somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সুখবর: বাংলাদেশের সংবিধান আবার সেকুলার হয়ে উঠলো

২৯ শে জুলাই, ২০১০ বিকাল ৪:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম আলো'র খবরের উল্লেখযোগ্য অংশগুলি:

সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও তৎপরতা নিষিদ্ধ থাকাসংক্রান্ত বিধান পুনরুজ্জীবিত করেছেন।

আপিল বিভাগ ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে এনেছেন। পুনঃস্থাপিত হয়েছে বাঙালি জাতীয়তাবাদও। তবে পাসপোর্ট ও অন্যান্য নথিপত্র সংশোধনের ঝক্কি-ঝামেলা ও মানুষের দুর্ভোগের কারণ দেখিয়ে নাগরিকত্বের পরিচয় ‘বাংলাদেশি’ রাখা হয়েছে।


ধর্মভিত্তিক দল থাকবে না: বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মসংক্রান্ত কয়েকটি বিধান ছিল। পঞ্চম সংশোধনীতে তা বিলোপ করা হয়। হাইকোর্টের রায়ে বিসমিল্লাহ সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি। আইনমন্ত্রী মনে করেন, এটি সংবিধানের অংশ নয়।

মূল অনুচ্ছেদে লেখা ছিল, সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্র দ্বারা কোনো ধর্মকে রাজনৈতিক মর্যাদাদান, ধর্মের অপব্যবহার, ধর্ম পালনের কারণে ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বিলোপ করা হবে। এখন ১২ অনুচ্ছেদ ফিরে এল। তবে এই অনুচ্ছেদটি রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি বিভাগে। তাই এর কোনো লঙ্ঘন ঘটলে তা আদালতের মাধ্যমে বলবৎযোগ্য হবে না।
কিন্তু ৩৮ অনুচ্ছেদের বিলুপ্ত অংশ ফিরে আসায় ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে।

পঞ্চম সংশোধনীতে এটিও বিলোপ করা হয়। এখন ধর্মীয় নামযুক্ত বা ধর্মভিত্তিক কোনো সমিতি বা সংঘ গঠন করা বা তার সদস্য হওয়ার বা অন্য কোনো প্রকারে তার তৎপরতায় অংশ নেওয়ার অধিকার কোনো নাগরিকের থাকবে না।

প্রস্তাবনা: সংবিধানের প্রস্তাবনাকে আপিল বিভাগ বলেছেন, ধ্রুবতারা। এর মানে হলো প্রস্তাবনা রাষ্ট্র ও তার জনগণকে পথ দেখায়। প্রস্তাবনা হলো সংবিধানের অন্যতম মৌলিক কাঠামো। সংসদও এটা বদলাতে পারে না। মূল সংবিধানের প্রস্তাবনায় একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অংশগ্রহণকে ‘জাতীয় মুক্তি’ ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের লক্ষ্যে পরিচালিত বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীতে জাতীয় মুক্তি ও জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম মুছে ‘জাতীয় স্বাধীনতা’ শব্দ প্রতিস্থাপন করা হয়। মনে করা হয়ে থাকে, এর মাধ্যমে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে কয়েক দশকের ‘মুক্তির সংগ্রাম’কে অস্বীকার করা হয়েছিল। এখন আবার তা আগের অবস্থায় ফিরবে। এ প্রস্তাবনাতেই লেখা ছিল, জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও প্রাণোৎসর্গের চেতনা ছিল চারটি। এগুলো হবে সংবিধানের মূলনীতি। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। পঞ্চম সংশোধনীতে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেওয়া হয়। সমাজতন্ত্র শব্দটি রেখে একটি ব্যাখা দেওয়া হয়। বলা হয়, সমাজতন্ত্র মানে হবে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার। আর নতুন করে এখানে যোগ করা হয়, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, এখন তা থাকবে না। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাই হবে বাংলাদেশ সংবিধানের চার মূলনীতি। সংবিধানের ৮ অনুচ্ছেদে এই চার মূলনীতি লেখা ছিল। বলা ছিল, এই চার মূলনীতি হবে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলসূত্র। এমনকি আইন ও সংবিধান ব্যাখ্যারও সূত্র হবে এই চারটি বিষয়। কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীতে এই অনুচ্ছেদটিতেও পরিবর্তন আনা হয়। বলা হয়, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস হবে যাবতীয় কার্যাবলির ভিত্তি। এখন এটিও আর থাকল না।

বাঙালি জাতীয়তাবাদ: বাহাত্তরের মূল সংবিধানের ৯ অনুচ্ছেদের শিরোনাম ছিল জাতীয়তাবাদ। এখানে লেখা ছিল ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্ত্বাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’ এটি অবিকল ফিরে এল। পঞ্চম সংশোধনীতে এটি সম্পূর্ণ বিলোপ হয়। বসানো হয় একটি নতুন অনুচ্ছেদ। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের সঙ্গে একমত হন যে বিদ্যমান অনুচ্ছেদটি থাকা নিরর্থক। বর্তমানে এতে স্থানীয় শাসনসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে উৎসাহ দান এবং এতে কৃষক, শ্রমিক ও নারীদের বিশেষ প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার বিষয়ে বলা আছে। বাহাত্তরের সংবিধানের ১০ অনুচ্ছেদটি বিলোপ করা হয়েছিল। এতে বলা ছিল, ‘মানুষের ওপর মানুষের শোধন হইতে মুক্ত ন্যায়ানুগ ও সাম্যবাদী সমাজ লাভ নিশ্চিত করিবার উদ্দেশে সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে।’ কিন্তু পঞ্চম সংশোধনীতে লেখা হলো, জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করিবার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে।

পররাষ্ট্র: পঁচাত্তরের পর বাংলাদেশকে রাতারাতি একটি ইসলামি প্রজাতন্ত্রে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। মূল সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদ পূর্ণ বহাল রেখে পঞ্চম সংশোধনীতে একটি বাক্য যুক্ত করা হয়। এতে বলা হয়, ‘রাষ্ট্র ইসলামী সংহতির ভিত্তিতে মুসলিম দেশসমূহের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সম্পর্ক সংহত, সংরক্ষণ ও জোরদার করিতে সচেষ্ট হইবেন।’ হাইকোর্ট এই বাড়তি বাক্যটি বিলোপ করেছেন। আপিল বিভাগ এ সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন।

যত তাড়াতাড়ি সম্ভব: আপিল বিভাগের দীর্ঘ রায়ে সংবিধান সংশোধনে নির্দিষ্টভাবে শুধু একটি ক্ষেত্রে জোরালো আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়েছে। বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলাম লিখেছেন, ‘সংবিধানে বিচার বিভাগের কী অবস্থা, তার উল্লেখ না করলে আমাদের সিদ্ধান্ত অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। সেটি হলো বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ১১৫ ও ১১৬ অনুচ্ছেদ অবিকল পুনরুজ্জীবিত করা দরকার। নইলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার পূর্ণ অর্জন সম্ভব নয়। আমাদের একান্ত আশা, সংসদ এই দুটি অনুচ্ছেদকে যত দ্রুত সম্ভব বাহাত্তরের সংবিধানে
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×