‘মুছে যাক আমার নাম, কিন্তু বেঁচে থাক বাংলাদেশ’..........না তার কথাই আমরা রেখেছি, একে বারেই ভুলে গিয়েছি তাকে। ভুলে গেছি এক নির্ভীক দেশপ্রেমিক বাঙ্গালীকে। ঠিক কত গুলো নয় মাস লাগতো তিনি না থাকলে এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেতে তা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ। চাটুকারদের জোয়ারে ভেসে না গিয়ে বাকশাল নিয়ে তার বিরুপ, সাহসী ও সত্যনিষ্ট মন্তব্যের কারনে হয়ত এখনও তিনি অনেকের কাছে উপেক্ষিত। যখন সবাই তোষামোদি আর চাটুকারিতে মগ্ন তখন বঙ্গবন্ধুকে তার সেই সত্য ও সাহসী মন্তব্য "এই পদপক্ষেপ (বাকশাল) গ্রহনের মাধ্যমে আপনাকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ক্ষমতা থেকে সরানোর সমস্ত রাস্তা আপনি বন্ধ করে দিলেন । পত্রিকা বন্ধ করে আপনি আপনার শত্রুদের সমালোচনার পথ ও বন্ধ করে দিলেন।“
ভুলে যাওয়া সেই কিংবদন্তি বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদের ৮৭তম জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি।
১৯২৫ সালের ২৩ জুলাই গাজীপুর জেলার কাপাসিয়া থানার দরদরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তাজউদ্দীন আহমেদ।
বাবা মৌলবী ইয়াসিন খান, মা মেহেরুন্নেসা খানম। ৪ ভাই ও ৬ বোনের মধ্যে ৪র্থ ছিলেন তাজউদ্দিন আহমেদ। তিনি কালিগঞ্জসেন্ট নিকোলাস ইনস্টিটিউশনে, ঢাকার মুসলিম বয়েজ হাই স্কুলে ও সেন্ট গ্রেগরিজ হাই স্কুলে পড়াশুনা করেন। ১৯৪৪ সালে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অবিভক্ত বাংলায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি ঢাকা বোর্ডে ৪র্থ স্থান অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে ভর্তি হন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি সিভিল ডিফেন্স-এ ট্রেনিং নিয়েছিলেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠন, ভাষা আন্দোলনের অন্যতম লড়াকু সৈনিক ছিলেন তাজউদ্দীন আহমেদ। মাত্র ২৯ বছর বয়সে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা উত্তর-পূর্ব আসনে যুক্তফ্রন্ট প্রার্থী হন এবং জয় লাভ করেন তিনি।
১৯৬৪ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১৯৬৬ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৬ দফা আন্দোলনের কারণে দেশরক্ষা আইনে ১৯৬৬ সালের ৮ মে পুনরায় তাকে গ্রেফতার করা হয়।তাজউদ্দীন আহমেদ হন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী। ১৯৭৩ সালে ঢাকা-২২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা লাভের মাত্র ২ বছর ১০ মাসের মাথায় তিনি মন্ত্রীপরিষদ থেকে পদত্যাগ করেন। মন্ত্রীপরিষদ থেকে বিদায় নেয়ার পরেও রাজনৈতিক বিভিন্ন অপতৎপরতার ব্যপারে বঙ্গবন্ধুকে সচেতন করতে থাকেন তিনি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যাকান্ডের তাঁকে আত্মগোপন করার জন্য পরামর্শ দেয়া হলেও তিনি তাতে অস্বীকৃতি জানান। ১৫ আগস্ট প্রথম গৃহবন্দী ও পরে ২২ আগস্ট গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলখানার মধ্যে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতা তাজ উদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামরুজ্জামান।
কিন্তু এখনও প্রকৃত দেশপ্রেমিকরা আপনাকে বিনম্র চিত্তে শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে, আত্মার শান্তি কামনা করে। শুভ জন্মদিন স্যার , তাজউদ্দিন আহমেদ।