শঙ্কাটা জাগছে সর্বশেষ বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অতি পরীক্ষা নিরিক্ষার আতিশায্য দেখে। মাত্র দুইমাস আগে বাংলাদেশ ফুটবল দলেও এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো । হঠাৎ করে বাফুফে একজন ইতালীয় কোচ উড়িয়ে আনে। ভদ্রলোক এসেই স্ট্রাইকারদের পাঠিয়ে দেন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হিসেবে খেলতে, মিডফিল্ডার মামুনুল কে পাঠিয়ে দেন স্ট্রাইকিং এ আর লেফট ব্যাক কে খেলানো শুরু করেন রাইট আউট এ। সামনে দুই/তিনটি বড় টুর্ণামেন্ট থাকার অছিলায় তিনি নাম দেন পরীক্ষা নিরীক্ষা। খুব স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘদিন থেকে খেলে আসা সিনিয়র প্লেয়ার রা যখন এ নিয়ে আপত্তি জানালেন, অভিভাবকেরা খুব বিরক্ত হলেন । বাফুফে সভাপতি সাহেব তো বলেই উঠলেন - "কোচ যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন" । ফলাফল, মাত্র একমাসের মধ্যে পুরো দলকে এতোটাই এলোমেলো করে দিলো যে, সাফ টুর্ণামেন্ট তো পরের কথা, বঙ্গবন্ধু কাপে আসা বিভিন্ন দেশের ছোটদের সাথেই হিমশিম খেয়ে তল খুজে বেড়াচ্ছে দলটি। যে কোন চলমান কিছুর রিদম নষ্ট করে দিলে, তা থেকে বের হয়ে আসা খুব কঠিন। আর এই রিদম নষ্ট করবার কাজটিই সফলভাবে করে বিদায় হন ইতালীয় লোপেজ।
কেন জানিনা, হঠাৎ করে ক্রিকেটে আবার সেই একই কাজ শুরু করছেন হাতুড়ে সাহেব। আবারও ওলট পালটের খেলা। সিনিয়র প্লেয়ারদের আপত্তির মুখে কোড অব কন্ডাক্টের বাধা পেরিয়ে যা বের হয়ে আসছে তা সেই ফুটবল দলের প্রতিচ্ছবিই। মজার ব্যপার হলো এর মধ্যেই দেশব্যাপি হাতুড়ে সাহেবের কিছু ভক্ত জুটে গেলো। আত্নবিস্মৃতির জন্যে বিখ্যাত বাঙালী জাতি ভুলে গেলো এই হাতুড়ের অধীনে ২০১৪ তে হিমশিম খাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে উদ্ধার করেছিলো সৌম্য-মুস্তাফিজের মতো নতুন খেলোয়াড় (যাদের নির্বাচকরা খুজে এনেছিলেন) সাথে মূল অবদান ছিলো সংসপ্তক মাশরাফির অনুপ্রেরণাময়ী ক্যাপ্টেনসি। সর্বদাই আত্নপরিচয়ের সংকটে থাকা এই জাতির অনেকেই দেশের ছেলেদের অবদান ভুলে গেলেও বিদেশী পাসপোর্টধারী হাতুড়ের হাতেই সব কৃতিত্ব চোখ বন্ধ করে দিয়ে দলের বারোটা বাজানোর লাইসেন্স দিয়ে রাখতে রাজী হয়ে গেলো। ঘটনাটা হয়ে যাচ্ছে বাড়ির ছোট ছেলেকে গণিত প্রাইভেট পড়তে দেয়ার মতো। বাড়ির ছেলে যখন বলে টীচার তাকে অযথা মারধর করছে- তখন বাসা থেকে উল্টো তাকে ধমক দেয়া হয় এই বলে যে, টিচার ভালোর জন্যেই তাকে পেটাচ্ছে। কিন্তু কদিন পর যখন নিজের ছেলের অঙ্গহানি হয়, তখন টিচারের সর্বোচ্চ শাস্তি হয় পড়ানো বন্ধ করা, কিন্তু ততক্ষনে বাড়ির ছেলের যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গেছে। নিজেদের ছেলেদের অনুভুতি এভাবে উড়িয়ে ফেলা ঠিক হচ্ছে না।
অনেকের কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ হলো- " বাংলাদেশ টিমের উন্নতি কিন্তু হাথুরুসিংয়ের পরীক্ষা নিরীক্ষার ফল" এটা হাতুড়ের প্রতি অতি মূল্যায়ন । আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি এই হাতুড়ের হাতেই কিন্তু ম্যাচের পর ম্যাচ হেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলো এই দলটিই।নির্বাচকদের খুজে আনা নতুন কিছু পারফরমার এবং মাশরাফির অধিনায়কত্বে আবারও বলছি মাশরাফির অধিনায়কত্বে দলটি বদল হয়েছে। হাতুড়ের জায়গায় এই সময় বাড়ির নেড়ি কুত্তা (মাইকেল ক্লার্ক অন্য এক প্রসঙ্গে কিন্তু এভাবেই বলেছিলেন) থাকলেও দল একই রকম পারফরম্যান্স করতো বলে আমার ধারণা।
দুই–তিন বছর ধরে গড়া ক্রুইফের অধীনে অসাধারণ খেলতে থাকা বাংলাদেশ ফুটবল দলকে ধ্বংস করতে মাত্র একমাস সময় লেগেছে- শুধুমাত্র সিনিয়র কয়েকজন খেলোয়াড়ের পজিশন বদলে সব কিছু ওলট পালট করে দিয়েছিলেন তিনি। আমাদের জাতিগত সমস্যা হলো, আমরা নিজেদের ছেলেদের চেয়ে বিদেশীদের উপর বিশ্বাস করি খুব বেশী।
বিদেশীদের দিয়ে কাজ করালেও নিজের কাজ বুঝে নিতে হয়। বিসিবি বাফুফের চেয়ে অনেক দক্ষ একটি সংগঠন। তারা বাফুফের মতো ভুল করবেনা বলে আমার বিশ্বাস । আশা করি প্রয়োজন এবং সময় মতো লাগাম ধরে দলকে বাচাতে এগিয়ে আসবে বিসিবি।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জানুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:৫০