ছবি তোলার ব্যাপারে আমার আগ্রহ খুব বেশি। কিন্তু কখনো ভালো ছবি তুলতে পারিনি। আমার ভালো ছবিও কেউ তুলে দিতে পারেনি। এজন্য সবসময় আমার অতৃপ্তি লেগেই থাকে। কিন্তু আমি সবসময় চেষ্টা করি, ছবি তুললে সেটা যেন ভালো হয়।
এই ব্লগে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির অনেক টিপস আছে। আমি সেগুলো পড়েছিও। আজ দৈনিক প্রথম আলোতে এরকম একটা বড় লেখা এসেছে। মূলত: নিজের সংগ্রহের জন্যই কপি-পেস্ট করা। তারপরও যদি কেউ সরাসরি পড়তে চান, পড়তে পারেন।
প্রযুক্তি এগিয়েছে, তাই ক্যামেরা এখন হাতে হাতে। ছোট বড় মাঝারি ডিজিটাল ক্যামেরা এখন অনেকেই ব্যবহার করেন। এ ক্যামেরার যত্ন এবং ভাল ছবি তোলার নানা বিষয় নিয়ে এ আয়োজন।
ক্লিক ক্লিক ক্লিক!
পরামর্শ দিয়েছেন
ফটো সাংবাদিক পাভেল রহমান | তারিখ: ২১-০৫-২০১০
ভালো ছবি তোলার কৌশল
দিনের আলোতে ছবি তুলতে হলে সকালে অথবা বিকেলে ছবি তুললে ভালো হয়। সূর্য ওঠা থেকে দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এবং ডুবে যাওয়ার আগের দুই ঘণ্টার মধ্যে ছবি তোলা ভালো। তবে বিশেষ ঘটনা বা সংবাদচিত্রের ক্ষেত্রে এ নিয়ম মেনে চলা যায় না।
সবচেয়ে ভালো হয়, ভোরবেলা অথবা সন্ধ্যার আগে আগে ছবি তুললে। তখন ছবিতে অনেক ভালোভাবে আলোর ব্যবহার করা যায়। সকালে ও বিকালে সূর্যের আলো কিছুটা হেলে পড়ার কারণে আলো-ছায়ার পার্থক্য অনেক ভালোভাবে ধরা যায়।
সকালে বা বিকেলে মানুষের মুখোচ্ছবি (পোর্ট্রেট) তুললে ভালো ছবি পাওয়া যায়।
বিয়েবাড়িতে ছবি তুলতে হলে ফ্ল্যাশ লাইট কম ব্যবহার করুন। বিয়েবাড়িতে সাজগোজের ক্ষেত্রে মেকআপের ব্যবহার বেশি হওয়ায় ফ্ল্যাশের আলো দিয়ে ছবি তুললে ছবি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এ ক্ষেত্রে ক্যামেরার সঙ্গে থাকা (বিল্ট-ইন) ফ্ল্যাশ দিয়ে ছবি তুললে ছবি ভালো পাওয়া যাবে।
ছবি তোলার সময় ছবির পেছনে সাদা রং না রাখাই ভালো।
আপনি কী তুলবেন, সেটা সবার আগে আপনার মাথায় নিয়ে আসতে হবে। প্রথমেই ছবি তোলার বিষয়বস্তু ঠিক করতে হবে।
পোর্ট্রেটের ক্ষেত্রে আপনি যার ছবি তুলবেন, তার মুখের যে দিকটা দেখতে সুন্দর, সেদিকে খেয়াল করে ছবি তুলতে পারেন।
কোনো শিশুর ছবি তুলতে হলে তার আকারের (উচ্চতা) কথা চিন্তা করে ছবি তুলুন।
কোনো ব্যক্তি যদি রেগে থাকেন, সেই অবস্থায় ছবি না তোলাই ভালো। আনন্দময় অভিব্যক্তির ছবি তুললে যে কারোরই ছবি ভালো হবে।
কোনো অনুষ্ঠানের ছবি তুলতে হলে (বাড়িতে কারও নাচের ছবি) তার বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গির ছবি তোলার চেষ্টা করতে হবে। তা হলে কোনো একটি ভালো ছবি পেয়ে যাবেন।
গ্রুপ ছবিতে যেন সবাই সাবলীল থাকে, সেভাবে ছবি তুলবেন। যেন ছবিটায় একটা আনন্দময় অনুভূতি পাওয়া যায়।
ফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে হলে, যার ছবি তুলবেন সে যেন সাবলীল ও হাস্যোজ্জ্বল থাকে।
বেশি আলোতে ছবি তুললে, যার ছবি তুলবেন তার চোখেমুখে আলো পড়ে খারাপ যাতে না দেখায় সেদিকে লক্ষ রাখুন।
দর্শনীয় স্থাপনার ছবি তুলতে গেলে (সংসদ ভবন, শহীদ মিনার) স্থাপনা থেকে কিছুটা দূরে এসে ছবি তুললে ভালো হয়। স্থাপনা থেকে দূরে এসে ছবি তুললে সেটির আশপাশের অনেক কিছুই ভালোভাবে তোলা যাবে।
মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তুলতে গেলে পুরো দৃশ্য আসে—এমন জায়গা থেকে ছবি তুললে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
বাইরে সূর্যের আলোতে ছবি তুলতে হলে লক্ষ রাখবেন, ক্যামেরার লেন্সে যেন কোনোভাবেই আলো প্রবেশ না করে।
সমুদ্রের পানিতে সূর্যের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরায় জুম লেন্স ব্যবহার করতে পারেন। এতে সূর্যের অনেক ভালো ছবি তোলা যাবে।
কক্সবাজারে সূর্য ওঠার সময় থেকে সকাল ১০টার মধ্যে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
প্রখর রোদে (বেলা ১১টা থেকে বিকেল তিনটা পর্যন্ত) ছবি না তোলাই ভালো।
গ্রুপ ছবি তোলার সময় ক্যামেরায় ওয়াইড লেন্স ব্যবহার করলে ভালো।
দূরের ছবি তোলার জন্য টেলিলেন্স ব্যবহার করলে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যায়।
কোনো পোর্ট্রেট বা শিশুর ভালো ছবি তুলতে হলে, তাকে না জানিয়ে ছবি তুলুন।এতে স্বাভাবিক ছবি পাওয়া যাবে। তাই যার ছবি তুলবেন, তাকে না জানিয়ে তুলুন।
ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তুলতে চাইলে, ছবি তোলাকে ভালোবাসতে হবে।
ছবি নিয়ে সৃষ্টিশীল কাজ করতে চাইলে অন্তর্দৃষ্টি অনেক বেশি প্রখর হওয়া প্রয়োজন।
আপনি যে বিষয়টি নিয়ে ছবি তুলতে চান, সেটা আগে থেকে ঠিক করে নিন।
ছবিতে কী রাখবেন, কী রাখবেন না, সেটা আগে থেকে পরিষ্কার চিন্তা করতে হবে।
কারও পোর্ট্রেট সরাসরি না তোলার চেয়ে কিছুটা কৌণিকভাবে ডানে-বাঁয়ে ঘুরিয়ে তুললে ছবিটা খুব ভালো হবে।
যার ছবি তুলবেন, তার চোখে যদি চশমা থাকে, খেয়াল রাখুন চশমা থেকে আলোর প্রতিফলন যেন না হয়।
রাতে ছবি তোলার সময় ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন। আলো থাকলে ফ্ল্যাশ ব্যবহার না করে ছবি তোলার চেষ্টা করুন। তখন আইএসও বাড়িয়ে দিতে পারেন।
অনেকে ২১ ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারের ছবি তুলতে পছন্দ করেন। শহীদ মিনারের ছবি তুলতে হলে ভোরের আগে যেতে হবে। এ সময় অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
