রোজার সময়ের কথা ।ইফতার করে শুয়ে শুয়ে ঢেকুর দিচ্ছিলাম । কলিংবেল বেজে উঠল । কলিংবেল শুনে মেজাজ টা গেল খারাপ হয়ে । মনে মনে বললাম এখন কোন আপদ আসল । কিন্তু তখন যদি বুঝতাম এটা শুধু আপদ না, মহা আপদের সংকেত তখনই হয়ত ব্যাগ প্যাক করে হোস্টেল এ চলে যেতাম ।
যেন তেন আপদ না । আপদের নাম “পিচ্চি বাচ্চা” । ছোটবেলা থেকেই পিচ্চি বাচ্চার প্রতি বিশেষ allergy আছে আমার । কোথা থেকে এসে আমার সাইকেলের নিচে পড়ে আমাকে বাঁশ বাগানে তুলে ...দেয়া থেকে শুরু করে আমার জিনিস নষ্ট করা , আম্মুর কাছে বকা খাওয়ানো etc তারা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করেছে ।
যাই হোক কি আর করার । দূরসম্পর্কের কোনো আত্মীয়া এবং তার বাচ্চা । বাচ্চা দেখে কেটে পড়লাম । নিজের রুম এ বসে থাকাই ভাল । ঘুরে ফিরে পিচ্চি আমার রুমেই । দেখে admission এর গাইড নিয়ে চাপা দিলাম মুখে । ওর না,আমার নিজের ।
-কি কর?
-কুস্তি খেলতেছি
-হেহ মিথ্যুক ,তুমি পড়তেছ ।
-হুম
- কি পড় ?
- গল্পের বই ।
-আমাকে দাও দেখি
-না দিব না
ভ্যা......... । শুরু হয়ে গেল কাঁদা ।
কান্না শুনে দৌড়িয়ে আসল আম্মু আর আন্টি ।
-কি হয়েছে?
-ভাইয়া আমাকে গল্পের বই দেয় না ।
-ওটা গল্পের বই না তো ,পড়ার বই
-কি পড়ার ?
-ভাইয়া engineer হবে তো তাই ।
-engineer পচা । ওরা লুঙ্গি পড়ে ।
শুনে মেজাজ গেল খিঁচকে । লুঙ্গি আবার কি দোষ করল ? ধুরু পোলাপাইন । ওকে নিয়ে আম্মু চলে গেল । দরজা আটকায়ে দিয়ে pc তে গান ছাড়লাম । একটু পড় দরজায় নক ।
দরজা খুলে দেখি সেই হতচ্ছাড়া ।
- কি কর?
- নাচতেছি
- আমি ও নাচব ।
- না নাচা যাবে না, যাও ।
ভ্যা......... । আবারো শুরু হয়ে গেল সেই কাঁদা ।
As usual আম্মু এসে আমাকে ধমকাল আর পিচ্চিরে ছেড়ে দিল । আমার pc সাথে । এসেই বলে doraemon দাও ।বললাম ওটা নাই ।
আবার শুরু করতে নিয়েছিল ।মুখ চেপে ধরলাম । দাড়াও দিচ্ছি ।
ভাগ্যিস ছিল কয়েকটা পর্ব । দেখা শেষ করে শুরু করল তাণ্ডব । আমার হেলমেট আছাড় দিল দুবার , বডি স্প্রে অর্ধেক উড়াল বাতাসে ,ঘড়ি নিল etc তাণ্ডব শেষ করে ঘুম । আল্লাহ বাচাইছে ,আপদটা ঘুমাইল ।
তার পরদিন ,
ওকে ঘুরানোর দায়িত্ব পড়ল আমার কাধে । গেলাম আর কি । রাস্তায় সামনে construction er কাজ হচ্ছিল । দেখে বলে আমি ওদিক যাব না ।
- কেন?
- ওইদিকে পচা engineer আছে ।
- সামনে দেখি দিনমজুর কাজ করতেছে । বুঝলাম লুঙ্গিপড়া engineer এর রহস্য ।
দোকানে গিয়ে সব টাকা শেষ করল আমার । বিধ্বস্ত আমি বাসায় এসে একটু নিজের সবচেয়ে প্রিয় গিটারটা নিয়ে বাজাচ্ছিলাম । সেই হতচ্ছাড়ার আগমন ।
-কি বাজাও?
-বেহালা
-আমিও বাজাব
এবার আর না বলার সাহস পেলাম না । দিলাম ।বাজাতে লাগল ।একটু পর...
টং............ গেল গিটারের তার ছিঁড়ে । আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না । আম্মুর সাথে গিয়ে চিল্লাচিল্লি করলাম আর অন্য রুম এ গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে বসে রইলাম । মনে হচ্ছিল পিচ্চিটারে murder করি । একটু পর আন্টি আসল পিচ্চিকে নিয়ে । পিচ্চিটা দেখি ভয় পেয়েছে ।ভাবলাম হয়ত আমি আবার বাঁশ খাব কিন্তু না ।পিচ্চি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে আসল আমার দিকে । আমাকে একটা চকলেট দিল । দিয়ে দৌড় দিয়ে আন্টির পিছনে লুকাল ।হয়ত এটাই ছিল তার sorry বলা । আমি ওর এত cute মুখ দেখে আর পারলাম না । হেসে দিলাম । কাছে টেনে নিলাম পিচ্চিকে ।
Next দুই তিন দিন ভালই গেল । গেম খেললাম ,ঘুরলাম ,লুঙ্গী পড়া engineer দের কাছে গেলাম ,কিছুই বলল না.........বরং আমার সব কথা শুনল । ভালই ,পিচ্চি দেখি এতটাও খারাপ না ।
যাওয়ার দিন সে যাবে না,সে আমার সাথে থাকবে । কান্না করতে করতেই সে গেল । যাওয়ার পর কেন জানি খালি খালি লাগছিল । বুঝলাম সম্পর্ক ,মায়া মনের অজান্তেই তৈরি হয়ে যায় । কথায় কিংবা যুক্তিতে হয় না । বয়স কিংবা সময় মানে না । শুধু হয়ে যায় । হোক সে তোমার সবচেয়ে অপছন্দের মানুষ ।