বাংলাদেশই মনে হয় পৃথিবীর একমাত্র দেশ যেই দেশে তাদের নিজের স্বার্থের বিরুদ্ধে কিছু ঘটলেও একদল লোক থাকে যারা নির্লজ্জ্বভাবে তা সমর্থনদিয়ে আসছে। আমাদের দেশে একদল লোক দেশের স্বাধীনতার সময় সরব এবং সক্রিয়ভাবেই হানাদার বাহিনীর সাথে যোগ দেয়। আবার অন্য আরেকটি দল লোক আছে যারা অত্যন্ত সরবে কাগজে কলমে নির্লজ্বভাবে প্রতিবেশী দেশের যে কোন কাজকে সমর্থন করে, তা সে ফেলানীর লাশ দেখেই হোক কি অর্থনীতির চাপও হোক। এ নিয়ে বিস্তারিত খুব বেশী বর্ণনা না করলেও চলে, কারণ এদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের নামে যে প্রমাণ/যুক্তি তুলে ধরে সেগুলো পড়লেই বিষয়গুলো জানা যায়।
২০১৫ সালে এই দেশের ক্রিকেট উৎসবে এই দুই পক্ষের লজ্জ্বাজনক সমর্থনেও বিষয় গুলো ঝালাই হয়ে গেছলো। মে মাসের পাকি প্রেমিকদের লুকানো মুখগুলি আর জুন মাসে দালালদের নিভে যাওয়া হাসিতে এই দেশের মানুষের উল্লাসের আনন্দে ভাটা পড়েনি একটুকু।
যে কোন ক্রাইসিসে শত্রু চেনা যায়। ২০১৬ এর জিম্বাবুয়ে বিপর্যয়ের মূল হোতা হাতুড়ের ক্রিকেট দল ধ্বংস করবার চক্রান্তে এই দুই দলের উল্লাস আবার চোখে পড়ছে। এবার তারা হয়ে গেছে এক জোট। যেই দেশের ক্রিকেটের জয়ে আমাদের মুখ হয় উজ্জ্বল, সেই দেশের ক্রিকেটের পরাজয়ে তাদের মুখে ফুটে উঠেছে হাসি। ২০১৫ এর মে আর জুনের পরাজয়ের প্রতিশোধ তারা পেয়েছে ২০১৬ তে এক হাতুড়ের অপতৎপরতার কারণে। আর সেই জন্যেই হাসি মাখা মুখ আড়ালে রেখে কেউ বিড়বিড় করে বলছে, এই পরাজয় আসলে দরকার ছিলো, আবার কেউ কেউ বলছে, দুটি মাত্র ম্যাচ জেনেশুনে হারাটা ভালোই ছিলো।
প্রসঙ্গটা এলো এভাবে। কোচ হয়ে আসার পর থেকে হাতুড়ে প্রথমেই সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিদেয় করে দেবার জন্যে উঠে পড়ে লাগলো। যে হাতুড়ে নিজে নিজের খেলোয়াড়ি জীবনে একাধিকবার শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছিলো, সেই হাতুড়ে শৃঙ্খলা রক্ষার নামে সাকিবকে বিভিন্ন অছিলায় বহিস্কারের জন্যে বিসিবি কে উস্কে দেয়। বিশ্বকাপে আরেকজন সাবেক অধিনায়কের যোগসাজসে ফর্মে থাকা আলআমিনকে তুচ্ছ অভিযোগে দেশে ফেরৎ পাঠানো হয়, দলের সব খেলোয়াড়ের করজোর অনুরোধ স্বত্বেও। ২০১৫ এর শ্রীলংকার ট্যুর থেকে এশিয়া কাপ পর্যন্ত এই হাতুড়ের অধীনে একের পর এক ম্যাচ হারতে হারতে যখন হাতুড়ের বিদায় আসন্ন, তখন মাশরাফির একক পরিচর্যা এবং সমম্বয়ের জন্যে দলটি ঘুরে দাড়ায়। আধুনিক ক্রিকেটে দলে কিছু বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকলে একজন কোচের মূল কাজ হলো তাদের কাছ থেকে বেস্ট পারফরমেন্স আদায় করবার জন্যে সুষ্ঠু সমম্বয় ঘটানো। এখানে ব্যাটিং বা বোলিং শেখানোর কাজটাও করে দেয় ব্যাটিং কোচ বা বোলিং কোচ। মাইকেল ক্লার্ক তো বলেই দিয়েছেন- অস্ট্রেলিয়া দলে তার কুকুরটা কোচ থাকলেও সে সময় দলটি বিশ্বকাপ জয় করতো। মজার বিষয় হচ্ছে, বাংলাদেশ বলেই কিনা, মাশরাফির অসাধারণ নেতৃত্ব ও সমম্বয়ের বেশ কিছুটা ক্রেডিট চলে যায় স্বাভাবিকভাবে হেড কোচের কাছেই। সেটা পুজি করেই এবার সে নতুন চাল চালে যার পরিপ্রেক্ষিত এখানেই পাবেন।
http://www.somewhereinblog.net/blog/zuma/30103264
মজার ব্যাপার হলো- হাতুড়ে এর মধ্যেও কিছু বাংলাদেশী ভক্ত পেয়ে যায়। তাদের ভাবটা দেখে বোঝাই যায়- তারা লালসবুজের পতাকার বাহক মাশরাফি, সাকিবদের খেলা দেখতে যায় না, যায় শ্রীলংকার হাতুড়ের কোচিং দেখতে। মাশরাফির আত্নত্যাগ তাদের চোখে পড়ে না হাতুড়ে অস্ট্রেলিয়ায় বাড়ি ছেড়ে এই পোড়া দেশে আছে, তাই যেন এদেশের কপাল!
বাংলাদেশ বীরের জাতি। খেলে হারতে তাদের কোন আপত্তি নাই। লড়াই করে বা দুর্বল দল নিয়ে অসংখ্যবার আমরা অনেকের কাছেই হেরেছি। সেটা ভারতের সাথে হোক, পাকিদের সাথে হোক, এমনকি জিম্বাবুয়েও অনেকবারই আমাদের ভালো খেলেই হারিয়েছে। কিন্তু ২০১৫ এর ফেব্রুয়ারীতে যে চক্রান্ত করে অস্ট্রেলিয়ায় আমাদের হারানো হয়েছে, সেই হার আমরা মেনে নিতে পারিনি। মুলতানে জিততে থাকা টেস্টে অশোকা ডি সিলভার চক্রান্তে হেরে যাওয়াও মেনে নিতে পারিনি। আর ২০ জানুয়ারী থেকে হাতুড়ের চক্রান্তে দলকে ভিতর থেকে দুর্বল করে দিয়ে হেরে যাওয়া মেনে নিতে পারছিনা।
এই দেশে পাকি রাজাকার, ভারতীয় দালাল আর হাতুড়ী প্রেমিকদের মতো বেইমানদের অভাব নাই। আমরা দেশপ্রেমিক বাঙালীরা মাশরাফি সাকিব তামিমদের হাতে পতাকা তুলে দিয়েছি । ওদের খেলাই দেখতে চাই। হাতুড়ীর শয়তানী কিংবা হাতুড়ী প্রেমিকদের দরকারী পরাজয় দেখতে চাই না।
যাদের হাতুড়ের "প্রয়োজনীয়/দরকারী" পরাজয় দেখবার ইচ্ছা থাকে, তাদের তো মানা করিনি, আপনারা দেখুন না, হাতুড়ের নিজের দল শ্রীলংকার খেলা। যে হাতুড়ীর নিজের খেলোয়াড়ী জীবন জঘন্য ক্যারিয়ার গ্রাফ্ আর বারংবার বহিস্কারের ইতিহাসে পূর্ণ, সেই হাতুড়ের ভক্ত হবার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমাদের নেই। সে একজন বেতনভুক্ত কর্মচারী মাত্র। বরং ওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ যে কিসের বিনিময়ে দলের ভেতরে থেকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে সে শুধু একটি সিরিজের জয়ই বিনষ্ট করেনি, বরং উচুতে থাকা বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের কনফিডেন্স ও ধ্বংস করবার কাজে সে নিয়োজিত থেকেছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৫:৪৮