ছেলেবেলায় বইপড়বার নেশা ছিলো, মধ্যবিত্ত বাবার কিনে দেয়া প্রতিটি বই পড়ে খুব যত্ন করে সাজিয়ে রাখতাম। আর স্থানীয় একটি লাইব্রেরীর মেম্বার হয়ে দুইটাকা ভাড়া দিয়ে বই ভাড়া আনতাম। সেই ছোট্ট আমার থেকে অনেকে বই পড়বার জন্যে নিয়ে যেতো, কিন্তু কিছু বই মেরে দিতো, যাদের বাসায় বেশ সম্মান করা হতো। জিনিসটা আমাকে এখনও কষ্ট দিয়ে যায়। বাসায় আসা সেলিম ভাই আমার কিশোর জীবনের সেরা বই "মালাকাইটের ঝাপি" মেরে দিয়েছিলেন। আজও চোখের সামনে ভাসে বইটির সবুজ সুন্দর প্রচ্ছদ। আরেক সম্মানিত মোয়াজ্জেম ভাই নীল মলাটের মোটা বই "সেরা সত্যজিত" মেরে দিয়েছিলেন। হারিয়ে গেছে আমি আরেকটি কিনে দেবো বললেও তিনি কথা রাখেন নাই। স্কুলের টিচার হারুন অর রশীদ স্কুল ব্যাগ থেকে মেরে দিয়েছিলেন জুলভার্ণের "হারানো পৃথিবী" । আর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম বছর নতুন বন্ধু মশু তার বান্ধবী ইউনা কে আমার বইটি আমার অমতেই দিয়ে দিয়েছিলো। বাসায় আলমিরার উপর আছে, আনতে পারছিনা বলে বছর কাটিয়ে বইটি মেরে দেয় ও। সেদিন ফেসবুকে হঠাত ওকে খুজে পেয়ে ম্যাসেজ করেছিলাম বইটির জন্যে। উত্তরে সে রসিকতা ছলে আরেকটি কিনে দিতে চায়, কিন্তু বইটি আমার প্রিয় একজনের গিফট করা ছিলো, আমার এসএসসি পরীক্ষার রেজাল্টের পর আমাকে হুমায়ুন আহমদের "কবি" বইটা দিয়েছিলেন তিনি। অন্য একটি কপি আজ আমিও কেনার সামর্থ রাখি, কিন্তু তার সেই ভালোবাসার পরশের উপহার কি তাতে পাবো? বই চুরী করা যত মহান রূপেই দেখানো হোক না কেন, যার বই তার মনের কষ্ট কখনই লাঘব হবার নয়। জীবনে অনেক কিছুই হারিয়েছি (মোবাইল থেকে শুরু করে বউয়ের গহনা পর্যন্ত)। অর্থমূল্যে সেগুলো হয়তো বইয়ের থেকেও দামী , কিন্তু বই হারানোর (অন্যের চুরি) বেদনার মতো সেগুলো এতো কষ্টকর হয় নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩০