বাইরে থেকে এসে কেবলমাত্র ফ্রেশ হলাম।ঘড়িতে তখন নটা বাজে। আরাম কেদারায় বসে ছোট বোন বললাম মুড়ি,চানাচুর, ছোলা দিয়ে ভর্তা বানানোর জন্য। এই জিনিসটা আমার খুব প্রিয়। প্রায় প্রতিদিনই খাই। হঠাৎ বিকট শব্দে কিছু একটা বিস্ফোরণ ঘটল। বিস্ফোরণটা হলো ঠিক আমার জানালার পাশে। দখিনা বাতাসে ধোয়া আর বারুদের গন্ধ ভেসে আসতে লাগল আমার রুমে।
প্রথম ভেবেছিলাম বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার মনে হয় বিস্ফোরণ ঘটেছে। পরক্ষণেই আগুন লাগার ভয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসলাম। নিচে এসে ঠাহর করার চেষ্টা করলাম, বিস্ফোরণটা কোথায় হয়েছে। ততক্ষণে নিচে আশেপাশের ফ্ল্যাটের আরো অনেকেই জড়ো হয়েছে। দেখতে পেলাম পাঁচতলার জানালা দিয়ে তখনো ধোয়া বেরুচ্ছে। আমি থাকি ছয়তলায়। বাড়িটিই ছয়তলা বিশিষ্ট। আবার দৌড়ে উপরে উঠলাম। দেখলাম পাঁচতলার দরজা বন্ধ। দরজার বাইরে রক্তের ছোপছোপ দাগ। বুঝতে আর বাকি রইলনা কী ঘটেছে। দ্রুত বাড়িওয়ালাকে ফোন দিলাম। কিন্তু তখন তিনি ডাক্তারের চেম্বারে। ভদ্রলোক আবার ডায়াবেটিক। বললাম আঙ্কেল দ্রুত বাসায় আসুন একসিডেন্ট হয়েছে।
কিছুটা রিস্ক নিয়েই টান মেরে দরজা খুলে ফেললাম। তিনজন মহিলা ছাড়া কাউকে দেখতে ফেলাম না। বিস্ফোরণে ঘরের মধ্যে সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ঘরে আসবা বলতে তেমন কিছু নেই। ফ্লোরে একটা তোষক পাতা। আগুনে একপাশ পুড়ে গেছে। বোমার বানানোর সরঞ্জাম ছড়িয়ে আছে। টুকরো পাথর, মাঝারি সাইজের কৌটা ইত্যাদি। বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে আমি যখন নিচে নামি তার আগেই দুজন পুরুষ যারা বোমা বানানোতে ব্যস্ত ছিলেন তারা আহত অবস্থায় পালিয়ে যায়। আমি মহিলাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম মেঝেতে রক্তের দাগ কেন? তারা বললেন বটি দিয়ে পা কেটে ফেলেছ। এরমধ্যে রুমের ভিতর বাইরের অনেক মানুষ চলে এসেছে।
ইতোমধ্যে পুলিশকে খবর দেয়া হয়েছে। তিনজন মহিলাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমার বোনের মেয়ে ভয়ে এখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। পাঁচতলায় এই ভাড়াটিয়ারা চলতি মাসেই এসেছে। এক সপ্তাহের মধ্যেই এই দূর্ঘটনা। বড় আকারের বোমা যদি বিস্ফোরণ ঘটত তাহলে আমাদের মেঝে ধসে যেতে পারত। সৌভাগ্যবশত তেমন কিছু হয়নি।
সরকার প্রতিদিন গলা ফাটিয়ে বলে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের যেকোন সময়ের চেয়ে ভালো। এই যদি হয় অবসথা তবে আমাদের সাধারণ মানুষের জান-মালের নিরাপত্তা দিবে কে?
সর্বশেষ খবর হলো, পুলিশ এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করছে। ঘটনা যারা ঘটিয়েছে তাদের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি।
স্পটঃ মীরবাগ, মগবাজার।