আলোকসজ্জার ছবি তুলতে চাইলে একেবারে অন্ধকারে না গিয়ে আকাশের আলো বা অন্য আলোর সঙ্গে তুললে ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
পয়লা বৈশাখে অনেক বেশি রঙের ব্যবহার করা হয়। তাই মানুষ, পোশাক, মুখোশ বা শোভাযাত্রার ছবি তোলার জন্য সকালটাকে বেছে নিতে হবে।
যার ছবি তুলবেন, তার থেকে যেন পটভূমির (ব্যাকগ্রাউন্ড) আলো বেশি উজ্জ্বল না হয়।
কারও পোর্ট্রেট তুলতে চাইলে, ঘুমের পরে ছবি তুললে অনেক ভালো ছবি পাওয়া যাবে।
পোর্ট্রেট তোলার সময় লক্ষ রাখতে হবে, যার ছবি তুলবেন সে যেন কখনো মূর্তির মতো হয়ে না থাকে। তাকে সাবলীল রাখার চেষ্টা করুন।
পেশাদার আলোকচিত্রি হতে চাইলে অনেক বেশি ছবি তোলার দরকার নেই। কম ছবি তোলার মধ্যে আপনার চাহিদামতো ছবিটি পেয়ে যেতে পারেন।
বিশেষ পেশা বা কারণ ছাড়া অনেক বেশি ছবি তুললে আপনার সৃষ্টিশীলতা কমে যেতে পারে। তাই কম ছবি তুলে উপযুক্ত ছবিটি নির্বাচন করাই ভালো।
ডিজিটাল ক্যামেরার কথা
সাধারণ ডিজিটাল ক্যামেরা বা ডিজিক্যামে ছবি বা ভিডিও ধারণ করা হয় ইলেকট্রনিক ইমেজ সেন্সর দিয়ে। ডিজিটাল ক্যামেরায় ছবি ধারণের তিন ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো নির্ভর করে ক্যামেরার যন্ত্রাংশ, রং ও ফিল্টারের ওপর। প্রথম পদ্ধতিটিকে বলে সিঙ্গেল শট। এটি নির্ভর করে কত সময় পরপর ক্যামেরার আলো ক্যামেরার লেন্স থেকে ক্যামেরার সেন্সরের ওপর পড়ে। সিঙ্গেল শট একটি সিসিডি (চার্জড কাপলড ডিভাইস) ও বায়ার ফিল্টার মোজাইক ব্যবস্থায় কাজ করে অথবা তিনটি আলাদা সেন্সর ব্যবহার করে কাজ করে। দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হলো মাল্টি শট। এ পদ্ধতিতে ছবি তোলার ক্ষেত্রে যে ছবিটি তোলা হবে, তার কাছে সেন্সরটি ধারাবাহিকভাবে তিনবার প্রদর্শিত হয়। তৃতীয়টিকে বলা হয় ইমেজ স্ক্যানিং পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে সেন্সরটি ডেস্কটপ স্ক্যানারের মতো ফোকাল প্ল্যানের চারদিকে ঘুরতে থাকে।
ক্যামেরার যত্নআত্তি
ক্যামেরা কেনার আগে দেখতে হবে কোন ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কিনছেন। সেই ব্র্যান্ডের ক্যামেরার জন্য বাংলাদেশে পরিবেশক কে, পরিবেশকের নিজস্ব সার্ভিস সেন্টার আছে কি না এবং সেই সার্ভিসিং সেন্টারে দক্ষ জনবল আছে কি না, সেটা জেনে ক্যামেরা কেনা ভালো।
ক্যামেরায় কী কী সুযোগ-সুবিধা আছে, ক্যামেরার গুণগত মান দেখে নেওয়া উচিত। আপনার চাহিদা অনুযায়ী ক্যামেরা কিনছেন কি না, সেটা ঠিক করুন।
বাংলাদেশ যেহেতু জল-কাদা, ধুলা-বালিতে পরিপূর্ণ, তাই এসব থেকে ক্যামেরা দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
ক্যামেরা কেনার সময় ব্যাগ বা ক্যামেরা রাখার খাপ কিনে নিন, ক্যামেরা বহন করার জন্য।
