মেয়েটা প্রায় আধাঘন্টা যাবত অপেক্ষা করছে , রাস্তার চা ওয়ালাটা একটু পর পরই তাকায় আর মুচকি হাসে ।একটু সামনে বাইক থামিয়ে আরেকজন আয়না দিয়ে তাকাচ্ছে । রাস্তার ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই মেয়েটির উপর যেন সুযোগ পেলেই ঝাপিয়ে পড়বে হায়নার মত । মেয়েটি এরকম তাকিয়ে থাকা দেখতে দেখতে অভ্যস্ত । তাও পরনে নীল শাড়িটা ঠিকঠাক করছে বারবার ।
অবশেষে সামনে কালো গাড়িটি এসে থামল ।গ্লাস নামিয়েই ছেলেটা কান ধরে দূর থেকেই সরি বলছিল ।ছেলেটির জন্মদিন, তাই আজ মেয়েটি ঝগড়া করবে না ।গাড়িতে বসে পড়ল সে ।হাতে থাকা আইফোনের ব্যাগটা ছেলেটিকে ধরিয়ে দিল ।
- কি দরকার ছিল এটার ?
- আমি কি সামান্য গিফট দিতে পারি না ? সবসময় তুমিই দিবা?
ছেলেটা কিছু বলল না, মুচকি হেসে ব্যাগটা সাইডে রেখে দিল ।
………………………………………………………………………………………………………………………………………..
ভার্সিটি থেকে বাসায় এসেই শার্টের বোতাম কয়েকটা খুলেই বিছানায় গা এলিয়ে দিল ছেলেটি । বার বার চোখ যাচ্ছে ফোন এর ঐ কালো স্ক্রিন এ । গতকাল দেখা করার পর থেকেই মেয়েটির কোনো কল ,এসএমএস নেই । ফোন অফ ।ভুত ভবিষ্যতের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ লেগে এল ছেলেটির ।
চোখ খুলল ফোন এর রিং এ । unknown নাম্বার । রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে মেয়েটির কাদো কাদো আওয়াজ ।
- সরি কথা বলতে পারি নি ,ঝামেলা হয়েছিল ।
- কি হয়েছে , তোমার ভয়েস এমন কেন ?
- উমমম.........কাল তোমার সাথে দেখা করে আসার পথে আব্বু যে নতুন ফোন কিনে দিয়েছিল ওটা চুরি হয়ে গেছে । বুঝতেছি না কিভাবে ,বাস থেকে নেমেই তোমাকে কল করতে নিয়ে দেখি নাই ।
- আহ ।একটু সাবধান হবা না? আঙ্কেল আন্টী কে বলছ ?
- পাগল হইছ ? তুমি জান না, কাল বুয়াকে টাকা খাইয়ে বের হয়ছিলাম যাতে আব্বু আম্মু ফোন করলে বলে যে আমি বাসায়ই আছি?এখন যদি আব্বু আম্মু জানে যে আমি বাইরে গিয়েছিলাম তো বুঝে ফেলবে যে আমি মিথ্যা বলে বের হয়েছি ।আর আমার আব্বুকে তো চেনোই ।
- আচ্ছা কেদো না ,দাড়াও দেখি কি করতে পারি ।
- এখানে কিছু করার নেই , এত এক্সপেন্সিভ ফোন কিনতে পারব না নিজে , আব্বু আম্মুকে বলতেই হবে । তোমাকেও কিছু করতে হবে না ।
- চুপ , কথা বলবা না আমি দেখতেছি রাখ এখন ।
…………………………………………………………………………………………………………………………………………….
রহমান সাহেব মাত্র বাসায় ফিরলেন , সেই ছোট টেবিল ফ্যানটার সামনে বসে একটু স্বস্তিতে আল্লাহর নাম নিচ্ছিলেন। ৫২ বছর বয়সি এই সরকারি চাকুরিজীবি চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে অনুভব করলেন হাটুর ব্যাথাটা বেড়েছে । বসে পড়লেন সে । তার স্ত্রী ব্যপারটা খেয়াল করলেন ।
- ওগো শুনছ ?ডাক্তারটা দেখিয়েই ফেল না ।
- আরে নাহ ,ও কিছু নয় সেরে যাবে । এটার জন্য ডাক্তার লাগবে না । আমরা বুড়ো মানুষই যদি বিলাসিতা করে তো ছেলে কি শিখবে ? যখন ছেলে গাড়ি কিনবে আরামছে হাসপাতাল যাব আর আসব ।
বলে মুচকি হেসে খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেটে যেতে লাগলেন । পিছন থেকে ছেলেটা বলল
- বাবা একটু কথা ছিল ।
- হ্যা বল বাবা
- না মানে ল্যাপটপ বন্ধুকে দিয়েছিলাম ,ওদের পুরো বাসায় চুরি হয়ে গেছে ,সাথে আমার ল্যাপটপও ...
শুনে কিছুটা ধাক্কা অনুভব করলেন কিন্তু ছেলেকে বুঝতে দিলেন না
- কয়দিন পরে কিনে দিলে হয় না ?
- নাহ বাবা ,কয়দিন পর এক্সাম । না থাকলে ...
- আচ্ছা রাতে রুমে এসে কতলাগবে বলিস কাল ব্যবস্থা করে দিব ।
বলে শোয়ার ঘরের দরজাটাতে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিনি ।
………………………………………………………………………………………………………………………………………………………
কেনা আইফোনটা সংসদ ভবনের সামনে নিয়ে বসে আছে ছেলেটি । ভাবছে কাজটা ঠিক করল কিনা ,এই ভাবনার মধ্যেই মেয়েটি সি এনজি থেকে নামল । মেয়েটার দিকে তাকিয়ে সব ভাবনা ভুলে গেল সে , এই মেয়েটির হাসির জন্য সে সব করতে পারবে ,সব ।
যাওয়ার সময় সিএনজির দরজাতে আটকে যাওয়া নীল শাড়িটির আচল ছাড়িয়ে দিয়ে সে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকল সিএনজির দিকে যতক্ষন না সেটি হারিয়ে যায় ঢাকার ভীড়ে ।
.............................................................................................
সিএনজি থেকে নেমেই জলদি জলদি দেখল ছেলেটি আসছে কিনা ।হাফ ছেড়ে নিয়ে শাড়ির আচলটা দেখে নিল কিছু হয়েছে কিনা । প্রায় আধাঘণ্টা হতে চলল , রাস্তার চা ওয়ালাটা একটু পর পরই তাকায় আর মুচকি হাসে ।সামনে বাইক থামিয়ে আরেকজন আয়না দিয়ে তাকাচ্ছে । সামনে কালো গাড়িটি এসে থামল । আজ জন্মদিন ছেলেটার , আজ মেয়েটি ঝগড়া করবে না ,একদম না । গাড়িতে উঠার আগে সে আস্তে করে সেন্ড বাটনে চাপল ,
“পৌঁছে গেছি ”
এভাবে অবলীলায় চুরি, ছিনতাই হয়ে যায় কত ফোন ,কত ল্যাপটপ । কিন্তু দোষ পড়ে বেচারা চোর বাটপারদের উপর । অথচ সবচেয়ে বড় চোর ছিনতাইকারী গুলো আমাদের মধ্যেই থাকে । কিন্তু এদের মুখোশ এর ভিতর দেখতে পারি না ,কারন এরা চুরি করে বিশ্বাস । কারো ছেলে হয়ে ,কারো বন্ধু হয়ে ,কারো বা সেই মানুষটি হয়ে ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মে, ২০১৬ রাত ১২:০৮