ফুটবল আমার প্রিয় খেলা। বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ফুটবল খুবই চিত্তাকর্ষক। সিরি এ, লা লিগা ও প্রিমিয়ার লীগের খেলা নিয়মিত দেখার চেষ্টা করি। আর চ্যাম্পিয়নস লীগের জৌলুসতো আরো বেশি। দ্বিতীয় রাউন্ডের ড্র হওয়ার পর থেকেই এই ম্যাচকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়াচ্ছিল। একে দুই ইউরোপিয়ান জায়ান্ট তার উপর গতবছরের ম্যাচের প্রেক্ষাপট। সেবার প্রথম লেগ ২-২ গোলে ড্র হওয়ার পর ন্যুক্যাম্পে দ্বিতীয় লেগে লিওনেল মেসির অতিমানবীয় পারফর্ম্যান্সে আর্সেনালকে হারিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছিল বার্সেলোনা। যার জন্য এই ম্যাচকে ঘিরে একটা প্রতিশোধের আবহ তৈরি হয়েছিল। বলা যায় প্রথম লেগ ২-১ গোলে জিতে প্রতিশোধ নেওয়ার পাশাপাশি লড়াইয়ে আপাতত এগিয়ে রইল আর্সেনাল।
কিক অফের পরপরই ম্যাচে উত্তেজনা চলে আসে। শুরুতেই আক্রমণের ঢেউ তোলে ক্যাটালান সংস্কৃতির ধারক-বাহক বার্সেলোনা। অপরদিকে আর্সেনাল কাউন্টারআ্যাটাক নির্ভর খেলা খেলছিল। তেমনি পাল্টা আক্রমণ ৬ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিল আর্সেনাল। অধিনায়ক সেস্ক ফ্যাব্রেগাস মাঝমাঠ থেকে বল ধরে দ্রুতগতিতে কয়েকজনকে কাটিয়ে বল ক্রস করেছিলেন ধাবমান স্ট্রাইকার রবিন ফন পার্সির দিকে। পার্সির জোরালো হেড প্রচেষ্টা বার্সা কিপারের তৎপরতায় নস্যাৎ হয়। পরের মিনিটেই মেসি মাঝবৃত্ত থেকে বল নিয়ে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাওয়ার সময় আর্সেনালের এ্যালেক্স সং তাকে ফাউলের মাধ্যমে থামান। বিনিময়ে হলুদ কার্ড পান তিনি।
১৪ মিনিটের ম্যাচের সবচেয়ে সহজ সুযোগ নষ্ট করেন মেসি। মাঝমাঠ থেকে মেসি এবং ভিয়া ওয়ান টু ওয়ান খেলে এগিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মেসি দিকপরিবর্তন করে চকিতে বক্সের ভেতর ঢুকে যান। সাথে সাথ ভিয়ার ডিফেন্সচেরা পাস খুঁজে পায় মেসিকে। চ্যাম্পিয়নস লীগে অভিষিক্ত আর্সেনাল কিপারকে একা পেয়েও বল বাইরে মারেন তিনি। তার আলতো চিপ বার ঘেষে চলে যায়।
২৬ মিনিটে আসে ম্যাচের প্রথম গোল। দ্রুত গতিতে বল নিয়ে উপরে উঠে বক্সে লব করেছিলেন ফ্যাব্রেগাস কিপার ভালদেস বলের ফ্লাইট বুঝতে না পারলেও এরিক আবিদাল হেড করে বিপদমুক্ত করেন। মেসি সেই বল ধরে ড্রিবল করে দুজনকে ছিটকে ফেলে এগিয়ে যান। পাস বাড়ান ভিয়ার দিকে বিপদ বুঝতে পেরে আর্সেনাল কিপার পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু কাজ হয়নি আলতো টোকায় বল জালে জড়ান ভিয়া।