পানি ও তরলজাতীয় পদার্থ ক্যামেরার বড় শক্র। বিশেষ করে সমুদ্রের নোনা পানি।
সমুদ্রের পানি থেকে ক্যামেরা সুরক্ষিত করে, তবেই সমুদ্রসৈকতে আনন্দ করুন। কেননা সমুদ্রের পানিতে ক্যামেরা পড়ে গেলে সেটি আর কোনো দিন ঠিক হয় না।
ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় রিস্ট বেল্ট হাতে বা কাঁধের সাঙ্গে আটকে রাখুন। এতে ক্যামেরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেক কম থাকে।
প্রয়োজন হলে পানি নিরোধক (ওয়াটার প্রুফ) খাপ ব্যবহার করতে পারেন। বাজারে এখন অনেক ওয়াটার প্রুফ ক্যামেরাও পাওয়া যায়। এ ক্যামেরা ব্যবহার করার সময় পানিতে পড়ে গেলেও নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে।
ঘন কুয়াশার মধ্যে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। এতে কুয়াশার জলকণা ঢুকে ক্যামেরা নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
শীত বা বর্ষার সময় শুষ্ক স্থানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ক্যামেরা রাখুন।
ক্যামেরা ভালো রাখার জন্য সিলিকন বা সিলিকা জেল ব্যবহার করতে পারেন। সিলিকন জেল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে কিছুটা সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। অনেক সময় সিলিকন জেল ক্যামেরার মধ্যে প্রবেশ করলে ক্ষতি হতে পারে।
ক্যামেরা ব্যবহার করার পর ব্যাটারি খুলে রাখা উচিত। ব্যাটারি খুলে ক্যাপসহ ব্যাটারি সংরক্ষণ করে রাখুন।
ভ্রমণের সময় ক্যামেরার ব্যাটারি খুলে রাখাই ভালো। ক্যামেরায় ব্যাটারি লাগানো থাকলে যেকোনো সময় ক্যামেরা চালু হয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ক্যামেরা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।
লক্ষ রাখা উচিত, ব্যাটারি চার্জ করার সময় পূর্ণ চার্জ (ফুল) হয়েছে কি না।
ক্যামেরা একটি সংবেদনশীল যন্ত্র। তাই ক্যামেরা এক হাতে ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায় ছবি তোলার সময় ক্যামেরায় অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ক্যামেরায় সমস্যা দেখা দিলে নিজে ঠিক করার চেষ্টা না করে ভালো সার্ভিসিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া উচিত।
মেমোরি কার্ড ব্যবহার করার সময় বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত।
কোথাও বেড়াতে গেলে সঙ্গে একাধিক বা বেশি ধারণক্ষমতার মেমোরি কার্ড রাখা উচিত।
ক্যামেরার ছবি যত দ্রুত সম্ভব কম্পিউটার বা অন্য কোনো স্থানে কপি করে সংরক্ষণ করে রাখা উচিত।
বর্তমানে বাজারে কমবেশিসব স্টিল ক্যামেরায় ভিডিওচিত্র ধারণের সুবিধা আছে। স্টিল ক্যামেরায় একটাকা বেশি সময়ের ভিডিও ধারণ করা উচিত নয়।
