিত্র কুন্ডু, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের মতো সাংবাদিকরা- যখন তারা যুক্তি দিয়ে দেশের জন্যে লেখেন, আর অন্যায়কারীদের চোখে চোখ রেখে কথা বলেন। আর দালালী দেখিয়েছে উৎপল শুভ্রের মতো ....... দিকে তাকিয়ে খেলার রিপোর্ট করা সাংবাদিকরা- যখন তারা ধন্য হয়ে যান "ওদের" ছোয়া পেলে, মাশরাফি সাকিবদের ভিলেন বানিয়ে " ওদের " সাহায্য করেন আর "মা কি চ্যুত" বলে কোহলীরা গালি দিলেও আজলা ভরে নেয়।
তাইতো দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের বই ছাপান মাশরাফি কে নিয়ে আর উৎপল শুভ্র বই ছাপায় ইন্ডিয়ার প্লেয়ারদের নিয়ে।
খেলার রিপোর্টে নিরপেক্ষতা রাখতে পারাটাও প্রশংসার কাজ, কিন্তু শুভ্রের মতো রিপোর্টার দের নিরপেক্ষতার নামে দেশবিরোধী রিপোর্টেরও জবাব দিহিতা থাকা উচিত নয় কি?
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৯