১। প্রায় ৪ হাজার কি.মি দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে স্বাধীনতার পর থেকেই ভারতের ভূমিকা আগ্রাসনমূলক। বিএসএফ গড়ে প্রতি ৩ দিনে একজন করে বাংলাদেশী হত্যা করছে বলে তথ্য পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। এদের বেশীর ভাগই নিরীহ গ্রামবাসী। এমনকি ভারতের সীমান্তরক্ষীরা প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে নিরীহ গ্রামবাসীদের সম্পদ লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ ইত্যাদি জঘন্য কার্যকলাপ চালিয়ে যাচ্ছে।
২। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া তৈরী অব্যাহত রেখেছে।
৩। মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ ভারতকে বেরুবাড়ি হস্তান্তর করলেও, বাংলাদেশ এখনো ৩ বিঘা করিডোর ফেরত পায়নি। উপরন্তু, এ সব অঞ্চলের মানুষেরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হয়েও গত ৩৮ বছর যাবত উন্মুক্ত জেলখানায় বন্দী হিসেবে দিন কাটাচ্ছে।
৪। বাংলাদেশের সীমানায় জেগে উঠা তালপট্টি দ্বীপকে ভারত জোরপূর্বক দখল করে রেখেছে। নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে এখনো এদেশের হাজার হাজার একর জমি ভারতের দখলে রয়েছে।
৫। আন্তর্জাতিক নিয়ম নীতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভারত আমাদেরকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা ফারাক্কা বাঁধ, টিপাইমুখী বাঁধসহ উজানে আরও ডজন খানেক বাঁধ দিয়ে এদেশকে পুরোপুরি মরুভূমি করার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে। ভারতের 'আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প' বাস্তবায়িত হলে তা বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি ও অর্থনীতিতে ডেকে আনবে চরম বিপর্যয়। কমে যাবে নদীর নব্যতা, মিঠা পানির মাছের উৎপাদন হ্রাস পাবে, আর্সেনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করবে এবং ক্রমশঃ বাংলাদেশের বিশাল এলাকা পরিণত হবে ধূ ধূ মরুভূমিতে।
৬। চোরাকারবারীদের মাধ্যমে ভারত এদেশে মাদক, জালমুদ্রাসহ ভারতীয় বিভিন্ন নিম্নমানের পণ্যসামগ্রী ঠেলে দিচ্ছে। আর, অপরদিকে এদেশ থেকে পাচার হয়ে যাচ্ছে তেল ও সার। বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যায়, পিলখানা ট্রাজেডির পর সীমান্তে বিডিআরের অনুপস্থিতির সুযোগে এদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল ও সার ভারত ও মিয়ানমারে পাচার হয়ে গেছে। আর দেশে প্রবেশ করেছে মাদকসহ বিভিন্ন নিম্নমানের ভারতীয় পণ্যসামগ্রী।
৭। ভারত সবসময়ই এদেশীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসীদের আশ্যয়-প্রশ্রয় দিয়েছে। নানাভাবে উস্কে দিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামরে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনকে। ২০০৭ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলার সাথেও ভারতের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং সেই সাথে জেএমবি নেতাদের বহুবার ভারত যাওয়া আসার প্রমাণ মিলেছে।
৮। খোদ ভারতের মাটিতেই ভারতীয় কর্তৃপক্ষের নাকের ডগায় 'নিখিল বঙ্গ সংঙ্ঘের' ব্যানারে চলছে বাংলাদেশকে বিভক্ত করার এক জঘন্য ষড়যন্ত্র। সম্প্রতি কলকাতার বঙ্গসেনারা এদেশের ১৯ টি জেলা নিয়ে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ কেন্দ্রিক একটি প্রবাসী বঙ্গভূমি সরকার গঠনের প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছে। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তাদের শ্লোগান ছিল 'বঙ্গভূমি দখল চাই'। তারা ভারত সরকারের চোখের সামনে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এই হীন তৎপরতা চালাচ্ছে।
৯। বাংলাদেশের যুবসমাজকে ধ্বংস করার জন্য ভারত দীর্ঘ এই সীমান্ত অঞ্চলে অসংখ্য ফেনসিডিললের কারখানা তৈরী করেছে এবং অবৈধ উপায়ে তা বাংলাদেশে পাচার করছে। ফলে মাদকের মরণ নেশায় ধ্বংস হচ্ছে এ দেশের যুবসমাজ।
কিন্তু দূর্ভাগ্যজনকভাবে এদেশের বিরুদ্ধে ভারতের এত ষড়যন্ত্র ও অপতৎপরতার পরও বিগত ৩৮ বছর ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকার ভারতকে বন্ধুর মর্যাদায় আসীন করে তার প্রতি নতজানু পররাষ্ট্রনীতি অবলম্বন করেছে। শুধু তাই নয়, তারা বিভিন্ন সময়ে ভারতকে এদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সরাসরি হস্তক্ষেপেরও সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০০৯ রাত ১২:০৭