স্টিল ক্যামেরায় একনাগাড়ে সবোর্চ্চ পাঁচ থেকে দশ মিনিট রেকর্ড করা ভালো। এর চেয়ে বেশি রেকর্ড করলে ক্যামেরার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। ভিডিও রেকর্ড করলে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যায় এবং ব্যাটারির স্থায়িত্ব অনেক কমে যায়।
ব্যবহারকারী লক্ষ রাখবেন, ক্যামেরার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ব্যাটারি, চার্জার, মেমোরি কার্ড এবং অন্যান্য যন্ত্রাংশের কোনো বিক্রয়োত্তর সেবা দেয় না।
পরামর্শ দিয়েছেন
আবদুল্লাহেল সাফী, মহাব্যবস্থাপক
জেএএন অ্যাসোসিয়েটস
ডিএসএলআর ক্যামেরার কথা
ডিএসএলআর বা ডিজিটাল সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স ক্যামেরা মূলত পেশাদার আলোকচিত্রিরা ব্যবহার করেন থাকে। এর গঠন সাধারণ মানের ডিজিটাল ক্যামেরার চেয়ে কিছুটা আলাদা। এ ধরনের ক্যামেরা তৈরিতে যান্ত্রিক আয়না (বিশেষ ধরনের আয়না) ও পেন্টাপ্রিজম নামের বিশেষ ধরনের প্রিজম ব্যবহার করা হয়। ক্যামেরা দিয়ে যে ছবিটি তোলা হবে, তার আলো যান্ত্রিক আয়নার মাধ্যমে ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে দেখা যায়। যে ছবিটি তোলা হবে তার আলো লেন্সের মধ্য দিয়ে রিফ্লেক্স মিররে আসে। এ ক্ষেত্রে রিফ্লেক্স মিররটি সব সময় পেন্টাপ্রিজমের সঙ্গে ৪৫ ডিগ্রি কোণে থাকতে হবে। রিফ্লেক্স মিরর থেকে অনুজ্জ্বল ফোকাসিং স্ক্রিন ও কনডেনসিং লেন্স হয়ে পেন্টাপ্রিজমে চলে যায়। সেখান থেকে ক্যামেরা ব্যবহারকারী আইপিসের মাধ্যমে ছবি দেখতে পায়। ছবির ফোকাসিং কয়েক ধরনের হতে পারে। অটোফোকাস হলে ব্যবহারকারীকে লেন্স নাড়াতে হবে না।আবার ক্যামেরার শাটার কিছুটা চাপ দেওয়া হলেও লেন্স তার ফোকাস ঠিক করা শুরু করতে পারে। যখন ক্যামেরার শাটার চাপ দেওয়া হয়, তখন রিফ্লেক্স মিররটি সোজা হয়ে যায় এবং ইমেজ সেন্সর ছবিটিকে সাটারের মধ্যে দিয়ে নিয়ে যায়।
লাল চোখ দূর করুন
সাধারণত রাতের বেলায় কম আলোতে ফ্ল্যাশ দিয়ে মানুষের মুখমণ্ডল বরাবর ছবি তুললে চোখের মণি লাল হতে দেখা যায়। মণি লাল হয়ে যাওয়াকে রেড-আই এফেক্ট বলে। কম আলোয় মানুষের চোখের ডায়াফ্রাম বড় হয়ে খুলে থাকে। এ অবস্থায় ফ্ল্যাশের আলো চোখের ওপর পড়লে খোলা আইরিসের লাল ছবি দেখা যায়।
দূর করার উপায়:
ছবি তোলার সময় যদি ঘরের অন্যান্য অংশে মোটামুটি উজ্জ্বল কোনো আলোক-উৎস থাকে অথবা ক্যামেরার ফ্ল্যাশ যদি লেন্স বরাবর না থেকে তুলনামূলক দূরে থাকে তবে রেড আই এফেক্ট হবে না। এ ছাড়া এখনকার অধিকাংশ ডিজিটাল ক্যামেরাতে এ ধরনের এফেক্ট কমানোর অপশন থাকে। ছবি তোলার আগে সেটি চালু করে নিতে হবে।
কোন ফরম্যাট কেন?