গোল খেয়ে হতোদ্যম হয়নি আর্সেনাল বরং আরো গুছিয়ে উঠে। এর মধ্যে ২৮মিনিটে মেসির একটি গোল অফসাইডের কারনে বাতিল হয়। ২৯ মিনিটে পার্সির আরেকটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে মাঝ মাঠে বার্সেলোনাকে অগোছালো মনে হয়েছে। ইনিয়েস্তা ছিলেন নিষ্প্রভ। অবশ্য মাঝে মাঝে জাভির ঝলক দেখা যাচ্ছিল। অন্যদিকে লেফট ব্যাক দানি আলভেস ছিলেন যথেষ্ঠ উজ্জ্বল। ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় বার্সেলোনা।
বিরতির পর নতুন উদ্যমে শুরু করে আর্সেনাল। এসময় দুই সৃষ্টিশীল মিডফিল্ডার সামির নাসিরি ও ফ্যাব্রেগাস মাঝমাঠের নিয়ন্ত্রন নেন। ফলে আাক্রমণভাগকে অনবরত বল যোগান দিয়ে যান। ৫৭ মিনিটে ফ্যাব্রগাসকে ফাউল করে পিকে হলুদ কার্ড দেখেন। পরপর দুম্যাচ হলুদ কার্ডের কারনে দ্বিতীয় লেগে তাকে সাইডবেঞ্চে বসে কাটাতে হবে। ৬৫ মিনিটে ভালদেসের দক্ষতায় আবার রক্ষা পায় বার্সেলোনা। ৬৮ মিনিটে একটি হাফচান্স মিস করেন মেসি।
৭৮ মিনিটে একটি সংঘবদ্ধ আক্রমণ থেকে গোল পায় আর্সেনাল। উইং থেকে পাওয়া ক্রস চমৎকারভাবে হেড করে জালে পাঠান পার্সি। গোল পেয়ে আরো উজ্জীবিত হয়ে উঠে আর্সেনাল। ফলশ্রুতিতে প্রবলবেগে ঝাপিয়ে পড়ে প্রতিপক্ষের উপর।
কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ফলও পান। ৮৩ মিনিটে প্রায় মাঝমাঠ থেকে সামির নাসিরির দিকে লম্বা এক থ্রু বাড়ান পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলা ফ্যাব্রেগাস। থ্রু ধরে কিছুটা এগিয়ে তিনি পাস বাড়ান আগুয়ান স্ট্রাইকার আন্দ্রে আরশাভিনের দিকে কাল বিলম্ব না করে কিক নেন গোলে। ভালদেস কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়ায়। উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা এমিরেটস স্টেডিয়াম।
বাকিসময় কোনদলই আর গোল আদায় করতে পারেনি। বার্সোলোনার অর্জন বলতে মুল্যবান এক এ্যাওয়ে গোল। ৮ই মার্চ পরবর্তী লেগে তারা নিজেদের মাঠে খেলতে নামবে।
ম্যাচের কিছু উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যানঃ
অন টার্গেটে আর্সেনাল কিক নিয়েছে ৭টি, বার্সেলোনা ৫টি। কর্ণার পেয়েছে আর্সেনাল ৪টি, বার্সেলোনা ১টি। আর্সেনাল ফাউল করেছে ১৬বার, বার্সেলোনা ১৩ বার। আর্সেনাল হলুদ কার্ড পেয়েছে ৪টি, বার্সেলোনা ২টি। বল পজিশন আর্সেনাল ৩৯%, বার্সেলোনা ৬১%। আর অফ টার্গেটে দুদলই ৩টি করে কিক নিয়েছে।
ডিসক্লেইমারঃ গতরাতে খেলা দেখার পর এই পোস্ট লিখতে বসেছিলাম। অর্ধেক লেখার পর জুমের লিমিট শেষ হয়ে যায়। সকালে দুইবার অর্ধেক করে লেখার পরপরই বিদ্যুৎ বিভ্রাটে আর লেখা হয়নি। ক্রিকেট উম্মাদনার মধ্যে এই পোস্ট দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ রাত ১১:২৫