মেয়েটিকে চিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় থেকে। তখন তার বয়স ৫-৬। ১৯৭১-এ জন্ম বলে খুব গর্বিত সে। তার মা-কে আমি আপা ডাকি, অথচ সে আমাকে কাকা বলে এক বিচিত্র কারণে। সেটা অন্য প্রসঙ্গ।
দেশছাড়া হওয়ার পর দীর্ঘকাল তার সঙ্গে যোগাযোগ খুব ক্ষীণ ছিলো। গত কয়েক বছর অনিয়মিত যোগাযোগ হয় ইমেল বা ইনস্ট্যান্ট মেসেজিং-এ। প্রচুর পড়ুয়া মেয়ে সে ছোটোবেলা থেকে। ওদের পরিবারে এরকমই হ্ওয়ার কথা।
আমার লেখা এখানে-ওখানে পড়লে তার মতামত জানায়। তার আগ্রহের কারণে ব্লগে প্রকাশিত আমার কিছু কিছু লেখার লিংক ওকে পাঠাই। অনলাইনে কোথাও কোনো ভালো লেখা পেলে তা-ও তার সঙ্গে শেয়ার করি। আগ্রহ নিয়ে পড়ে সে। মতামত দেয়। তার নিজস্ব কিছু চিন্তাভাবনার শরিক করে সে আমাকে। সেসব বিষয়ে আমার মত জানতে চায়। বয়সের বিস্তর ফারাক সত্ত্বেও বন্ধুর মতো কথা হয়।
গত পরশু তারাপদ রায়ের মৃত্যুসংক্রান্ত আমার দুটি ব্লগের লিংক পাঠাই তাকে, তখন সে অফলাইনে। কবির মৃত্যুসংবাদ তাকে পাঠানো আমার জরুরি মনে হয়। সে নিজেও একজন কবির কন্যা, যদিও তার জন্মের পরের বছর কিছু বুঝতে শেখার আগেই সে পিতাকে হারিয়েছে। পিতার কোনো স্মৃতিই তার নেই।
গতকাল তাকে অনলাইন দেখে মেসেজ পাঠিয়ে জিজ্ঞেস করি, লিংক দুটো পেয়েছিলে?
তার ত্বরিৎ উত্তরে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। থমকে যেতে হয়। আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে সে লিখেছে, এখন এসব কথা বোলো না।
বুঝে যাই সে কোনসব কথার ইঙ্গিত করছে।
পত্রিকায় পড়ছি দেশে সব স্বাভাবিক। কারফিউ তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনে ছাত্র ও সাংবাদিক পেটানো, শিক্ষক আটক (বা আরো অনেককিছু যা কাগজে আসেনি বলে সন্দেহ করা চলে) এইসব ঘটনায় যে আতংকের বোধ সৃষ্টি হয়েছে, তা তুলে নেবে কে?