ডিজিটাল ক্যামেরায় আগে থেকে নির্ধারণ করা (ডিফল্ট) ফরম্যাট হচ্ছে জয়েন্ট ফটোগ্রাফি এক্সপার্টস গ্রুপ (জেপিইজি)।
যেকোনো ছবি দেখতে, সম্পাদনার ক্ষেত্রে জেপিইজি ফরম্যাট ভালো।
সাধারণভাবে ছবি তোলা, ছবি আদান-প্রদান করার জন্য ভালো ফরম্যাট হচ্ছে জেপিইজি। তবে গ্রাফিকস ও যেকোনো মুদ্রণের জন্য ভালো ফরম্যাট হচ্ছে ট্যাগড ইমেজ ফাইল ফরম্যাট (টিআইএফএফ)।
ই-মেইলে ছবি পাঠাতে হলে জেপিইজি ফরম্যাটে পাঠানো ভালো। এর কোয়ালিটি ৬ ও মিডিয়াম রাখা উচিত।
যেকোনো পরস্থিতিতে ভালো ছবি তুলতে স্বয়ংক্রিয় হোয়াইট ব্যালান্স ব্যবহার করা ভালো। বিশেষ ছবি বা দক্ষ আলোকচিত্রী নিজে হোয়াইট ব্যালান্সের মান ঠিক করে নিতে পারেন।
র (আরএডব্লিউ) ফরম্যাটে ছবি তুলে পরে যেকোনো ফরম্যাটে নেওয়া যায়। ছবির আকার ইচ্ছেমতো বাড়ানো বা কমানো যায়। র ছবির ফাইলের আকার বেশ বড় হয়। তাই র ফরম্যাটে ছবি তুলতে বেশি ধারণক্ষমতার মেমোরি কার্ড লাগে।
র ফরম্যাটে সৃজনশীল ছবি তোলার জন্য পাওয়া যায় অপার স্বাধীনতা।
ছবি সম্পাদনার জন্য জনপ্রিয় সফটওয়্যার হচ্ছে অ্যাডোবি ফটোশপ।
র ফরম্যাটে ছবি তুললে তা সম্পাদনার ক্ষেত্রে ফটোশপের সিএস সংস্করণ লাগবে। এ ছাড়া ক্যামেরার সঙ্গে দেওয়া সফটওয়্যার দিয়েও র ছবি সংগ্রহ ও সম্পাদনা করা যায়।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরায় র মোডের নামের ভিন্নতা রয়েছে।
প্রতিটি ব্রাউজারে খোলে এমন আরেকটি ফরম্যাট হচ্ছে পিএনজি।
ছবি সংরক্ষণের আরেকটি ফরম্যাট হচ্ছে জিআইএফ। এই ফরম্যাটে তোলা ছবি পরে অ্যানিমেশনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে।
যেকোনো ছবি সংরক্ষণের ক্ষেত্রে আছে বিট ম্যাপ ইমেজ (BMP) ফরম্যাট।
ছবি সম্পাদনার ক্ষেত্রে প্রতিটি সফটওয়্যারের নিজস্ব ফরম্যাট রয়েছে।
যেকোনো ছবি না খুললে কিংবা কোনো ফরম্যাট না দেখালে তাতে নামের পাশে (.JPEG) লিখে দিলে তা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খুলবে।
ফিক্সড ফোকাসের ক্যামেরায় স্বয়ংক্রিয় উন্নত ব্যবস্থা রয়েছে, যাতে ভালো ছবি তোলা যায়।
যত্ন ও সতর্কতা
ক্যামেরা ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি যথেষ্ট মূল্যবান হয়ে থাকে। কোনো কারণে এটি অকার্যকর হয়ে গেলে সব ক্ষেত্রে সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব নাও হতে পারে।
কম্পিউটার অথবা টিভির সঙ্গে ক্যামেরা লাগানোর আগে দেখে নিন ুবিদ্যুৎ সংযোগ ‘আর্থিং’ করা আছে কি না। কারণ হঠাৎ বিদ্যুৎ-প্রবাহের হার কমবেশিহলে ক্যামেরার ক্ষতি হতে পারে।
কড়া রোদে ক্যামেরা রাখবেন না।
আঘাত, চোট, ঘষা বা ঝাঁকুনি লাগাবেন না।
রাসায়নিক পদার্থ বা পানি, ঘাম, তেল, অতিরিক্ত তাপমাত্রা ক্ষতিকর।
মেমোরি কার্ডের জন্য বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় ক্ষেত্র ক্ষতিকর।
বিদ্যুতের ভুল প্রবাহ ক্ষতিকর।
সঠিকভাবে সমন্বয় করা যায় না এমন যন্ত্রাংশ জোর করে ব্যবহার করবেন না।
ভুল পদ্ধতি বা শক্তি প্রয়োগ করে কোনো কাজ করার চেষ্টা করা ভালো না।
ক্যামেরা ব্যবহারের সময় বেল্টটি হাতে অথবা গলায় ঝুলিয়ে রাখা উচিত।
অযথা ক্যামেরার কোনো অংশ টানাটানি, ঘোরানো বা বারবার খোলা-বন্ধ করা হলে প্যাঁচ কেটে যেতে পারে অথবা গুরুত্বপূর্ণ অংশ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
বোতাম আছে এমন কাপড় পরে ক্যামেরা ব্যবহার না করা ভালো। কারণ ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে রাখার সময় বোতাম থেকে ক্যামেরার এলসিডি পর্দায় ঘষার দাগ পড়তে পারে।
পিক্সেল আর মেগাপিক্সেল
ডিজিটাল ক্যামেরার কথা এলেই সবার আগে প্রশ্ন আসে ক্যামেরাটি কত মেগা পিক্সেলের। পিক্সেলের হিসাব করে ব্যবহারকারী তার ডিজিটাল ক্যামেরার মান যাচাই করতে পারে। পিক্সেল শব্দটির অর্থ হলো পিকচার এলিমেন্ট বা ছবির অংশবিশেষ। পিক্স শব্দটি এসেছে ‘পিকচার’ থেকে এবং এল শব্দটি এসেছে ‘এলিমেন্ট’ থেকে। এই দুয়ে মিলে পিক্সেল। ডিজিটাল ছবির ক্ষেত্রে পিক্সেল ছবিটির সবচেয়ে ছোট অংশ।
এ ছোট অংশ মিলেই ছবিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। একেকটি পিক্সেল পূর্ণাঙ্গ ছবিকে আকার দেয়, তাই পিক্সেল যত বেশি হয় ছবির মান তত ভালো হয়। ডিজিটাল ছবিতে পিক্সেল দ্বিমাত্রিক গ্রিড আকারে সাজানো থাকে।
একটি পিক্সেল খুব ছোট, তাই এটি খালি চোখে দেখা যায় না। তবে ছবিকে জুম করা হলে পিক্সেল আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায়। একেক ধরনের স্ক্রিন একেক ধরনের গ্রিড ব্যবহার করে। ফলে ছবির তারতম্য লক্ষ করা যায়। পিক্সেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহূত হয় মেগাপিক্সেল হিসেবে। এক মেগাপিক্সেল ১০ লাখ পিক্সেল মিলে তৈরি হয়।
ক্যামেরা কেনার আগে...
ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে এবং কাজ অনুযায়ী ক্যামেরা কেনা ভালো।
শৌখিন ব্যবহারকারীরা ফিক্সড লেন্সের ক্যামেরা ১০ থেকে ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে কিনতে পারেন।
পেশাদার বা সৃজনশীল আলোকচিত্রীরা ডিজিটাল এসএলআর (সিঙ্গেল লেন্স রিফ্লেক্স) ব্যবহার করবেন। এসব ক্যামেরার দাম শুরু হয় ৪৫ হাজার টাকা থেকে।
ডিএসএলআর ক্যামেরায় লেন্স পরিবর্তন করে করে ইচ্ছেমতো ছবি তোলার স্বাধীনতা এ ক্যামেরায় আছে।
ক্যামেরা কেনার ক্ষেত্রে অবশ্যই ভালো ব্র্যান্ড দেখে কেনা উচিত। বিশেষ করে যেসব ক্যামেরার অনুমোদিত সার্ভিসিং সেন্টার আছে, সেসব ব্র্যান্ডের ক্যামেরা কেনা ভালো।
ক্যামেরার মেগাপিক্সেল যত বেশি হবে, ছবির রেজুলেশন তত বেশি হবে।
ক্যামেরা কত মেগাপিক্সেলের হবে তা কাজ অনুযায়ী নির্বাচন করে নিন।
ডিজিটাল ক্যামেরার খুঁটিনাটি
ক্যামেরা কেনার আগে এর ব্যবহার সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা নিতে চেষ্টা করুন।
যেকোনো নতুন মডেল আগের সব মডেলের চাইতে সব সময় ভালো নাও হতে পারে।
ক্যামেরা কেনার আগেই ঠিক করুন এটি কী ধরনের কাজে ব্যবহার করবেন।
ক্যামেরা সম্পর্কে আপনার খুব ভালো ধারণ না থাকলে কেনার সময় অভিজ্ঞ আলোকচিত্রীর সাহায্য নিন।
বিক্রয়োত্তর সেবা দিয়ে থাকে এমন প্রতিষ্ঠান অথবা ওই নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের দোকান থেকেই ক্যামেরা কেনা উচিত।
যে কাজের উদ্দেশ্যে ছবিটি তুলছেন তার উপযোগী ফাইল ফরম্যাট ও রেজুলেশন নির্ধারণ করুন।
ক্যামেরা, লেন্স বায়ুরোধী বাক্সে জলীয়বাষ্প শোষণকারী পদার্থ (ডেসিকেটিং এজেন্ট) দিয়ে সংরক্ষণ করা উচিত।
লেন্সে ধুলো পড়লে হাত দিয়ে, ঘষে বা ফুঁ দিয়ে সরানোর চেষ্টা না করে ব্লোয়ার ব্যবহার করুন। ব্লোয়ার না থাকলে নরম কাপড় (যেমন ফ্লানেল) ব্যবহার করুন।
শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর থেকে বের হওয়ার ১৫-২০ মিনিট আগে ক্যামেরাটি ব্যাগে ভরে রাখুন। ক্যামেরা খোলা অবস্থায় বের করা হলে লেন্সে বিন্দু বিন্দু পানি জমা হয়। ফলে প্রথমে কিছুটা ঝাপসা মনে হবে এবং পরে লেন্সে স্থায়ী দাগ পড়তে পারে।
কম্পিউটারে ছবি কপি করার সময় সরাসরি ক্যামেরা ব্যবহার না করে কার্ড রিডার ব্যবহার করা ভালো।
বাইরে কোথাও যাওয়ার আগে ক্যামেরা এবং এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতির একটি তালিকা তৈরি করুন। তালিকা দেখে সেগুলো একসঙ্গে রাখলে ভুলে ফেলে আসার আশঙ্কা কম থাকে।
মেমোরি কার্ডের ধারণক্ষমতা সীমিত। একসঙ্গে একাধিক ছবি তোলার জন্য রেজুলেশন কমিয়ে ছবি তোলা হলে পরে সেটি কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না।
বেশি রেজ্যুলেশনের একটি ছবি প্রয়োজনে রেজুলেশন কমিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কম রেজ্যুলেশনে তোলা কোনো ছবি বেশি রেজুলেশন দিয়ে ব্যবহার করতে চাইলে কখনোই ভালো মান পাওয়া যাবে না।
ব্যবহার শেষে ক্যামেরা ব্যাগে ভরে রাখুন। কারণ ক্যামেরা ও এর আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি মূল্যবান হয়ে থাকে। অযথা বাইরে ফেলে রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
আলোকচিত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এবং এ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট থেকে পরামর্শগুলো সংগ্রহ করেছেন তারিকুর রহমান খান, নাসির খান, নুরুন্নবী চৌধুরী ও ফেরদৌস আহমেদ
মূল লেখার লিংক